এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ছোট গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ছোট গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২

কাপুরুষ (COWARD)

                                       

                                                                      মূলঃ  Sadat Hasan Manto 

[নোটঃ উর্দু ভাষার খ্যাতিমান গল্পকার Sadat Hasan Manto এর নামে ব্রিটিশ সরকার অশ্লীলতার অভিযোগ আনলে; তিনি বলেন –‘লেখায় অশ্লীলতা থাকলে বুঝতে হবে, আমরা সেই সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি (“If you find my stories dirty,the society you are living in is dirty. With my stories, I only expose the truth)।” ব্রিটিশ সরকার তাকে শাস্তি দিতে না পারলেও, দেশান্তরিত মান্টোকে পাকিস্তান সরকার ঠিকই এ অপরাধে তাকে সাজা দেন । পাকিস্তানে বসে মান্টো লিখেন – আমার মৃত্যুর পর আমাকে পুরস্কৃত করা হবে, আর সেদিন আমি বিজয়ী; হেসে বলব –কে বড় ছোট গল্পকার —আমি না ঈশ্বর ? হয়েছিলও তাই!]

দিকে সাভার, ওদিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী; মাঝখানে প্রমত্ত পদ্মা নদী। শীতের সকালে বেড়িয়ে পৌঁছালো সেই গোধূলি বেলায়,ভাবছিল রাতের কাম দিনেই শেষ করে সাভারে ফিরবে সন্ধ্যা বেলায়।তা আর হয়ে উঠল না তার। পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অভ্যাস মতো যানজট আজকে তাকে এখানে নিয়ে আসল প্রায় ৫ ঘণ্টা পর। গাড়ী থেকে নেমে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট কিনে আগুন দিলো তাতে; একটু এগিয়ে যেতেই সে বাঁশের পুলটা দেখতে পেল। না এবারই প্রথম নয়। এখানকার ঘরগুলো, রাস্তা, এমনকি ল্যাম্প পোস্টের বাল্বগুলোও তাকে চিনতে পারে, যদি না পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের বদলিয়ে থাকে; ভাবছে ধীরে ধীরে এগুবে সে। খালের ধারে মাঠটি পরিষ্কার আর ফাঁকা আছে, শীতের গোধূলি তাই হাল্কা কুয়াশা পরছে বলে মনে হয়। ডঃ জারিফুর রহমান পি এইচডি, একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে হন হন করে হেঁটে বাঁশের সাঁকোটি পার হতে না হতেই, হাতের সিগারেটটিকে পায়ের তলায় পিষিয়ে মারল, যেভাবে সে নিজের বিবেক, নীতি,মূল্যবোধ,আর চরিত্রকে পিসে ফেলেছে ৫০ বছর আগে। এ জন্যই কেউ কেউ তাকে জাউরা জারিফ বলে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যে; ডঃজারিফ নিশ্চিত যে মিউনিসিপ্যালিটির ল্যাম্প পোস্টে লাগানো বৈদ্যুতিক বাতিটি তার দিকেই তাকিয়ে হাসছে। সে দেখতে পেলো একটা খোলা উঠান— ভাগাড়ও বটে, কত শিশু! হয়তো এরাও আজ আমার মতো খয়রাতি টাকায় পি এইচ ডি করে নামের আগে ডঃ আর পিছে পি এইচ ডি লিখতে পারতো! যাকগে। সে এগুতে লাগলো ; পাতলা, মোটা , হাল্কা অথবা ভারী নিতম্বের নারীরা এখানে, ওখানে শুয়ে আছে কেউ বেঞ্চে, কেউ খাটে। নানা জন, নানা বর্ণ, হরেক রকম সাজ,ক্রিস-ক্রস ফ্যাশনে পাকা, সামনে এবং শুয়ে আছে – যেন সাদা কালো ভুবন থেকে দূরে আরেক রঙ্গিন জগতে আসলো। সে উঠোন পেরিয়ে কোণার বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু সেই বাল্বটি যেটি তার অস্পষ্ট সূঁচ-তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল, তার সংকল্পকে নড়বড় করে দিল এবং সে কয়েক পা দূরে বড় বাড়ীটি হতে; এ বাড়ীর পাশেই একটি ছোট নর্দমা। এ নর্দমা দিয়েই পৌর কর্তৃপক্ষ যৌন পল্লীর নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধরে রাখছে। নর্দমা পেরিয়ে উঠান পার হতে মাত্র কয়েক কদমের ব্যাপার। তারপর সেই কাঙ্ক্ষিত বাড়ীটি।
জারিফুর রহমান সেই সাভার হতে যানজটের তীব্র যন্ত্রণা পেরিয়ে কিন্তু এখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তার চিন্তা,তার পদক্ষেপের চেয়ে দ্রুত গতিতে চলছিল। চলতি পথের মাঝে অনেক কিছুতেই তার মন বসছে না। না সে কোন অস্থির প্রকৃতির মানুষ নয়। সে খুব ভাল করেই জানত যে সে একজন পতিতার কাছে যাচ্ছে এবং কেন সে তার কাছে যাচ্ছে তা সে আরও ভালভাবে জানতো।
তার দরকার একজন নারী—একজন নারী, তা সে যে ধরনের নারীই হোক না কেন— বুড়ি, ছুড়ি, কচি, ডিভোর্সি , মোটা,কালো, ফর্সা। একজন নারীর প্রয়োজন হঠাৎ করে দেখা দেয়নি; এটিই তার বর্তমান রূপ; না পাওয়া পর্যন্ত সদা তৎপর থেকেছে – বাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কর্মক্ষেত্রেও সে সুযোগ্কে হাত ছাড়া করেনি। হঠাৎ, কেন জানি তার মনে হল যে সে আজ একজন মহিলা ছাড়া আর একটি মুহূর্তও বাঁচতে পারবেন না। এমনটা মনে হলেই সে প্রমত্ত পদ্মা পাড়ি দিয়ে এখানে চলে আসে। তাকে অবশ্যই একজন মহিলা পেতে হবে – এমন একজন মহিলা, যার ঊরুতে সে হালকা থাপ্পড় মারতে পারবে, যার কণ্ঠস্বরে সে শুনতে পাবে যৌনতা, এমন একজন মহিলা, যার সাথে সে সবচেয়ে অশ্লীলভাবে কথা বলতে পারবে।
জারিফ একজন শিক্ষিত, বিচক্ষণ ধরনের মানুষ; চাকরি করেন। সে অধিকার-অন্যায় জানে।কিন্তু এ বিষয়ে আর ভাবতে পারছিলনা। তার গভীরে একটা আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল; এটা কোনোভাবেই নতুন ইচ্ছা ছিল না। এটি এর আগে বেশ কয়েকবার মাথা চাড়া দিয়েছিল এবং প্রতিবার তার পক্ষ থেকে অসংখ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হতাশার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। পরাজিত হয়ে, সে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছল যে সে একজন নারী না পাওয়া পর্যন্ত সন্ধান চালিয়ে যাবে।সে উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠল এবং কোন একদিন দেখা যাবে যে সে একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকা কোনও মহিলার উপর আক্রমণ করে বসতে পারে; ঠিক যেমন একটি পাগলা কুকুর যে কোনও পথচারীকে কামড়াতে পারে।
এতক্ষণে সেই প্রতিচ্ছবি তার মন থেকে চলে গেছে – একজন মহিলার প্রতিমূর্তি যার ঠোঁটে, সে ভেবেছিল, সে ফুলের উপর প্রজাপতির মতো করে নিজেকে বিশ্রাম দেবে। এবার সে তার গরম ঠোঁট দিয়ে সেই ঠোঁটগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে চাইল। মহিলার কানে মিষ্টি কিছু বকবক করার চিন্তাও তাকে এতক্ষণে ধরে বসেছে। সে জোরে কথা বলতে চেয়েছিল- যা নগ্ন ছিল।
এখন তার মনে একক, সম্পূর্ণ একটি সেক্সি নারী। সে এমন একজন মহিলাকে চায় যাকে দেখতে সেক্সি মনে হয়। সে আসলে এমন একজনকে খুঁজছিল সে হবে অর্ধেক মহিলা এবং অর্ধেক পুরুষ ।
একটা সময় ছিল যখন জারিফ ‘নারী’ শব্দটি মুখে নিলেই তার চোখে এক বিশেষ ধরনের আর্দ্রতা অনুভব করত, বিশেষ অঙ্গে ভেজা অনুভব করতো; যখন নারীর কথা ভাবলেই সে আনমনা হয়ে যেত। সে উচ্চারণ করত – ‘নারী’ – অত্যন্ত যত্ন সহকারে, যেন এই নিষ্প্রাণ শব্দটি অসতর্ক উচ্চারণে ভেঙে যেতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে সে এই নির্ভেজাল আনন্দটি উপভোগ করে চলেছে আজ অবধি।
জারিফ এবার স্বপ্নের জগৎ ছেড়ে বাস্তবে। অনেক দিন ধরে সে তার এলোমেলো চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু এখন তার শরীর ভয়ানকভাবে জেগে উঠেছে। তার কল্পনার দ্রুততা তার শারীরিক সংবেদনগুলিকে অনুভূতির এমন সূক্ষ্ম অঞ্চলে পরিণত করেছিল যে, জীবন তার জন্য সূঁচের বিছানায় পরিণত হয়েছিল। প্রতিটি চিন্তা এক একটি বর্শায় পরিণত হয়েছে এবং কল্পিত মহিলাটি এমন একটি আকৃতি ও রূপ ধারণ করেছিল সে চাইলেও, তার বর্ণনা করা কঠিন ছিল।
জারিফ একসময় মানুষ ছিল; কিন্তু এখন সে মানুষকে ঘৃণা করে, এতটাই যে সে নিজেকেও ঘৃণা করে এখন। আর সেজন্যই সে নিজেকে এমনভাবে হেয় করতে চায় । সে বলে উঠে — “আমি নিজেকে পরিমার্জনা করতে ব্যর্থ হয়েছি, কারণ আমার চারপাশেই নোংরা। আমি এখন এই ময়লা দিয়ে আমার দেহ ও আত্মার প্রতিটি পরমাণু এবং ছিদ্র ধ্বংস করতে চাই। আমার নাক, যেটা একসময় সুগন্ধের খোঁজে বেড়াতো এখন সেটা দুঃগন্ধ শুঁকবার আশায় কাঁপছে। আর তাই আজ পুরানো চিন্তার চাদর ত্যাগ করে এই পাড়ায় চলে এসেছি, যেখানে সব কিছু একটা রহস্যময় দুর্গন্ধে ঢেকে আছে। এই পৃথিবী ভয়ংকর সুন্দর! আমি এখানেই স্নান করবো ।”
বাতির আলোয় জারিফ ধান্দার চোখে উঠানের দিকে তাকাল। দেখে মনে হয়েছিল যেন বেশ কিছু নগ্ন মহিলা সেখানে শুয়ে আছে-কারো খোলা পিঠ, অন্যরা মুখ নিচু করে; এলো মেলো শাড়ি আঁচল, অন্তর্বাস খুল্লাম খুলা ।সে সংকল্প করল কোনমতে মাঠ পেরিয়ে কোণার বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠবে। কিন্তু মিউনিসিপ্যালিটির বাল্বটি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সে এগুবার সাহস না পেয়ে পিছিয়ে গেল এবং থমকে দাঁড়ালো। ব্যর্থ হয়ে ভাবতে লাগলো —“ বাতিটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? কেনইবা আজ পথে পথে পাথর ছড়ানো।“
সে জানত যে এটি তার কল্পনার ছবি এবং বাস্তবতার সাথে এর কিছুই মিল নেই। তবুও, সে পিছু হটল এবং সে তার মাথার সমস্ত কুৎসিত চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলার জন্য নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে রইল। সে বিশ্বাস করতে শুরু করল যে যে বিগত পঞ্চাশ বছরের এই দ্বিধা যা তাকে উত্তরাধিকার হিসাবে দান করা হয়েছিল সেটা আজ বাতির মধ্যে ঢুকে গেছে। সেই সঙ্কুচিত দ্বিধা, যা সে ভেবেছিল সেই ফেলে আসা দ্বিতীয় চামড়ার মতো বাড়িতে রেখে আসা মুখোশ, তার আসার অনেক আগেই এখানে পৌঁছে গেছে –এখানে সে তার জীবনের সবচেয়ে নোংরা খেলা খেলতে চলেছে। এমন একটি খেলা যা তাকে পতিতাদের বিসটা দিয়ে ঢেকে দেবে এবং তার এ দিয়েই তার আত্মাকে করে ফেলবে পুত -পবিত্র ?
এই বাড়িতে এক মধ্য বয়স্ক মহিলা বাস করে ।সে সকল সময় কালো চশমা পরে থাকে; তার সাথে চার-পাঁচজন যুবতী থাকে , এরা রূপের পসরা বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে – তা দিনের আলোতে হোক বা রাতের অন্ধকারে। এই মহিলারা সারা দিন রাত মেশিনের মতো কাজ করে। এক বন্ধু জাউরা জারিফকে তাদের কথা বলেছিল, সেখানে অসংখ্যবার প্রেম ও সৌন্দর্যের লাশ দাফন করতে দেখেছে সে। বন্ধুটি জারিফকে বলত, “যখনই আমি একজন মহিলার প্রয়োজন অনুভব করি তখনই আমি দৌলতদিয়ার পতিতালয়ের সবচেয়ে পছন্দের সঙ্গী খুঁজে পাই। ঈশ্বরের কসম, এখানকার নারী যেন নারী নয়; এক একটা ডানা কাঁটা —-! আল্লাহ যেন তাকে কেয়ামত পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখেন!”
চার-পাঁচজন নারীর মধ্যে জারিফের মনে বিশেষ কোনো কিছু নাই। “আমি কোনটা পাব তাতে আমার আপত্তি নেই। আমি নগদ টাকা তুলে দিবো আর বিনিময়ে দু দণ্ড শান্তি নিয়ে সাভারে ফিরে যাবো! … একজন মহিলাকে আমার হাতে তুলে দিলে , আমার এক সেকেন্ড বিলম্ব করা উচিত নয় । কোন অলস সময় নষ্ট না করে কাজে নেমে পরা উচিত। সামান্যতম ভদ্র কথোপকথনও নয়। ধরো তক্তা, মারো পেরেক অবস্থা।“
অস্থির হয়ে ওঠে ডঃ জারিফ। তার মধ্যে একটা কোলাহল ওঠে। সে এখন এতটাই দৃঢ়ভাবে মনস্থির করে ফেলেছে যে, যদি পাহাড় তার পথ বন্ধ করে দেয়, সেগুলিও সে ডিঙ্গিয়ে ওই বাড়িতে যাবে। কিন্তু মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের লাগানো বাতি, যা বাতাসের স্বল্প ঝাঁকুনিতে ছিঁড়ে যেতে পারে, সেই বাতির আলো তার সামনে একটি অপ্রতিরোধ্য বাধা হয়ে দাঁড়ালো। জারিফুর রহমান, নিজের লালিত অভ্যাস মতো পৌর কর্তৃপক্ষকে গালাগাল দিতে না দিতেই বাতিটি যেন প্রতিধ্বনি করতে লাগলো – “জারিফ তুই একটা খবিশ?”
সে দেখতে পেলো পাশেই একটা পানের দোকান খোলা। আলো ছিল। নগ্ন বাল্বের আলোর চারপাশে মাছিগুলো ভনভন করে যেন তাদের ডানাগুলো আগুণখেকো হয়ে গেছে। জারিফ মাছিগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখার পর তার জ্বালা যেন বেড়ে গেল। ‘এটা করার’ সংকল্প, যা নিয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বারবার সেই মাছিগুলির সাথে পরস্পরের সংঘর্ষের ধাক্কা তাকে এতটাই বিচলিত করেছিল যে তার মাথার ভিতর একটা ঝড় বয়ে যেতে থাকে। “আমি ভয় পাচ্ছি… আমি আতঙ্কিত… আমি আলোকে ; বাতিকে ভয় পাচ্ছি… এটা আমার সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে ! আমি কাপুরুষ… আমি কাপুরুষ… আমার লজ্জিত হওয়া উচিত আমার নিজের জন্য।“
জীবনের কিছু চিহ্ন তখনও জারিফুর রহমানের সামনে, অর্থাৎ অন্য দিকে দৃশ্যমান ছিল পতিতালয়ের দোকানগুলোর উপরে সারিবদ্ধভাবে যৌনশিল্পীদের ঘর খানিকটা খালের ওপাশে। সরাসরি তার সামনে, একটি কালোমতন মহিলা একটি জানালার পাশে বসে একটি বৈদ্যুতিক আলোর তীক্ষ্ণ ঝলকানিতে নিজের উন্নত বক্ষ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। একটি নগ্ন বাল্ব সরাসরি বেশ্যার উপরে ঝুলছে এবং ঠিক যেন আগুনের একটি সাদা-গরম বলের মতো দেখাচ্ছিল যা ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে এবং জারিফুরের মাথার উপর দিয়ে গলে গলে পরছে ।
জারিফ সেই কালো মহিলার কথা গুরুত্বের সাথে ভাবতে শুরু করছিল যখন সে বাজারের দূরপ্রান্ত থেকে কিছু মোটা কণ্ঠস্বর সবচেয়ে অশ্লীল শ্লোগান শুনেছিল সে দাঁড়িয়ে ছিল বটে কিন্তু ওই প্রান্তটি তার কাছে দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু অশ্লীল কিছু শব্দ আর গালাগাল কানে এসেছিল।
জারিফ এখন নিজেকে আগের চেয়ে বেশি তুচ্ছ মনে করতে লাগলো। “তুমি… তুমি… তুমি… তুমি কী? আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি … সব পরে, তুমি কি? তুমি এও নও ,ওটাও নও… তুমি মানুষও নও, জানোয়ারও না… তোমার শিক্ষা, তোমার পি এইচ ডি, তোমার বুদ্ধি, তোমার ভালো থেকে মন্দ বলার ক্ষমতা- সবই নষ্ট হয়ে গেছে। দেখ , তিনজন মাতাল লোক আসে। তোমার মত নয়, তারা কোন স্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আসেনি। কিন্তু কোন ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই, তারা বেশ্যার সাথে কথা বলে, তারা হাসে, তারা খুনসুটি করে এবং তারা আমার খাদে উঠে যায় ,আমার নদীতে সাঁতার কাটে ইচ্ছেমত; যেমন সহজ … যেন তারা একটি ঘুড়ি উড়াতে যাচ্ছে। আর তুমি… তুমি… তুমি…. ভালো করেই জানো, তোমার কী করা উচিত, বাতির ভয়ে বাজারের মাঝখানে স্টুপিডের মতো দাঁড়িয়ে থাক! তোমার ইচ্ছা ,এতই পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ, তবুও তোমার পা তোমাকে এগিয়ে নিতে অস্বীকার করে… তোমার লজ্জা!’ এটা তোমার কাপুরুষতা।“
পতিতার এমন খেদোক্তিতে এক মিনিটের জন্য নিজের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা তার মধ্যে জেগে উঠল। তার পা কেঁপে উঠল এবং সে সরে গেল, এক লাফে নর্দমা পার হয়ে পতিতালয়ের দিকে যেতে লাগল। সে সিঁড়িতে উঠতে চলেছে এমন সময় একজন লোক নেমে আসছে। জারিফ দ্রুত পিছিয়ে গেল। সে নিজেকে আড়াল করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা লোকটি তাকে কোনও কর্ণপাত করলো না ।
লোকটি তার মূল কুর্তা খুলে তার কাঁধে রেখেছিল। তার ডান হাতের কব্জিতে সুগন্ধি। ঘামে তার শরীর ভিজে গেছে। জারিফের অস্তিত্ব অস্বীকার করে লোকটি উঠান পেরিয়ে নর্দমা লাফিয়ে চলে গেল। জারিফ ভাবতে লাগলো কেন লোকটা তার দিকে একবারও তাকালো না।
এদিকে, সে বাতির দিকে যেই তাকাল অমনি প্রতিধ্বনি শুনতে পেলো— “তুমি কখনই তোমার পরিকল্পনায় সফল হবে না কারণ তুমি কাপুরুষ। তোমার কি মনে আছে, গত বছর, যখন তুমি তোমার সহকর্মীটিকে বউ ঘোষণা করেছিলে, মেপেছিলে শরীরের ভাঁজ, কিন্তু বিয়ের প্রসঙ্গ তুলতেই তোমার শরীরের প্রতি আউন্স শক্তি কেমন করে হারিয়ে গিয়েছিল? তুমি কতটা ভয় পেয়েছিলে? ক্যান্টনমেন্ট এ ডেটিং করতে গিয়ে এমপি পুলিশের কাছে থতমত খেয়ে ভয়ে কাপড় ভিজিয়েছিলে কিংবা তোমারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পরে তুমি সাহস দেখাতে পারনি? মনে আছে? সেই চিন্তা কীভাবে তোমাকে ভয় দেখিয়েছিল? তুমি ভয় পেয়েছিলে? আজ আমি দেখব, তুমি সিঁড়ি বেয়ে কিভাবে উপরে উঠো … আমি দেখব তুমি কিভাবে সাহস যোগাও।“
জারিফের সংকল্পে যা কিছু ছিল তা নিমিষেই উবে গেল। তার মনে হতে থাকে যে সে সত্যিকারের প্রথম শ্রেণীর একজন কাপুরুষ। অতীতের ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে থাকে একে একে ।তার মন, বইয়ের পাতার মতো একটা তীব্র দমকা হাওয়ায় এবং প্রথমবারের মতো সে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারলো যে তার অস্তিত্বের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অস্থিরতা লুকিয়ে রেখেছে এবং এটি তাকে করুণ কাপুরুষে পরিণত করেছে।
সিঁড়ি দিয়ে কারো নামার শব্দ জারিফুর শুনতে পেলো । সে কেঁপে উঠলো। একটি মেয়ে যে রাতেও কালো চশমা পরেছিল এবং যার সম্পর্কে সে তার বন্ধুর কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছিল। জারিফ ঘাবড়ে গেল। সে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো; মেয়েটির দরাজ কণ্ঠে জারিফ ভড়কে গেলো , “তুমি, ওখানে কেন সোনা , একটুও … ভয় পেওনা, আমার ভালোবাসা… এসো… এসো ।“ সে এবার জোরে ডাক দিল, “এসো… এসো।“
সে ভয়ে কুঁকড়ে গেলো , আবার শুনতে পেলো , “এসো, আমার প্রিয় সোনা, এখন এসো।“
জারিফ দৌড় দিলো আতংকগ্রস্থ হয়ে। লাফিয়ে নর্দমা পার হতে গিয়ে, সে নর্দমার মাঝখানে উপুড় হয়ে পরে গেলো;পুরোমুখ পতিতাদের মলমূত্রে ভরে গেলো।

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

ঘসেটি বেগমের একটি গর্ভপাত

না!এটার পতন ঘটাতেই হবে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় তারা দুজনেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিশ্বাস আর রাখা যাচ্ছে না।তবে উত্তেজনায় বিস্ফোরণ ঘটেনি তো?  হয়তো?  আবেগের গতি বিজ্ঞানের বেগ সামলাতে পারেনি বলে ছিন্ন-ভিন্ন হতে যাচ্ছে আজ আমাদের মান মর্যাদা। দাদা চুপচাপ; কি করবে বলে নয় বরং ভাবছে অন্য কথা।কিন্তু ঘসেটি বেগম অভ্যাসবশতঃ কথা বলেই চলেছে।  আপনি কম দামের জিনিশ কিনেন ;কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল কিনা? না, দাদা বিরক্ত  এতে হচ্ছেনা আবার উত্তর দেয়ারও চেষ্টা করছে না। দেশ, পাত্র , কাল ভেদে ঘসেটি বেগমের জ্ঞানের উচ্চতা গণ বিনোদনের উপায়ও বটে।তাই দাদা বিনোদিত হচ্ছে কিংবা হবার চেষ্টা করছে বটে! 

সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উর্দ্ধমূখী আর সম্প্রসারিত পেটের কথাটির কথাটি মনে হলে দাদা, হো হো করে হেসে উঠে। পাশে বসে থাকা ডক্টরেট করা সহকর্মীটি আগুনটি যে জ্বলেছে সেটা বুঝে নিল। পাবলিক বাসে প্রাইভেট কথা বলায় ইঙ্গিতে ডক্টরেট জানতে চাইল – ”ধোঁয়ার চেয়ে আধার ভালো।”  তাই ছেড়ে দেন। ওটা আপনার, আপনি নিশ্চিত হলেন কি করে?  এ রুম;  ও রুম, তারপর স্বামী তো আছেই। দাদার পছন্দ হলো কথাটি। স্বামীর বলে চালাতেই সমস্যা কোথায়?  কিছুদিন আগে অফিসে এরকম ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্বামী পরিত্যক্তা ছিল আর ছেলেটি বর্জনীয় দোষে দুষ্টু।  কিন্তু আমাদের দুজনেরই তো সামাজিক রক্ষাকবচ আছে – এটা মনে করে একধরনের সুখানুভূতিতে ভাসতে লাগল দাদা। সম্বিৎ ফিরে পেল ঘসেটি বেগমের ফোনে।মৃদু চাপ অনুভব করল হাতে , ডক্টরটির হাতের, তা আর বুঝতে বাকী রইল না এবং কি বুঝাতে চায় তাও দুবোর্ধ্য নয়। হ্যালো বলতেই ওপার হতে বলে উঠল- আর চাপ নিতে হবে না।  সবকিছু ম্যানেজ করা হয়েছে।কেবল পাশে চাই তোমাকে ওই দিন, যেদিন --------- পতন ঘটাতে হবে। না, দাদা  অবাক হয়নি। আবেগ কিংবা আবেশে থাকলে নাতনি আমার, তুমি বলে সম্বোধন করে উঠে। বিষয়টিকে একেবারে উপভোগ্যহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বরং শিরায় একধরনের শিহরণ কাজ করে বটে। 

আজ শনিবার। অফিস বন্ধ। ইতিমধ্যে মোবাইলে ফোন এসেছে কয়েকবার। ক্লিনিকে যেতে হবে। ঘসেটি বেগম অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে আর বাসায় বলেছে ভিন্ন কথা যা স্বভাবের দোষে হয়ে গেছে  সে টেরই পায়নি। মীন যেমন সলিলের উপস্থিতি টের পায় না। তাই তিন দিনের অফিস ট্যুরের কথা বলে বাসা হতে বেরিয়েছে সে। ফলে এতো তাড়া। সহকর্মী ডক্টরেটটিও ফোন করেছে বার কয়েক।  তাই বাসা হতে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটতে হলো ক্লিনিকে। পতন ঘটানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে ; এ টেবিল হতে ওই টেবিল। অবশেষে অপারেশন টেবিলে। না । উদ্বেগ নয় বরং উচুঁ দাত দুটো কেলিয়ে হাসছে। আমি কি শোনাবো সান্ত্বনার বাণী তার বদলে সে আমাকেই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় করছে উদ্বেলিত।  

ঘষেটি বেগম এখন অপারেশন টেবিলে। শীতের সকালে পায়াচারী করছে। নার্সটি পাশের কক্ষে বসার তাড়া দিয়ে গেলো কয়েকে বার। কিন্তু ভাবনার জগতে কতকিছুই তো আসছে মনে। আমরা পুরুষরা বিশুদ্ধতার কথা বলি কেবল নারীদের জন্যই । এক নারীর জন্য কত রকম উপায় আবিষ্কার  করছে পুনরুৎপাদন বন্ধ করার করার জন্য। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে কয়টা ? ফসলটি কি আমারই নাকি  অন্যকারো----- এমন সময় নার্সের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। নার্সটি বলছে – আপনার মতো স্বামী পাওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার । অর্ধাঙ্গীনির জন্য এতো ব্যাকুলতা। অর্ধাঙ্গীনি না, সেতো কুলাঙ্গীনি  আর – আমার এমন অস্ফুটস্বরে নার্সটি – ”ভাই কিছু বললেন ?”  না, তেমন নয় – আমি বলে উঠলাম। আর কতোক্ষণ লাগবে?  সে দৃঢ় চিত্তে বলে উঠল- আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। ও!  আমি  ওটি রুমের সামনে হতে চলে আসলাম। আমি শান্ত আর ধীর । নিচে নেমে সিগারেট ধরালাম। কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়ার ন্যায় আমার চিন্তাগুলোর আলু–থালু অবস্থা। ঠিক যেন রাবনের মৃত্যুর পর মন্দোদরীর দশা। হায়রে মন্দোদরী,স্বামী অন্তঃপ্রান। এমন সময় আমার অর্ধাঙ্গীনির ফোনে মনটা আরো ছন্দময় হয়ে উঠল। কি সব জঙ্গলের পিছনে ঘুরছি, মিথ্যাময় ছলনায় সময় কাটাচ্ছি। আর না ।ওপার হতে জানতে চাইলে, বললাম দুই  থেকে তিন দিন বাসায় ফিরবো না । বউ জানে অফিসেই থাকবো, দাপ্তরিক ব্যস্ততায় যা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলেই কি তাই? যা আমার মন জানে আর জানেন অন্তর্যামি।  

(কৈফিয়ৎ: কাল্পনিক গল্প ,চারিত্রিক সাদৃশ্যতা অনভিপ্রেত)

একটি অসম্পূর্ণ সম্পর্কের সফল সমাপ্তি


                                    


কাল বেলা ব্যাংক ভবনের তিনতলার চায়ের দোকানে বসে ডান হাতে প্রাগতৈহাসিক যুগের কাপে এক কাপ চা  বাম হাতে একটা বেনসন বলতে সাদা বেনসন,যাকে পুজিঁবাদী দুনিয়ার বেনিয়া গোষ্ঠী নামকরন করেছে 'ব্লু গোল্ডহিসেবে।অথচ  পণ্যটির পোষাকি নাম হচ্ছে বেনসন লাইট,যা ধরানো নিয়মিত অভ্যাস  দাঁড়িয়েছে।আজকেও এর ব্যত্যয় হয়নি। মাঘের মিষ্টি রৌদ্রে মুখোমুখি ডক্টরেট ডিগ্রিধারি সহকর্মীটির সাথে যখন সমকালিন রাজনীতির কথা বলছিলামকরছিলাম উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ;পাশে আরএক আগন্তুকের তখন হৃদয়ের শবচ্ছেদে মুখাগ্নি হচ্ছিল বুঝতেই পারিনি। ভবনে ব্যাংকক্লিনিক আর পোস্ট অফিস হেতুপ্রশিক্ষণার্থীকর্মকর্তার পাশাপাশি আমজনতাও আসে সবকিছুতেই ভাগাভাগি করতে।তাইআগন্তুকের দাদা সম্বোধনে খানিকটাঅবাক হলাম। আমরা এখানে স্যার সম্বোধনের কালচারের ক্যারিকেচারে অভ্যস্ত।বামে-ডানে,উপরে -নিচে স্যার হয় বলো না হয় শুনো। জ্বী , স্যার,হুম স্যার,করছি স্যারদিচ্ছি স্যার হয় বাঁশ নয় আকাশ (এতো তেল যা মধ্যপ্রাচেও হয়না)এমন পরিবেশ আরপরিস্থিতিতে বিস্মিত হওয়ারই কথা। ডক্টরেটটি সিরাজুম মুস্তাকিন নামক ধর্মানুসারি হওয়ায় তার দৃষ্টি আমার দিকেআর আমার দৃ্ষ্টিআগন্তুকের দিকে। বলতেই হলো অভ্যাস বশঃত –জ্বী দাদা বলেন।

-দাদা আপনাকে আমি চিনি। আপনি কি আমার জীবনের গল্পটা শুনবেনসে বলে উঠল।

-দাদা,না শোনার কোন কারণ নেই। কারন এখানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হয়।নানা রকম মানবিকঅমানবিক,ধান্দাবাজীসহ প্রমূখ মহামান্যরা তদবির নিয়ে আসে আত্মীয়অনাত্মীয় সকলেই। পাশে থাকা সহকর্মীটি  বিষয়ে সিদ্ধহস্ত বলে খুবিই বিরক্ত।আমার হুঁ  সে ভ্রু কুঁচকালো।

অতঃপরসেই দাদার বলার গল্পটি ( বিস্তারিত পরবর্তীতে), তাঁর ভাষায় শুনুন---

হ্যাঁলোম্যাসেন্জারে নক করেছিলাম আমি।

হুম-তার এমন উত্তরের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কথোপকথন , কালক্রমে একটি সম্পর্কের দিকে এগোতে শুরু করল এবং কারণ কিংবা অকারণে আমাদের কথা হওয়ার পাশাপাশি দেখা করতাম আমরা। শুরুটা তিন বছর আগের কথা বলে গণিতের স্বাভাবিক নিয়মে২০১৭ সালেই হবে। মাস ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে – দাপ্তরিক কাজে  দেশের কোন বঙ্গের জলে –জঙ্গলে গিয়েছিলাম আরভাসমান নৌকায় আমাদের সূচনা হওয়া সম্পর্কটি কালক্রমে দৃঢ় হতে শুরু করেছিলযার সূচনা ঘটেছিল হাইহ্যাঁলোর মাধ্যমে 

এরপরসময়ের আবর্তনে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বন্ধুর পথ অতিক্রম করা। হাত ধরার চাইতে ছাড়তে হয়েছে বেশী , আর এবার ছাড়তেহলো একেবারেই। না ছাড়লে হয়তো  গল্পের সৃষ্টিই হতো না।

নরম – গরম বাক্যালাপে একটু একটু করে গভীর হওয়া সম্পর্কটি উষ্ণতা পেয়েছিল। না ; বিছানা গরম করা হয়নি। কারণসে চায়নি আর আরো পরে উদঘাটিত হলো যে সে গরম করছিল আর একজনের শিতল বিছানা। আমিও জোর করিনিধর্ষণের সঙ্গায় পড়বেবলে। আমি চেয়েছিলাম পারস্পরিক সমঝোতায় উত্তপ্ত হবে বিছানা। যার ফলে , বদ্ধ ঘরে হোটেল ভাড়ার সাথে যোগ হয়েছে টিস্যুখরচের হিসাব। সরল অংকের হিসাবে অর্থের আর সময়ের বিনিয়োগে সুদ আর পাওয়া যায়নি। তবু বিনিয়োগ করে যাচ্ছিলাম-জনকল্যাণের স্বার্থে। সুদের কথা যে মনে আসেনি তা নয়। বরং তিন বছর পর -২০২০  যে ভিশনের কথা তুমি বলে ছিলেশুরুতেইআমার মনে পাকাপোক্ত হলো এটা যেতুমি কেবলইতোমার প্রয়োজনেই আমি। কখনো অর্থেকখনো স্বার্থে আর প্রতিনিয়তই দরকারেএটা কিংবা ওটা। অথচ তুমি বহু আগ হতে অন্য কারোর শিতল বিছানা গরম করছো  মনে পড়ে যাচ্ছে – কেনা কাটা , সিনেমা দেখাটুকি টাকি সবই বিল আমার হাতে  ঠিক যেন সমানুপাতিক হারে আমার পকেট যত ঠান্ডা হতো অন্যের বিছানা ততোগরম হতো  আমার অর্থের দিকে তোমার যতো নজর ছিল , ততটাই অবহেলা করতে আমার ইচ্ছা আর ভালো লাগার বিষয়গুলোর প্রতি। আমার প্রতি তোমার অবহেলা আর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আজ  লেখার জন্ম বলে , আমিও এখন তোমার প্রতিও কৃতজ্ঞঅনেকখানি।

 মার্কেট হতে  মার্কেট, তোমার পছন্দের জিনিশ কেনা আর আমার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট ক্রমশঃ কমে আসা আমাকে তবুওভাবিত করেনি। শুধুই কি তাই অফিস  বাহিরে কিংবা বিদেশ গেলে - তোমার ফরমায়েশ মতো কেনা-কাটা করা। পছন্দ – অপছন্দেরধান্দায় আমার বিপর্যস্ত অবস্থা ! এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল – ধ্যাত্তেরি কি ভাবছিভুলেই গিয়েছিলাম যে প্রয়োজন নেইবলে ফেসবুক সহ সকল সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমাকে ব্লক করলেও ফোন বুকে তোমার নম্বরটি ব্লক করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর তা হয়তো হবে। ফোনটি কেটে দিয়ে আবার ভাবনার জগতে ডুবতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো–”তোমার বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের কথা-তারা আমার সামনে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করতো-তুমি বরবরই তোমার স্বার্থের পক্ষেগোপনে গোপনে লিয়াজোঁ রক্ষা করো সবার সাথে। ” তারা জানতো না যে তুমি অতি দক্ষতার সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করো আমারও স্বাথে। তারা এও বলে যেযা শুনে আমি চমকালামযদিও তুমি তা অস্বীকার করেছো বরাবরই আমার সাথে। আমাদের অভিসারে এমন হয়েছে তার ফোন তুমি পেয়েছো আর আমাকে মিথ্যে বলেছো যেএটা বরাবরই তার পক্ষ হতে এক তরফাতোমার গুছিয়ে বলা মিথ্যায় আমি বরাবরই বিশ্বস্ত শ্রোতা। যাহোক,তারা বলেছিল যে কলেজ জীবনে হতেই তোমার জীবনে তার অনুপ্রবেশ এবং শেষ পর্যন্ত তুমি তাকেই বিয়ে করে প্রমাণ দিয়েছো-তুমি ভালো  দক্ষ খেলোয়াড়। জীবনযুদ্ধে আমি বরাবরই কাঁচা জীবনের অংক মিলাতে।নইলে স্কুল,কলেজ  বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে যার গণিতে,পরিসংখ্যানে এমনকি কম্পিউটার  টপ স্কোরার  সেই আমার এটি বুঝতে এতো সময় লাগে যে নববর্ষভালোবাসা দিবসেহ্যাপি নিউ ইয়্যার তুমি বরাবরই গিফট নাও যা তোমার অত্যন্ত প্রিয়।কিন্তু তুমি এক টাকা খরচ করে আমাকে এমএসএস করে উইশ করার সৌজন্যটুকুও দেখাওনি। বাদ দিলাম  সব। আমার জন্মদিনে,তিন বছরে উইশটুকু কি করেছোমনে পড়ে ? না এমনটি হয়নি।কারণ নেয়া তোমার যত প্রিয় দেয়া তোমার ততটাই অপ্রিয়।

এখন আমি আর তার ফোন ধরিনা অথবা সে আমারে পায়না।কারণে কিংবা অকারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নক করিনা বা করতে হয়না।এভাবেই আমি একটি অসম্পূর্ণ সম্পর্ককে সম্পূর্ণতা দিলাম!  

(রচনাকাল ২৭.০১.২০১৯ খ্রি:

(কৈফিয়তঃ এটি কাল্পনিক রচনা তবে কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা কাকতালীয় মাত্র)। 

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

ঘসেটি বেগমের একদিন

ঘসেটি বেগমের একদিন
সকালের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল কাকের কর্কশ ধ্বনিতে। ঘুমটা এমনিতেই ভালো হয়নি। নানাবিধ ধান্দায়। মোবাইলটা হাতে নিয়ে অর্ধশতাধিক মিসডকল দেখে আপাতঃত পুলকিত হল। না অন্যকারো ফোন নয়। অধিকাংশ ফোন এসেছে স্বামী নামক নিরীহ জন্তুটার। তাকে অবহেলা করে এক ধরনের আনন্দ লাভ করে ঘসেটি বেগম। প্রায় দুশো মাইল দূরে বসে বউকে ফোন করাই যেন তার কাজ। কখনো ফোন ধরে;কখনো ফোন ধরে না।আবার কলব্যাকও করারও প্রয়োজনীয়তা সে বোধ করেনা। তাই ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে শাওয়ার নিতে চলে গেল। শাওয়ারের এই সময়টা ঘসেটি বেগমের প্রিয় সময়। এই সময়ে সে সারাদিনের পরিকল্পনা করে যাবতীয় কুকর্মের। দপ্তরে বসে কার কার কক্ষে যেতে হবে, কার সাথে সময় কাটাতে হবে এমনি কতো কিছুর রসায়ন মিলাতে হয় তাকে। টিকে থাকতে হবে; টিকে থাকার যোগ্যতা প্রমাণ করতে তাকে এ দরজা হতে ও দরজা কিংবা বিমল মিত্রের কড়ি কিনলাম এর নায়িকার মতো – একটি উত্তপ্ত বিছানা শীতল হতে না হতেই আরো একটি বিছানা উত্তপ্ত করতে হয়। ঘসেটি বেগমের প্রতিটি দিন তাকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় ; আবেগি হতে হয়; কথায় কথায় ছিচঁকে কাঁদুনির অভিনয় করতে হয়। ঘসেটি বেগমেরা কখনো লজ্জা পায়না ,এটা থাকতে হয় । যা তার নাই। কারণ টিকে থাকাই তার নিকট চরম সার্থকতা। শ্রমিক হিসেবে নিজের শ্রম ও শরীর বিকাতে পারলে, জগতে টিকে থাকা যায়। ঘসেটি বেগম মনে মনে কবিতাটি আওড়াতে আওড়াতে শাওয়ার নিতে নিতে সে তার প্রিয় কবিতাটি উচ্চারণ করতে লাগল –
মেয়েটি নেহায়েৎ বোকা
বলনে, চলনে কিংবা মননে
তবুও খাপ খাওয়ানোর কি-না
প্রানান্তকর প্রচেষ্টা।
সফল তো হয়নি বরং
তার বেড়েছে দুর্দশা।
হঠাৎ একদিন –
সে পত্রিকায় দেখল
কর্পোরেট সংস্থার কিংবা বাণিজ্যের সংবাদ শিরোনাম।
অতঃপর বই, পত্রিকা, জার্নাল আর
অন্তর্জালে খুঁজে বেড়াল শব্দের অর্থ
অর্থের ভিতরের অর্থ-সে খুঁজতে লাগলো
যেদিন সে মর্মভেদ উদ্ধার করল- ”কর্পোরেট”
স্বাধীন সত্ত্বা শরীর টাকা কামানোর যন্ত্রও বটে—-।
এরপর থেকে চলনে, বলনে কিংবা মননে মেয়েটি কর্পোরেট জগতের প্রতীক হয়ে দাঁড়ালো ।।
মেহেরুন্নিসা- ঘসেটি বেগমের কেতাবী নাম। সিরাজ দৌলার খালা কিংবা মেহেরুন্নিসা- কোনটাই ততোটা জনপ্রিয় নয় যতোটা জনপ্রিয় ঘসেটি বেগম- এই নামটা। গল্পের নায়িকা ঘসেটি বেগম এর নিজস্ব নাম রয়েছে যার সার্থকতা ঠিক এরকম যেমন কালো মেয়ের নাম সোনালী। ঘসেটি বেগম এমনি একটি নাম যেন নদীর চাইতে কূল উঁচু- তাই কেতাবী নামে নয় বরং চলতি পথে দেওয়া নামেই পরিচিত হোক ঘসেটি বেগম। ঘসেটি বেগম চাকুরী কররে বরৈ সে নিজেকে পরিচিত করতে দু-চারজন একত্র হলেই বলে উঠে ”আমরা যারা গবেষক”। আহা! কি শান্তি? গবেষকও বটে , কপালে কত কি যে জোটে? সকালে বাসা থেকে বেরিয় পড়ল ঘসেটি বেগম। অফিসে ফ্রি নাস্তা খাওয়ার সুযোগ আছে বলে সে না খেয়েই চলে আসল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল না তেমন আজ দেরী হয়নি। মনে মনে একটু বলে উঠার সাথে মনে করত গিয়ে তা করতে পারলোনা , সে কখনো সময়মতো অফিসে এসেছে । পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ডঃ আরাফাদের সাথে কুটচালের পরিকল্পনা ফাইনাল করতে হবে। রুম হতে বের হয়ে ডঃ আরাফাতের চামচার সাথে দেখা হলো করিডোরে। ঘসেটি বেগম- চামচার দিকে এগিয়ে বলল- ষড়যন্ত্রের অংশে অংশগ্রহণ করবেন না। চামচার মনে ছিল তাই বলে উঠল- ঐ দিকেই যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে ঘসেটি বেগমের মনে একটু গোপন ইচ্ছা জেগে উঠল। চামচার জিপারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল- বিয়েটা আর করা হলোনা? দুধের স্বাদ ঘোলে তো মিটাতে পারেন? কিছুই তো দেখতে পারছিনা ; বলে অভ্যাস মতো–হে !হে! হে! করে ঘসেটি বেগম- তার উচুঁ ময়লা দাঁত বের করে হেসে উঠলো। করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো- আরো কয়েকজনের। সবাই মিলে বসে পড়ল রুমে। রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই বলে উঠল- আরাফাদ ভাই – নাস্তা কই? হেব্বি নাস্তার ব্রবস্থা করেন। তারপর হে! হে! করে উঠল। পাতলা ওজনদার ঘসেটি বেগম। আলোচনা করতে করতে বেলা বারোটা বেজে গেল। নোংরামি আর কুটনামি আদ্যোপান্তর যেন পোস্টমটেম চলল বেলা বারোটা পর্যন্ত। আমরা যারা গবেষক – যারা আমাদেরকে গরু খোঁজার দলে মনে করেন তারা এসে দেখুক কিংবা বুঝুক আমরা কতোটা সুক্ষ্ম বা নিখুঁত ভাবে দল-উপদলে , স্বার্থোদ্ধার করতে পারি। ঘসেটি বেগম মনে মনে পুলকিত হলো এটা ভেবে যে, অনেকদিন পর বসা হলো। মাঝে মাঝে এমনভাবে বসলে কেমন হয়- ঘসেটি বেগমের এমন প্রস্তাবে সবাই সম্মত হলো। এ সময়ে মোবাইলটা বেজে উঠল- চেয়ার হতে উঠতে গিয়ে বুকের আঁচলটা সরে গেল। ঝুলন্ত আর অন্তঃসারশূন্য যুগল যেন অসাড় হয়ে পড়ে আছে। কেউ আর এদিকে ফিরে তাকালো না বলে ঘসেটি বেগম মনে মনে ক্ষোভ ফেটে পড়ল। অথচ আজকের সভায় উপস্থিত তোরা সকলেই কতটাই না আগ্রহভরে দেখছিস আমার যৌবন, নদীর দুকুল যখন ছাপিয়ে উঠতঃ ঢেউয়ের তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হলে দোলায়িত হতো তোদের মন। এই তরঙ্গের ঢেউয়ের নাচে কত সুযোগ –সুবিধা বাগিয়ে নিলাম। একটুখানি ইচ্চাকৃত তোদের ছোঁয়া- যেন অনিচ্চাকৃত এমনভাব করতি তোরা। সবই বুঝে না বুঝার ভান করে স্বার্থের জলে শরীর আর মন অঞ্জলি দিয়ে বসে বসে লাভের হিসাব করতাম। কাদের মোল্লা আলতো ছুয়ে দিয়ে বলে উঠল- ফোনটা ধরো। ঘসেটি বেগম সম্বিৎ ফিরে পেল। ঘসেটি বেগম নাম্বার দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেল। হঠাৎ আজ সে আবার ফোন করে বসল কেন? দাদা আমার – নাতনির মাথায় হাত বুলাতো, আলতো করে ছুয়েঁ দিত আমার চুলের গোড়া – যেন হৃদয় পরশ বুলায়ে দেয়। পাঠক , এ দাদা , আমার রক্তিয় সম্পর্কের নয়। আমার অফিসের এক সহকর্মী। ছোওয়া–ছুয়িঁর খেলায় দাদা- নাতনীর সম্পর্ক আমাদেরকে যেন আগলে রেখেছিল অককেটা অক্টোপাসের মতো। দাদার কি শীতল মায়ার পরশ ; ভুল কি যায় ? আহা! কি শান্তি? মাঝখানে কোথায় হয়ে যেন কি হয়ে গেল। আমি এ গ্রুপে আর ওই গ্রুপে দাদা। সময়ের ব্যবধানে আমরা আজ কোথায়। তবুও মনে পড়ে দাদার কথা , দাদার ফোন যেন বেগমকে ক্ষনিকের জন্য উতাল পাথাল করে দিল—
 হ্যালো ! তুমি কি ব্যস্ত?
 না। মিটিংয়ে ছিলাম। বের হয়ে আসলাম।
 দুপুরের খাবারটা কি এক সাথে খাওয়া যায়?
 হ্যাঁ যায়। তাহলে কে এফসি তে বসি।
দাদার ফোন পেয়ে বেগমের মন যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। ফোন রাখতেই না রাখতেই দপ্তরের এক্সচেন্জ থেকে জরুরী সভার কথা বলা হলো। চলমান সভায় বেকুবের মতো প্রশ্ন করে বসল ঘসেটি বেগম। উপস্থিত সভ্যগন এ দিক – ও দিক তাকাচ্ছে। এটা কি করল ? সভা প্রধান যখন তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলো তখন ঘসেটি বেগমের চোখে মুখে জল – যা তার নির্লজ্জতাকে ধুয়েঁ দিচ্ছে। দুপুরে খাওয়া হয়নি। দাদাও তাকাচ্ছে এদিকে। সভা প্রধান বলে যাচ্ছে। সীতার মতো এতোটা সতী নই যে ধরনী দ্বিধা হও বলে ঢুকে যাব। ইচ্ছে করছে দাদার বুকে আছড়ে পড়ি। নির্গত অশ্রু মুছে দিক , দাদা আমার। সারা বেলাটা কিভাবে গেল ? এমন সময় সময় মোবাইলে এসএমএস পেল চামচার – তোমাকে প্রকল্পের টাকায় সৌদি আরবে মাস্টার্স করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পরক্ষনেই হে! হে! । এসএমএস করল দাদাকে রাতের ডিনারটা কেএফসিতেই সেরে ফেলি?
সভাটি শেষ হলো কাটায় কাটায় পাঁচটায়। শীতের বিকাল,সূর্য অস্ত প্রায়। যে যার মতো করে পৌঁছার সিদ্ধান্ত হলো। ঘসেটি বেগম ভাবছে দিনটা খুব একটা খারাপ কাটেনি। সুখানুভূতিটুকু নিয়ে ঢুকে দেখে দাদা আলো আধাঁরির কোনে এক টেবিলে বসে আছে। দাদা জানত তাই ঘসেটি বেগমের পছন্দ অনুযায়ী এক গাদা খাবার আগভাগেই অর্ডার দিয়েছিল । ঘসেটি বেগম খাচ্ছে আর দাদা দেখছে। এমন সময় দাদা ঘসেটি বেগমকে বলছে – সফিস্টিকেটেড প্রস্টিটিউট কি কখনো দেখেছ? না বলতেই, দাদা আমার যা বলে উঠল – তাতেই আমার ঘুম ভাঙ্গল কাকের কর্কশ ধ্বনিতে। দাদা বলল – আমার পাশেই বসে আছে একজন।
(কৈফিয়ৎ: এটি একটি কাল্পনিক গল্প)

চুইংগাম

চুইংগাম 

সে থমকে দাঁড়াল। “মুর্খের ভার ধরনী নিতে চায়না“- শব্দটি তার কানে বাজল হাজার ডেসিবল শব্দের ন্যায়। তবুও ডক্টরেটকে যেতে হচ্ছে। কারণ সে পড়েছে বারবার। এটা দোষের নয়। কেউ একবার পড়ে, কেউ বার বার পড়ে। বার বার পড়াটা অবশ্যই শালীনতার পর্যায়ে আর থাকে না। আর আরাফাদ সাহেবের বেলায় তো নয়ই। তবুও সে পড়েছে কিংবা পড়ে আছে এখনো। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। বিষয়টির একটা পোষাকী নামকরন দরকার। পাড়ার দুষ্টু ছেলেরা এর নামকরন করেছে চুইংগাম কেস হিসেবে। যতক্ষণ মজা, ততক্ষণ মুখে। বিষয়টি আরাফাদ সাহেবও জানেন এবং সর্বান্তঃকরনে মেনে চলেন। যার কারণে চুইংগাম কেসটি এখন লোকপ্রিয় বিষয়। একদিন আরাফাদ সাহেব এর অফিস থেকে দুই সহকর্মী বাসায় আসলে, পুরাতন সহকর্মীটি রাস্তার পাশের দোকানে আড্ডারত ছেলেদের- বাসাটি কোথায় জানতে চাইলে, চা এ চুমুক দিতে দিতে এক রকম না তাকিয়ে লম্বা ছেলেটি, যাকে দল নেতা মনে হয়েছিল সে ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিয়েছিল- চুইংগাম আরাফাদকে খুঁজতাছেন? সোজা উত্তরে গিয়ে সাত তলা ভবনের দুই তলার ডানের ফ্লাটে থাকেন-চুইংগাম সাহেব। প্রথমে বুঝতে না পেরে সদ্য বদলী হয়ে আসা সহকার্মীটি বলল- না, না আরাফাদ সাহেব চুইংগাম কেন? লম্বু ছেলেটির তাচ্ছিলে্ তাকানোয় সহকর্মীটি অপর সহকর্মীটির হাতে মৃদু চাপ দিয়ে- ঠিক আছে ভাই, বুঝতে পেরেছি। সাথে থাকা পুরাতন সহকর্মীটির মুখে সব শুনে সাথে থাকা নতুন সহকর্মীটি যেন লজ্জা পেল, যেটা মানুষের থাকতে হয়।

ডক্টর আরাফাদ সরকারী চাকুরী করে, এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, যদিও কর্মক্ষেত্রে নামের পূর্বে এই ড. লেখাটি কোন বাস্তবিক অর্থে কোন কাজে লাগেনি তার, তবে তাকে এ জন্য আড়ালে ক্রিমিনোলজীর অধ্যাপক বলে সহকর্মীরা খ্যাতি ছড়ায়। আরাফাদ সাহেব বিষয়টি বুঝে একে ওকে গালাগালি করে, যেটা তার অত্যন্ত প্রিয় কাজ, অবশ্য এ প্রিয় কাজটা সে আড়ালে আবডালে করে থাকে। সামনা সামনি বলার সাহস রাখেনা, এরা বরাবরই দুর্বল হয়। চুইংগামের বিষয়টিও এরকমভাবে সে জড়িয়ে ফেলেছে, উট পাখির মতো ধুলার ঝড়ে মাথা লুকাতে গিয়ে ড. আরাফাদ নিজের চরিত্রটাকেই জন সম্মুখে প্রকাশ করে ফেলেছে। বিষয়টি এখন এমন যে তার মাথার চুল হতে পায়ের নখ পর্যন্ত আঠাময়। এরপরেও তাকে দেখে অনেকে পারস্পরিক কথাবার্তায় ফিসফিস করে বলে- লজ্জা তো দেওয়া যায় না, এটা থাকতে নয়। আরাফাদ সাহেব বিষয়টা বুঝেও না বুঝার ভান করে। যে যাই বলুক, চুইংগামের প্রতি তার আকর্ষণ, দুর্নিবার। তাই তিনি বার বার এ মজায় মজেছেন এবং আপাতঃত দৃষ্টিতে মনে হয়- তিনি আমৃত্য পর্যন্ত চুইংগামে মজে থাকতে চান। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারেন না যে, এটা প্রথম প্রথম স্বাদ লাগলেও পরে বিস্বাদময় হয়ে উঠে, মুখ থেকে ভুলে শরীরে কিংবা চুলে লাগলে এটা কতো জটিল হয়ে যেতে পারে। এরকম ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কন্যাসম এক জুনিয়র কলিগের সংগে সর্ম্পক জড়িয়ে। কন্যাটি চতুরতার সাথে সম্পর্কটিকে থেকে প্রগাঢ়ময় করেছে। ফলে প্রেমময় দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে কন্যাটির। যদিও কন্যাটি পারিবারিক সম্মতিতে কৃষ্ণলীলা সাঙ্গ করে বিধিবন্ধ জীবনে আবন্ধ হয়েছিল। কিন্তু বন্ধনটি আলগা হতে তার বেশী সময় লাগেনি। কন্যাটি, ডক্টরেটকে উপরে উঠার সিড়িঁ হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে কখন যে তার সময় কাটানোর পাটাতন হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে বুঝতেই পারেনি। ডক্টরেট তাকে চেয়েছিল ডাইরেক্ট হিসেবে। কন্যাটিও তাই। ফলাফল হিসেবে কন্যাটি হারালো তার গোছালো সংসার। পঞ্চাশোর্ধ ডক্টরেট আর অনধিক ত্রিশের কন্যাটি এবার বেপরোয়া হয়ে উঠল। তিন সন্তানের জনক, তার সন্তানের জননীতে ডক্টরেট খুশী নয়, সে সুখ খোঁজে এথা নয় হেথা, অন্যকোথা। এভাবেই সুখের সন্ধানে সে আড়াই দশক ধরে তার মাস্তুল ফেলে এ ঘাটে সে ঘাটে। ঘাটান্তরে আরাফাদ সাহেবের ভাবান্তর ঘটেনা। কিন্তু মনান্তর ঘটে সহকর্মীদের। তবু তারা দমে যায় না। আড়ালে নয় বরং স্বঘোষিত হয়ে তারা প্রকাশ্যে আসে জনতার মঞ্চে। নিজের মতো করেই চলতে চায়। ভালোবাসার সীমা আর পরিসীমার ব্যবধানটুকুও তারা মানতে চায়না। তাই, দুজনের কলঙ্কময় অতীত অধ্যায় এখন সকল সহকর্মীর মুখে মুখে। ধীরে ধীরে এটা তার গন্ডি পেরিয়ে এখন তার পাড়ার গলিতে। কেবল কথা উড়ছে। আর ডক্টরেট সাহেব ভাসছে সাথে নিয়ে তার কলঙ্কিনী রাধাদের। মাঝে মাঝে দ্যুতক্রীড়ার বর্ণনা যে পাওয়া যায়না, তেমন নয়। বরং সে সকল বাৎসায়নের কামসূত্রকেও হার মানায় সে বর্ণনা।
কন্যাটি শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত এ সম্পর্কের পরিণতি কি হবে তা নিয়ে? কন্যাটি জানতে চায় টেলিফোনের ও প্রান্ত থেকে। ডক্টরেট, শান্ত কিছু বলে না। কন্যাটির গলা ধরে আসে, হ্যাঁলো, তুমি কি শুনতে পাওনা? ডক্টরেট পৌষের শীতেও ঘামছেন, শুনছি বলে উত্তর দেয় আর ঘাম মুছতে গিয়ে বাম হাতে লুঙ্গি উপরে তুলে ফেলে। ভাগ্যিস মধ্য রজনী। কেউ দেখেনি। কন্যাটি অহিসাবী রাতের তার হিংস্রতা কিংবা উম্মতার নিখুঁত বিবরনী তুলে ধরে, ফসল ঘরে তোলার সময় যে হয়েছে, তা বার বার মনে করিয়ে দেয়। ডক্টরেট এবার বুঝি গেল – অস্কুট স্বরে বলে উঠল আরাফাদ সাহেব। সব পাপের শেষ আছে। সে কন্যাটিকে বলতে চায়- কিভাবে হলো এটা। আমি তো বরাবরই প্রটেকশন নিয়েছিলাম। উত্তর শুনে কন্যাটি আতঙ্কগ্রস্থ হয়। ডক্টরেট, তুমি কি বলতে চাও? আমাকে সন্দেহ কর? তোমার জন্য চুরি করতে গিয়ে, আমাকেই শেষ পর্যন্ত চোর বানালে? কন্যাটি কাঁদে, সেল ফোনের এ প্রান্তে, ডক্টরেট ও প্রান্তে এর পরও শান্ত সে। সদুপদেশ দেয়- একে ফেলে দাও। কন্যাটি যতবার না বলে, ডক্টরেট ততবার হ্যাঁ বলে। সিদ্ধান্ত আর আসে না। অবশেষে কন্যাটি দ্বিধা-দ্বন্দ ফেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেকে হত্যা করে। চিরকুটে লিখে যায়- স্বীকৃতি না পাওয়ায়, যার কারণে জগতের আলো যে দেখতে পেলনা, সেই ডক্টরেট যেন শাস্তি পায়।

অফিসে পুলিশ। লাশ মর্গে। সহকর্মীগণের কানাকানি। কোটায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। মন্ত্রী বা দালালীর ফলস্বরুপ সুপারিশে চাকুরী। ফপরদালালী করে অফিসের টাকায় ডিগ্রী । অযথা আত্মঅহংকারী। আলুর দোষে বহুবার দোষী। যেন আহাম্মক? কেউ কিছু বলে না। এর অর্থ এই নয় যে, কেউ কিছু জানে না, বরং লজ্জা আর ঘৃণায় এড়িয়ে চলে। পুলিশ ডক্টরেটকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন সম সে পিছন হতে শুনতে পেল- “মূর্খের দাপট, ধরনী ভার নিতে চায়না”। কে বলল পিছন ফিরে দেখতে গিয়ে ডক্টরেট থমকে দাঁড়াতেই বেয়াড়া পুলিশটি বলে উঠল- “চল স্টুপিড”।
( বিঃ দ্রঃ সকল চরিত্র কাল্পনিক, সাদৃশ্য অনিভেপ্রত ও কাকতালীয় মাত্র )