এই ব্লগটি সন্ধান করুন

দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দর্শন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২

হেগেল ধর্ম আর ক্রিস্টিয়ান ট্রিনিটি লগে আছে কলোনিয়ালিটি

 হেগেলরে কি লোকজন আইজও পড়েন - ধর্ম আর ক্রিস্টিয়ান ট্রিনিটি লগে আছে কলোনিয়ালিটি 

এটা একটা মুল্যবান প্রশ্ন। আমরা পড়ি । আমাদের পড়াতে হেগেলর মত মানুষের কিছু যায় আসে না। কিন্তু, পয়েন্ট ব্ল্যাক কেউ না পড়বার চাইলে আমাদের যায় আসে। (আমি জাহিদ ফারাবিয়ান মানুষ, তাই বলে, আমি কি কান্ট বা দেকারতে পড়ব না? আমি ক্রিটিক্যাল স্কুলটাকে জায়নবাদের সাথে মিলাই ফালাই। তাই বলে, হারবারট মারকুজ আর আর্নল্ড কী আমি পড়বনা! হাফিজ হইবার মাঝে দৈন্যতা আছে, বুঝলেন, আনন্দ নাই) হেগেলরে লোকে পড়েন নানান কারণে। আমরা মোটা দাগে কয়েকটা নিয়া কথা কইবার পারি। 

হেগেল খ্রীষ্টানিটির যে ব্যাখ্যা দিয়া গেছেন তা নানা অর্থেই বেশ আগ্রহ জাগায়। খ্রিষ্টানিটি অনেক দার্শনিক, অনেক ক্রিটিক্যাল তাত্ত্বিক তার ফলাফল হিসাবে পশ্চিমের অনেক তত্ত্বের জন্ম হইছে। খ্রীষ্টানিটির ভেতরকার যে সমস্যা-সংকট ও খ্রীষ্টানিটির বিচারের মধ্য থেকে যেসব ভাবের জন্ম, সেগুলোকে সেকুলার চিন্তার ফল হিসেবে ইউনিভার্সাল রূপে হাজির করা হয় প্রায়শই, এবং এই কাজটা হেগেল সাবে খুব ভালা করি করছেন। হেগেল সাবরে পড়ার এইডা অন্যতম একটা কারণ। লন, একটু ব্যাখ্যায় আসি। 

হেগেলের মতে, স্বাধীনতার ধারণা পূর্ণতা পাইছে খ্রিস্টানিটির ভেতরে। মানুষ যে পাপ করেছে, এটা তার স্বাধীনতার স্মারক। সে পাপ করেছে এটা প্রমাণ করে সে স্বাধীন। আবার, পাপ না করার ব্যাপারেও সে স্বাধীন। সে ইচ্ছে করলে ঈশ্বরকে মানতে পারে আবার নাও মানতে পারে। সুতরাং, স্বাধীনতা মানুষের অন্তর্গত স্বভাব। গড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সে দু'টো জিনিস লাভ করলোঃ একটা হলো স্বাধীনতা, আরেকটা পাইলো, যুক্তি। যুক্তিপ্রয়োগ মানুষের স্বাধীনতার চূড়ামনি। 

আবার, মানুষের স্বর্গচ্যুতি ও খোদা থেকে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া,হেগেলের মতে, একটি প্রতীকী ব্যাপার। কিসের প্রতীক?" Divide between Individuality and universal reason" এর প্রতীক। গড থেকে আলাদা হয়েই মানুষ ব্যক্তি হয়ে উঠলো। মানুষ যদি আদিতে পাপ করেও থাকে খোদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আরো অধঃপতিত হয়, তাহলে মানুষের ‘মুক্তির উপায় কি? কিন্তু প্রশ্ন হলো, এক মানুষ তো আরেক মানুষকে মুক্তি দিবার পারবে না। কারণ, প্রতিটি মানুষই সত্তাগতভাবে আদি পাপের অংশীদার৷ তাই, এক মানুষ আরেক মানুষের মুক্তিদাতা হতে পারবে না। কিন্তু যদি এমন কেউ হয় যিনি একই সাথে মানুষের রূপপ্রাপ্ত ও একই সাথে খোদায়ী সত্তার অংশীদার, সে কিন্তু মুক্তিদাতার ভুমিকা পালন করতে পারবে। কারণ, মানুষের পাপীসত্তা আর তার থাকছেনা। আর যেহেতু মুক্তির কারণ হইতে হইবে মানুষের লাগি, তাই মুক্তিদাতাকে একই সাথে মানুষও হতে হবে। তো, এইভাবে "জিসাস"-এর ধারণার ভেতরে মানুষীরূপসম্পন্ন হওয়া ও খোদার পুত্র হওয়া ছাড়া খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সংকট মোচন হতো না। জিসাস তাঁর আত্মহুতির মধ্য দিয়ে মানবসত্তাকে পাপমুক্ত করেন। আর জিসাসের এই আত্মহুতিকে Universal Concept of Freedom এর উদাহরণ মানছেন হেগেল। হেগেল খ্রীষ্টানিটির একটা রেশনালিস্ট ভার্সন এভাবে হাজির করেন। খ্রীষ্টিয় ধর্মতত্ত্বকে তিনি দর্শনের অধীন করেন, এবং খ্রীষ্টিয় নীতিমালাগুলারে চিন্তার ডিটারমিন্ট হিসেবে উপস্থাপন করেন, যেটা দর্শনের অন্যতম কাজ। হেগেলের মতে, রিজনই হইবার পারে ইউনিভার্সাল হইতে। তো, গড হইলো উনার এবসোলিউট রিজন। আর, রাষ্ট্র হইলো Reason Personified" সুতরাং ইনার কাছে  রাষ্ট্রের উদ্ভবের শিকড়টা ধর্মের মাঝেই। অবজেকটিভ রিজনের চূড়ান্ত রূপই রাষ্ট্র। আনুগত্যের প্রশ্ন ছাড়া ধর্ম ও রাষ্ট্র কোনটাই হয়না। এরিস্টটলের অনুসরণে হেগেল কইতেছেন, ব্যক্তি তার পূর্ণবিকাশ ঘটাইবার পারে একমাত্র রাষ্ট্রের কর্তৃত্বাধীন হলেই। আহেন ডায়ালেকটিক পদ্ধতি দিয়া কি দেখাইলেনঃ

থিসিসঃ  মানুষ সত্যিকারভাবে স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারে আইনহীন প্রাকৃতিক অবস্থা 

এন্টিথিসিসঃ হায়ারার্কিকাল স্টেটে অতিনিয়ন্ত্রিত অগণতান্ত্রিক ও জাতিরাষ্ট্রে (সিনথেসিস)।

সিনথেসিসঃ গণতান্ত্রিক ও জাতিরাষ্ট্রে

যদিও, হেগেলের কাছে জাতি রাষ্ট্রই ইতিহাসের সমাপ্তি নয়।পরমের পরিকল্পনা নানাভাবেই ইতিহাসে পরিদৃষ্ট হয়। এথেন্সবাসীর কাছে এথেন্সের দুটো অর্থ ছিলঃ এথেন্স রাষ্ট্র হলো, এর প্রতিষ্ঠানসমূহের সমষ্টি, আর এক অর্থ হলো, দেবী এথেনীয় জনগণের জাতি হওয়ার প্রতীক। এভাবে, এথেন্সের রাষ্ট্র হওয়ার পেছনে প্যাগানিজমের ভূমিকা ছিল। হেগেলের মতে, রাজার আয়নায়, রাজার চেহারা দেখা যায় না, দেখা যায় প্রজার চেহারা। প্রজারা যেমন হয়, রাষ্ট্র ও রাজারা তেমনই হয়। হেগেল কিন্তু ব্লু ব্লাডের কথা মানতেন। তিনি নিজ আছিলেন জার্মানজাত্যাভিমানী ও অরিয়েন্টালিস্টও। যদি আমরা এডওয়ার্ড সাইদরে মনে করি। গ্রীক ও রোমে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণী ছিল স্বাধীন। ইতিহাস পরিক্রমায় একমাত্র খ্রীষ্টানিটির আগমনের ফলেই এই অন্তর্দৃষ্টি জন্মে যে, মানুষ তার মানবসত্তার কারণেই স্বাধীন। ভাবের বা চৈতন্যের স্বাধীনতাই, হেগেলের মতে, মানবসত্তারে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলে। 

মানবজাতি ও খোদার মাঝখানে জিসাস খ্রীষ্টের অবস্থান নির্ধারিত করায় তত্ত্বীয়ভাবে ক্যাথলিক খ্রীষ্টানিটিতে পাপাসি বা পোপতন্ত্রের জন্ম হইছিলো। পোপদেরকে জিসাস ক্রাইস্টের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার মনে করা হয় ৷ সুতরাং, অনুসারীদের আধ্যাত্মিক দেখভালের দায়িত্ব পোপ আর সেইন্টদের। এই পোপতন্ত্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ ডক্ট্রিন হচ্ছে, "মধ্যস্থতা" বা ইন্টারমিডিয়ারির ধারণা। এই ডক্ট্রিন অনুসারে, ক্ষমালাভের জন্যে যাজকের দ্বারস্থ হইতে হইবে। ব্যক্তি যাজকের মধ্যস্ততা ছাড়া সরাসরি খোদার কাছ থেকে ক্ষমা লাভের যোগ্য হয়না। 

পোপতন্ত্রের আরেকটা দিক হচ্ছে, ইন্ডালজেন্সের (Indulgence)-এর প্রসঙ্গ। অর্থাৎ, কেউ কোন পাপ করে ফেললে সেটির শাস্তি কমানোর ব্যবস্থা। এইটার নানা অপব্যবহার হয়েছে খ্রীস্টধর্মে। Pardoner বলে এক অফিসিয়াল থাকত যে চার্চের ক্ষমা বিক্রি করতো। মানে, চার্চ এমন হয়ে উঠেছিল যে, তারা বেহেস্তের টিকিট বিক্রিও শুরু করে। টাকার বিনিময়ে পাপের ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হতো। সে অর্থগুলো চার্চ তার প্রভাব ও যাজকগণ নিজেদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করতো। হাল আমলের আমাদের দেশে আখিঁ মুন্জিয়া দ্যাখেন – যা চা্ইবেন সবি দ্যাখতে পাবেন বটে!

পোপতন্ত্রের আরেকটি দিক হচ্ছে, বাইবেলের প্রাথমিকতা ও অগ্রাধিকারের পরিবর্তে চার্চ বা পোপের ব্যাখ্যাই গ্রহণ করতে হতো। যেটাকে Papal Authority বলে। পোপতন্ত্রে, পোপ বা যাজকদের বা চার্চের অভ্রান্ততা (Infallibility)-তে বিশ্বাস করতে বলা হয়। পোপতন্ত্রে ব্যাখ্যা অনেকটাই নির্বিচার ও যাজকশ্রেণীর স্বার্থলগ্ন হতো। 

কইয়া রাখি অবশ্য, মার্টিন লুথারের যে রিফরমেশন বা সংস্কার আন্দোলন তা ক্যাথলিক চার্চের উপরোক্ত সংকট থেকে জন্ম। প্রোটেস্টান্ট আন্দোলন নামেও আমরা পড়ি। লুথারের "ডক্ট্রিন অব টু কিংডম" ব'লে একটি ধারণা আছে; যেখানে তিনি কিংডম অব ল এবং কিংডম অব গ্রেস অথবা বলা যায়, ল এবং গোসপেল-এর পার্থক্য করেন। যেটাকে সম্প্রসারিত করে চার্চ ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ ব'লে অভিহিত করা হয়। হেগেল তার "এইচ-পি’র "The German World" চ্যাপ্টারে খ্রীস্টীয় জগতকে তিন পর্যায়ে ভাগ করেন, Kingdom of Father, Kingdom of Son, Kingdom of Spirit। হেগেল মনে করতেন, সংস্কার আন্দোলনের ফলে জার্মান প্রবেশ করেছে কিংডম অব স্পিরিটে। যে জগতে চিন্তা পায় তার নিজের জীবন ও সংস্কৃতি, যেখানে রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি হইবে র‍্যাশনাল প্রিন্সিপল। হেগেল রাজনৈতিক আলোকায়ন, মানবমুক্তি, যুক্তি ইত্যাদি বিষয়কে খ্রীষ্টানিটির কনসেপ্টের সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবেন। অবশ্য পরবর্তীতে কার্ল মার্ক্স হেগেলকে উল্টিয়ে "পায়ের উপর" দাঁড় করানোর কথা বলবেন।

তো, এইভাবে পশ্চিমা সভ্যতার অনেক ধ্যান-ধারণার উৎস খ্রীষ্টান ধর্মের (বিশেষত,সেইন্ট পলের খ্রিস্টানিটি) দার্শনিক বিচার, নানা বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা ও সংস্কার আন্দোলন। পচ্ছিমের যেসব ধারণা বিশ্বময় প্রচার পেয়েছে ও ফেরি করা হচ্ছে তার আদি উৎস রেনেসাঁস, রিফরমেশন, এনলাইটেনমেন্ট-এর দর্শন, তাদের মানুষ সম্পর্কিত ধারণা, পশ্চিমে সংঘঠিত নানা বিদ্রোহ-যুদ্ধ, এবং পশ্চিমের ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার মধ্যে নিহিত। জাস্ট, খসড়া আকারে কিছু চিন্তা এখানে টুকে রাখলাম। স্বাধীনতা, যুক্তি, সমতা, মানবিক মর্যাদা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, জাগতিকতা ইত্যাদি নানা গালভরা শব্দ ও ধারণার ইতিহাস আছে, যে ধারণাগুলোকে পশ্চিম সবার জন্যে পালনীয় বুদ্ধির বা চিন্তার নির্ণয় হিসেবে উপস্থাপন করে । এইসব নানা ধারণার ইতিহাস নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করা দরকার।


জাহিদ সিরাজ 

 

শব্দ আর আওয়াজ নিয়া কিছু ওয়াজ

এটাতো হাছাই যে, ভাষা মাইনষের চিন্তা ভবানারে  প্রকাশ করে। ভাষা তো ভাষা না, এটা শব্দ বা আওয়াজ। আমরার কাছে যেটা ভাষা, একজন পরদেশির কাছে তা আওয়াজ ছাড়া আর কী। কিন্তু, এটাই একমাত্র সুন্দর  মাধ্যম। মাইনষের চিন্তা প্রবাহের এই যে প্রকাশ, সেটাই তারে অন্য স্পেসিস থিকা আলাদা করি দিছে।   আমেরিকান লিঙ্গুয়িস্ট নৃবিজ্ঞানী  এডওয়ার্ড স্যাপির মনে করইন, চিন্তা ও ভাষা একে অইন্যের লগে থাকে মানে পরিপূরক। চিন্তা বানায় ভাষারে আবার এই ভাষার বাস্তব রূপটা ধরা দেয় মাইনষের কলমে, বা লেখনীতে অথবা ব্যক্তির কথাবার্তায়। স্যাপির সাবের ভাষায় linguistic determinism!’ আমরা গাও-গেরামে বড় হইছি, আমরার এই বইয়ের শব্দের পেছনের যে চিন্তা, হেইডা সৃষ্টি হইছিলো আমরার যে ভিজুয়ালিটি, সোস্যাল, ফিজিক্যাল ইন্টারএকশনের মাধ্যমে আর  তা হেই ছোট কাল থাইক্যা। ক্রিয়েটিভ ব্রেইন এই ইন্টারএ্যাকশের অভিজ্ঞতাকে চিন্তার প্রসেসের মাধ্যমে আইজকার এই বই। বা বইখানার ভাষাযা ইনক্লুলুসিভ, এবং সেটা চিন্তা প্রকাশের এসথেটিজম।  ভাষা ততক্ষণ এবস্ট্রাকড থাকে যতক্ষণ না তা আমরা সেটারে প্রকাশ করি লেখায়। তাই, আমরা যদি শক্তিশালী জারগন টারগন আর হাই ভোল্টেজ শব্দের মাইর প্যাঁচ দিয়া লিখতাম, আফনেরা কইতেন, খাইছে, পড়া বা হুনার দরকার নাই। কারণ, আমরার চিন্তা জগত জারগন মার্কা শব্দের লগে পরিচিত না। তাই আমরা কইতেছি এমন এক আওয়াজেযাতে লেখাও হইলো আর আফনেরার কানে খঞ্জনির মতো ক্লিয়ার হুনাইবো।  একই লগে, চউখে দেখাইব যা দেখবার চাইন- Visual spell! 

এই বইয়ে আমরা শব্দগুলা এমন কইরা বানাইছি। আফনেরার মনে হইবো  আমরা স্বেচ্ছাচারী হই গেছি। মোটেই তা না জনাব।  শব্দের শুদ্ধতা’ আর আফনেরার বিদ্যাপতিদের বড় বড় পিউরিটি’ আমরা ভাঙলাম। এই মিউজিক্যাল ভিজুয়াল ল্যাংগুয়েজ বুঝতে যেন কষ্ট নায়। ব্যবহার করছি এক্কেবারে মাঠ আর মাটির মানুষের কথ্য শব্দ। এমন শব্দগুলা বাক্যে হাজির হয় যেন আফনের রাধারমনের মিউজিকের মুভমেন্ট অনুভব করবার পারইন। বাক্যগুলার শব্দ সাজাইছি  আওয়াজটার দিকে চউখ রাখি’ রাখি। আর তাই, পাঠক হিসেবে পড়লে দেখবেন কানের  মাঝে শব্দগুলো লাইগ্যা থাকবো। আফনের মনের ভাঙাগড়াটারে এক ডিভাইন আবরণ দিয়া তৈয়ার করবার পারেন। 

ভারত থাকি গ্রীক হইয়া আরব, তারপরে পশ্চিম। লিংকটা জানার দরকার আছে, যদি দর্শন নিয়া একটু  আফনেরার করোর আগ্রহ থাকে।  আমাদের ধারণায় যা আইছে তাই কইলাম এতক্ষণ। এগুলারে আপনি মানতে পারেন, নাও মানতে পারেন। কিন্তু, আপনার মানা বা না মানাটাকে ইতিহাস দিয়ে দেখুন। কারো কইয়া রাখা দাবিরে ‘সত্য’ বইলা মানার আগে বরং কইমু নিজের ইনফারেন্স বা দৈবাদেশ দিয়া ভাবেন, তাইলে, বুঝবেন, আপনার সত্যটা আমার কাছে সত্য নাও হইবার পারে। 

আমাদের এই এন্ট্রি হক্কল বিষয় নিয়া আলোচনা করতো না, তবে অনেক প্রশ্ন জিগাইয়া রাখলো। আফনে একলা বইয়া একটু চিন্তা করবেন, এইডা আমদের ইচ্ছা। যে প্রশ্নগুলা মাথায় আইবো,  তা নিয়া চিন্তা করবার লাগি আপনার অডিটরি অর্গানগুলা দিঘীর পানির লাহান স্থির থাকবো। এই আলাপ আলোচনারে আইল দিয়া বান্ধিতে হইছে, সীমানা টানা থাকলে ভালা। আমরার কাছে সকলেই সমান। প্রফেসর রাজ্জাক একবার আহমদ ছফারে কইছিলেন, শেক্সপিয়ার তাঁর ইহুদি শাইলকরে, ইহুদিগো লাল-রক্ত আছে। ইহুদি শাইলকের এই কথাগুলার লগে বারনারড লুইসের কথার মিল আছে বিস্তর (নোট ৬৯ দেখেন)। শাইলকের পুরা বক্তব্যটাও দিলাম।[i] ভাবতে পারেন! কলোনির কইলজার  মইধ্যে থাইক্কা, ১৬০০ সনে এমন কথা কইতে পারছিলেন! 

আমরা এই টোটালিটিটাকে বুঝবার চেষ্টা করতেছি। লাল-নীল রক্ত আর পুব-পচ্ছিমের মাইর আমরা চাইনা। কান্ট আর আল-ফারবি বা সাদিয়া গাঁও বা তাঁর সমকালেই আরেক ইহুদী পলিম্যাথ মাইমুন্দাস, আল-কিন্দি লইয়া বহেন। কান্ট'র কয়েকশ’ জন্ম আগে ক্রিটিক্যাল কথাটা সাদিয়া গাঁও কি সুন্দর করি’ বলে দিছেন, জ্ঞানের থিওরি। জানি, আল-ফারাবি মুসলিম, সাদিয়া গাও আর মাইমুন্দাসরা ইহুদি, চৈতন্য আর লালন পুবের মানুষ, সুতরাং তিনাদের আমরা পড়তে যামু কোন দুঃখে! তিনারা আমাদের পশ্চিমের আকাশে ব্রাত্য, তিনারা পুবের বলেই তিনারা অচ্ছুৎ। আমরা এটাও জানি আমরা পুবের মানুষ, আমরা জাগলে পৃথিবী জাগে। সাহস করি’ আরেকটা কথা কই, জন্মটা কখনোই আজন্ম পাপ হয়না, হইবার পারেনা। 



[i] I am a Jew. Hath not a Jew eyes? Hath not a Jew hands, organs, dimensions, senses, affections, passions; fed with the same food, hurt with the same weapons, subject to the same diseases, healed by the same means, warmed and cooled by the same winter and summer as a Christian is? If you prick us do we not bleed? If you tickle us do we not laugh? If you poison us do we not die? And if you wrong us shall we not revenge? If we are like you in the rest, we will resemble you in that. If a Jew wrong a Christian, what is his humility? Revenge. If a Christian wrong a Jew, what should his sufferance be by Christian example? Why, revenge. The villainy you teach me I will execute, and it shall go hard but I will better the instruction.

রেনেসাঁ, রেনে দেকার্তে, দ্যা ভিঞ্চি আর আমরার কান্তজির মন্দির

মার্কসবাদী এম এন রায় নাকি ভারতের রেনেসাঁর প্রবক্তা। এম এন রায়ের ‘ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা’[i]র বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে এই দাবী অনুবাদক বদিউর রহমানের । এম এন রায়ের মতন বিশাল মাপের বিপ্লবীর কাজ করতে গিয়া মনে  হয় অনুবাদক দিশা হারাইলাইছে। আমাদের সুধীর বাবু বুদ্ধিজীবীর নোটবই-তে কইলেন এই সব লোকেরা বেদিশা অবস্থান[ii] নিয়া বইয়া আছেন। হাছাই মনে হয়।  

রেনেসাঁ ধারণাটা আদতে কিচ্ছু না। অনেক আগেইখ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ খ্রিস্টাব্দ থাকি স্টোয়িক স্কুল এই প্রাচীন দর্শনেবিকশিত ছিল। স্টোয়িক জ্যোতিষবিজ্ঞান সাধারণত জোর দিছিল যে, মন শূন্য তে শুরু হয়আর  বাইরেরজগতের লগে পরিচয় হইতে হইতে জ্ঞান অর্জন করে  ডক্সোগ্রাফার তিয়াস এই দৃষ্টিভঙ্গিতাঁর সংক্ষিপ্তসার তুলেধরতেছেন যে যখন কোনও মানুষ জন্মগ্রহণ করেস্টোয়িকস বলে যেতার আত্মার সর্বাধিক অংশটি কাগজেরশীটের মতো লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে।

 একাদশ শতকে Tabula Rasa তত্ত্বটি দার্শনিক ইবনেসিনা আরও স্পষ্টভাবে বিকাশ করছিলাইন। তিনি যুক্তি দিছিলেন যে, "জন্মের সময় মানুষের বুদ্ধি জগত একটা লিখার খালি স্লেটের লাহান থাকেতাবুল রাসার বক্তব্যের সাথে মিল খায়।  এইটা উনার আগেও গ্রীকরা কইয়া গেছেন। একটি খাঁটি সম্ভাবনা যা শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে বাস্তবে রূপান্তরিত হয় এবং তা বুঝবার পারে।" সুতরাং, ইবনে সিনার মতে জ্ঞান "এই বিশ্বের বস্তুগুলির সাথে অভিজ্ঞতাগত পরিচিতির মধ্য দিয়া পাওয়া যায়, যেখান থেকে একজন সর্বজনীন ধারণায় বিমুগ্ধ করে", যা "যুক্তিবিদ্যার সিলেলোজিস্টিক পদ্ধতি" এর মাধ্যমে বিকশিত হয়; পর্যবেক্ষণগুলি প্রস্তাবিত বক্তব্যগুলিতে নেতৃত্ব দেয়, যখন আরও বিমূর্ত ধারণাগুলিকে সংমিশ্রিত করে।“ তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে বুদ্ধি নিজেই "স্থিতিশীল/বস্তুগত বুদ্ধি (আল-আক্কল আল-হাইযলানী) থেকে বিকাশের স্তর অর্জন করে, সেই সম্ভাবনা সক্রিয় বুদ্ধি (আল-হক্কল আল-ফাযিল) এর কাছে জ্ঞান অর্জন করতে পারে" জ্ঞানের নিখুঁত উৎসের সাথে একত্রে মানব বুদ্ধির অবস্থা।

ঐতিহাসিকভাবে, ইম্পিরিসিজম বা অভিজ্ঞতাবাদ এই "ফাঁকা স্লেট" ধারণার (তাবুল রাসা) সাথে জড়িত আছিল, যার অনুসারে জন্মগতভাবেই মানুষের মন "ফাঁকা" থাকে এবং কেবল অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই তার চিন্তাভাবনাগুলি বিকশিত হয়।  মূলতঃ এই ধারণাটাই  দেকার্তের    রেশনালিজম   ফিলোসফি হইতে ডেভিড হিউমের এম্পিরিক্যাল ফিলোসফির জন্ম। টেবিল-২ দ্যাহেন। 

বিজ্ঞানের দর্শনে অভিজ্ঞতা দরকারি। অভিজ্ঞতা প্রমাণরে জোর দিবার পারে। কিন্তু আবার বায়াসও করে। বিশেষ করে  পরীক্ষাগুলাতে যে ট্রুথ’ বা জ্ঞান পয়দা করা হয়।  একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিবিদ্যার মৌলিক এলিমেন্ট  হইলো অনুমান বা ইনফারেন্স, এবং থিওরি। ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড মানে সমাজ ও সংসকৃতি পর্যবেক্ষণের সময়  আগেকার যুক্তি ,থিয়োরি,  বা লজিক  এর উপর একমাত্র  নির্ভরশীল  না হইয়া বরং হিউমিনিটিকে প্রাধান্য দিয়া বিজ্ঞান এর প্র্যাকটিস করা উচিৎ। কিন্তু, পরীক্ষা করতে গিয়া যদি মাইনষেরে শোষণ করি, কিংবা শোষণ করার রিকমেন্ডেশন বানাইয়া দেই। তাইলে এই পরীক্ষার মাইনে কী?  তাই যদি হয়, তাইলে, হেগেল, মিল আর লকরা কী করে কই দেন, ভারত হল অসভ্য আর বর্বর। রেনেসাঁর যুগ। আহারে! রেনেসাঁ! ভাই, দূর ইতালি আর ইয়ূরোপ যাওনের কাম নাই। কষ্ট কইরা কান্তজির মন্দিরের গতর খান দেহেন। দিনাজপুর হতে আওনের সময় বগুড়ার পূন্ড্রনগরও। দ্যাখতে পারেন কুমিল্লার ময়নামতিও। ভাবতে পারেন  ইউরোপের রেনেসাঁর আগে আমরা কেমন ছিলাম? কুমিল্লার ময়নামতি যান।  নিচের টেবিলটা দ্যাহেন, আমাদের ভারতীয় আর্যভট্ট যিনি শূন্য আবিষ্কার করছিলেন সেটা আর গাণিতিক সূত্র্রের কথা আমদের বোধ-এও আসেনা, চিত্তেও জায়গা দেইনা। পানিনি বাবু যখন ব্যাকরণ আর অঙ্কের সূত্র তৈয়ার করেন, ইনারা কই আছিলেন! ঠিক-ই আছে, ইনারা অন্ধকারে ঘুমাই ছিলেন। ঘুম থাকি উঠে ছবি আঁকা শুরু করলেন। শুরু হইল রেনেসাঁ। জাগরণ। 

নিচে পরপর দুইখানা ছবি আছে। এই দুখানা দেখনের পরে, আমাদের কি সংবিৎ ফিরে আইবো আর বোধ ও চিত্তের উদয় হইবো? আমরা কি আশাবাদী হইবার পারি? 

Picture 6

ছবি.১.৪: পুবের মানুষের রেনেসাঁ! আর দর্শন, সুত্রঃ Indian Way, পেইজ vi


হিউমকে নিয়া আমরা আলাদা লিখতে পারতাম কিন্তু হিউমের প্রভাব আইজকার যুগের ইউটিলিটারিয়ান দর্শনে এতোটাই ইনফ্লুয়েন্সিয়াল এমনকি বর্তমান যুগের আইকনিক ফিলোসফারদের (ড্রেরেক পারফিট , জন রাউলস এবং হিউমের বন্ধু এ্যাডাম স্মিথ ) কাজগুলো এখনো আমাদের দর্শন জগতে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যেমন এ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতির দর্শন। হিউমের ধারণায়  ব্যক্তি আসলে কিছুনা। কেবল তার  সারাটা জিন্দেগির অভিজ্ঞতার এক কালেকশন। ডেভিড হিউম নোয়িং বা জানাটার চাইতে ফিলিংসের বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন। নৈতিকতাগুলা আবেগকে উত্তেজিত করে, এবং কাজকাম প্রোডিউস কিংবা প্রটেক্ট করে। হিউমের মতে রিজনিং বা রেশনালিটি  সম্পূর্ণরূপে দুর্বল। নৈতিকতার বিধিগুলা আমাদের যুক্তির বা চিন্তার আউটকাম  হইবার পারেনা। আর্থার শোপেনহাওয়ার এক জায়গায় কইছিলেন,  হেগেল, হাবার্ট আর শেইলমার্কার(Schleiermacher) , এদের হকল দর্শনের বই পড়ার চাইতে ডেভিড হিউমের একপাতা দর্শন পড়া ঢের ভালো।[i]

 

যুক্তিডা হিউম  ভালাই দিছিলেন। মাঠকর্ম না কইরা যদি আপনি বই পুস্তকের ডেটা দিবার চাহেন, সমস্যা নাই, তাইলে মনে হইবো, যে আপনি নিজের মনের কাছে একটা দাসখত দিয়া দিলেন। একটু আগেই কইছিলাম, এটা একটা পুরানা বিতর্ক। রেশনালিস্টদের রিজেক্ট করিয়া যুক্তিবাদী হিউমরা বিশ্বাস করতেন যে, বাস্তবের অন্তর্নিহিত যৌক্তিক কাঠামো আছে। বাস্তবজগতটা স্ট্র্যাকচার্ড। এর লাগি, যুক্তিবাদীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নির্দিষ্ট কিছু সত্য এক্সজিস্টিং এবং বুদ্ধি সরাসরি এই সত্যগুলি উপলব্ধি করতে পারে। এর অর্থ, যুক্তিবাদীরা জোর দিছিলেন যে, যুক্তি, গণিত, নীতিশাস্ত্র এবং মেটাফিজিক্স-এ নীতিগুলা বিদ্যমান আছে, কিন্তু,  মৌলিকভাবে এখানে, বিজ্ঞানের দর্শনটাকে অস্বীকার করা হইতেছে। এ জন্যই আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে লিখছিলেন হিউমের পজিটিভিজম উনার থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি  ফর্মুলেট করতে উৎসাহ দিতেন। ব্রনিসলো  ম্যালিনোস্কির ছাত্র র্যামন ফার্থ আর তার ছাত্র এ্যাডমন্ড লীচ এই ধারার নমস্য নৃবিজ্ঞানীগণ। টীকাতে একখান থিসিস দিলাম , পড়বার পারেন।[ii]  ইম্পিরিক্যাল দর্শনের আরেক নাম আমরা কী ভুলে যাব? ফ্রান্সিস বেকন। হিউম বা বেকনের ইম্পিরিক্যাল পজিশন, আর হেগেল বা দেকারতের যুক্তি, সব কিন্তু আদতে ইনারা কলোনির লাগি কাজ কইরা গেছেন। বেকনের একটা বিখ্যাত কথা হুনেন। বেকন তার জীবনের তিনটা টাগের্টের কথা কইছিলেন। পয়লা কাম হইলো নাকি সত্যবাবুরে উন্মোচন করা, দুই, তার দেশের মাইনে গ্রেট বৃটেনের সেবা করা এবং শেষে কইলেন গির্জার খেদমত ভদ্র ভাষায় সিভিলাইজিং মিশন।[iii] কইয়া রাখি, বেকন কিন্তু হিউমের আগের, ১৫৮০, লিখা শুরু করেন, ১৫৯২ সাংসদ হন, রানী পয়লা এলিজাবেথের এডভাইসর আছিলেন। এটার ধারা আমাদের এই এলাকাতেও আছে। 

 

আমাদের এই অঞ্চলে ডেভিড হিউমের ভাবশিষ্য এম এন শ্রীনিবাস তিনি র‍্যাডক্লিফ ব্র্যাউন আর ইভান্স প্রিচার্ড -এই দু’জনের সুপারভিশনে পিএইচডি শেষ করেন (১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে র‍্যাডক্লিফ ব্র্যাউন রিটায়ার্ড করলে ইভান্স-প্রিচার্ড তাঁর দ্বিতীয় সুপারভাইজার হিছিলেন। শ্রীনিবাস কইছিলেন, I was his first doctoral student and R-B’s last. I regard this as a distinction.  সিলসিলাটা জানার দরকার আছে। ভিসিটিং প্রফেসর হইয়া র‍্যাডক্লিফ ব্র্যাউন আবার অক্সফোর্ডে ফিরে আসেন। এবং শ্রীনিবাসরে লেকচারার হইতে অনুরোধ করেন। এভাবেই  একজন ইন্ডিয়ান ইম্পিরিক্যাল নৃবিজ্ঞানীর জন্ম হলো, যিনি সাদা মাস্ক পড়ে স্বদেশীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিলেন। তারপরে, ১৯৫১ সালে বারোদা বিশ্ববিদ্যালয়ে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৯ সালে যোগদান করেন। বাংলাদেশের আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী হলেন শ্রীনিবাসের অধীনে পিএইচডি সম্পন্ন করেন আর, ড. আব্দুল আউয়াল বিশ্বাস হলেন সেই আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর অধীনে পিএইচডি সম্পন্ন করা ব্যক্তি কিংবা নৃবিজ্ঞানী । আর হুনবেন? পরে কইমুনে, এখন থাহুক।[iv] নিকোলাস ড্রিকের মতে, 

এথনোগ্রাফিক জ্ঞান ভারতকে কলোনিয়াল স্টেট বানায় এবং ভারত শাসনে প্রযুক্তি হিসাবে এথনোগ্রাফিক সাংস্কৃতিক জ্ঞানকে কাজে লাগান । এর ফলে ভারত এথনোগ্রাফিক স্টেট হতে রেভেনিউ স্টেট এ পরিগণিত হইলো সহসাই।[v]

দার্শনিক যুক্তিবাদীদের বিরোধী, হিউম বলেছিলেন যে, যুক্তিগুলির পরিবর্তে আবেগগুলি মানুষের আচরণকে পরিচালনা করে,বিখ্যাতভাবে ঘোষণা করে দিলেন যে যুক্তিগুলো কেবল আবেগের দাস হওয়া উচিৎ।” তাঁর বিখ্যাত মানব প্রকৃতির এমন একটি গ্রন্থ যা জন্মগত ধারণার অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ছিল, এই বলে যে সমস্ত মানবিক জ্ঞান কেবল অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত। এটি তাকে ফ্রান্সিস বেকন, থমাস হবস, জন লক এবং জর্জ বার্কলেকে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদী হিসাবে রাখে। এটা কি আফনেরার কাছে পরিষ্কার হইছে? 

রাজনৈতিক ফিলোসফিতে ডেভিড হিউম খুব প্রভাবশালী আছিলেন। আগে কইছিলাম, শেষমেষ আরেকটা উদাহরণ দেই, হিউমের অন্তর্দৃষ্টির ফলে পপারের বড় কাজ The Logic of Scientific Discovery, আর এখান থেকেই পোস্ট-পজিটিভিজমের জন্ম।

তাই, ইতিহাসটা পড়ন দরকার। ইতিহাসের লাগি ইতিহাস এক জিনিশ, আর দর্শন বিজ্ঞানের লাগি অন্য জিনিশ। বাছাই করা কয়েকটা আর্টিকেল লইয়া এখখান বই আছে, সহজ করি লিখা, হক্কলের বুঝতে অসুবিধা হইবার কথা নাঃ Why Does History Matter to Philosophy and the Sciences?[vi]

যাইহোক, পচ্ছিমের নৈতিক শিক্ষা আমরারে বর্বর আর অসভ্য বানায়।[vii] পশ্চিমের রেশনালিস্ট হোক আর ইম্প্রিরিক্যাল হোকদুনু মতবাদই আমারারে আলাদা কইরা রাখছে। দার্শনিকভাবে আর নৃবিজ্ঞানের কাজে, পুবকে উপস্থাপন করছে নিম্নতরভাবে। ফলাফল যাইহোকইনাদের কাজে আমাদের পুবের  কোন লাভ হয় নাই।[viii] বিপরীতে, পুবের ইবনেসিনা, আল-ফারাবি, আল-কিন্দি, চৈতন্য দর্শনের আমরা নিজেরে রিলেটেড রাখবার পারি। জ্ঞানের পরীক্ষামূলকভাবে আমরা আরেকটা কাজ করব ভাবতেছিঃ লক আর হিউমের চউখে মার্কসের দর্শন। কারণ, মার্কস আমাদের দেশেই না, বরং তাবৎ দুনিয়ায় আমরার ধারণা, এককভাবে একাডেমিক আর নন-একেডেমিক দুই জায়গাতেই এই লোকরে  সমান তালে সবাই  পড়েন।  

যাই হোক, আমরা এই লম্বা ভুমিকায় অনেক কথা কইইয়া লইছি।

কিছুটা হলেও, আমাদের নিজেদের এবং আমাদের আলোচক (পাঠক নয়) এবং বিদ্যাপতিদের লাগিআমরা যারা গ্রীক থেকে পশ্চিমে ক্রমাগত ঝাঁপাইয়া পড়তেছিতারা বইটাতে একটু আশ্রয় পাতে পারি। দুঃখের বিষয় না, তবে আমরা আমাদের একাডেমিক এনসেস্টর’দের বাস্তবতা বুঝবার পারি। (আমরা আরব আর ইন্ডিয়ান ফিলোসফি পড়তাম না, ইংরাজি ফিলোসোফি পড়বাম।। দেবী প্রসাদের লোকায়ত দর্শন ইজ আ কমপ্লিট স্ট্যান্ড। এ রকম একটা বই আমাদের আছে, তার পরেও লিখতে বসলাম, ঐ একই কারণঃ গ্রীক থাকি, পুবের আগমন। মধ্য যুগটার উপস্থিতি নাই। আমাদের চউখ খোলে দেয়। সুধীর চক্রবর্তীর লোকসমাজ ও লোকচিত্র, আর হরপ্রসাদ না পড়লে আমরা লিখতে পারতাম কি সন্দেহ জাগে।  নীহাররন্জন রায়ের বাঙালীর ইতিহাস, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা, রাখালদাস  বন্দোপাধ্যায়ের বাঙ্গালার ইতিহাস (দুই খণ্ড) অতুল সুরের বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, ইরফান হাবিবের ভারতবর্ষের ইতিহাস প্রসঙ্গ: মার্কসীয় চেতনার আলোকে  , রেবতী বর্মনের সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ,  পন্ডিত জওহরলার নেহরেুর বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গে এবং ভারত সন্ধানে, বিনয় ঘোষের  বাংলার বিদ্বৎ সমাজ, এবং বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইতিহাসের উত্তরাধিকার , ফরহাদ মজহারের মার্কস পাঠের ভূমিকা,মুজাফ্ফর আহ্মদ, রেবতী বর্মণ,  আবদুল হালিম, আবদুল্লা রসুল এদের  কৃষক-আন্দোলন, রাহুল সাংকৃত্যায়নের  চেতনার দাসত্ব এবং ভোলগা থেকে গঙ্গা ,তপন রায় চৌধুরীর বাঙাল নামা, আহমেদ শরীফের বাউলতত্ত্ব, কেদার নাথ ব্যানার্জীর ভারত বর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস , নীরদ সি চৌধুরীর আত্মঘাতী বাঙ্গালী , এবং বাঙ্গালীর জীবনে রমনী, সরদার ফজলুল করিমের  আমি সরদার বলছি, হায়দার আকবর খান রনোর ,মার্কসবাদের প্রথম পাঠ, বদরুদ্দীন উমরের ’ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক’ দেওয়ান আজরফের ভাববাদ যুগে যুগে  পড়বার পারেন। একটু মজা পাইতে পড়েন।  অথচ  গ্রীক ট্র্যাডিশনটারে পশ্চিমে পরিচয় করি দিবার মাধ্যমটা আরবের এই ধারা। ঐতিহ্যের কথা আমাদের নৃবিজ্ঞানীরা কন, বাস্তব অস্তিত্ব স্বীকার করার সময় একটু ভুলে যান। দর্শনের জায়গা থাকি দেখলে কুরআন, বেদ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

জাহিদ সিরাজ 



[i] Schopenhauer, A. (2012). The world as will and representation (Vol. 1). Courier Corporation. পেইজ ৫৮২।  

[ii]   Hume’s Conservative Utilitarianism: An Interpretation of David Hume’s Political and Moral PhilosophyChien-Kang (Brian) ChenA thesis submitted to the Department of Governmentof the London School of Economics and Political Science for the degree of Doctor of Philosophy, London, October 2012, লগে এই বইতার ভুমিকাটা দেখেন, An Anthropology of the Enlightenment

Moral Social Relations Then and Today Nigel Rapport and Huon Wardle (eds)

[iii] Ellis, R. P. (2015). Francis Bacon: The Double-edged Life of the Philosopher and Statesman. McFarland পেইজ ২৮,মূল বইটা দেখন দরকার, Hume, D. (2003). A treatise of human nature. Courier Corporation.  

[iv]Srinivas, M. N. (1997). Practicing social anthropology in India. Annual Review of Anthropology, 26(1), 1-24, পেইজ ১১।  আরটিক্যাল্টা আমরাভাবের অনুবাদ করতামঃ  বন্দি মননের বিধিজিবি পর্ব - তে। রিলেটেড আরো দুইখান লিখা দেখবার পারেনআমদের এই এলাকায় ন্ররবিজ্ঞানের থকিজু পাইবে, Mathur, S. (2000). History and anthropology in South Asia: Rethinking the archive. Annual Review of Anthropology, 29(1), 89-106; Roque, R., & Traube, E. G. (2019). Introduction: Crossing Histories and Ethnographies. Crossing Histories and Ethnographies: Following Colonial Historicities in Timor-Leste, 1-46.

[v] Dirks developed his approach along Foucauldian lines, arguing that the colonial state in India made ethnographic knowledge into one of its primary cultural technologies of rule; in British India, a “revenue state” gave way to a type of “ethnographic state, Roque, R., & Traube, E. G. (2019). Introduction: Crossing Histories and Ethnographies. Crossing Histories and Ethnographies: Following Colonial Historicities in Timor-Leste, 1-46, পেইজ ১১এইটা আরেকটা ভালা লিখানাড়াচাড়া কইরা দ্যাহেন।

[vi] Krüger, L., Sturm, T., Carl, W., & Daston, L. (2005). Why Does History Matter to Philosophy and the Sciences?.

[vii] Stuart-Buttle, T. (2020). Hume, Cicero, and Eighteenth-Century Moral Philosophy. In Antiquity and Enlightenment Culture (pp. 195-218). Brill, পেইজ১৯৮-২০০

[viii] Buckle, S. (1999). British sceptical realism: a fresh look at the british tradition. European Journal of Philosophy7(1), 1-29.



[i] এই বইটা আসলেই একটা ঐতিহাসিক দলিল। ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকাএম এন রায়ের একটি অসাধারণ মূল্যায়নধর্মী রচনা। বিশেষ করে ভারতপাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে বইটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এম এন রায় বইটি লেখেন জেলে বসে। তিনি এমন সময়ে বইটি লেখেনযখন এইউপমহাদেশের হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায় একে অপরের থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছিলেন। ১৯২৫ সালে উভয় সম্প্রদায়ের আস্থাভাজন নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসমারা যান। এই সময়ে শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে সমষ্টিগতভাবে জাতিসত্তার আকাঙ্ক্ষা জোরদার হয়ে উঠেছিল এবং হিন্দু নেতাদের মধ্যে দেশবন্ধুর মতো সবারআস্থাভাজন নেতা বিরল ছিলেন। আনন্দবাজার থেকে একটা লিখা আছে এম এন রায় নিয়া। দেখবার পারেন।https://www.anandabazar.com/editorial/feature-on-manabendranath-roy-1.1113044 

[ii] বুদ্ধিজীবীর নোটবই কিন্তু সুধীর বাবুর একলা  লিখা নাসংকলন। খুব চমৎকার করে একটা ভূমিকা লিখছিলেন। বইটাতে যারাই লিখেছেন তিনারা গভীরেযাননাইমনে হয়নোটবই নামটা একটা কারণ। কিন্তুআলাপ আলোচনার জায়গাটা পরিষ্কার করে দিছেন।