এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সম্পর্ক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সম্পর্ক লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হুজুরের বয়ানগুলো বদলে গেলো কেনো -৩

আমার বেড়ে উঠা আর চিন্তার বসবাসের সাথে আপোষ করে চলতে হয়। চাঁদলোকে মানুষের প্রতিচ্ছবি কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যখন ছোঁকড়া গুলো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, তখন মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের কানে পৌছানো বয়ানগুলো কি আসলেই আমলে নেয়ার মতো নাকি তত্ত্বের আলোকে অপাঙতেয় তথ্য? কোনটা

প্রচলিত কোন ব্যাখ্যা নয় বরং সহজিয়া দর্শনের আলোকে এ সকল বয়ানের রূপ ও প্রকৃতির বিবর্তন কেমন হয়েছে তা বুঝতে ও বুঝাতে চেয়েছি। বাউল ফকিরের দর্শন 

                     কী করতে চায়,

                    কেন করতে চায়, এবং 

                     কিভাবে করতে চায় 

প্রশ্ন তিনটি অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। কেননা, আমরা ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে সমাজকে দেখতে ও ব্যাখ্যা করতে চাই। বিপত্তিটা এখানেই গোল বাধে। কিন্তু না; সমাজের আলোকে ধর্মীয়গ্রন্থকে দেখতে হবে। এই যে দেখা এবং দেখানোর ফারাক এতো বেশী যাকে বলে আমরা প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। যেটি সমাজ ও ধর্ম কোনটার জন্যই শুভকর নয় বা হিতকর কিছু বয়েও  আনে না। 

ভারতীয় দর্শনের মোদ্দা কথা হলো নিজেকে খোঁজা “Philosophy of Sought।“ যেটিকে সক্রেটিস অনেকপরে বলেছেন-“Know thyself”. সক্রেটিস ভারতীয় দর্শন থেকে ধার করে বলেছেন কিনা সেটি গবেষণার বিষয়। কেবল নিজেকেই নিরন্তর খুঁজে ফিরলেই আমরা সত্যের সন্ধান পাবো।

আমরা ভাবি কেন তাদের যুক্তিগত দর্শন আর ইতিহাসে গভীর দখল নাই, যা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাতেও কৌশলগত অবস্থানও নেই। পন্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন বলেছিলেন-“ধর্ম ও জ্ঞানে” এদেশে বিরোধ ঘটেনি। এ উক্তি বোধ হয় একালে আর খাটেনা। বয়ানের মধ্যে দিয়ে আর আস্ফালনের মাধ্যমে তা প্রমানিত হয়েছে। অথচ দেখুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই ধর্মমতের সমর্থক ও প্রচারক; কিন্তু বলে গেছেন মানুষে মানুষে ঝগড়া বাঁধায় না ধর্ম বরং মিলন ঘটায়। 

আমরা ভারতীয় দর্শন পড়বোনা, লালন পড়বোনা, ইতিহাস পড়বোনা, প্রাচীন ধর্মগুলোর মুল ধর্মগ্রন্থগুলো পড়বোনা, কেবল চিল্লাচিল্লি করবো শান্তি স্থাপনে, সংঘর্ষের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবো- এও  কি সম্ভব? “গভীর নির্জন পথে” পড়তে পড়তে আমরা সমাজের গভীর সংকটের দিকে মনোযোগ আকর্ষন করছি। 

বাউলদেরকে শাস্ত্র বা ধর্মবিরোধী বলে মনে করা হয় ঊনিশ শতকে। এ সময়ে বা এ শতকে নদীয়া, যশোহর  উত্তরবঙের শরিয়তী মুসলমানদের সঙ্গে “ইসলাম ধর্মের একদল ব্যাখ্যাকারী জানালেন যে ইসলামে গান গাওয়া জায়েজ নয়।” বাউলদের গানের আসরে তার দাঙ্গা বাধালেন। আলেম সম্প্রদায়ের নির্দেশে বাউলদের উপর নানারকম নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু হলো এবং তারা বাধ্য হয়ে আত্মগোপন করলো। এই সময়ে মূলত: বাউলরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে লাগলো। অথচ এমনটা হওয়ার কথা না। ফলাফল এখানে একটা বড় রকমের বিবাদ দেখা দিলো। কারণ ধর্ম আচরনে  যখন সীমাবদ্ধ থাকে, তখনই সমস্যা হয়; অথচ ধর্মকে বুঝতে হয় উপলব্ধি দিয়ে। নইলে বিবাদ দেখা দেয়। আর আজকের সময়েও এই বিবাদের কারণে বেঁচে থাকাই যেন দায়।

ফকির বা বাউল আন্দোলনের মাঝে ক্ষমতা দখল বা চর্চা করার অভিলাশ বা অভিপ্রায় আমরা খুঁজে পাইনা। তারা কেবল তাদের গান বাজনা আর আধ্যাতিকতার চর্চা নিযে ব্যস্ত আর নির্বিঘ্নে সময় কাটাতেই ভালোবাসে। অথচ হালনাগাদ বয়ানগুলো দেখুন। ক্ষমতা চর্চা বা দখল কিংবা ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করাই যেন বয়ানের মূল কাজ। কিন্তু এমন টা হবে? কবি নীরব এখানে। রাষ্ট্র এক পরাক্রমশালী এনটিটি তা কি বয়নকারীরা ভুলে গেছে? রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হবে রাজনীতি দিয়ে; বয়ান দিয়ে নয়।

২৪/০৪/২০২১ খ্রিস্টাব্দের ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশ যে, “যাত্রবাড়ি হতে কাঁচপুর ০৮ কি.মি. রাস্তায় ৬৮টি কওমী মাদ্রাসা। অথচ এখানে মাত্র ৪৭টি বিদ্যালয়। অধ্যাপক আবুল বারাকাত দেখান যে ১৯৫০-২০১৮ পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসা ৪৪৩০ থেকে ৫৪১৩০ এ বৃদ্ধি পেয়েছে। কওমি ১৩ গুণ আর আলিয়া ১১ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে এই ৬০ বছরে। 

মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধের পক্ষে আমি নই; তবে কেন সেখানে যুগোপযুগী বা বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে নাএখানেই আমার আপত্তি। কেন মুক্ত বুদ্ধির চর্চা বাড়ানো হবেনাএটা আমার সাধারণ জিজ্ঞাসা? মাদ্রাসাগুলোয় ধর্মীয় বিষয় পড়াশোনা করানো হলেও বিজ্ঞান আর যুক্তিবিদ্যা/দর্শনের মতো মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে কেন দেয়া হয়না। কেন নিজেকে খুঁজতে নিরন্তর প্রেরণা দেওয়া হয় না? কেন? ধর্মীয় তত্ত্ব বা তুলনামূলক ধর্ম বিজ্ঞান পড়ানো হয় না? কেন ক্রিটিক শেখানো হয়না? এসকল প্রশ্ন কেন অপাঙতেয় এখানে? সমাজের আলোকে যৌক্তিক প্রশ্ন করাতে শিখানো হয় না কেন? কেন বলা হয় না-পৃথিবীতে কেবল যোগ্যতমরাই  টিকে থাক। যোগ্য হও, সামনে এগিয়ে যাও কিন্তু তোমার পিছনের ইতিহাস ধর্মকে ভুলে নয়। এতো যখন সীমাবদ্ধতা। তখন ফলাফল কি হবে তা সহসাই অনুমেয় করা যায়। বয়ানকারীরা অবৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক করে, বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে আজগুবী তত্ত্ব, তথ্য। 

উদাহরণে শতশত বয়ানের কথা বলা যায়। ইউটিউব শুনলে কিংবা শুক্রবারের কানখোলা রেখে ব্যালকনিতে দাঁড়ালে যা শোনা যায় তা এক কথায় প্রকশের ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। ধরণ C-19 বিষয়টাকে বয়ানকারীরা তাদের বয়ানের মাধ্যমে ফাজলামিতে পরিণত করেছে বিনোদনের খোরাক হিসেবে। স্থুল অনুবাদ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গী বলে তুলনা করে-নিজের দেশ, পাত্র কালহীন এক নির্বোধ জ্ঞানী বলে পরিচিতি লাভ করেছে সেই বয়ানকারী। স্বাভাবিকভাবেই এগুলো আমরা শুনি কেন প্রশ্ন আসে। ইউটিউব বা পাবলিক আসরে? এখানে অনেক ডিসকার্সিভ আছে। তবে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় যে-সমাজে সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমগুলো আমরা দুই দশকে যেভাবে ধ্বংস করেছি; মানুষ এখন এগুলোকে বিনোদনের খোরাক হিসেবে নিয়েছে। সেদিন এক পিএইচডি গবেষক সহাস্যে বলে উঠলেন- “যখন বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত, চিন্তার বা লেখার সীমারেখা টানতে পারছিনা তখন ইউটিউব উদ্ভট, বয়ান শুনি ফ্রেশ হয়ে যাই। আবার হয় লেখা নয় পড়া শুরু করি।” সুতরাং সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমগুলো সংকুচিত করে বিনোদনের আজগুবি তথ্য ও তত্ত্বের সম্প্রসারণের কুফল তো ভোগ করতেই হবে। যা অগবারন ২০০ বছর আগেই বলে গেছেন। 

কোন ব্যক্তি বা সংস্থা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়না। যদিনা সিংহভাগ জনগণ পক্ষে থাকে। অর্থ্যাৎ ৭০-৮০% জনগণ কোন ব্যক্তি বা সংস্থার অনুকূলে থাকলেই রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার কথা ভাবতে পারে। কথায় কথায় রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে গেলে রাষ্ট্র তার ব্যাটাগিরি তো দেখাবেই। আর দেখিয়েছেও বহুবার। ১% বা তার চাইতে কম সংখ্যার জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। অথচ আমাদের বয়ানে এসকলের ফিরিস্তি যেন মনে হয় খিস্তি খেউর।

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২

হুজুরের বয়ানগুলো বদলে গেল কেন-২?

 

উর্দু ভাষার খ্যাতিমান গল্পকার Sadat Hasan Manto এর নামে ব্রিটিশ সরকার অশ্লীলতার অভিযোগ আনলে; তিনি বলেন - 'লেখায় অশ্লীলতা থাকলে বুঝতে হবে, আমরা সেই সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি ("If you find my stories dirty,the society you are living in is dirty. With my stories, I only expose the truth)।" ব্রিটিশ সরকার তাকে শাস্তি দিতে না পারলেও , দেশান্তরিত মান্টোকে পাকিস্তান সরকার ঠিকই এ অপরাধে তাকে সাজা দেন । পাকিস্তানে বসে মান্টো লিখেন - আমার মৃত্যুর পর আমাকে পুরস্কৃত করা হবে, আর সেদিন আমি বিজয়ী; হেসে বলব - কে বড় ছোট গল্পকার — আমি না ঈশ্বর ? হয়েছিলও তাই!
প্রসঙ্গটি মান্টো নন; বয়ান। আমরা এই সময়ে বয়ানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে এর কারণ অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরাই কি বয়ান নির্ভর সমাজ বিনির্মাণের সুযোগ করে দেইনি? নির্বাচিত কয়েকটি ঘটনা দেখুন-
১। ১৯৯৯- কিংবা ২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুতবায় বলা হচ্ছে - জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান কে জাতির পিতা বলা যাবে না ? সাহসও বটে, তবে যুক্তি শূন্য। বয়ানের সময় এক ছাত্রনেতা জিজ্ঞাসা করেন - কায়েদ এ আযম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ বা কামাল আতারতুক - তারাও তো জাতির পিতা বলে তাদের দেশে পরিচিত ? হুজুর আর কথা বলেন না।
২। বয়ানকারি হুজুরদের আমি কাছে পেলেই জানতে চাই— গীতা পড়েছেন, বেদ পড়েছেন? বাইবেল ? ত্রিপিটক ? মহাভারত / রামায়াণ ? পৃথিবীর সকল গ্রন্থ আপনি পড়তে পারবেন না ; তাই বলে কি প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর প্রধান ৩/ ৪ টি গ্রন্থ পড়বেন না? যাদের পড়ার কথা, তারাই( শিক্ষক সমাজ) পড়েন না! হুজুররা আর কি পড়বে ? এভাবেই আমরা তারাপদ রায়ের সেই " আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে" বিখ্যাত কবিতার বাস্তব রূপ দিয়ে গেছি , ক্রমান্বয়ে ? তাই আজ একদল মজে হামলায়, তো অন্য দল দেশছাড়ার গোঙ্গানিতে । স্বদেশ ভূমি ত্যাগের কি নির্মম যন্ত্রণা, সেটা শুনেছি ১৯৭১ এর বাবার অভিজ্ঞতায়, শরণার্থী শিবিরে অভুক্ত মধ্যবিত্ত যুবকের হা হা কার! আর ২০০১ নির্বাচন উত্তর এ পরিবারের সবাই যখন ভারত যাওয়ার পক্ষে, বাবা তখনো 'না ,না' করে গেছে । আত্মীয়দের মধ্যে যারা গেছেন ছিলেন বনেদি, ওখানে আজ তারা অনেকটাই ফকির। ঘর পোড়ার কি নিদারুণ কষ্ট, যারা আলু পোড়া খায় তারা কি জানে, বুঝে সেটা ??
৩। আমরা হুজুরদের বয়ান শুনি, বিজ্ঞান ভিত্তিক কিনা, যুক্তিসম্মত কিনা জানতে চাই না; বরং প্রতিবাদ না করে , এড়িয়ে চলতে গিয়ে আমরা এমন একটি সমাজ এ দাঁড়িয়েছি, এখন বয়ানগুলো ধরে নিয়েছি বিনোদন এর খোরাক [ একাধিক পিএইইচডি গবেষক বলেছেন, পড়তে পড়তে ক্লান্ত হলে yt এ তাদের বয়ান শুনে, হাসি আর ঘুম তাড়াই ] অথচ এগুলো আমাদের চিন্তা, চেতনা আর যুক্তি চর্চার হাতিয়ার হতে পারতো।
৪। আপনি ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে কেন আল-কিন্দি, আল ফারাবি পড়বেন না আল-বিরুনি ? কেন এবং কিভাবে মধ্য প্রাচ্যের দর্শন প্রচার করতে গিয়ে ভারতীয় দর্শন এর সমন্বয় ঘটান ; অনুবাদ করেন পতঞ্জলি বা ' ভারত তত্ত্ব' এর মতো মতো বই। আজগুবি তত্ত্ব, তথ্য দিয়ে,রাষ্ট্র শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করাই ধর্ম শক্তির কাজ নয়। আপনাকে পড়তে হবে; এক এবং একমাত্র গ্রন্থ নয় বরং বহুধা বিভক্ত মতবাদের উপর লিখিত গ্রন্থগুলো। যদি আপনি না পড়তে চান, প্রতিবাদ না করেন আপনার শোনা আজগুবি বয়ান, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে খাপ খাওয়াতে অক্ষম।ধর্ম বিজ্ঞান হতে পারে কিনা বিতর্কের বিষয় কিন্তু একে আপনাকে টেকনিক্যাল বিষয় হিসাবে মানতে হবে ; আর এখানেই সমস্যা শুরু । কারণ নন-টেকনিক্যাল লোকজনরাই টেকনিক্যাল কথা বলে আর সমস্যা বাঁধিয়ে ফেলে। আর সুবিধা নেয় অন্যজনেরা।
উত্তরণের উপায় কী? রামানুজন মনে করেন — আমাদের এই উপমহাদেশের একটি নিজস্ব পন্থা ও দর্শন আছে, সেঁটা অনুসরণ করতে হবে (Is there an Indian way of thinking, 1989)।সেই সুবাদে কমলকুমার মজুমদারের মতো আমিও আশাবাদী— "ক্রমে আলো আসিতেছে" ( অন্তর্জলি যাত্রা)।

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

ঘসেটি বেগমের একটি গর্ভপাত

না!এটার পতন ঘটাতেই হবে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় তারা দুজনেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিশ্বাস আর রাখা যাচ্ছে না।তবে উত্তেজনায় বিস্ফোরণ ঘটেনি তো?  হয়তো?  আবেগের গতি বিজ্ঞানের বেগ সামলাতে পারেনি বলে ছিন্ন-ভিন্ন হতে যাচ্ছে আজ আমাদের মান মর্যাদা। দাদা চুপচাপ; কি করবে বলে নয় বরং ভাবছে অন্য কথা।কিন্তু ঘসেটি বেগম অভ্যাসবশতঃ কথা বলেই চলেছে।  আপনি কম দামের জিনিশ কিনেন ;কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল কিনা? না, দাদা বিরক্ত  এতে হচ্ছেনা আবার উত্তর দেয়ারও চেষ্টা করছে না। দেশ, পাত্র , কাল ভেদে ঘসেটি বেগমের জ্ঞানের উচ্চতা গণ বিনোদনের উপায়ও বটে।তাই দাদা বিনোদিত হচ্ছে কিংবা হবার চেষ্টা করছে বটে! 

সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উর্দ্ধমূখী আর সম্প্রসারিত পেটের কথাটির কথাটি মনে হলে দাদা, হো হো করে হেসে উঠে। পাশে বসে থাকা ডক্টরেট করা সহকর্মীটি আগুনটি যে জ্বলেছে সেটা বুঝে নিল। পাবলিক বাসে প্রাইভেট কথা বলায় ইঙ্গিতে ডক্টরেট জানতে চাইল – ”ধোঁয়ার চেয়ে আধার ভালো।”  তাই ছেড়ে দেন। ওটা আপনার, আপনি নিশ্চিত হলেন কি করে?  এ রুম;  ও রুম, তারপর স্বামী তো আছেই। দাদার পছন্দ হলো কথাটি। স্বামীর বলে চালাতেই সমস্যা কোথায়?  কিছুদিন আগে অফিসে এরকম ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্বামী পরিত্যক্তা ছিল আর ছেলেটি বর্জনীয় দোষে দুষ্টু।  কিন্তু আমাদের দুজনেরই তো সামাজিক রক্ষাকবচ আছে – এটা মনে করে একধরনের সুখানুভূতিতে ভাসতে লাগল দাদা। সম্বিৎ ফিরে পেল ঘসেটি বেগমের ফোনে।মৃদু চাপ অনুভব করল হাতে , ডক্টরটির হাতের, তা আর বুঝতে বাকী রইল না এবং কি বুঝাতে চায় তাও দুবোর্ধ্য নয়। হ্যালো বলতেই ওপার হতে বলে উঠল- আর চাপ নিতে হবে না।  সবকিছু ম্যানেজ করা হয়েছে।কেবল পাশে চাই তোমাকে ওই দিন, যেদিন --------- পতন ঘটাতে হবে। না, দাদা  অবাক হয়নি। আবেগ কিংবা আবেশে থাকলে নাতনি আমার, তুমি বলে সম্বোধন করে উঠে। বিষয়টিকে একেবারে উপভোগ্যহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বরং শিরায় একধরনের শিহরণ কাজ করে বটে। 

আজ শনিবার। অফিস বন্ধ। ইতিমধ্যে মোবাইলে ফোন এসেছে কয়েকবার। ক্লিনিকে যেতে হবে। ঘসেটি বেগম অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে আর বাসায় বলেছে ভিন্ন কথা যা স্বভাবের দোষে হয়ে গেছে  সে টেরই পায়নি। মীন যেমন সলিলের উপস্থিতি টের পায় না। তাই তিন দিনের অফিস ট্যুরের কথা বলে বাসা হতে বেরিয়েছে সে। ফলে এতো তাড়া। সহকর্মী ডক্টরেটটিও ফোন করেছে বার কয়েক।  তাই বাসা হতে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটতে হলো ক্লিনিকে। পতন ঘটানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে ; এ টেবিল হতে ওই টেবিল। অবশেষে অপারেশন টেবিলে। না । উদ্বেগ নয় বরং উচুঁ দাত দুটো কেলিয়ে হাসছে। আমি কি শোনাবো সান্ত্বনার বাণী তার বদলে সে আমাকেই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় করছে উদ্বেলিত।  

ঘষেটি বেগম এখন অপারেশন টেবিলে। শীতের সকালে পায়াচারী করছে। নার্সটি পাশের কক্ষে বসার তাড়া দিয়ে গেলো কয়েকে বার। কিন্তু ভাবনার জগতে কতকিছুই তো আসছে মনে। আমরা পুরুষরা বিশুদ্ধতার কথা বলি কেবল নারীদের জন্যই । এক নারীর জন্য কত রকম উপায় আবিষ্কার  করছে পুনরুৎপাদন বন্ধ করার করার জন্য। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে কয়টা ? ফসলটি কি আমারই নাকি  অন্যকারো----- এমন সময় নার্সের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। নার্সটি বলছে – আপনার মতো স্বামী পাওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার । অর্ধাঙ্গীনির জন্য এতো ব্যাকুলতা। অর্ধাঙ্গীনি না, সেতো কুলাঙ্গীনি  আর – আমার এমন অস্ফুটস্বরে নার্সটি – ”ভাই কিছু বললেন ?”  না, তেমন নয় – আমি বলে উঠলাম। আর কতোক্ষণ লাগবে?  সে দৃঢ় চিত্তে বলে উঠল- আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। ও!  আমি  ওটি রুমের সামনে হতে চলে আসলাম। আমি শান্ত আর ধীর । নিচে নেমে সিগারেট ধরালাম। কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়ার ন্যায় আমার চিন্তাগুলোর আলু–থালু অবস্থা। ঠিক যেন রাবনের মৃত্যুর পর মন্দোদরীর দশা। হায়রে মন্দোদরী,স্বামী অন্তঃপ্রান। এমন সময় আমার অর্ধাঙ্গীনির ফোনে মনটা আরো ছন্দময় হয়ে উঠল। কি সব জঙ্গলের পিছনে ঘুরছি, মিথ্যাময় ছলনায় সময় কাটাচ্ছি। আর না ।ওপার হতে জানতে চাইলে, বললাম দুই  থেকে তিন দিন বাসায় ফিরবো না । বউ জানে অফিসেই থাকবো, দাপ্তরিক ব্যস্ততায় যা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলেই কি তাই? যা আমার মন জানে আর জানেন অন্তর্যামি।  

(কৈফিয়ৎ: কাল্পনিক গল্প ,চারিত্রিক সাদৃশ্যতা অনভিপ্রেত)

একটি অসম্পূর্ণ সম্পর্কের সফল সমাপ্তি


                                    


কাল বেলা ব্যাংক ভবনের তিনতলার চায়ের দোকানে বসে ডান হাতে প্রাগতৈহাসিক যুগের কাপে এক কাপ চা  বাম হাতে একটা বেনসন বলতে সাদা বেনসন,যাকে পুজিঁবাদী দুনিয়ার বেনিয়া গোষ্ঠী নামকরন করেছে 'ব্লু গোল্ডহিসেবে।অথচ  পণ্যটির পোষাকি নাম হচ্ছে বেনসন লাইট,যা ধরানো নিয়মিত অভ্যাস  দাঁড়িয়েছে।আজকেও এর ব্যত্যয় হয়নি। মাঘের মিষ্টি রৌদ্রে মুখোমুখি ডক্টরেট ডিগ্রিধারি সহকর্মীটির সাথে যখন সমকালিন রাজনীতির কথা বলছিলামকরছিলাম উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ;পাশে আরএক আগন্তুকের তখন হৃদয়ের শবচ্ছেদে মুখাগ্নি হচ্ছিল বুঝতেই পারিনি। ভবনে ব্যাংকক্লিনিক আর পোস্ট অফিস হেতুপ্রশিক্ষণার্থীকর্মকর্তার পাশাপাশি আমজনতাও আসে সবকিছুতেই ভাগাভাগি করতে।তাইআগন্তুকের দাদা সম্বোধনে খানিকটাঅবাক হলাম। আমরা এখানে স্যার সম্বোধনের কালচারের ক্যারিকেচারে অভ্যস্ত।বামে-ডানে,উপরে -নিচে স্যার হয় বলো না হয় শুনো। জ্বী , স্যার,হুম স্যার,করছি স্যারদিচ্ছি স্যার হয় বাঁশ নয় আকাশ (এতো তেল যা মধ্যপ্রাচেও হয়না)এমন পরিবেশ আরপরিস্থিতিতে বিস্মিত হওয়ারই কথা। ডক্টরেটটি সিরাজুম মুস্তাকিন নামক ধর্মানুসারি হওয়ায় তার দৃষ্টি আমার দিকেআর আমার দৃ্ষ্টিআগন্তুকের দিকে। বলতেই হলো অভ্যাস বশঃত –জ্বী দাদা বলেন।

-দাদা আপনাকে আমি চিনি। আপনি কি আমার জীবনের গল্পটা শুনবেনসে বলে উঠল।

-দাদা,না শোনার কোন কারণ নেই। কারন এখানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হয়।নানা রকম মানবিকঅমানবিক,ধান্দাবাজীসহ প্রমূখ মহামান্যরা তদবির নিয়ে আসে আত্মীয়অনাত্মীয় সকলেই। পাশে থাকা সহকর্মীটি  বিষয়ে সিদ্ধহস্ত বলে খুবিই বিরক্ত।আমার হুঁ  সে ভ্রু কুঁচকালো।

অতঃপরসেই দাদার বলার গল্পটি ( বিস্তারিত পরবর্তীতে), তাঁর ভাষায় শুনুন---

হ্যাঁলোম্যাসেন্জারে নক করেছিলাম আমি।

হুম-তার এমন উত্তরের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কথোপকথন , কালক্রমে একটি সম্পর্কের দিকে এগোতে শুরু করল এবং কারণ কিংবা অকারণে আমাদের কথা হওয়ার পাশাপাশি দেখা করতাম আমরা। শুরুটা তিন বছর আগের কথা বলে গণিতের স্বাভাবিক নিয়মে২০১৭ সালেই হবে। মাস ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে – দাপ্তরিক কাজে  দেশের কোন বঙ্গের জলে –জঙ্গলে গিয়েছিলাম আরভাসমান নৌকায় আমাদের সূচনা হওয়া সম্পর্কটি কালক্রমে দৃঢ় হতে শুরু করেছিলযার সূচনা ঘটেছিল হাইহ্যাঁলোর মাধ্যমে 

এরপরসময়ের আবর্তনে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বন্ধুর পথ অতিক্রম করা। হাত ধরার চাইতে ছাড়তে হয়েছে বেশী , আর এবার ছাড়তেহলো একেবারেই। না ছাড়লে হয়তো  গল্পের সৃষ্টিই হতো না।

নরম – গরম বাক্যালাপে একটু একটু করে গভীর হওয়া সম্পর্কটি উষ্ণতা পেয়েছিল। না ; বিছানা গরম করা হয়নি। কারণসে চায়নি আর আরো পরে উদঘাটিত হলো যে সে গরম করছিল আর একজনের শিতল বিছানা। আমিও জোর করিনিধর্ষণের সঙ্গায় পড়বেবলে। আমি চেয়েছিলাম পারস্পরিক সমঝোতায় উত্তপ্ত হবে বিছানা। যার ফলে , বদ্ধ ঘরে হোটেল ভাড়ার সাথে যোগ হয়েছে টিস্যুখরচের হিসাব। সরল অংকের হিসাবে অর্থের আর সময়ের বিনিয়োগে সুদ আর পাওয়া যায়নি। তবু বিনিয়োগ করে যাচ্ছিলাম-জনকল্যাণের স্বার্থে। সুদের কথা যে মনে আসেনি তা নয়। বরং তিন বছর পর -২০২০  যে ভিশনের কথা তুমি বলে ছিলেশুরুতেইআমার মনে পাকাপোক্ত হলো এটা যেতুমি কেবলইতোমার প্রয়োজনেই আমি। কখনো অর্থেকখনো স্বার্থে আর প্রতিনিয়তই দরকারেএটা কিংবা ওটা। অথচ তুমি বহু আগ হতে অন্য কারোর শিতল বিছানা গরম করছো  মনে পড়ে যাচ্ছে – কেনা কাটা , সিনেমা দেখাটুকি টাকি সবই বিল আমার হাতে  ঠিক যেন সমানুপাতিক হারে আমার পকেট যত ঠান্ডা হতো অন্যের বিছানা ততোগরম হতো  আমার অর্থের দিকে তোমার যতো নজর ছিল , ততটাই অবহেলা করতে আমার ইচ্ছা আর ভালো লাগার বিষয়গুলোর প্রতি। আমার প্রতি তোমার অবহেলা আর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আজ  লেখার জন্ম বলে , আমিও এখন তোমার প্রতিও কৃতজ্ঞঅনেকখানি।

 মার্কেট হতে  মার্কেট, তোমার পছন্দের জিনিশ কেনা আর আমার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট ক্রমশঃ কমে আসা আমাকে তবুওভাবিত করেনি। শুধুই কি তাই অফিস  বাহিরে কিংবা বিদেশ গেলে - তোমার ফরমায়েশ মতো কেনা-কাটা করা। পছন্দ – অপছন্দেরধান্দায় আমার বিপর্যস্ত অবস্থা ! এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল – ধ্যাত্তেরি কি ভাবছিভুলেই গিয়েছিলাম যে প্রয়োজন নেইবলে ফেসবুক সহ সকল সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমাকে ব্লক করলেও ফোন বুকে তোমার নম্বরটি ব্লক করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর তা হয়তো হবে। ফোনটি কেটে দিয়ে আবার ভাবনার জগতে ডুবতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো–”তোমার বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের কথা-তারা আমার সামনে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করতো-তুমি বরবরই তোমার স্বার্থের পক্ষেগোপনে গোপনে লিয়াজোঁ রক্ষা করো সবার সাথে। ” তারা জানতো না যে তুমি অতি দক্ষতার সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করো আমারও স্বাথে। তারা এও বলে যেযা শুনে আমি চমকালামযদিও তুমি তা অস্বীকার করেছো বরাবরই আমার সাথে। আমাদের অভিসারে এমন হয়েছে তার ফোন তুমি পেয়েছো আর আমাকে মিথ্যে বলেছো যেএটা বরাবরই তার পক্ষ হতে এক তরফাতোমার গুছিয়ে বলা মিথ্যায় আমি বরাবরই বিশ্বস্ত শ্রোতা। যাহোক,তারা বলেছিল যে কলেজ জীবনে হতেই তোমার জীবনে তার অনুপ্রবেশ এবং শেষ পর্যন্ত তুমি তাকেই বিয়ে করে প্রমাণ দিয়েছো-তুমি ভালো  দক্ষ খেলোয়াড়। জীবনযুদ্ধে আমি বরাবরই কাঁচা জীবনের অংক মিলাতে।নইলে স্কুল,কলেজ  বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে যার গণিতে,পরিসংখ্যানে এমনকি কম্পিউটার  টপ স্কোরার  সেই আমার এটি বুঝতে এতো সময় লাগে যে নববর্ষভালোবাসা দিবসেহ্যাপি নিউ ইয়্যার তুমি বরাবরই গিফট নাও যা তোমার অত্যন্ত প্রিয়।কিন্তু তুমি এক টাকা খরচ করে আমাকে এমএসএস করে উইশ করার সৌজন্যটুকুও দেখাওনি। বাদ দিলাম  সব। আমার জন্মদিনে,তিন বছরে উইশটুকু কি করেছোমনে পড়ে ? না এমনটি হয়নি।কারণ নেয়া তোমার যত প্রিয় দেয়া তোমার ততটাই অপ্রিয়।

এখন আমি আর তার ফোন ধরিনা অথবা সে আমারে পায়না।কারণে কিংবা অকারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নক করিনা বা করতে হয়না।এভাবেই আমি একটি অসম্পূর্ণ সম্পর্ককে সম্পূর্ণতা দিলাম!  

(রচনাকাল ২৭.০১.২০১৯ খ্রি:

(কৈফিয়তঃ এটি কাল্পনিক রচনা তবে কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা কাকতালীয় মাত্র)। 

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

ঘসেটি বেগমের একদিন

ঘসেটি বেগমের একদিন
সকালের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল কাকের কর্কশ ধ্বনিতে। ঘুমটা এমনিতেই ভালো হয়নি। নানাবিধ ধান্দায়। মোবাইলটা হাতে নিয়ে অর্ধশতাধিক মিসডকল দেখে আপাতঃত পুলকিত হল। না অন্যকারো ফোন নয়। অধিকাংশ ফোন এসেছে স্বামী নামক নিরীহ জন্তুটার। তাকে অবহেলা করে এক ধরনের আনন্দ লাভ করে ঘসেটি বেগম। প্রায় দুশো মাইল দূরে বসে বউকে ফোন করাই যেন তার কাজ। কখনো ফোন ধরে;কখনো ফোন ধরে না।আবার কলব্যাকও করারও প্রয়োজনীয়তা সে বোধ করেনা। তাই ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে শাওয়ার নিতে চলে গেল। শাওয়ারের এই সময়টা ঘসেটি বেগমের প্রিয় সময়। এই সময়ে সে সারাদিনের পরিকল্পনা করে যাবতীয় কুকর্মের। দপ্তরে বসে কার কার কক্ষে যেতে হবে, কার সাথে সময় কাটাতে হবে এমনি কতো কিছুর রসায়ন মিলাতে হয় তাকে। টিকে থাকতে হবে; টিকে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করতে তাকে এ দরজা হতে ও দরজা কিংবা বিমল মিত্রের কড়ি কিনলাম এর নায়িকার মতো – একটি উত্তপ্ত বিছানা শীতল হতে না হতেই আরো একটি বিছানা উত্তপ্ত করতে হয়। ঘসেটি বেগমের প্রতিটি দিন তাকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় ; আবেগি হতে হয়; কথায় কথায় ছিচঁকে কাঁদুনির অভিনয় করতে হয়। ঘসেটি বেগমেরা কখনো লজ্জা পায়না ,এটা থাকতে হয় । যা তার নাই। কারণ টিকে থাকাই তার নিকট চরম সার্থকতা। শ্রমিক হিসেবে নিজের শ্রম ও শরীর বিকাতে পারলে, জগতে টিকে থাকা যায়। ঘসেটি বেগম মনে মনে কবিতাটি আওড়াতে আওড়াতে শাওয়ার নিতে নিতে সে তার প্রিয় কবিতাটি উচ্চারণ করতে লাগল –
মেয়েটি নেহায়েৎ বোকা
বলনে, চলনে কিংবা মননে
তবুও খাপ খাওয়ানোর কি-না
প্রানান্তকর প্রচেষ্টা।
সফল তো হয়নি বরং
তার বেড়েছে দুর্দশা।
হঠাৎ একদিন –
সে পত্রিকায় দেখল
কর্পোরেট সংস্থার কিংবা বাণিজ্যের সংবাদ শিরোনাম।
অতঃপর বই, পত্রিকা, জার্নাল আর
অন্তর্জালে খুঁজে বেড়াল শব্দের অর্থ
অর্থের ভিতরের অর্থ-সে খুঁজতে লাগলো
যেদিন সে মর্মভেদ উদ্ধার করল- ”কর্পোরেট”
স্বাধীন সত্ত্বা শরীর টাকা কামানোর যন্ত্রও বটে—-।
এরপর থেকে চলনে, বলনে কিংবা মননে মেয়েটি কর্পোরেট জগতের প্রতীক হয়ে দাঁড়ালো ।।
মেহেরুন্নিসা- ঘসেটি বেগমের কেতাবী নাম। সিরাজ দৌলার খালা কিংবা মেহেরুন্নিসা- কোনটাই ততোটা জনপ্রিয় নয় যতোটা জনপ্রিয় ঘসেটি বেগম- এই নামটা। গল্পের নায়িকা ঘসেটি বেগম এর নিজস্ব নাম রয়েছে যার সার্থকতা ঠিক এরকম যেমন কালো মেয়ের নাম সোনালী। ঘসেটি বেগম এমনি একটি নাম যেন নদীর চাইতে কূল উঁচু- তাই কেতাবী নামে নয় বরং চলতি পথে দেওয়া নামেই পরিচিত হোক ঘসেটি বেগম। ঘসেটি বেগম চাকুরী কররে বরৈ সে নিজেকে পরিচিত করতে দু-চারজন একত্র হলেই বলে উঠে ”আমরা যারা গবেষক”। আহা! কি শান্তি? গবেষকও বটে , কপালে কত কি যে জোটে? সকালে বাসা থেকে বেরিয় পড়ল ঘসেটি বেগম। অফিসে ফ্রি নাস্তা খাওয়ার সুযোগ আছে বলে সে না খেয়েই চলে আসল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল না তেমন আজ দেরী হয়নি। মনে মনে একটু বলে উঠার সাথে মনে করত গিয়ে তা করতে পারলোনা , সে কখনো সময়মতো অফিসে এসেছে । পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ডঃ আরাফাদের সাথে কুটচালের পরিকল্পনা ফাইনাল করতে হবে। রুম হতে বের হয়ে ডঃ আরাফাতের চামচার সাথে দেখা হলো করিডোরে। ঘসেটি বেগম- চামচার দিকে এগিয়ে বলল- ষড়যন্ত্রের অংশে অংশগ্রহণ করবেন না। চামচার মনে ছিল তাই বলে উঠল- ঐ দিকেই যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে ঘসেটি বেগমের মনে একটু গোপন ইচ্ছা জেগে উঠল। চামচার জিপারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল- বিয়েটা আর করা হলোনা? দুধের স্বাদ ঘোলে তো মিটাতে পারেন? কিছুই তো দেখতে পারছিনা ; বলে অভ্যাস মতো–হে !হে! হে! করে ঘসেটি বেগম- তার উচুঁ ময়লা দাঁত বের করে হেসে উঠলো। করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো- আরো কয়েকজনের। সবাই মিলে বসে পড়ল রুমে। রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই বলে উঠল- আরাফাদ ভাই – নাস্তা কই? হেব্বি নাস্তার ব্রবস্থা করেন। তারপর হে! হে! করে উঠল। পাতলা ওজনদার ঘসেটি বেগম। আলোচনা করতে করতে বেলা বারোটা বেজে গেল। নোংরামি আর কুটনামি আদ্যোপান্তর যেন পোস্টমটেম চলল বেলা বারোটা পর্যন্ত। আমরা যারা গবেষক – যারা আমাদেরকে গরু খোঁজার দলে মনে করেন তারা এসে দেখুক কিংবা বুঝুক আমরা কতোটা সুক্ষ্ম বা নিখুঁত ভাবে দল-উপদলে , স্বার্থোদ্ধার করতে পারি। ঘসেটি বেগম মনে মনে পুলকিত হলো এটা ভেবে যে, অনেকদিন পর বসা হলো। মাঝে মাঝে এমনভাবে বসলে কেমন হয়- ঘসেটি বেগমের এমন প্রস্তাবে সবাই সম্মত হলো। এ সময়ে মোবাইলটা বেজে উঠল- চেয়ার হতে উঠতে গিয়ে বুকের আঁচলটা সরে গেল। ঝুলন্ত আর অন্তঃসারশূন্য যুগল যেন অসাড় হয়ে পড়ে আছে। কেউ আর এদিকে ফিরে তাকালো না বলে ঘসেটি বেগম মনে মনে ক্ষোভ ফেটে পড়ল। অথচ আজকের সভায় উপস্থিত তোরা সকলেই কতটাই না আগ্রহভরে দেখছিস আমার যৌবন, নদীর দুকুল যখন ছাপিয়ে উঠতঃ ঢেউয়ের তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হলে দোলায়িত হতো তোদের মন। এই তরঙ্গের ঢেউয়ের নাচে কত সুযোগ –সুবিধা বাগিয়ে নিলাম। একটুখানি ইচ্চাকৃত তোদের ছোঁয়া- যেন অনিচ্চাকৃত এমনভাব করতি তোরা। সবই বুঝে না বুঝার ভান করে স্বার্থের জলে শরীর আর মন অঞ্জলি দিয়ে বসে বসে লাভের হিসাব করতাম। কাদের মোল্লা আলতো ছুয়ে দিয়ে বলে উঠল- ফোনটা ধরো। ঘসেটি বেগম সম্বিৎ ফিরে পেল। ঘসেটি বেগম নাম্বার দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। হঠাৎ আজ সে আবার ফোন করে বসল কেন? দাদা আমার – নাতনির মাথায় হাত বুলাতো, আলতো করে ছুয়েঁ দিত আমার চুলের গোড়া – যেন হৃদয় পরশ বুলায়ে দেয়। পাঠক , এ দাদা , আমার রক্তিয় সম্পর্কের নয়। আমার অফিসের এক সহকর্মী। ছোওয়া–ছুয়িঁর খেলায় দাদা- নাতনীর সম্পর্ক আমাদেরকে যেন আগলে রেখেছিল অককেটা অক্টোপাসের মতো। দাদার কি শীতল মায়ার পরশ ; ভুল কি যায় ? আহা! কি শান্তি? মাঝখানে কোথায় হয়ে যেন কি হয়ে গেল। আমি এ গ্রুপে আর ওই গ্রুপে দাদা। সময়ের ব্যবধানে আমরা আজ কোথায়। তবুও মনে পড়ে দাদার কথা , দাদার ফোন যেন বেগমকে ক্ষনিকের জন্য উতাল পাথাল করে দিল—
 হ্যালো ! তুমি কি ব্যস্ত?
 না। মিটিংয়ে ছিলাম। বের হয়ে আসলাম।
 দুপুরের খাবারটা কি এক সাথে খাওয়া যায়?
 হ্যাঁ যায়। তাহলে কে এফসি তে বসি।
দাদার ফোন পেয়ে বেগমের মন যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। ফোন রাখতেই না রাখতেই দপ্তরের এক্সচেন্জ থেকে জরুরী সভার কথা বলা হলো। চলমান সভায় বেকুবের মতো প্রশ্ন করে বসল ঘসেটি বেগম। উপস্থিত সভ্যগন এ দিক – ও দিক তাকাচ্ছে। এটা কি করল ? সভা প্রধান যখন তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলো তখন ঘসেটি বেগমের চোখে মুখে জল – যা তার নির্লজ্জতাকে ধুয়েঁ দিচ্ছে। দুপুরে খাওয়া হয়নি। দাদাও তাকাচ্ছে এদিকে। সভা প্রধান বলে যাচ্ছে। সীতার মতো এতোটা সতী নই যে ধরনী দ্বিধা হও বলে ঢুকে যাব। ইচ্ছে করছে দাদার বুকে আছড়ে পড়ি। নির্গত অশ্রু মুছে দিক , দাদা আমার। সারা বেলাটা কিভাবে গেল ? এমন সময় সময় মোবাইলে এসএমএস পেল চামচার – তোমাকে প্রকল্পের টাকায় সৌদি আরবে মাস্টার্স করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পরক্ষনেই হে! হে! । এসএমএস করল দাদাকে রাতের ডিনারটা কেএফসিতেই সেরে ফেলি?
সভাটি শেষ হলো কাটায় কাটায় পাঁচটায়। শীতের বিকাল,সূর্য অস্ত প্রায়। যে যার মতো করে পৌঁছার সিদ্ধান্ত হলো। ঘসেটি বেগম ভাবছে দিনটা খুব একটা খারাপ কাটেনি। সুখানুভূতিটুকু নিয়ে ঢুকে দেখে দাদা আলো আধাঁরির কোনে এক টেবিলে বসে আছে। দাদা জানত তাই ঘসেটি বেগমের পছন্দ অনুযায়ী এক গাদা খাবার আগভাগেই অর্ডার দিয়েছিল । ঘসেটি বেগম খাচ্ছে আর দাদা দেখছে। এমন সময় দাদা ঘসেটি বেগমকে বলছে – সফিস্টিকেটেড প্রস্টিটিউট কি কখনো দেখেছ? না বলতেই, দাদা আমার যা বলে উঠল – তাতেই আমার ঘুম ভাঙ্গল কাকের কর্কশ ধ্বনিতে। দাদা বলল – আমার পাশেই বসে আছে একজন।
(কৈফিয়ৎ: এটি একটি কাল্পনিক গল্প)

চুইংগাম

চুইংগাম 

সে থমকে দাঁড়াল। “মুর্খের ভার ধরনী নিতে চায়না“- শব্দটি তার কানে বাজল হাজার ডেসিবল শব্দের ন্যায়। তবুও ডক্টরেটকে যেতে হচ্ছে। কারণ সে পড়েছে বারবার। এটা দোষের নয়। কেউ একবার পড়ে, কেউ বার বার পড়ে। বার বার পড়াটা অবশ্যই শালীনতার পর্যায়ে আর থাকে না। আর আরাফাদ সাহেবের বেলায় তো নয়ই। তবুও সে পড়েছে কিংবা পড়ে আছে এখনো। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। বিষয়টির একটা পোষাকী নামকরন দরকার। পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা এর নামকরন করেছে চুইংগাম কেস হিসেবে। যতক্ষণ মজা, ততক্ষণ মুখে। বিষয়টি আরাফাদ সাহেবও জানেন এবং সর্বান্তঃকরনে মেনে চলেন। যার কারণে চুইংগাম কেসটি এখন লোকপ্রিয় বিষয়। একদিন আরাফাদ সাহেব এর অফিস থেকে দুই সহকর্মী বাসায় আসলে, পুরাতন সহকর্মীটি রাস্তার পাশের দোকানে আড্ডারত ছেলেদের- বাসাটি কোথায় জানতে চাইলে, চা এ চুমুক দিতে দিতে এক রকম না তাকিয়ে লম্বা ছেলেটি, যাকে দল নেতা মনে হয়েছিল সে ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিয়েছিল- চুইংগাম আরাফাদকে খুঁজতাছেন? সোজা উত্তরে গিয়ে সাত তলা ভবনের দুই তলার ডানের ফ্লাটে থাকেন-চুইংগাম সাহেব। প্রথমে বুঝতে না পেরে সদ্য বদলী হয়ে আসা সহকার্মীটি বলল- না, না আরাফাদ সাহেব চুইংগাম কেন? লম্বু ছেলেটির তাচ্ছিলে্ তাকানোয় সহকর্মীটি অপর সহকর্মীটির হাতে মৃদু চাপ দিয়ে- ঠিক আছে ভাই, বুঝতে পেরেছি। সাথে থাকা পুরাতন সহকর্মীটির মুখে সব শুনে সাথে থাকা নতুন সহকর্মীটি যেন লজ্জা পেল, যেটা মানুষের থাকতে হয়।

ডক্টর আরাফাদ সরকারী চাকুরী করে, এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, যদিও কর্মক্ষেত্রে নামের পূর্বে এই ড. লেখাটি কোন বাস্তবিক অর্থে কোন কাজে লাগেনি তার, তবে তাকে এ জন্য আড়ালে ক্রিমিনোলজীর অধ্যাপক বলে সহকর্মীরা খ্যাতি ছড়ায়। আরাফাদ সাহেব বিষয়টি বুঝে একে ওকে গালাগালি করে, যেটা তার অত্যন্ত প্রিয় কাজ, অবশ্য এ প্রিয় কাজটা সে আড়ালে আবডালে করে থাকে। সামনা সামনি বলার সাহস রাখেনা, এরা বরাবরই দুর্বল হয়। চুইংগামের বিষয়টিও এরকমভাবে সে জড়িয়ে ফেলেছে, উট পাখির মতো ধুলার ঝড়ে মাথা লুকাতে গিয়ে ড. আরাফাদ নিজের চরিত্রটাকেই জন সম্মুখে প্রকাশ করে ফেলেছে। বিষয়টি এখন এমন যে তার মাথার চুল হতে পায়ের নখ পর্যন্ত আঠাময়। এরপরেও তাকে দেখে অনেকে পারস্পরিক কথাবার্তায় ফিসফিস করে বলে- লজ্জা তো দেওয়া যায় না, এটা থাকতে নয়। আরাফাদ সাহেব বিষয়টা বুঝেও না বুঝার ভান করে। যে যাই বলুক, চুইংগামের প্রতি তার আকর্ষণ, দুর্নিবার। তাই তিনি বার বার এ মজায় মজেছেন এবং আপাতঃত দৃষ্টিতে মনে হয়- তিনি আমৃত্য পর্যন্ত চুইংগামে মজে থাকতে চান। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারেন না যে, এটা প্রথম প্রথম স্বাদ লাগলেও পরে বিস্বাদময় হয়ে উঠে, মুখ থেকে ভুলে শরীরে কিংবা চুলে লাগলে এটা কতো জটিল হয়ে যেতে পারে। এরকম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কন্যাসম এক জুনিয়র কলিগের সংগে সর্ম্পক জড়িয়ে। কন্যাটি চতুরতার সাথে সম্পর্কটিকে থেকে প্রগাঢ়ময় করেছে। ফলে প্রেমময় দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে কন্যাটির। যদিও কন্যাটি পারিবারিক সম্মতিতে কৃষ্ণলীলা সাঙ্গ করে বিধিবন্ধ জীবনে আবন্ধ হয়েছিল। কিন্তু বন্ধনটি আলগা হতে তার বেশী সময় লাগেনি। কন্যাটি, ডক্টরেটকে উপরে উঠার সিড়িঁ হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে কখন যে তার সময় কাটানোর পাটাতন হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে বুঝতেই পারেনি। ডক্টরেট তাকে চেয়েছিল ডাইরেক্ট হিসেবে। কন্যাটিও তাই। ফলাফল হিসেবে কন্যাটি হারালো তার গোছালো সংসার। পঞ্চাশোর্ধ ডক্টরেট আর অনধিক ত্রিশের কন্যাটি এবার বেপরোয়া হয়ে উঠল। তিন সন্তানের জনক, তার সন্তানের জননীতে ডক্টরেট খুশী নয়, সে সুখ খোঁজে এথা নয় হেথা, অন্যকোথা। এভাবেই সুখের সন্ধানে সে আড়াই দশক ধরে তার মাস্তুল ফেলে এ ঘাটে সে ঘাটে। ঘাটান্তরে আরাফাদ সাহেবের ভাবান্তর ঘটেনা। কিন্তু মনান্তর ঘটে সহকর্মীদের। তবু তারা দমে যায় না। আড়ালে নয় বরং স্বঘোষিত হয়ে তারা প্রকাশ্যে আসে জনতার মঞ্চে। নিজের মতো করেই চলতে চায়। ভালোবাসার সীমা আর পরিসীমার ব্যবধানটুকুও তারা মানতে চায়না। তাই, দুজনের কলঙ্কময় অতীত অধ্যায় এখন সকল সহকর্মীর মুখে মুখে। ধীরে ধীরে এটা তার গন্ডি পেরিয়ে এখন তার পাড়ার গলিতে। কেবল কথা উড়ছে। আর ডক্টরেট সাহেব ভাসছে সাথে নিয়ে তার কলঙ্কিনী রাধাদের। মাঝে মাঝে দ্যুতক্রীড়ার বর্ণনা যে পাওয়া যায়না, তেমন নয়। বরং সে সকল বাৎসায়নের কামসূত্রকেও হার মানায় সে বর্ণনা।
কন্যাটি শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত এ সম্পর্কের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে? কন্যাটি জানতে চায় টেলিফোনের ও প্রান্ত থেকে। ডক্টরেট, শান্ত কিছু বলে না। কন্যাটির গলা ধরে আসে, হ্যাঁলো, তুমি কি শুনতে পাওনা? ডক্টরেট পৌষের শীতেও ঘামছেন, শুনছি বলে উত্তর দেয় আর ঘাম মুছতে গিয়ে বাম হাতে লুঙ্গি উপরে তুলে ফেলে। ভাগ্যিস মধ্য রজনী। কেউ দেখেনি। কন্যাটি অহিসাবী রাতের তার হিংস্রতা কিংবা উম্মতার নিখুঁত বিবরনী তুলে ধরে, ফসল ঘরে তোলার সময় যে হয়েছে, তা বার বার মনে করিয়ে দেয়। ডক্টরেট এবার বুঝি গেল – অস্কুট স্বরে বলে উঠল আরাফাদ সাহেব। সব পাপের শেষ আছে। সে কন্যাটিকে বলতে চায়- কিভাবে হলো এটা। আমি তো বরাবরই প্রটেকশন নিয়েছিলাম। উত্তর শুনে কন্যাটি আতঙ্কগ্রস্থ হয়। ডক্টরেট, তুমি কি বলতে চাও? আমাকে সন্দেহ কর? তোমার জন্য চুরি করতে গিয়ে, আমাকেই শেষ পর্যন্ত চোর বানালে? কন্যাটি কাঁদে, সেল ফোনের এ প্রান্তে, ডক্টরেট ও প্রান্তে এর পরও শান্ত সে। সদুপদেশ দেয়- একে ফেলে দাও। কন্যাটি যতবার না বলে, ডক্টরেট ততবার হ্যাঁ বলে। সিদ্ধান্ত আর আসে না। অবশেষে কন্যাটি দ্বিধা-দ্বন্দ ফেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেকে হত্যা করে। চিরকুটে লিখে যায়- স্বীকৃতি না পাওয়ায়, যার কারণে জগতের আলো যে দেখতে পেলনা, সেই ডক্টরেট যেন শাস্তি পায়।

অফিসে পুলিশ। লাশ মর্গে। সহকর্মীগণের কানাকানি। কোটায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। মন্ত্রী বা দালালীর ফলস্বরুপ সুপারিশে চাকুরী। ফপরদালালী করে অফিসের টাকায় ডিগ্রী । অযথা আত্মঅহংকারী। আলুর দোষে বহুবার দোষী। যেন আহাম্মক? কেউ কিছু বলে না। এর অর্থ এই নয় যে, কেউ কিছু জানে না, বরং লজ্জা আর ঘৃণায় এড়িয়ে চলে। পুলিশ ডক্টরেটকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন সম সে পিছন হতে শুনতে পেল- “মূর্খের দাপট, ধরনী ভার নিতে চায়না”। কে বলল পিছন ফিরে দেখতে গিয়ে ডক্টরেট থমকে দাঁড়াতেই বেয়াড়া পুলিশটি বলে উঠল- “চল স্টুপিড”।
( বিঃ দ্রঃ সকল চরিত্র কাল্পনিক, সাদৃশ্য অনিভেপ্রত ও কাকতালীয় মাত্র )