এই ব্লগটি সন্ধান করুন

অনুবাদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
অনুবাদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

বন্দী মননের বুদ্ধিজীবী

                                                                     

                                                                   অধ্যায় এক

বন্দিমনঃ প্রত্যয় ও চর্চা

The Annals of the American Academy of Political and Social Science, ১৯৬৬ সালে একটা লেখা বের হয়, টাইটেলঃ 'The Professor Abroad', লেখক, এডওয়ার্ড ডাব্লিউ ওয়েডনার, তিনি নিজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক, একজন অভিজ্ঞ এবং ভাল বক্তা। আমেরিকান অধ্যাপকদের কার্যকারিতা সম্পর্কে কথা বলার জন্য তিনি যোগ্য ব্যক্তি। তাঁর কিছু পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে আগ্রহী করে তোলে। বুদ্ধিবৃত্তিক বিনিময় বা এক্সচেইন্জ-এর বিদ্যমান সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করে তিনি নিম্নলিখিত প্রজেকশন/ প্রস্তাবগুলো দেন---

(ক) আমেরিকান অধ্যাপক, আমেরিকান শিক্ষার পদ্ধতি পছন্দ করেন;

(খ) আমেরিকান প্রফেসর নিজস্ব বক্তৃতা, পরীক্ষাগার এবং সেমিনারে তাঁর নোটগুলি নিয়ে যান, "এগুলির পরিবর্তন ছাড়াই বা তাদের উপর নির্ভর করে কথা বলেন।

(গ) আমেরিকান বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পাঠ্যসূচী উন্নয়নশীল দেশ বা অঞ্চলের সাথে প্রাসঙ্গিক নয়; 

(ঘ) সার্বজনীন আইন প্রয়োগ করার শক্তি হিসাবে বিবেচিত প্রস্তাবগুলি প্রায়শই স্বাগতিক দেশের সামাজিক ব্যবস্থায় তা প্রয়োগের জন্য প্রযোজ্য হয় না; 

(ঙ) স্বল্পোন্নত দেশগুলির দৃষ্টিকোণ থেকে আমেরিকান এবং অন্যান্য বিদেশী পণ্ডিতদের গবেষণা খুব সন্তোষজনক মনে হয়নি।

প্রায় দশ বছর দেখে, শুনে এই অধ্যাপকের ধারণা হয় যে, স্বল্প-উন্নত দেশগুলির অবস্থার পরিবর্তন করে এমন অনেক কিছুই যোগ হয়েছে যা নতুন। যেমন, স্বল্পোন্নত দেশের অধ্যাপকদের বিদেশে গমন। নতুনত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা কি না বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আভিজাত্য যা কিছুসংখ্যক দেশের তাদের অর্থনীতি যতই খারাপ থাকুক না এ পেশার অবস্থা 'কম উন্নত' হয় না। এই সত্যের সাথে অভিযোজনকারী প্রফেসারদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তহবিল সরবরাহ তাৎক্ষণিক আবশ্যক হয়ে পড়ে ।

বর্তমানে সামাজিক বিজ্ঞান ব্যবহারে প্রসারিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় নিজের প্রয়োজনীয় অভিযোজন ছাড়াই ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র-এ উপস্থিত থাকে। এখানে শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক চেতনার ডোমেইন আছে যা বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে একটি ইঙ্গিত যে, শিক্ষার জগতে এশীয় পণ্ডিতরা এখনও বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্যের অধীনে রয়েছেন। এই আধিপত্যের ধরণ এবং প্রভাবগুলি সহজেই সনাক্ত করা যায়; যদি দেখা এবং বুঝার মতো চোখ থাকে। এটি বোধগম্য উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ কিছু ক্ষেত্রে এর মারাত্মক রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। অকল্পনীয় পরিকল্পনায় পুরো একটি দেশকে বশীভূত করা হয়; ফলাফল মারাত্মক পরিণতি। 

সমাজ উন্নয়নের কাজ হলো সমাজ ভাবনার ফসল। আমাদের মানে এই অনুন্নত বা স্বল্প উন্নত দেশগুলোর পরিকল্পনাবিদদের সমস্যা, এবং সমাধান হিসাবে সকল দলীয় নেতারা উন্নয়নের লক্ষ্য এবং তাদের অর্জন সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য এটি প্রয়োজনীয় বিষয়। এখানে আমরা নিবন্ধের দিকে (মূল লেখক সৈয়দ হুসেইন আলাতাস) মনোযোগ নিবদ্ধ করতে চাই যে, বিশেষজ্ঞদের জন্য এমন কোন কোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় একটি আইটেম নেই যা বিশেষজ্ঞের অনুভূতি থেকে মুক্ত বা আলাদা। সৈয়দ হুসেইন আলাতাসের বাক্যটা হুবহু পড়ি “We need a sociology of social scientists in Asia”[i]এশীয়ায় আমাদের দরকার সমাজবিজ্ঞানীদের দ্বারা একটি সামাজিকবিজ্ঞান (Sociology-কে সমাজবিজ্ঞান না বলে আমরা অনুবাদকগণ বড় করে সামাজিক বিজ্ঞান বললাম)। যেখানে আমরা তাদেরকে (পশ্চিমাদের ) এবং তাদের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা এবং ক্রিয়াকলাপকে সাবজেক্ট করতে পারি। আর এভাবেই, একটি উন্নত ধরনের বিশ্লেষণধর্মী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায়। 

এশিয়ান সামাজিক বিজ্ঞানীদের চিন্তার প্রবণতার বা প্রবাহের দ্বারা আমরা এখানে (পুবে) শুরু করতে পারি; এই বিক্ষোভকে বা চিন্তামুক্তির আন্দোলনকে বাস্তবে অর্থনীতিবিদরা যাকে বলেন ‘Demonstration effect’ (আমরা ইংরেজিটাই রাখলাম)  আর এই প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে সমাজের বৃহৎ অংশে এর প্রভাব পড়বে, নতুনরা আমাদের সমাজ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আরো নতুন পথ বের করতে পারবেন।

সৈয়দ হুসেইন আলাতাস এখানে জেমস ডেজেনবেরি কে[ii] রেফার করলেন, যিনি গ্রাহককে ‘Demonstration effect’ শব্দটি রেফারন্সে দিয়ে ভোক্তার আচরণ বুঝাতে ব্যবহার করেছিলেন। আলাতাস এখানে ডেজেনবেরির Demonstration effect’ আনলেন সামাজিক বিজ্ঞানে যাতে করে আমাদের আগ্রহ, মূল্যায়ন ইত্যাদি বুঝাতে পারেন। একটা উচ্চমানের পণ্য কিনব বলে আমাদের ব্যয় বাড়ে, আর আমরা সেটা পাবার/ক্রয় করার জন্যে অর্থ সঞ্চয় করি। পণ্যগুলির বস্তুনিষ্ঠ ইউটিলিটি থেকে স্বাবলম্বিতা অর্জিত বজায় রাখা  শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রবণতার ফ্রিকোয়েন্সি, এবং শক্তিপণ্য যেমন পণ্যের সাথে যোগাযোগের ফ্রিকোয়েন্সি উপর নির্ভর করে। প্রতিটি যোগাযোগ এই জাতীয় সামগ্রীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রদর্শন বা ‘Demonstration effect’ এবং ধারাবাহিকতার জন্য হুমকি হচ্ছে বর্তমান ভোক্তা প্যাটার্ন! Demonstration effect’ এর প্রভাবটি আসলে আমাদের মানব প্রবৃত্তির একটা সাধারণ প্রবণতার অংশ, যেটি মনোবিজ্ঞানী এবং সামাজিক নৃবিজ্ঞানীদের কাছে 'ডিফিউশান’ নামে পরিচিত। ‘Demonstration effect-প্রক্রিয়ায় সমাজ একটি অংশ গঠন করে। অর্থনীতিবিদদের কাছে এই প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছ অংশের সাথে সম্পর্কিত (পণ্য অধিগ্রহণ), সমাজবিজ্ঞানী এবং সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরাও এর সাথে উদ্বিগ্ন ছিলেন। যদিও সমাজবিজ্ঞানী এবং সামাজিক নৃবিজ্ঞানীগণ প্রক্রিয়াটি আরো সুন্দর আর পরিশীলিত করে বিশ্লেষণ করেছেন। যেহেতু এই অধ্যায় বা তদন্তের বিষয়বস্তু হ'ল সামাজিক বিজ্ঞানের চিন্তায় প্রদর্শিত এশিয়ান পণ্ডিত এবং পরিকল্পনাবিদদের বেলাতে Demonstration effect’ বিষয়টাকে দেখা। এক্ষেত্রে আমরা সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান বা কৌশলকে ‘পণ্যের’ সাথে তুলনা করে দেখব। এই সামাজিক জ্ঞানের একীভূতিকরণের মূল ধারাটি আমাদের মতো দেশে পশ্চিমা জগৎ হতে আসে; কারণ তাদের জ্ঞানকে যদি Demonstration effect’ এর বিচারে দেখি, তাইলে সেটার উপযোগিতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি আমাদের অগাধ বিশ্বাস। এই জ্ঞান এবং প্রযুক্তির বা কৌশলের এসিমিলাশান বা সংমিশ্রণ সমান্তরাল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে যা হলো---

(ক) পুব আর পশ্চিমের মধ্যে যোগাযোগের ফ্রিকোয়েন্সি; 

          (খ) পুবের বা অনুন্নত দেশের পূর্ববর্তী জ্ঞান বা অভ্যাসের ভাঙ্গন বা দুর্বলকরণ;

          (গ) পশ্চিমের আরোপিত নতুন জ্ঞানের প্রতিপত্তি বা মর্যাদা সংযুক্ত করা; 

        (ঘ) এটি মানে পশ্চিমের আরোপিত নতুন জ্ঞান আবশ্যিক ভাবে অযৌক্তিক, এবং এই পুবের সমাজের জন্যে মোটেই যুক্তিযুক্ত ও উপযোগী নয়।

আরও অনেক সমান্তরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ‘Demonstration effect’ -এর ফলস্বরূপ আলোচনা করা যেতে পারে। এশিয়ার দেশগুলিতে সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের বিস্তারের কারণ ইতিবাচকনেতিবাচক সমালোচনার প্রভাব। অনেকে মনে করেন, যতটুকু সম্ভব এই পরিস্থিতিটি শীঘ্রই সংশোধন করা উচিৎ। পদ্ধতিগত উদ্দেশ্যে আমরা পশ্চিমের সামাজিক বিজ্ঞনীদের কাজগুলোতে মনোনিবেশ করব; কারণ, পাশ্চাত্য বিশেষজ্ঞরা যেহেতু এই Demonstration effect-এর উৎস। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরাই সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান, তত্ব এখানে বিক্রি করে দেন বা, পুবের মানুষ তাদের জ্ঞান কিনে নেন ।

এশিয়া ও অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলের পরিকল্পনা সম্পর্কিত লেখা বা রচনাগুলি পশ্চিমা বিদ্বানদের এবং তাদের অধীনস্থদের দ্বারা লেখা একটি বিশাল সংখ্যক রচনা আমরা পাই। এসবের কারণে প্রায়শই বিভ্রান্তিকর প্রাথমিক অনুমান, ভুল জায়গায় বিমূর্ততা, অজ্ঞতা বা এর ভুল ব্যাখ্যা সংক্রান্ত ডেটা, এবং সমস্যাগুলি সর্ম্পকিত ভ্রান্ত ধারণা এবং তাদের বোধগম্যহীন তাৎপর্য আমরা দেখে থাকি। তাদের বর্ণনা বা/এবং পরিসংখ্যানমূলক তথ্য, বিবৃতি আমাদের নজরে আসে, যার মধ্যে অনেকগুলির কোন জ্ঞান তাত্ত্বিক মূল্য নাই। আর তাই, এগুলো গ্রহণ করা যায়না। বরং এসবের সামগ্রিক ফলাফলের গভীরতা এবং প্রয়োগের দিক বিবেচনায় আদতেই পর্যাপ্ত গুরুত্ব থাকেনা। আর তাই, সংখ্যায় কম হলেও, কিছুসংখ্যক এশীয় ও পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা ‘পরিস্থিতি’ স্বীকার করেছেন, এবং চাপ দিচ্ছেন যে, এশীয় ও অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের একটা ধারার প্রয়োজন আছে। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে, সৈয়দ হুসেইন আলাতাস যে নামগুলি নিয়ে আসছেন,[iii] আমরা স্বীকার করি, সেসবের খুব দরকার। কিন্তু, প্রায় একই সমেয় ১৯৬৯ সালে, ভাইন ডেলোরিয়া লিখে গেছেন আমাদের দরকার ‘Indigenous Metaphyisics

এই মুহূর্তে (সময়টা ১৯৭২ সাল) সবচেয়ে বড় সমস্যা হ'ল অনেক বেশি সংখ্যক এশিয়ান পণ্ডিত এই Demonstration effect-এর মতো মনোভাব ধারন, লালন আর পালন করেন এবং ডিফিউজ করেন। আমেরিকান এক পণ্ডিত উইলিয়াম ক্যাপ,[iv] গুনার মিরডালেরএশীয় দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে নিম্নলিখিত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন। আসুন দেখি, যদিও এটা অর্থনীতির ছাত্রদের ক্ষেত্রে বলছিলেন, আমাদের মনে হচ্ছে, সকলের বেলাতেই এটা জানা দরকারি।

অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ থেকে আসা অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের যারা তাদের স্নাতক বা পিএইচডি অর্জন করেন একটি উন্নত দেশে তারা, আমাদের পড়াশোনার জগতে এক তাত্ত্বিক পুনর্গঠন ও দক্ষতার সংমিশ্রণের একটি প্রাক-ধারণা পায়, এবং তারা নিজের দেশে ফিরে আসার পরেই তারা নিজের দেশের সাধারণত প্রচলিত জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করেন, যা তিনি উন্নত দেশে গ্রহণ করেছেন তা প্রয়োগে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। হতে পারে তিনি নিজের পড়ালেখার সাফল্য দেখাতে আগ্রহী। বেশিরভাগই এ রকম সামাজিক প্রক্রিয়া ও তত্বগুলির মধ্যে সংক্রমণ বা একধরণের জড়তা কাজ করে এবং শেখার প্রক্রিয়াটির দিকেই এই গতিটি চালিত হয়। এরকম প্রবণতায় তাত্ত্বিক কাঠামো এবং ব্যক্তির অভিজ্ঞতার মধ্যে অনিবার্য ব্যবধান বুদ্ধিজীবীদের জন্য নির্ধারিত পথ নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অভিজ্ঞতার জগতকে আরও প্রশস্ত করা যেতে পারে যাতে করে বৃদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মনে হবে সনাতন ধারণা এবং তত্ত্বগুলি তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে। এটা সত্য যে, আমাদের মতো কতিপয় দেশ সমস্যার ধরণ ও কর্ম-পরিকল্পনা যথার্থভাবে নিরুপন না করেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন ঘটায়। ফলে, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বাস্তবতায় ফারাক ঘটে থাকে বিস্তর। আমাদের দেশের উন্নয়নের অর্থনীতিমিশ্র পদ্ধতির অর্থনীতি। আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কোন তাত্ত্বিক বিকাশের মাধ্যমে নয় বরং যখন যেটির প্রয়োজন মনে হয় সেটির কৌশল প্রয়োগ করে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা, দারিদ্র্য উন্নয়ন কৌশলপত্র, এমডিজি, এসডিজি, ডেল্টা প্ল্যান, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, বার্ষিক পরিকল্পনা করা আরো কতো কি? এর দরুন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন সমস্যাটির প্রকৃতি ও ধরন নির্ধারণ করা যায়না; এবং এতো এতো পরিকল্পনার ভারে উন্নয়ন পরিদৃশ্যমান তো হয়না বরং কল্পনাই শক্তিশালী হয়ে উঠে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার যথাযথ বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের সুফল আমরা তথা জনগণ ভোগ করতে পারেনা। উন্নয়ন পরিকল্পনার অসামন্জস্য তা দূর করতে এবং বাস্তব ও কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপযুক্ত কোর্স প্রণয়নে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুকরণ করতে হবে এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চা এতে অনিবার্য বিষয়। 

এটা আসলেই এক ভয়ংকর বৃত্ত। এ বৃত্ত ভাঙ্গা দূরের বিষয়;ভাঙ্গার চিন্তাও যেন অলীক আর অকল্পনীয়। বুদ্ধিজীবীদের বৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপের প্রধান উপাদান সমূহ যেমন,বিমূর্ততা (Deconstruction), সাধারণীকরণ (Generalization) ধারনায়ন (Conceptualization) সমস্যা চিহ্নিতকরণ (Problem identification) ব্যাখ্যা, ডেটার বোধগম্যতা ও তার আয়ত্ত্ব করা,এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া দ্বারা আক্রান্ত। সবচাইতে বড় কথাটা হল এই প্রক্রিয়া আমাদের অভ্যাসের একটি প্যাটার্ন গঠন করে দেয়; আর এটা ভাংগা খুব জরুরী, যাতে আমরা চিন্তার ধরণটির দুর্বলতাগুলি প্রকাশ করতে পারি। তাহলে আমাদের কাজ কী হতে পারে? শুধুই ব্যাখ্যায় আটকে থাকা? না, কাজ করতে হবে। বরং সমস্যা গুলো ভালো করে দেখে নেয়া যাক। সৈয়দ হুসেইন আলাতাসের ভাষায়, The next step should be to expose the conditions that lead to uncritical imitation and the perpetuation of the resultant habit pattern[v]। আলাতাস খুব জোর দিয়েই বলেছেন, চিন্তার কাঠামো, এটা আমাদের কব্জাকে যেমন তৈরি করে দেয়, তেমনি নতুন কর্মীদেরকেও রিপ্রোডিউস করে, ঘুরতে থাকে আপন মনে ফিরে যায় শুরুর জায়গায়। মানে বৃত্ত। আমাদের চিন্তা আর কর্মে যেন শৃঙ্খলাবদ্ধ। গল্পটি বলা যাক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক দলীয় পরিচয়ে বা ভিন্ন উপায়ে নিয়োগ; প্রকাশনা আর গবেষণা ছাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রমোশন অতঃপর একদিন অধ্যাপক। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ অনুরূপ ছলে বা বলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যু,জানাযা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদেই। এ শৃঙ্খল ভাংগবে সাধ্য কার? 

স্থায়ী অভ্যাসের প্যাটার্নের শর্তগুলি প্রকাশ করে দিতে গিয়ে সৈয়দ হুসেন আলাতস সমস্যাগুলির সহজ সমাধানের পথ খুঁজেন। তাই, পদ্ধতি এবং বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ বাদ দিচ্ছেন। এটি করার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণ স্বরূপ,আমরা এখানে নমুনায়ন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় এনে আদমশুমারি অনুশীলনের প্রস্তাব করতে পারি। একবার এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তা সহসাই স্বীকৃতি পাবে। একজন অর্থনীতিবিদের পক্ষে এটি স্বীকৃতি দেওয়া সহজ যে, তার অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করা উচিৎ হবে না যদি তার ডেটা অসম্পূর্ণ থাকে। আমাদের মতে ডিসকোর্স চর্চার ঝামেলা হলো এটি বহুল প্রচলিত যা বিভ্রান্তিকর এবং অপ্রয়োজনীয়ও বটে। তর্ক, কিংবা প্রত্যাখান, যুক্তি খন্ডন, তত্ত্ব , মডেল বা পরিকল্পনায় এই প্রস্তাবগুলি ব্যবহার করা হয়। যেমন একটি অপ্রয়োজনীয় বাহুল্যমন্ডিত প্রস্তাবনার কথা বিবেচনা করতে পারি; উদাহরণ হিসাবে জেন টিনবার্গনের Develppment Planning এর পরামর্শের কথা বলতে পারি---

Meanwhile if the differences between developed and underdeveloped countries  are to be properly understood, it is well worth bearing inmind that the phenomenon of development requires more exp1nation than that of underdevelopment. Both in nature and in human history, an existence on the borderline between life and death is more normal than a prosperous existence of the type commonly met with to-day in the developed countries of the world  Although the great prosperity of these countries is directly due to their possessing both knowledge and a great quantity of capital goods, these are in the result of other factors which broadly speaking can be divided into those which determine the environment in which man is actively employed, and purely human factors. It is, of course, obvious that certain human qualities are needed if a modern developed society is to function properly. Now societies of this kind are distinguished by processes of production using durable capital goods and employing large numbers of people together. For this reason, among the qualities that are required of quite a high proportion of the population of a developed society are an interest in material well-being, an interest in techniques and in innovation, an ability to look ahead and a willingness to take risks, perseverance, and an ability to collaborate with other people and to observe certain rules.

এদিকে উন্নত এবং অনুন্নত দেশগুলির মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য যথাযথভাবে বুঝতে হবে; অনুন্নয়নের আলোচনার চাইতেউন্নয়ন-এর বেশি ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। কেননা প্রকৃতি এবং মানব ইতিহাসে দুটোই জীবন এবং মৃত্যু সীমান্তরেখায় অবস্থান করছে। সাধারণত আজকালের দুনিয়ায় যে ধরণের সমৃদ্ধ অস্তিত্বের সাথে আমরা মোকাবেলা করি তার চেয়ে মৃত্যু বেশি স্বাভাবিক। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে যদিও সমৃদ্ধির গতি দুর্দান্ত তথাপি এই দেশগুলি তাদের সরাসরি জ্ঞান এবং প্রচুর পরিমাণে মূলধন সামগ্রী থাকার কারণে কথা বলার ক্ষেত্রে কোন পরিবেশ আর পরিস্থিতে মানুষ কথা বলে তাদের মধ্যে তা স্পষ্ঠতঃই নির্দেশ করা যেতে পারে। খোঁজা যেতে পারে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত এবং নিখুঁত মানবিক কারণসমূহ। এটি অবশ্যই স্পষ্টভাবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, একটি আধুনিক ও উন্নত সমাজ বির্নিমানের জন্য মানবিক গুণাবলীর মানুষের প্রয়োজন হয়। এখন এই জাতীয় সংস্থাগুলি উৎপাদন ব্যবহারের প্রক্রিয়া দ্বারা পৃথক করা হয়। টেকসই মূলধন পণ্য উৎপাদনের জন্য একসাথে বিপুল সংখ্যক লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই জন্য উন্নত সমাজ তৈরীর জন্য বেশিরভাগ জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় গুণাবলী বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট নিয়মসমূহের প্রতি নজরদারি দেওয়া হয়। যেমন- সুস্বাস্থ্যের প্রতি আগ্রহ, কৌশল এবং উদ্ভাবনে আগ্রহ, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা, ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহী, অধ্যবসায় সহযোগিতার মনোভাব এবং পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা ।

এখানে প্রথম যে প্রশ্নটি উঠে তা পাঠকের প্রকৃতি। আইম্বারজেন- কলোনিয়াল ও ফিনান্সিয়াল পলিসি জন্য বিখ্যাত; ১৯৯০ সালে আর্থিক পুনঃসংস্কারে তাঁর অবদান আছে। বইটি (Development Planning -1967) যদিও পণ্ডিতদের জন্য, উদ্ধৃত হিসাবে অনুচ্ছেদগুলি অপ্রয়োজনীয়। বইটি যদি শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত হয় তবে বইটি উত্তম এটি বলা ভাল হবে। কিন্তু বড় সমস্যা হ'ল বিদ্যাতয়নিক সাহিত্যের বেশিরভাগ অংশই অনুন্নত এবং পরিকল্পনা বিষয়ে অপ্রয়োজনীয়; যদিও কতিপয় বর্ণনামূলক এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য কাজে লাগে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসাবে দীর্ঘকাল ধরেই নির্দিষ্ট নিয়মগুলি পর্যবেক্ষনের স্বীকৃত বিষয়। যেমন, বস্তুগত সুস্বাস্থ্যের প্রতি আগ্রহ, কৌশল এবং উদ্ভাবন, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা,ঝুঁকি নিতে আগ্রহী, অধ্যবসায়, সহযোগিতা করার মনোভাব ইত্যাদি।পণ্ডিতগণের বিবৃতি এবং সারাংশ বক্তব্য সাধারণত এমন কোনও অর্থবহ ভিত্তিমূলক বিশ্লেষণ গঠন করে। এটি জরুরী স্বাস্থ্যসেবার গ্রহনের সময় স্বাস্থ্যে সংক্রান্ত নীতিগুলি আলোচনা করার মতো যা প্রয়োজনীয় কিন্তু জরুরী স্বাস্থ্যসেবা গ্রহনের মতো জটিল বিষয়ের সময় নয়। সম্ভবত আমরা এই ধরণের পদ্ধতির আরও ভাল উদাহরণ আমরা বেছে নিতে পারি এভাবে যে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ত্রুটিগুলির সাথে আমাদের উল্লেখ করেছি; সমস্যা-সেটিং, ধারণাগুলি, এবং ব্যাখ্যা ইত্যাদির সাথে সমন্বয় করার মাধ্যমে। উন্নত এবং এর প্রবৃদ্ধির ধরণগুলির তুলনামূলক অধ্যয়নের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহকে, কুজনেটস (Kuznets – আয় ও মাথাপিছু আয়ের বৈষম্যকে ইউ-কার্ভের মাধ্যমে দেখান, যেটি পরবর্তীতে কুজনেটস কার্ভ নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন ; তিনি ১৯১৭ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন) নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি নজর দেন---

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মাথাপিছু পণ্যের উৎপাদনের হার উন্নত দেশগুলির চাইতে চেয়ে কম।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় মাথাপিছু কৃষিজমির সরবরাহ অনেক কম এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মাথাপিছু (এবং শ্রমিকের প্রতি)আয়,উন্নত দেশগুলির আয়ের তুলনায় অনেক কম। এখানে (উন্নয়নশীল) নিম্ন উৎপাদনশীলতার কারণ কৃষি খাত। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্থূল আয়ের বিতরণ বৈষম্যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা বিদ্যমান থাকে প্রকটভাবে। স্বল্প আয়ের কাঠামোর সামাজিক ও রাজনৈতিক উপাদানসমূহ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আজও মারাত্মক বাধা হিসাবে উপস্থিত রয়েছে। বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশগুলি ঔপনিবেশিক আমলের নাগপাশ হতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে বটে কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নয়।

উন্নয়নশীল দেশগুলির জনগোষ্ঠী আজ সভ্যতার উত্তরাধিকারী; এবং ইউরোপীয় সভ্যতা থেকে বেশ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। এখনো যা বহু শতাব্দী ধরে এটি ইউরোপীয় সভ্যতার ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং বৌদ্ধিক সম্প্রসারণ,যা আধুনিক অর্থনৈতিক ম্যাট্রিক্স সরবরাহ করেছে। জাপান ব্যতীত বর্তমানে সমস্ত উন্নত দেশ, হয় ইউরোপীয় সভ্যতার পুরানো সদস্য, নয় আঞ্চলিক সম্প্রসারণ। 

আমরা এখানে 'পণ্ডিত এবং দরকারী অবদানগুলির বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করছি না। সম্পূর্ণ কিন্তু নিছক উদাহরণ হিসাবে এই নির্দিষ্টটিকে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র। সমস্যাটি হ'ল, এই ধরণের অনেকগুলি আলোচনা রয়েছে যা পরিকল্পনাকারীদের এবং অনুন্নত দেশের উন্নয়ন শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করে।এই জাতীয় ক্রমবর্ধমান আলোচনার পরিমাণে প্রায় ভাসাভাসা। তারা জ্ঞান যোগ করে না এবং এগুলি দরকারী হিসাবে খুব বিস্তৃতোও না। অনেক ক্ষেত্রে তারা শুধু সংক্ষেপে তথ্য এবং পর্যবেক্ষণের বিবৃতি দেয় । এখনও অন্য ক্ষেত্রে আমাদের কী করা উচিৎ সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়। যাহোক,পাশ্চাত্য সমাজের গবেষণায় চিত্রটি সম্পূর্ণ আলাদা।এখানে সামাজিকবিজ্ঞানের ডিসকোর্স বা বিবৃতি- অ্যানালিটিক বিষয়বস্তু, বিদেশী বৃত্তি থেকে উদ্ভূত হয়ে থাকে, এবং ,সাধারণ বিবৃতি  প্রদানের মাধ্যমে উদ্বেগজনকভাবে কেউ কাউকে আক্রমণ করেনা। পুঁজিবাদের মতো একটি বিস্তৃত বিষয় রেফারেন্সের সঠিক তথ্য ছাড়া আলোচনা করা যায়না। পশ্চিমা বিশ্বের শিল্প বিপ্লব, আধুনিকায়ন ও অর্থনৈতিক বিকাশ এসবের পুরো আলোচনা হতে হবে নিয়মিত ঐতিহাসিক ও সামাজিক রেফারেন্সসহ একটি উচ্চ স্তরের পরিশীলিত ডেটার সমন্বয়ে। দুভার্গ্য এশীয়ান বা উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য যে, ঐতিহাসিক ও সামাজিক তথ্যের ভিত্তিতে এসব রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিচালিত হয়না। ফলে গোঁজামিল পাওয়া যায় গাজাখুরির গল্পে। আঁখি মুন্জিয়া দেখলেই দেখতে পাবেন।

আরেকটি ইস্যু হ'ল উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বুদ্ধিজীবিদের বেড়ে উঠা, বিদ্যার চর্চা, গবেষণা বা অনুসন্ধান এবং তাদের লেখার উপসংহারে উদ্বেগজনকভাবে নিজস্ব সাংস্কৃতিক এবং পদ্ধতিগত উপাদানের অনুপ্রবেশ ঘটানোর চাইতে কায়েমি বা গোষ্ঠীগত / ব্যক্তিগত স্বার্থ অথবা উচ্ছিষ্ঠ ভোগের প্রত্যাশার ইঙ্গিত বেশি হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসাবে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কাজকর্ম বিবেচনায় আনুন। 

হ্যাঁএটা সত্যি যেআমাদের মাঝে চিন্তার দাসত্বের শুরু অনেক আগে থেকেই হয়েছেম্যাক্সমুলারের দাসত্ব প্রকল্পের ভাবনার আগেই , পায়ে আমরা বেড়ী পরেছি। পুঁজির প্রসারে কোম্পানির আস্থায় আমরা শতভাগ বিশ্বাসী  অনুসারীআরো আগে ঔপনিবেশিকতারমদদে জমিদারিগোমস্তাগিরিবেনিয়াগিরির মতো হাজারো রকমের দালালিতে নিযুক্ত হয়েছেন আমাদের শহুরে মানুষেরা।কোস্পানীগুলো ইউরোপীয় সভত্যাকে উচুঁমানের করে গড়ে তুলতে অর্থায়ন করলেন ভারতীয় শিল্প কাঠামো ধ্বংস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিতকরতে। ফলেব্রিটিশ শাসক আর কোম্পানীর সাম্র্যাজ্যবাদের কবলে পড়ল আমাদের শহরগ্রাম,লৌকিক জ্ঞান,আদিবাসী সংস্কৃতিঐতিহ্য সবকিছু যেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ল আমাদের উপরআর এই সুযোগে টাকা-কড়ি কামাই করে নিলো ব্রিটিশ বেনিয়ারাভারতেতথা  বাংলায় গড়ে উঠল মধ্যস্বত্বভোগী বা দালাল শ্রেণীর। একই সাথে ভারত জুড়ে শিক্ষা  জ্ঞানবিকাশ এবং ইতিহাস চর্চার শুরুহলোভারতকে নতুন নামে হিন্দুস্থান‘ বলে অভিহিত করা হলো চালর্স গ্র্যান্টের পরিকল্পনা  সূত্রানুসারে। যদিও সমাজে ধর্মের বহুধাবিভক্ত আছে নানান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজনীতি। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আছে নানান উপ-সম্প্রদায় ও বিকশিত চেতনা। ভারতীয়দের এক ধর্মের অধীনে নিয়ে আসার চেষ্টা অনেকেই করেছেন। কিন্তু ভারতের সব জনপদের সকল জনসমষ্টি একক কারোর অনুগামী বাঅনুসারি হয়নি। শংকরাচার্য এমনি একজন। ব্রিটিশদের তত্বাবধানে ও সিভিলাইজিং মিশনসমূহের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়  এককেন্দ্রিক হিন্দু ধর্মের ধারণা গড়ে তোলা হল একদা জেসুইউ পাদ্রীদের পরে চার্লস গ্রান্টের লেখার সূত্র ধরে এবং তার উত্তরসূরীদের রচনা তত্ব অনুসরণ করে। এভাবেই ভারতীয় সমাজ ধর্ম, দর্শন, ও সংস্কৃতি সমন্ধে ইউরোপীয়রা ধারনা পেতে শুরু করলেন এবং আমাদের বংশ পরম্পরাক্রমে উঠে আসা জ্ঞানকে তারা অযৌক্তিক বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। যেমন-বিদ্যাসাগর বেদান্ত এবং সাংখ্য দর্শনকে মিথ্যা দর্শণরূপে দেগে দিলেন। তারা প্রমাণ করতে চাইলেন ,আমরাই (ইউরোপীয়রা) শ্রেষ্ঠ, ভারতীয়দের উচিৎ, ইউরোপীয়দের অনুসরন করা। তারা নতুন ধর্মমত গড়ে তোলার চেষ্টা করলেন। এরকম নানাজাতের, নানা ধান্দায় নানাবিধ প্রকল্প তারা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সেই যে শুরু করলেন , এসকল প্রকল্পের দর্শন আজোও চলমান আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শিক্ষায় বৃত্তি প্রদান এমনই একটি  যা আমরা প্রথমদিকে বলে এসেছি। এ রকম প্রকল্পের উদীষ্ট জনগোষ্ঠী হিসাবে প্রথমদিকে শহুরে শিক্ষিত বাঙালিদের জন্য নেওয়া হলেও এখন আপামর জনগনের  সবার জন্য প্রযোজ্য তবে ছোট্ট করে লেখা থাকে পশ্চিমা কোম্পানীগুলোর শর্তসমূহ। আমরা বুঝিনা বা বুঝার চেষ্টা করিনা, আর যখন বুঝি তখন ফিরে আসার পথ থাকেনা । এরকম কোম্পানী বা পাশ্চাত্য ফাঁদে পড়ে আমরা হয়ে যাই একেকজন বন্দী মননের বুদ্ধিজীবী বন্দী মননের এরকম প্রক্রিয়ায় আর্থ-সামাজিকরাজনৈতিক কাঠামোটি ভেঙ্গেভারতীয় সর্বস্ব লুঠে উদ্বৃত্তে শহুরে মানুষজন ব্রিটিশ দাসত্ব প্রকল্পে সামিল হলেন ঝাঁকে ঝাঁকে, এখনো তা চলমান। কমনওয়েলথ বৃত্তি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্ঞান বিকাশ ও চর্চায় ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থায়নকে আপনি কী হিসাবে দেখবেন? দাসত্ববাদের শৃঙ্খল পরা ও পড়ানোর জন্য কোম্পানী ও সরকার বহুরকম ধারণা ও কৌশলে সুপ্রচারের ব্যবস্থা করল প্রচুর অর্থ ব্যয়ে;তৈরি হল নানান প্রকল্প। প্রথমদিকে এরকম উদ্যোগের তাত্বিক ছিলেন চার্লস গ্র্যান্ট, যিনি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানীর চেয়ারম্যান ছিলেন। এই দাসত্ব তত্ব প্রচারের কাজে এবং কোম্পানিকে সেবা করার উপহারস্বরূপ কোম্পানি তাকে সাদরে পার্লামেন্টে স্থান করে দেয়। এরকম অনেক উদাহরণ আমরা ইতিহাসে পাই।

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গের অবতারণা করা যাক। পশ্চিমা ধর্মতত্বের আদলে আমাদের ভারতীয় অঞ্চলের সংস্কৃতি  ধর্মকে নানান দিকহতে মিলানোর চেষ্টা করা হলো। মন্দিরকে তুলনা করা হলো চার্চের সাথে আর আমজনতার আপ্তবাক্যে গড়ে উঠা বেদকে মিলানোহলো বাইবেলের সাথে। পূজা হলো ওয়রশিপঅথচ দুটো বিষয় আলাদা। ইংরেজ আমলে এভাবেই ভারতে কেন্দ্রীভূত হলো ধর্মচর্চা।সুগম হলো হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির। চিন্তার দাসত্বে পশ্চিমা আদলে ভারতীয় হয়ে উঠার প্রক্রিয়াকে প্রশ্ন না তুলেই ভারতীয়রা মেনে নিলবিদেশী উন্নয়ন প্রকল্প বলে। বরং আমরা পাশ্চাত্যের তৈরী করা বিদেশী দাসত্বের প্রকল্প ধার করা তাত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আর ইউরোপীয়ানসাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের বিষয়গুলো প্রচারে ব্যস্ত থাকলাম বেশী।

জন বেটস ক্লার্ক যেমন লিখেছেন ১৮৮৬ সালে; সম্ভাব্যতা অনুসারে উন্নত হতে হলে তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তিনটি স্বতন্ত্র শর্ত স্বীকার করতে হয়। সম্ভাব্যতার বাইরে যা সিদ্ধান্ত হয়, তার জন্য আকাঙ্ক্ষা অর্জন একটি স্বাস্থ্যকর প্রকৃতির নয়, হয় ধ্রুবক বা সক্রিয়। কৃষকের সময় কেটে যায় উদাসীনতা এবং অভিজ্ঞতার সাথে। অধিকাংশ সময়, কল্পিত অন্যায় করার ইচ্ছা অতি অল্প সময়ের জন্য হতে হয়। যেমন দিবাস্বপ্ন। অলস মালায়া মানে মালয়েশিয়ান জাতি’ নামে এক অতি সমালোচিত এথনোগ্রাফির কথা বলতেই হয় এখানে ।[vi]রেমন্ড কেনেডি নামের আরেকজন উদ্ধৃতি দিচ্ছেন, বইটার নাকি ‘মেরিট’ আছে! দেখুন[vii]-

The book itself merits reading by a wide and varied public, for it is at the same time a masterly treatise on a significant phase of Oriental economy, a model of anthropological and sociological research, and a valuable contribution to the neglected but increasingly important field of comparative economics.

London School of Economics and Political Science এর নমস্য নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনস্কির শিষ্য আবার এডমণ্ড লিচের গুরুরেমন্ডফার্থের লেখা উল্লিখিত উক্তিটি। উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যেএই প্রবন্ধের মূল লেখক সৈয়দ হুসেইন আলাতাস,উক্ত বইয়েরইডিয়োলজিকে একেবারেই প্রত্যাখান করে দেন।[viii]

রোজমেরি ফার্থ, রেমন্ড ফার্থের স্ত্রী লিখলেন Housekeeping among Malay Peasants[ix] এই হলো কলোনিয়াল নৃবিজ্ঞানীদের চিত্র, ভারতীয় সমাজের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য ধরা পড়ে। 

আমাদের সকলের প্রিয় দার্শনিক কান্টের জন্মভুমি থেকে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে- ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞানী বা দার্শনিকরা ষোড়শশতক থেকেই মানুষের ‘আদি’ ভাষার অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা মনে করতেন যেপৃথিবীর সকল ভাষাই আদি তিনটিভাষা - লাতিনগ্রিক  হিব্রু থেকে উদ্ভূত। এই আদি ভাষাকে তাঁরা ‘পবিত্র’  ‘অভিজাত’ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।

১৭৬৯ সালে হার্ডার-এরEssay on the Origin of Language ’ প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে এই ধারনাটি পাকাপোক্ত হয়। তিনি সকলভাষাকে একটিমাত্র ভাষা-পরিবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখান। জার্মানির গোটিজেন (Gottingen) বিশ্ববিদ্যালয় থেকেপ্রকাশিত প্রথম প্রকাশিত বিদ্যায়তনিক গ্রণ্থে বলা হয়শ্বেতাঙ্গদের (বর্তমানের পরিভাষায় ককেশিয়ানসমস্ত বর্ণের মানুষদের মধ্যেশ্রেষ্ঠ। এই তত্ত্ব লুফে নেয় ব্রিটিশরা। সাদা মানুষদের ভাষাকে শ্রেষ্ঠতম বিবেচনা করে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর নির্মাণ শুরু হয়এবং সেমেটিক (মূলত আরবি হ্যামিটিক (উত্তর আফ্রিকা  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিতভাষাসমূহকে -শ্বেতাঙ্গদের (মূলতবাদামি বর্ণের মানুষজনভাষা হিসেবে চিহিত করা হয়। এই ভাষা শ্রেণির একদম শেষ স্তরে স্থান পায় ‘কালা আদমি’-দের নিগ্রোটিক(জুলুবা সুদানিক (ইথিওপিয়া থেকে সেনেগাল অবধি পর্যন্তভাষাগুলি। এইভাবে তিনটি স্তরে তাকবন্দি হয় পৃথিবীর সকল ভাষা।

সংস্কৃত ভাষাকে এই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীতে স্থান দেওয়া এবং একই সাথে প্রচার করা যেএটা এখন অতীত ভারতবর্ষের লুপ্তগরিমা হিসেবে চিহ্নিত করাটা হলো ব্রিটিশ রাজনীতি ফলে ইংরেজরা সংস্কৃতকে ‘মৃত’ ভাষা এবং তার সঙ্গে বর্তমান উপমহাদেশেরভাষা  সংস্কৃতির যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার প্রমা দিতে তৎপর হোন। তাইবর্তমানে দেশে প্রচলিত চালু সকল ভাষাই হয় ‘তদ্ভব’ (dialects) নতুবা অপকৃষ্ট ‘দেশি’ (vernacular) ভাষা মাত্র। অর্থাৎ সেই তিনটি স্তরে তাকবন্দি করে ফেলার প্রক্রিয়া এখানেও আজোওচালু আছে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ভারতবর্ষে এই কাজ প্রথমে শুরু করে এশিয়াটিক সোসাইটি  পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজেরবিদেশি সাহেবদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশি মোসাহেব গোষ্ঠী। আসলে আমাদের বন্দী মননের ইতিহাস অনেক গভীরেযারপ্রতিফলন আমরা এখন টের পাচ্ছি প্রতিনিয়তই;প্রতিটি কর্মকান্ডেই। চোখ বন্ধ করুনঅনেক কিছুই দেখতে পাবেন

 

আমরা একটা "বিকল্প ডিসকোর্স"কে এভাবে বলতে পারি যেএশিয়া এবং অন্য কোথাও সামাজিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ধারণা এবংধারণাগতকরণের প্রয়াস বলতে যা বোঝায় তা মূলধারার ইউরো-আমেরিকান-ভিত্তিক মডেলগবেষণা এজেন্ডা এবংঅগ্রাধিকারগুলির সাথে অসন্তুষ্টির ফলে উদ্ভূত হয়েছিল। এটি সামাজিক বিজ্ঞানের নেটিভিক প্রবণতা থেকে বিকল্প বক্তৃতাগুলির বৈধঅনুসন্ধানকে পৃথক করে। সুতরাংএই কাগজটি (কোনটি-নাম দিতে হবেএশিয়াতে বিকল্প বক্তৃতাগুলির অনুসন্ধানের সাথেসম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে এই খণ্ডে আলোচনার জন্য বৌদ্ধিক পটভূমি সরবরাহ করে।[x]

 

সন্তান যাতে ওলন্দাজদের দাসে পরিণত না হয়, সে কারনে রেড ইন্ডিয়ান মহিলারা কৃষ্ণচূড়া ফুলের বীজ খেয়ে গর্ভপাত ঘটায় ( বিস্তারিত)[xi] এখানেই বোটানির ইতিহাস ও তথ্য জড়িয়ে যায় জনজাতির বিশেষ ধরণের প্রতিরোধের উপাখ্যানের সাথে এবংআমাদের মনে হচ্ছেএটা সৈয়দ হুসেইন আলাতাসের ছেলে ফরিদ আলাতাসবা তাঁর অনুগামী স্কলারগণ একটা প্লাটফর্ম দাঁড়করাচ্ছেন যেটা আমরা ভূমিকাতেই উল্লেখ করেছি।

 

আমরা পল স্ট্রিটেন এর সামাজিক চিন্তার কতিপয় নির্দিষ্ট উৎসের নিম্নরূপ কতিপয় পরামর্শের কথা উল্লেখ করতে পারি---

(ক) পশ্চিমা অর্থনীতির উচ্চ প্রতিপত্তি ও প্রভাব রয়েছে; 

(খ) পাশ্চাত্য অর্থনীতি দ্বারা নির্ধারিত মানগুলির উপর নির্ভর করে পুবের কর্মসংস্থান ও তাদের অর্থনীতিবিদদের জন্য সম্ভাবনাগুলো;

(গ) পশ্চিমা অর্থনীতির বৈধ- দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্থাগুলোর বিচ্ছদে দ্বারা বেআইনীভাবে উন্নয়নশীল অঞ্চলকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে; 

(ঘ) তারা অর্থ্যাৎ পশ্চিম সহজলভ্য ফ্যাক্ট ব্যবহার করে তদন্তে ও পরিমাপের সত্য নির্ধারণকে সহজ প্রবেশাধিকার করেছেন;

(ঙ) অ-অর্থনৈতিক প্যারামিটারের চাইতে অর্থনৈতিক পরিমাণকে অধিক নিরপেক্ষ বলে বিশ্বাস করা হয়;এবং 

(চ) উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলো সকল এলাকার সম-উন্নয়ন না ঘটাকে বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার অভাব বলে এড়ানোর চেষ্টা করে;এতে করে সামাজিক বিজ্ঞানের সৃজনশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রগুলির অভাব,এবং শক্তিশালী সমালোচক গোষ্ঠীর অনুপস্থিতি ও বুদ্ধিজীবীর নিষ্ক্রিয়তার ধরণ ফুটে উঠে প্রকটভাবে। এসবের বিবেচনায় উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবিগণের তুলনায় উন্নত দেশের বুদ্দিজীবিগণকে বেশী প্রায়োরিটি বা মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে যুক্তিসঙ্গতকারনেই।

হ্যাঁ! আমাদের পরিকল্পনার অর্থনীতিতে নানবিধ সমস্যা রয়েছে এবং অনেক সমস্যা সামনে না আনার অনেক কারণও আছে, সেসবের মধ্যে একটি হ'ল বন্দীমননের বুদ্ধিজীবিগণের প্রভাবশালী বিভাগের উপর প্রভাব ধরে রাখার জন্য এশীয় একাডেমিক বা পেশাগত সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য শক্তির উপর চাপ প্রদান করা, যার ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি ও উন্নয়নের গতি সঠিক নির্দেশনা পায়না।

পরিকল্পনার লক্ষ্য এবং বাস্তবায়নের সাথে এই সমস্যার সম্পর্ক স্পষ্ট । আমরা বলতে পারি, পরিকল্পনার লক্ষ্য এবং মডেল-গুলির বিরোধ কেবল নিছক একটি পরিশীলিত স্তরে চাপ প্রয়োগের প্রভাবের ফলাফল। আমাদের উচিৎ একটি 'পরিকল্পিত বিপ্লবের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করা এবং সে মতে আমাদের চিন্তাভাবনাটিকে পুনরায় জাগিয়ে তোলা। পরিকল্পনার বিপ্লব সম্পাদন করতে আমাদের পণ্ডিতদের এগিয়ে আসা উচিৎ হবে নিম্নলিখিত প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে; অবশ্যই বন্দি মনের বিকলাঙ্গতা নিয়ে নয় । মেধা প্রদর্শনের প্রভাবটি সরিয়ে বা সীমাবদ্ধ করতে হবে যাতে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুতর প্রতিবন্ধকতা না ঘটে। অর্থ্যাৎ প্রভাবটি নির্বাচনী এবং স্বতন্ত্র প্রক্রিয়াতে রূপান্তরিত করা, বৈজ্ঞানিক আত্তীকরণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দ্বারা একটি উচ্চতর মান অর্জন করা। পণ্ডিতের একটি পৃথক অংশকে তুলনামূলক পড়াশোনায় আগ্রহ বজায় রাখা যাতে প্রকৃত উন্নয়নে সরকার এবং জননেতাদের আগ্রহী করে তুলবে এবং আমাদের স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখবে। আমরা মোটাদাগে বলতে পারি------

      সহানুভূতিশীল দেশীয় বুদ্ধিজীবি বা পণ্ডিতদের সমর্থন তালিকাভুক্ত করা। (রাজা রামমোহন রায়)

      মিথ্যা পরিকল্পনা এবং এর অপব্যবহারের মারাত্মক জনসাধারণের ক্ষতির সম্মুখিন হবে এমন পরিকল্পনায় অংশগ্রহনকারী,

বুদ্ধিজীবী, এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি চিহ্নিত করা ।

      আমাদের সামাজিক এবং উন্নয়ন বিজ্ঞানীদের মেধা দাসত্ব সম্পর্কে নিজস্ব চেতনা জাগ্রত করা।

      পেশাদার জার্নালে বা একাডেমিক প্ল্যাটফর্মে এই সমস্ত বিষয়ে লেখালেখি করা। 

এখানে স্থানের সীমাবদ্ধতা আমাদেরকে এসব অ্যাস্পেক্টগুলির বিশদ নিয়ে আলোচনা করতে বাধা দেয়। সমস্যা পণ্ডিতের মনে সমস্যার বোধের প্রভাব তাকে প্ররোচিত করে সংকীর্ণতায় বিশেষীকরণ হতে। যার দরুণ, প্রায়শই অন্তর্দৃষ্টি এবং মূল্যবান সমালোচনায় মনোযোগ দেওয়া হয় না। কারণ পণ্ডিতদের কাছ থেকে একই ক্ষেত্র হতে আলোচনাগুলো আসেনা বা আসতে দেওয়া হয়না।। 

এক্ষেত্রে আমরা সৈয়দ হুসেইন আলাতসের লেখাটির শুরুটা দেখতে পারি Intellectual imperialism: Definition, traits, and problems[xii] আর সৈয়দ ফরিদ হুসেইন আলাতাসের Alatas, Fanon, and Coloniality[xiii] এদের কথা উল্লেখ করতে পারি।

প্রথম লেখাটির শুরুটাই এমন যেএকটু না পড়লে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে---

সাম্রাজ্যবাদের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াটির রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিকগুলিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি একটি গুচ্ছ হিসাবেবিবেচনা করা হয়। সাধারণত যা আলোচনা করা হয় তা ' অর্থনৈতিক  রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। তবেএই বইয়ে আমরামেধা সাম্রাজ্যবাদের দিকে ঝুঁকছিপ্রথমে এটি কী তা বর্ণনা করে এবং দ্বিতীয়টি এর সাথে যুক্ত সমস্যাগুলি বুঝার চেষ্টা করেআর অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যেও বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের ফলে এশীয় এবং আফ্রিকান সমাজগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগহওয়া বিষয়গুলি থেকে মনোযোগ স্থানচ্যুত হয়েছে। বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের শেকল থেকে মনের মুক্তিউন্নয়নশীলসমাজগুলিতে সৃজনশীল এবং স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের ট্র্যাডিশান বা ঐতিহ্যের বিকাশের প্রধান শর্ত।

অর্ধ শতক আগের লেখাটির প্রাঙ্গিকতা আজো ফুরোয়নি। আর তাইআজো আমরা এটার উপস্থাপনা করছি নিম্নে

প্রায়শই অর্থনীতিবিদগণ উন্নয়নশীল সমাজগুলোর অধ্যয়নকে উপেক্ষা করে। রেমন্ড অ্যারনের ’দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি” অনুন্নত অর্থনীতির জন্য একটি দরকারী ও অমূল্য গ্রন্থ। তিনি অনুন্নত ধারণাটির গুণগত প্রকৃতির উপর জোর দেন, এবং উন্নয়নে অনুন্নয়ন, ,উন্নয়ন এসকল ধারণাগুলি ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন। তিনি মনে করেন যে, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বৈজ্ঞানিক মনোভাব প্রয়োগের / ব্যবহারের ফলে এবং অনুসন্ধানের ক্ষেত্রগুলিতে স্বাগতম জানানোর মাধ্যমেই উন্নয়ন ঘটে। উন্নয়ন-অনুন্নয়ন এর ঘটনার ব্যাখ্যাতেই মৌলিক কারণগুলি বিদ্যমান। বিভিন্ন ধরণের ডেভলপমেন্ট এবং আন্ডার-ডেভেলপমেন্টকে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিৎ।

উন্নয়নশীল সমাজে উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকার প্রতি। সমস্ত বিশ্লেষণে মানব আচরণ এবং কৃতিত্ব দুটি বিস্তৃত বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে ব্যাক্তি এবং দল/ গ্রুপ। ফ্যাক্টজেনিক দ্বারা আমরা এই সমস্ত বিষয়কে বোঝাতে চাইছি, যা মানুষের ক্রিয়া ফলাফল, বাহ্যিক এবং টিকে থাকতে সক্ষম ব্যক্তি বা একটি দলের চেয়ে দীর্ঘ, যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে পাওয়া যায়। যদিও সেখানে বাস্তব জীবনে অ্যাক্টিজেনিক এবং অ্যাক্টরজেনিকের মধ্যে একটি শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়া এবং আন্তঃনির্ভরতা ঘটনাবলী, বোধগম্যতার প্রথম দিকে - ধারণাটি তৈরি করা ফলপ্রসূ পার্থক্য রচনা করার জন্য মোজার্টের বিশেষ প্রতিভা, সংগীতে তাঁর গভীর আগ্রহ, তার প্রতি তাঁর উৎসর্গ, কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর জীবনকে সংগঠিত করার ক্ষমতা।

রেনেসাঁর সময়, লাতিন আমেরিকার শাসক শ্রেণি, ইংরেজ উদ্যেক্তারা, আর্থ-সামাজিক হিসাবে চিহ্নিত হয়, যেমন তাদের অর্থনৈতিক প্রকৃতি ক্রিয়াকলাপ, দলগুলি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক এবং চিহ্নিত গ্রুপ। টিম্বারজেন, যার আগ্রহটি ফ্যাক্টরজেনিক হতে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে অভিনেতাগত বিশ্লেষণের জন্য। তিনি আমাদের জ্ঞানের যথেষ্ট ফাঁকগুলি নির্দেশ করেছেন উন্নয়নের জন্য অমানবিক বৈশিষ্ট্য প্রয়োজনীয় একটি বই যা মূলত ফ্যাক্টরজেনিক। রাগনার নার্কসের সমস্যা অনুপাতে ক্যাপিটাল ফর্মেশন দেশ। একই কথা বলা যেতে পারে দ্য ইকোনমিক্স অফ আন্ডার ডেভেলপড কান্ট্রিজ যা পি টি বাউর এবং বি . এস ইয়াম কর্তৃক রচিত। আমরা এখানে তা অন্বেষণ করব না। কারণ, একটি প্রবণতা বিকাশিত হয়েছে। এটি অতিরঞ্জিত বলে যথেষ্ট ফ্যাক্টরজেনিক ডেটার উপর জোর গভীর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। এটি একটি পার্শ্বযুক্ত এবং পরিকল্পনার জন্য খুব সহায়ক নয়। একটি ফ্যাক্টরজেনিক প্রস্তাবের উদাহরণ নিম্ন লিখিতটি যেটি ১৯৫২ সালে নার্স্কে লিখেছেন ---

অনুন্নত দেশগুলিতে মূলধন গঠনের জন্য সরকারী অর্থের ব্যবহার একাডেমিক সম্মত তো নয় বরং অবাস্তব ধারণা। এর গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ রয়েছে। আরো একবার, জাপানের দিকে তাকাই, উন্নয়নের প্রথম দিকে ১৮৭০-১৮৮০ সালে, জনসাধারণের কাজ এবং শিল্পের জন্য মূলধন সরবরাহ এবং জনসম্পৃক্ত কাজে অর্থ যোগানের কাজটি রাষ্ট্র করেছিল। এশীয়ায় কিছু দেশ এটা করতে গিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে  রাষ্ট্র মূলধন হারায়। কারণ এখানে নীতি প্রয়োগের কালচার নাই, যার ফলে সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হয়না। অনুন্নত উন্নয়ন এবং উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনার অর্থনীতিতে প্রাসঙ্গিক নতুন সমস্যা উত্থাপনের প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্যতার যথেষ্ট চিত্র এটি। 

উপসংহারে আমরা এখানে জোর দিয়ে বলতে পারি যে factorgenic তথ্য এবং ব্যাখ্যাগুলি তাৎপর্যপূর্ণ সন্দেহের বাইরে হলেও, তাদের অবশ্যই পরিপূরক এবং এ সংক্রান্ত ডেটা ব্যাখ্যাগুলির সাথে যুক্ত করতে হবে। মিরডালের ‘এশীয় নাটক দুটি পদ্ধতির সংমিশ্রণ সরবরাহ করে। যদিও আমরা এখানে গবেষণামূলক কাজের জেনরাইলজড বা সাধারণ ত্রুটি নিয়ে নয়; তবে পদ্ধতির ত্রুটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

প্লান্টেশান আরো একটি উদাহরণ। যেটা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাঠামোকে দৃঢ়ভাবে প্রশংসিত করেছিল কিন্তু সামাজিক বিজ্ঞান বা নৃবিজ্ঞানের লেখাতে একটা সময় অব্দি এটিকে পর্যাপ্তভাবে স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি? কেন? ১৯৭২ সালে সৈয়দ হুসেইন আলাতাস যখন লেখা শুরু করলেন তা থেকে আমরা বরং বলবো, সময়ের হিসাবটি পাল্টে গেছে। ১৯১৯২ সালে রিও কনভেনশানে বায়ো-প্রস্পেক্টিং কে আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু, এটা সৈয়দ হুসেইন আলাতাস বিষয়টার তাৎপর্য বুঝার স্তরে ভুল করেন নাই। বোটানির জন্মদাতা কার্ল লিনিয়াস-এর চীন থেকে চা গাছ এনে সুইডেনে ব্যবসা করার ব্যর্থতা[xiv] আবার রবার্ট ফরচুনের[xv] সফলতা বা জোসেফ ব্যাঙ্কস এর অসামান্য! অবদান, সব [xvi] নিয়ে আলাদা করে লেখা দরকার। বায়ো-প্রস্পেক্টিং এর ইতিহাস আমাদের দেশের পাঠককূল যে খুব ওয়াকিবহাল তেমনটাও না। এ বিষয়ে লেখার প্রত্যাশাটি উনুনে এটা আপাতত বসিয়ে রাখা হলো। 

আমরা কেবল কলোনিয়াল পাওয়ারকে দোষ দিচ্ছি না, এটি একটি দীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাতের এবং লাভ-লসের ইতিহাস। কলোনিয়াল পাওয়ার যা করেছে তা হ'ল তারা ব্যবসায়ের স্বার্থে সমস্ত স্থানীয় লোক এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে; নিজের মতো করেই আইন-কানুন প্রণয়ন বা বাতিল করেছে এবং এটি একটি ঐতিহাসিক দোষ হিসেবে বিবেচনা করলে; আমরা তাতে দোষের কিছু দেখিনা। যেমন দেখা গেছে, চীন মেডিসিলা পুপোর্সের জন্য ব্যবসায়িক অ্যাপল্যান্ট তৈরি করেছে। খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ খ্রিস্টাব্দে, চীনা সম্রাট শেন নুং অর্থনৈতিক বা ঔষধি মূল্যযুক্ত উদ্ভিদের সন্ধানে দূরবর্তী অঞ্চলে সংগ্রহকারীদের পাঠিয়েছিলেন।[xvii]  ইসলামিক স্পেনের প্রাথমিক মধ্যযুগীয় উদ্যানগুলি ভবিষ্যতের বোটানিক উদ্যানগুলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যা আমরা এখন আমাদের দরকার আছে। টলেডোতে চিকিৎসক ও লেখক ইবনে ওয়াফিদের (৯৯৯-১০৭৫ সন অব্দি)। একাদশ শতাব্দীর হুয়ের্তা দেল রে উদ্যানের একটি উদাহরণ দেখুন। এটি পরে ইবনে বাসাল (১০৮৫ সাল পর্যন্ত) গ্রহণ করেছিলেন। ইকবাল বাসাল তখন সেভিলিতে একটি উদ্যান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল, এর বেশিরভাগ গাছপালা বোটানিকাল অভিযানে সংগ্রহ করা হয়েছিল যার মধ্যে মরক্কো, পার্সিয়া, সিসিলি এবং মিশর ছিল। মন্টপিলিয়র মেডিকেল স্কুলটি স্পেনীয় আরব চিকিৎসকগণ দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বি.সি. ১২৫০ এর মধ্যে এটি একটি পদার্থ উদ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছিল, তবে ১৫৯৩ অবধি সাইটটিকে বোটানিক উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়নি।[xviii]

ফলস্বরূপ, মেরি লুই প্রেটের কথায়, ইউরোপে একটি "প্ল্যানেটারি কনসাসনেস বা গ্রহের চেতনা" জন্মগ্রহণ করেছিল। অর্থ এবং ব্যবসায়ের সীমানা ছাড়িয়ে, উপনিবেশে অভিযানগুলি অভ্যন্তরটি সন্ধান করতে শুরু করে। একটি কন্টাক্ট জোনে বা পরিচিতি অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে, যেমন আমি আগেই বলেছিলাম তথ্য এবং জ্ঞানের বিপরীত প্রবাহের পাশাপাশি অবস্থানের অঞ্চলটি। এই সময়ে উদ্ভিদের গুরুত্ব এবং বাণিজ্য ও চিকিৎসা বিশ্বে তাদের গুরুত্ব বোঝার জন্য বিশ্বজুড়ে ১৬০০ টিরও বেশি বোটানিকাল গার্ডেন তৈরি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে রবার্ট ফোর্সিথের লেখা পড়া যেতে পারে। জোসেফ ব্যাঙ্কস এর লেখাগুলি দেখুন। কলকাতা বোটানিকাল গার্ডেনের ইতিহাস দেখুন ( বিস্তারিত)

বন্দনা শিভা, প্যাট মুনি, বাবর জহির  মার প্রাট[xix] সহ অনেকেই এ নিয়ে লিখেছেন। এটি ছিল বিভাজন এবং বৈষম্যের সত্যতা। 

উল্লেখ্য, আজো এই বিভাজন আছে। আজ আমরা অনেকেই মনে করি, ইউরোপীয়দের থিওরি আর দর্শন আমাদের দরকার। সৈয়দ হুসেইন আলাতাসের সময়ের আরো একটি মুল্যবান লেখা আমরা দেখতে পারি[xx] সামজবিজ্ঞানী রামানুজন বেশ কাব্য করেই  বলেছেন-“Is there an Indian way of thinking?”

আমাদের উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বর্তমান যে ধরণের বিমূর্ততা এবং জেনরালাইজেশন রয়েছে তার বৈধতা নিয়ে আমাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ। অল্টারনেটিভ ডিসকোর্স নিয়ে আগেই বলেছি, কাজ শুরু হয়ে গেছে। নিজ পায়ে দাঁড়াতে না পারলে আমরা পথ দেখবোনা। 

আমাদের  এখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করা উচিৎ; এবং বর্তমানে প্রচলিত ভেরিয়েবলের সেট ব্যবহার করে এম্পিরিকাল কেইস স্টাডিতে আরও মনোনিবেশ করা উচিৎ। উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য এবং সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনাগুলি তখন আরও ফলপ্রসূ ও সম্মানজনক হয়ে উঠবে ।

এবার হদিশ নেওয়া যাক এশিয়াটিক সোসাইটির থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক খ্যাত উইলিয়াম জোন্সের সংস্কৃত চর্চার ইতিহাস আর রাজনীতিটি কিছিল তিনি লন্ডনে নানান ভাষা রপ্ত করলেও সংস্কৃত ভাষা রপ্ত করার ফুসরত পাননি। কলকাতায় আসার আগেঅক্সফোর্ডে শিক্ষকরেখে আরবি শিখেছেন তিনি – এমনটা অবশ্য জানা যায়। ১৭৮৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েছেন বটেঅথচ তখনও অবধিসংস্কৃতর ‘’ জানেন না। মুনশিদের দিয়ে আরবিফারসি আর হিন্দুস্তানি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কোনও ক্রমে। কলকাতার সংস্কৃতনিয়ে তাঁর কোনও উৎসাহের কথা জানা তো যাচ্ছেই না,বরং উইলকিন্সকে ১৭৮৪- ২৪ এপ্রিলে তিনি জানাচ্ছেন ‘life is too short and my necessary business too long for me to think at my age of acquiring a new language’ এদিকে আদালতে সংস্কৃতশাস্ত্র বিচার করে রায় দিতে হয় বলে জোন্সের যাকে বলে একেবারে বেইজ্জত অবস্থা। তাই সে ভাষাটার পরখ করে নিতে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন ১৭৮৫ সালে ৫ ফ্রেব্রুয়ারি । আসলে কি তিনি ভাষাটা শিখতে আগ্রহী? বরং তিনি উচ্চারণকরেন ‘may check on the pandits in the Court’ সময়কালটা লক্ষ্য করা যেতে পারে। পরবর্তীতে তিনি সংস্কৃত শিখে ১৭৮৬ সালের২৩ অক্টোবর হেস্টিংসকে লিখলেন যেতিনি ‘tolerably strong in Sanskrit’ এবং ‘Menu, the Minos of India’ অনুবাদ করতেসক্ষমআবার এই লোক কি না ১৭৮৬-তে সংস্কৃতির সঙ্গে মিল পাচ্ছেন লাতিনেরতখনও তার সংস্কৃতি ভাষা শেখার মধুচন্দ্রিমাটিইশেষ হয়নি। ফলাফল স্বরুপ এর পরে পরেই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার 'অপরাধ'- আরবিকে তাড়ানো হবে।আর ফারসি সেই গোষ্ঠীভুক্ত হলেও তাকেও তাড়াবে ফোর্ট উইলিয়ামের কেরি  তার মুনশিরা। একেই বলে কলোনিয়াল নির্মাণ!

এটি আমাদের পরিকল্পনাকে আরও অর্থবহ এবং দেশীয় সমাজ নির্মান ও বির্নিমান করতে সাহায্য করবে। সামাজিক বিজ্ঞানগুলি পরিকল্পনার বৈধ এবং গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তবে তাদের চারপাশে বেড়েছে এমন তুলনামূলকভাবে এথনোসেন্ট্রিক অফসুট; যা থেকে তাদের মুক্তি দিতে হবে। মিমিক হয়ে আর কত কাল! Is they a own way of thiking? আমাদের ছক কী আমাদের হবেনা? আমাদের মানুষ, আমদের সমাজ, মন, মগজ আর শরীর কি দেখার জন্যে? [xxi]

                                                                         অধ্যায়

                                                                 দুই

বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদঃ সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এর সমস্যা এবং বাংলাদেশ

 

সাম্রাজ্যবাদ, যেমন আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি এটি একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, সেটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিকগুলিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটিকে রাজনৈতিক মতাদর্শসহ একটি ক্লাস্টার, লিনিয়ার প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। এটি একটি ঘটনা যেমন সাম্রাজ্যবাদ হ'ল মানব উদ্যোগ এবং ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির বিভিন্ন দিকের একটি গুচ্ছ। এই অধ্যায়ে আমরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে আলোচনা করব। যদিও আমাদের আলোচনার মূল কেন্দ্র থাকবে মেধা এবং একাডেমিক সাম্রাজ্যবাদ- যেসবের দিকে আমরা ঝুঁকছি। প্রথমত, আমরা এটি কী তা দেখতে পাব এবং দ্বিতীয়ত, এর সাথে যুক্ত সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করব। অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যেও বৌদ্ধিক বা একাডেমিক সাম্রাজ্যবাদের ফলে এশীয় এবং (আফ্রিকান সমাজ, খুব কম আসবে) উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; যদিওবা উদ্বিগ্ন হওয়া বিষয়গুলি থেকে মনোযোগ স্থানচ্যুত হয়েছে। বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের শেকল থেকে মনের মুক্তি, উন্নয়নশীল সমাজগুলিতে সৃজনশীল এবং স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্যের বিকাশের প্রধান শর্ত। আলোচনার মধ্যে, আমরা কয়েকটি উদাহরণ দেব, যা আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতির সাথে প্রাসঙ্গিক এবং অবশ্যই আমাদের ইতিহাস বা ঐতিহাসিক বিকাশের সাথে সর্ম্পকযুক্ত কোন কোন ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি মনে হতে পারে; তদুরুপের জন্য পাঠকদের কাছে আমরা-অনুবাদকগণ ক্ষমা প্রার্থনাও করি বটে। 

আমরা স্বীকার করি যে, সাম্রাজ্যবাদ কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক দিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়াও। অনেকে এর ইতিহাস হয় লিখেননি নয়তো এড়িয়ে গেছেন। সাম্যাজ্যবাদের ঐতিহাসিক দিকটার প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়নি। আমাদের বিবেচনায় থাকবে এটি একটি গুচ্ছফল। আমাদের দেশে সাধারণত বিদ্যায়তনিক (academic) মহলে যা আলোচনা হয় তা হলো অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। এই অধ্যায়ে আমরা প্রথমে একাডেমিক বা বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ কী কী তা বর্ণনা করবো, এবং কিভাবে এটি সাম্রাজ্যবাদের দিকে ফিরে যান সেসব বিষয়ে আলোচনা করবো। দ্বিতীয়টির সাথে যুক্ত সমস্যাগুলি ভালো করে ‘ক্রিটিক্যাল ভঙ্গিতে আলোচনা করা। বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ অন্যান্য বিষয়গুলির সাথে সাথে বাস্তুচ্যুত হয়েছিল ভেবে আনন্দ করার কোন বিষয় নয়। এশীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়গুলি থেকে মনোযোগের বিষয় এবং আফ্রিকান বা ল্যাতিন সমাজ থেকে মনের মুক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের কান্ডগুলি হ'ল প্রধান শর্ত। আগেই বলেছি আমরা এশীয় সমাজকে গুরুত্ব দেব, যাতে পাঠক খুব সহসাই রিলেইট করতে পারেন  

একটি সৃজনশীল এবং স্বায়ত্বশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশ উন্নয়নশীল সমাজের ঐতিহ্য, আমরা কি মিমিক আর ক্যাপটিভ হয়েই থাকব।বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের বিষয়টি যদিও গুরুতর তবে তা এই ধারণাটি দেয় যে, এটি যথাযথ এবং গুরুতর বিবেচনার বিষয় নয়। সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা এটি জানি, সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস হিসাবে একটি জিনিস আছে। আমাদের দেশে হরদম পড়ানো হয়। আর আমরা এটাও জানি,সাম্রাজ্যবাদের সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয় রয়েছে। ঘটনাগুলো সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক। এগুলোর মধ্যে নানা ভাবে বিভক্ত করা যেতে পারে। আমাদের বিশ্লেষনে ঐতিহাসিক অন্তর্দৃষ্টি রেখে এবং সমাজতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ একটি জিনিস। সুতরাং, সাম্রাজ্যবাদ কেবল রাজনৈতিকভাবে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক দিকও আমাদের বিবেচনা করতে হবে সক্রিয়ভাবেই।

আমরা বলতে চেয়েছি, ক্লাস্টার বা গুচ্ছ হিসাবে সাম্রাজ্যবাদ, মানুষের বিভিন্ন দিকের সমন্বিত প্রতিশ্রুতি। বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে আমাদের আলোচনায়, এটি প্রথমে কী তা আমরা প্রথমে নিয়ে আসি। এবং পরে সংযুক্ত সমস্যাগুলি এর সাথে । রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক অর্থে সাম্রাজ্যবাদ শব্দটির জনগণের সুবিধার জন্য বলা যেতে পারে যে, একজনের দ্বারা অন্যব্যক্তির পরাধীনতা। সাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী সেসব জেনে নিই---

(১) শোষণঃ ক্ষমতা বা শক্তি দ্বারা শোষণ এবং মানুষ ও সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আধিপত্যের। 

(২) টিউটলেজের বা তোষন নীতির একটি রূপ রয়েছেঃ জনগণ প্রভাবশালী একটি টিউটেলেজ সিস্টেমের মধ্যে এক ধরণের ওয়ার্ড হিসাবে বিবেচিত হয়। তাদের এমন কিছু জিনিস শেখানো হয়, তাদেরকে এমন কিছু কিছু করতে বলা হয়, তারা পরাধীন শক্তি দ্বারা নির্ধারিত নির্দিষ্ট প্রান্ত এবং উদ্দেশ্যগুলির উদ্দেশ্যে সংগঠিত হয়। 

(৩) সঙ্গতি: পরাধীন প্রভাবশালী শক্তি প্রভাবশালী লোকেরা তার জীবনের কয়েকটি বিষয় মেনে চলবে বলে আশা করে,এর সংস্থা এবং বিধিগুলি। 

(৪) আধিপত্যপ্রাপ্ত মানুষঃ আধিপত্যপ্রাপ্ত মানুষ খেলবে একটি সেট আপে গৌণ ভূমিকায়। 

(৫) বৌদ্ধিক যৌক্তিকতাঃ বুদ্ধিজীবীর অস্তিত্ব যৌক্তিকতা যা সাম্রাজ্যবাদকে একটি হিসাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস মানুষের অগ্রগতি এবং যে ব্যবসা এর প্রয়োজনীয় পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হ'ল পরাধীনতার অধীনে জনগণকে সিভিলাইজিং করা বা ‘সভ্য’ করা। 

(৬) সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী:পরাধীন দেশটি প্রায়শই নিকৃষ্ট শাসকগোষ্ঠী দ্বারা পরাস্ত হয় প্রতিভা। আমরা যদি বাংলাদেশ ,ভারত,মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর বিবেচনা করি, আমরা এটি বলতে পারি অতীতে ব্রিটিশ কর্মীরা এখানে যারা এসেছিলেন তাদের নিকৃষ্ট প্রতিভা ছিল, ব্রিটেনে যা পাওয়া যায় তার তুলনায়। এমনকি ব্রিটিশ সূত্রেও আছে এই অভিযোগটি বলেছেন আমার মনে আছে প্রাক্তন সরকারী কর্মচারী, ইংল্যান্ড থেকে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেই ব্রিটিশ সমাজের ক্রিম ছিলেন না বলে মন্তব্য করেছিলেন। যারা উপনিবেশগুলিতে সেবা করতে গিয়েছিলেন, তারা ছিলেন এমন লোকেরা যারা চাকরি পায়নি, এবং যারা চাকুরিতে ভাল করতে পারেন না;এমন ধারণা ছিল তাদের সর্ম্পকে। 

মোটাদাগে এগুলি সাম্রাজ্যবাদের ছয়টি প্রধান বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে। রাজনৈতিক ছাড়াও,সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা আমরা বুদ্ধিজীবীও বশীভূত সাম্রাজ্যবাদ।বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ হ'ল এক ব্যক্তির আধিপত্য তাদের চিন্তার জগতে অন্য একজন দ্বারা। বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ সাধারণত হয় প্রকৃত প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বা পরোক্ষের প্রভাব।

বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ আর আর্থ-রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের সমান্তরালতা 

বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ সাধারণত প্রকৃত প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বা সাম্রাজ্যবাদ থেকে উদ্ভূত অপ্রত্যক্ষ আধিপত্যের প্রভাব। এত স্বীকার করে নিলে বুঝতে হবে, জ্ঞানের সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সময়কালে উপস্থিত জ্ঞানের ফর্মগুলির অধ্যয়ন করে। আমরা বা আমি যা বলছি তা হ'ল সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পরাধীন মানুষের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে একটি সমান্তরাল কাঠামো তৈরি করে। এটি, তখন বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সৈয়দ হুসেন আলাতাস এই থিমটি প্রথমে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্ট্রি সোসাইটি, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ সালের একটি বক্তৃতায় আলোচনা করেন। এটা আমাদের কাছে এক অপার বিস্ময়, যে সৈয়দ হুসেইন আলাতাসের লেখায় আমারা ভাইন ডেলোরিয়াকে পাইনা। অথচ, সময়কাল এক। (কারন লিখতেহবে)

আসুন আমরা প্রথম বৈশিষ্ট্য, শোষণ নিয়ে আলোচনা করি। এর রূপ কী?বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের শোষণ? দুই ভাবেই বিষয়টা দেখা যায়। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশের কাঁচামাল শোষণ করে তারা কাঁচামালগুলি মাতৃদেশে ফিরিয়ে এনেছে, মাতৃদেশে পণ্য উৎপাদন, এবং তারপর উপনিবেশে পণ্য বিতরণ করে। উপনিবেশগুলিতে তৈরী পণ্যগুলার বাজার হল মাতৃভূমি। অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। আমাদের জন্য একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হ'ল রাবার। রাবার বড় হয়েছিল মালায়ায়, রাবার রস আবার নেয়া হয় ইংল্যান্ডে। তারপর, ইংল্যান্ডে টায়ার তৈরি করে মালয়েশিয়ায় বিক্রি করা হতো। 

বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদকে কী এই মেটাফর দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়! প্রথম উদাহরণ আমাদের এই উপমহাদেশে এই রূপ নেয়। ইউনিভার্সিটির অঙ্গনে আম্বেদকর কী এই উদাহরণ হতে পারেন? আমাদের বিলেত ফেরত বার-এট-ল’ এই তালিকা বাড়াতেই পারে! যদি নাই-বা হন, তাইলে একজন মহাত্মা গান্ধী কেমন করে একজ জেনারেলকে মুখ ফুটে বলতে পারেন, আমাদের দোষ ত্রুটি থাকলে, আমরা তা শোধরাবার চেষ্টা করব।

এবার আসি ডেটা এই অঞ্চল থেকে, নির্দিষ্ট বিষয়ের রো ডেটা এতে সংগ্রহ করা হয়, প্রক্রিয়া জাত এবং বই আকারে ইংল্যান্ডে উৎপাদন বা নিবন্ধগুলি প্রকাশিত হয়, এবং তারপরে এখানে বিক্রি হয়। যারা এই মাটিতে কাজ করেছে, এই অঞ্চলে থেকেছেন, আর বইটা ছাপছেন বাইরের দেশ থেকে। আমাদের দেশ না, বরং সারা দুনিয়া থেকে উনারা ডেটা নিয়েছেন, কাজ করেছেন, সরাসরি উপনিবেশ শাসনের শক্তি বাড়ানোর জন্যে। আমাদের আগের কাজ করা বই থেকে একটা টেবিল ধার করা যেতে পারে, বোধগম্যতার খাতিরেই ।

এই একই ধারনাকে আমাদের ‘একাডেমিক পূর্বপুরুষরা’ (ম্যালিনোস্কি, লেভি-স্ট্রস, তাঁর ভাগিনা মারসেল মস) বলে গেছেন, ওয়ার্ল্ডভিউ। আমরাও অবলীলায় তা চর্চা করি।যার ফলে, সমতলের বাঙ্গালি, পাহাড়ের আদিবাসী, এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার মানুষজনসকলের ওয়ার্ল্ডভিউ’ হয়ে যায় একই। আরো দেখি, হেনরি মেইনের বই, কলোনিয়াল ইন্ডিয়ার আলোকে লেখা, কিন্তু সকল প্রশাসকগণের পাঠ্যছিল ‘Ancient Law’, হেনরি জেমস সামনার মেইনের বইটি প্রথম ১৮৬১ সালে প্রকাশিত হয়, লেখকের জীবদ্দশায় বারোটি সংস্করণ বের হয়। দ্বাদশ সংস্করণ ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ওয়ার্ল্ডভিউ পড়ুন! আরেকটা উদাহরণ দিয়ে অধ্যায় সমাপ্ত করা যায়। 

লাইফওয়ার্ল্ডের পটভূমি দেখলে মনে হবে শব্দটা আমাদের এক বোঝা। The Colonial Science: an overview of British colonial science policy,[xxii] দেখুন, এই টেবিলটা।

 

The Colonial Social Science Research Council (CSSRC)

The Colonial Social Science Research Council (CSSRC) 1944 সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্রিটিশ প্যানেল ছিল the Colonial Development and Welfare Act 1940 এর অধিনে

সদস্য আর নাম গুলো দেখুন

Alexander Carr-Saunders

Chair 

London School of Economics from 1937 to 1957.

Chairperson of Colonial Social Science Research Council (CSSRC)in 1949

Frank Debenham

Member

Emeritus Professor of Geography at the Department of Geography, Cambridge University and first director of the Scott Polar Research Institute.

Harry Hodson

Member

Later, Harry Hodson was a member of the Economic Consultative Council and the 1934-1939 editor of the Round Table. From 1939 to 1941 he was Chief of the Empire Section of the Ministry of Information and later became the Government of India's Reform Commissioner.

Raymond Firth

Member

with his wife Rosemary Firth, who was also a distinguished anthropologist, Raymond Firth conducted field research in Kelantan and Terengganu, Malaya in 1939–40. During the Second World War Firth was primarily active in the planning and editing of four volumes of the Geographical Handbook Series for the Pacific Island Naval Intelligence Division. Firth succeeded Malinowski in 1944 as professor of social anthropology at LSE and stayed for the next 24 years in the school.

Margery Perham

Member 

In 1939, the first official and only woman to be assigned to the newly formed Nuffield College, Oxford, was Dame Margery Freda Perham, and also named colonial administrative reader, a position she retained until 1948. She was almost completely involved at this period in the first and second Devonshire courses for colonial servants, but later played a role in establishing colleges for young African leaders and practitioners and assisted in launching Oxford Colonial Documents. Her books, publications and articles shaped the foundation of the Oxford Colonial Studies Institution, of which she was Director between 1945 and 1948.

Arnold Plant

 

Arnold Plant was trained in contemporary economic history at the London School of Economics, which enclosed the robbed spices, trees, and so on under the British label. He was a lecturer at Cape Town University (1923–1930) and at the London School of Economics (1930–1965). His  Economic Theory for Patents for Inventions, Plant's 1934 patent article, is deemed a masterpiece.

Margaret Helen Read,

 

Margaret Helen Read,CBE, who specialized in colonial education, was a British social anthropologist and educator. Between 1940 and 1955, she worked as Director of the Colonial Section of the Institute of Education at the University of London. She also served as a colonising adviser to the Colonial Office of the British Government and as British representative for the 1946-1947 UNESCO General Conferences.

Godfrey Thomson

 

Godfrey Thomson was the Bell Education Professor and head of the Moray House Teacher Training Institution. He was chosen a Fellow of the Edinburgh Royal Society in 1926. Ralph Allan Sampson, Alexander Morgan, Sir Edmund Taylor Whittaker and Norman Kemp Smith were his proponents. He served as Vice President of the Society in 1954/55.

In 1931 he was responsible for arranging and evaluating the Scottish Mental Survey: Scotland's contribution to a European study of the relation of school exams of various countries with their principles.

Ralph Lilley Turner

 

Ralph Lilley Turner was a philologist and administrator of the British Indian Languages. He is noteworthy for compiling a comparative Indo-Aryan dictionary. He was also the editor of many Romani-language publications. Turner returned to England in 1922 as Professor of Sanskrit at the University of London Department of Oriental Studies. Around 1924 and 1932, the Journal of the Gypsy Lore Society has published many articles on Romani studies, including "On the position of Romani in Indo-Aryan" (1927). From 1937 to 1957, he was principal of the academy, but he managed to retain his chair until 1954. In 1950, he was knighted. His magnum opus, the Indo-Aryan Comparative Dictionary, was written in 1966.

 

        টেবিল ২.১: বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ নির্মাণের কর্ণধারীগণ। সূত্র: আমাদের পড়াশোনা  

সুতরাং, আমরা টেবিল ২.১-এ দেখতে পাচ্ছি যে তাদের হাতেই আমাদের ইতিহাস নির্মাণ! কিন্তু উনাদের উৎপাদিত বিশ্বদর্শনের সাথে নয়। উপনিবেশিক বসতি স্থাপনকারী রাষ্ট্র গুলিতে যেখানে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে শক্তির গতিশীলতা প্রচুর পরিমাণে স্ট্যাক করা হয় এবং প্রায়শই সার্বভৌমত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে থাকে, সেখানে আদিবাসী ডেটা গভর্নমেন্ট কীভাবে গভীর-আসন যুক্ত নীতি ব্যর্থতা গুলিকে অন্বেষণ করতে শুরু করে? দেশীয় ডেটা সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জগুলি কী কী?দেশ,রাজ্য, গবেষক, অন্যান্য মূলধারার প্রতিষ্ঠান এবং আদিবাসী জনগণের মধ্যে একেবারে শক্তির অসামঞ্জস্য করে দেওয়া, আমরা কীভাবে আদিবাসীসহ সকল ডেটা সার্বভৌমত্বকে "পলিসি"-র কো-অপ্টেটেড বা চূড়ান্তভাবে বরাদ্দ করা থেকে বিরত রাখতে পারি? আবার সেই বই অন্য এক দেশে বিক্রি করি। যার দরুণ আমাদের জাতীয় উন্নয়ন নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে।[xxiii]  কলোনিয়াল সামাজিক বিজ্ঞানের মূল ধারার অন্যতম একটা আইন আমরা যা দেখলাম টেবিল ২.১ এ। তার পরেও কি বলবেন, আমাদের কাজে আমরা ওয়ার্ল্ডভিউ তুলে আনি!

আরেকটা টেবিল দেখা যায়। তথ্য বহুল বটে। টাইটেল সহ আমরা উল্লেখ করতে বাধ্য হলাম দুটো কারণে- “Formative works shaping emergence of Anthropology in Bangladesh,” কী উদ্দেশ্যে নৃবিজ্ঞানের ফরম্যাট হল, উনারা কারা, সে বিষয়ে পরিচিত মুখের এই দুজন গবেষক নীরব। অধ্যাপক হাসন শাফী। ফ্রেড্রিখ বার্থের ছাত্র। নমস্য নৃবিজ্ঞানী বার্থ হলেন এডমন্ড লিচের ডিসাইপল। লিচ হলেন কলোনিয়াল মাস্টার মাইণ্ড নৃবিজ্ঞানী রেমণ্ড ফার্থের শিষ্য। আর ফার্থ ছিলেন ম্যালিনোস্কির ছাত্র।

সুতরাং, উপরের চিত্রে সবার নাম দেখে শুনে যখন কারণ লিখতে গিয়ে আমরা যখন নীরবতা পালন করি, তখন বুঝতে হয়, সমস্যাটা আমাদের ফিলোসফির মাঝেই। বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাপ্টিভিটি তো আর এমনি এমনি তৈরি হয়না, গুরু লাগে, শিষ্য লাগে, তালিম লাগে।ডিসাইপল অব ডিসিপ্লিন’ - এর ধারায় দেখলে, এম এন শ্রীনিবাসের মত পন্ডিতকে দেখি কেন, ইভান্স-প্রিচারড আর র্যাডক্লিফ ব্রাউন  তাকে শিষ্যের মত কাছে রাখেন। আবার আম্বেদকর কেন-ই বা জন ডিউই-কে ‘বন্ধুর মত দেখেন! 

 

 

   

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  টেবিল-২.৩ : কে কার ফরম্যাট করেন, সূত্রঃ নোট দেখুন[xxiv]

এখানে অর্থনৈতিক শোষণ এবং এর মধ্যে একটি সমান্তরাল রয়েছে - জ্ঞান শোষণ।

আসুন আমরা দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য, টিউটলেজ বিবেচনা করি। অতীতে শিক্ষা কিছু প্রযুক্তিগত অঞ্চলে জনসংখ্যার জন্য দরকারী হিসাবে বিবেচিত হত। শিক্ষার জগৎও দ্বারা পরিচালিত ছিল টিউটলেজ ধারণা। মালয়েশিয়া, ভারতসহ অনুন্নত অঞ্চল এবং সিঙ্গাপুরের বিদেশের সব কিছুর উপর নির্ভরশীল থাকার কথা ছিল। আপনি যদি একটি ইউরোপীয়ান বা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় হতে একটি ভাল ডিগ্রি পেতে চান। আপনি যদি উচ্চতর ডিগ্রি চান, আপনার সেখানে যাওয়া উচিৎ। আপনি যদি কিছু শিখতে চান, আপনার তাদের বই পড়া উচিৎ। এই ধারণা বুদ্ধিমানভাবে এই অঞ্চলের জন্য, টিউটলেজের মাধ্যমে নির্ভরতা ছিল নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায়। ধারণা করা হয়েছিল যে, এখানকার লোকেরা এ সম্পর্কে পশ্চিমের লোকদের চেয়ে সমস্ত বিষয়ে কম জানেন। যদিও পরবর্তী সময়ে অতীতের নিজেদের এই দৃষ্টিভঙ্গি উপনিবেশগুলি বজায় রাখতে পারেনি। উপনিবেশিত অঞ্চলগুলোকে তাদের স্বাধীনতা দেওয়া যায়নি বা হয়নি কারণ তারা নিজেরাই অর্থ্যাৎ কলোনীর মানুষেরা যদি শাসন করে তবে তারা দেশ ধ্বংস করে দেবে। তারা হতে পারে না দেশের উন্নয়নে ভরসা; কারণ তাদের ছিল না প্রযুক্তিগত জ্ঞান। এখন, বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের সমান্তরাল হ'ল যে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান নেই। অতএব একটি প্রয়োজন পরোক্ষ tutelage ফর্ম। কী করে আমাদের এই অঞ্চলের চিকিৎসা পদ্ধতি চলে গেলো আমাদের অগোচরে, সেটা নিয়া আলাদা কেউ বলবেন, কিন্তু, এখানকার মানুষ যে হিলিং ব্যবস্থা খুব ভালো জানে সেটা আজ প্রমাণিত। কেনথ জিস্ক-এর অনেক লেখা থেকে আমরা দুটো আলাদা করে দেখালাম। [xxv]

আজকের শহুরে ছেলে-মেয়েরা জানে না হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, কাবাডি। কারণ অতীতে, হকি, ক্রিকেট, গল্ফ, ফুটবল এবং পোলো, এসকল গেমসগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল প্রভাবশালী দেশে তা জনপ্রিয় বলে। গেমসগুলিতে খুব কম বা আগ্রহ ছিল না আদিবাসী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহে। তারা আশা করেছিল বিশ্লেষণের যে পদ্ধতিগুলি ছিল তা আমাদের প্রশ্ন ছাড়াই নিযুক্ত করা উচিৎ। তারা-কলোনীর মানুষেরা আশা করেছিল যে তাদের আগ্রহের বিষয়গুলিতে মনোযোগ থাকবে বিদেশের লোকদের কাছে সংস্থাগুলি চালাতে । তারা প্রত্যাশা করেছিল একই ইতিহাস থেকে আমাদের প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্যটি সম্প্রদায়টির মধ্যে পরিচালিত গৌণ ভূমিকা উপনিবেশগুলি বুদ্ধিজীবী সাম্রাজ্যবাদের প্রসঙ্গে এবং এই অঞ্চলের পণ্ডিতদের প্রায়শই গৌণ ভূমিকা দেওয়া হত। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা এবং জার্নালগুলি প্রায়শই ছিল না আঞ্চলিক পণ্ডিতদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং আমাদের কংগ্রেস, আঞ্চলিক পণ্ডিতদের প্রধান দেওয়া হয়নি। খুব সমসাময়িক একটা উদাহরণ দেই। ডাক্তার আর দরবেশের কাপড় পরিয়ে অরুন্ধতি কী কড়া ভাষাতেই মহাত্মাকে ধরেন, তখন পড়তে আসলেই ভাল লাগে। একটি সাধারণ মনোভাব আছে যে অনেক আঞ্চলিক পণ্ডিত শুধুমাত্র গৌণ ভূমিকার জন্য উপযুক্ত। সুতরাং, নিমের দাঁতের মাজন হাত থেকে পড়ে যায় হঠাৎ এক দিন।[xxvi] বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে, যুদ্ধ আর রক্তপাত থামায়। জারামা ফ্রান্সের উদাহরণ ব্রুনি লাথুর তাই দেখালেন,[xxvii] সেমন্তী ঘোষ ঐকালে থাকলে নিশ্চিত লিখতেন ‘আত্মসাৎ করতেই হবে?[xxviii]

পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হ'ল সিভিলাইজিং মিশনের যৌক্তিকীকরণ। এই অংশের আলোচনা আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই পূর্বের তুলনায় একটু দীর্ঘ করবো নানাবিধ কারনে। সাম্রাজ্যবাদীরা সাদা পুরুষদের বুঝা-পড়া নিয়ে কথা বলেছিল। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সাম্রাজ্যবাদ, অনুন্নত ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিকাশের কথা আছে নির্ধারিত মডেল অনুযায়ী। বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে একচেটিয়া এবং আধিপত্য বিস্তার ও পাকাপোক্ত করে প্রজ্ঞা এমনকি গ্রীষ্মমন্ডলীয় পোকামাকড়ের জ্ঞানও এর অধীনে অর্ন্তভূক্ত করে ফেলে। মতিলাল এর ভাবনা আমাদেরকে আলো দেখায়, উৎসাহ যোগায় আমাদের জ্ঞান নিয়ে  নিজের পথে পথ চলার। [xxix] মতিলাল আলাতাসকে পড়েন নাই, আলাতাসের লেখাতেও মতিলালকে পাইনা। তদুপরি, মতিলালের মত করে বলতে হয়… [he] can maintain that his contribution to epistemology lies in the fact that he recognized quite clearly the very significant role of language in the structure of empirical knowledge. 

এটা একটা বিরাট আর গভীর বিষয় যে সহজ করে কোত্থেকে শুরু করি। কলকাতার পণ্ডিত নৃবিজ্ঞানী অজয় ভট্টাচার্য থেকে উক্তিটি  শুনি [xxx] ---

এখানে NMI বা নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন কিছুটা আলাদা আলোচনার দাবী রাখে। ১৮২২-এ তৈরি হওয়া এই আধুনিক মেডিক্যাল শিক্ষার জন্য তৈরি ভারতের প্রথম মেডিক্যাল স্কুল। ডাক্তারদের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তৈরি করার জন্য এখানে ৩ বছর পড়ানো হত। এবং সেসময়ে উর্দু হয়েছিল পশ্চিমি পদ্ধতিতে ডাক্তারি শিক্ষার ভাষাগত মাধ্যম। (সীমা আলাভি, ইসলাম অ্যান্ড হিলিং– লস অ্যান্ড রিকভারি অফ অ্যান ইন্ডো-মুসলিম মেডিক্যাল ট্র্যাডিশন, ১৬০০-১৯০০, পৃঃ ৭০)। এমনকি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জন টাইটলার রবার্ট হুপারের The Anatomist’s Vade-Mecun আরবীতে অনুবাদও করেছিলেন ১৮৩০ সালে।

১৮৩৫-এ এ প্রতিষ্ঠানটি ভেঙ্গে দিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হয়। সেদিন এখানকার সমস্ত ছাত্রকে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হল। “নেটিভ” শিক্ষক শেখ ওয়ারিস আলি এবং হীরা লালের তত্ত্বাবধানে নিজেদের খরচে নৌকা ভাড়া করে এরা ফিরে গেল দিল্লি, এলাহাবাদ, লক্ষনৌ-এর মতো জায়গাগুলোতে– নিজেদের ভিটেতে। আলাভি বলছেন – “As the students of the NMI and its staffers dispersed into the qasbas and towns of the North Indian countryside, so did their new ideas and texts. These now became diffused in local society”। (প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৮) এরা এবং এদের বংশধরেরা সিপাহী বিদ্রোহের সময় লক্ষ্যণীয় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। সেসময় বাংলার হিন্দু বাবুরা প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে সিপাহীদের দমনে প্রত্যক্ষ মদদ জুগিয়েছে।

ভারতের এই সোনার সময় কিভাবে হারালো? দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় থেকে কিছু উত্তর পাই।[xxxi] কিন্তু, এরিক হবস বমের “inventing traditions-এর যৌক্তিক ব্যাখ্যাটাও মনে রাখতে হয়। 

আমাদের কলোনিয়াল মানুষেরা বুঝে গিয়েছিলেন যে, ইন্ডিয়ান দর্শনটাকে আগে শেষ করতে হবে। সুতরাং, আগে জাত-পাতের ভেজালটা বাড়াও। বিদেশী তবে অবশ্যই ইংরেজী গ্রণ্থের অনুবাদ করো। যেমন করেই হোক ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ানদের প্রিয়পাত্র হই। তারপরে বলো আমাদের কিচ্ছু নাই; অন্তঃসার অবস্থা। স্তবির। মূঢ়। অসাড় এক সমাজ ব্যাবস্থা। বদলাও এই সব। লজিকের উপর এই আঘাত আমাদের মানুষজন মেনে নিয়েছিলেন। রাজা রামোহন রায় ভারতের মানুষজনের উপর গবেষণার জন্যে (পড়ুন, গুড বুকে থাকার জন্যে) দশটা মাথার খুলি পাঠিয়েছেন বিলাতে গবেষণা কাজে; শুধুই কি সাহায্য করবেন বলে? নাকি অন্যকিছু? বিস্তারিত)

আমাদের জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন যাই বলেন, সেটা অন্টোলজিক্যাল,[xxxii] সিভিলাইজিং মিশনের থাবায় সব শেষ হয়ে যায়? ভারতের সবন্যাস্ত করতে হবেভারতীয়দের দ্বারাই। দশটা মাথার খুলি পাঠিয়েছিলেন এই নমস্য সমাজ সংস্কারক। কষ্ট হবে, তবু চিঠিটা পড়ুন। রাজা প্রাপক না, প্রেরক ভাষায় মাখানো তৈল হাতে (জিহবায়) লাগলে বুঝা দায়। 

এখানে কয়েকটা শব্দ আমাদের নজর কাড়ে। একজন বিলেতি ডাক্তার রাজাকে কিসের জন্য ‘কমিশন’ করেন? কেন শুধু ‘হিন্দু’ মানুষের মাথার খুলি পাঠাতে হল? এবং ডাক্তার সাহেব যত খুশি চাইবেন রাজা ততটাই পাঠিয়ে ‘সম্মানিত আর আনন্দিত হইবেন। প্রথিতযশা নৃবিজ্ঞানী শ্রুতি কাপিলা[xxxiii], জয়ন্ত ভট্টাচার্য থেকে আমরা নিশ্চিত হলাম ( কিভাবে  ব্যাখ্যা লাগবে) পিটারসন, কলকাতায় এসে খুলি গবেষণা কেন্দ্র বানান। সেই সময়ের সমাজ-প্রতিষ্ঠিত লোকগণের সমারোহ ছিল সেখানে। এশিয়াটিক সোসাইটি ছিল অন্যতম। খুলি গবেষণা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ক্লার্ক আবেল, যিনি ছিলেন গভর্নর-জেনারেল, লর্ড এমহার্স্টের চিকিৎসক। এই সাম্রাজ্রবাদি সংযোগটি মূলত জোসেফ ব্যাংকস (যিনি আবার প্লান্ট কালেকশানের জন্যে (কু) খ্যাত ছিলেন, সেই জোসেফ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার নির্দেশে আবেল চীন অভিবাসনে ১৮১৬-১৮১৭ এর মিশনে এমহার্স্টের সাথে এসেছিলেন। তারপরে আবেল মিঃ এমহার্স্টকে ভারতে অনুসরণ করেছিলেন। এই খুলি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন অনেকেই। আর এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্যাটারসন লেকচার দিতেন, প্রায় ৯০ টি কাস্ট-এর খুলি তিনি ডিসপ্লে করেছিলেন। [xxxiv]  উইলিয়াম কার, এটা একটা প্রশ্ন, কেন তিনি এটা করেছিলেন?, বর্ণবাদ আর সিভিলাইজিং মিশনের কাজে সহযোগিতা করাই ছিল তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য।Indeed, phrenology represented the dominant intellectual moods of the moment, encapsulating ideas of empire, empiricism and the pious Christian ethos imporvement. (কাপিলা, ৪৯২) আর আমরা কেন এই ইতিহাস দিচ্ছি? আরেকটু ব্যাখ্যা করার দরকার আছে।

বর্ণবাদের জিওমিটার নামে খ্যাত জোহান ফ্রেড্রিখ ব্লুমেনবার্খ[xxxv] যুক্তি দিয়েছিলেন যে একক প্রজাতির মধ্যে মানবজাতির পাঁচটি পৃথক বর্ণ রয়েছে, এটি একটি উপসংহার যা খুলি এবং মানুষের শারীরবৃত্তির বিশদ অধ্যয়ন থেকে প্রাপ্ত। যদিও ব্লুমেনবার্খ স্বতন্ত্র বর্ণকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তবুও তিনি মানব প্রজাতির ঐক্যে বিশ্বাস করেছিলেন এবং বৈষম্যকে উৎসাহ দেওয়ার উপায় হিসাবে তিনি নৃতত্ত্বের ব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

মারে পেটারসন তেমন কিচ্ছু করেন নাই, ব্লুমেনবাখ-এর পাঁচটা ভাগকে প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মাত্র। ব্লুমেনবার্খ-কে কার্ল মার্কস বলেছিলেন ‘progressive scientist, এখানেই শেষ নয়। ইমানুয়েল কান্টের নামে আমরা গদ গদ করি, সেই ইমানুয়েল কান্ট ব্লুমেনবার্খ কে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।[xxxvi] আর তিনি ডি বাফনের, এবং কার্ল লিনিয়াসের The System of Nature (১৭৩৫) দ্বারা প্রভাবিত হন। কান্টের সময়কালে ব্লুমেনবার্খ তাঁর বিখ্যাত থিসিস লিখেন ১৭৭৫ -১৭৯৫।

তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশের পরে, ব্লুমেনবার্খ গ্যাটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহের কিউরেটর হোন। ১৭৪৮ সালে তিনি মেডিসিনের অধ্যাপক হয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসকের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। পরের বছর, ব্লুমেনবার্খ হ্যান্ডবুক ডার ন্যাটুরগেসিচেট (হ্যান্ডবুক অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি) প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি রূপচর্চা এবং বাস্তুসংস্থান সম্পর্কিত প্রমাণ যাচাই করে তিনি জীবকে শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য একটি সিস্টেম তৈরি করেছিলেন। হ্যান্ডবুকে উপস্থাপন করেছেন এমন পরিকল্পিত আকারের চরিত্রের উপর ভিত্তি করে প্রজাতির সংজ্ঞা দিয়ে লিনেনীয় সিস্টেমের সাথে এই অনুভূত সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারেন। তিনি সময়ের সাথে সাথে প্রজাতির পরিবর্তন বা বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাও স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ব্লুমেনবার্খ পরবর্তীকালে তাঁর বিট্রেজ জুর ন্যাটুরগেসিচিতে (প্রাকৃতিক ইতিহাসের অবদান) এগুলি নিয়ে প্রসারিত হয়েছিলেন, যাতে তিনি পৃথক পৃথক পরিবর্তনশীলতা এবং পৃথিবীর দীর্ঘ ইতিহাস থাকার সম্ভাবনা সম্পর্কে আরও তদন্ত করেছিলেন।

সূত্রঃ আমাদের  পড়াশোনা 

সিভিলাইজিং মিশনের কাজ নিয়ে অনেকেই কাজ/ গবেষণা করেছেন, সারবত্তা হিসেবে আমরা কিছু তথ্য দিই। এগুলো আসলে উন্নয়ন বা ভারতের ভাগ্য বদলানোর কোন কাজে আসেনি বলে মনে করা হয়। 

পাশ্চাত্য শিক্ষা

আধুনিক ভারত বিনির্মিানে পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্ব ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ কোম্পানী উপলব্ধি করে। ১৮৩৫ সালে বড় লাট লর্ডব্যান্টিঙ্ক সরকারিভাবে  শিক্ষার যাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যদিও তারও আগে খ্রিস্টান মিশনারিগণ বেসরকারীভাবেপাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছিলেন। যেমন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপটিস্ট মিশনারি উইলিয়াম কেরিমার্শম্যান  উইলিয়াম ওয়ার্ডশ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৮ সালে ব্যাপটিস্ট মিশন শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। স্কটিশ মিশনারিআলেকজান্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিকলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন যা বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ’ নামে পরিচিত।  ছাড়াও লন্ডন মিশনারি সোসাইটি বহু বালিকা বিদ্যালয় , বোম্বাই  উইলসন কলেজ (১৮৩২), মাদ্রাজে খ্রিস্টানকলেজ (১৮৩৭), কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ (১৮০০), হেইলিবেরি কলেজ ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘মেকলে মিনিটস', ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দেউডের ডেসপ্যাচ যা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ‘ম্যাগনাকার্টা’ বলে পরিচিত প্রভৃতি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকাপালন করে।


 এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত ব্যাকরণ, সাহিত্য, গণিত, আয়ুর্বেদ, জ্যোতিষশাস্ত্র, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষালাভ করে থাকতো। মুসলিম শাসকদের আমলে মুসলমানদের জন্য চালু হয়েছিল মক্তব ও মাদ্রাসা। মুঘল আমলে মাদ্রাসায় সিলেবাস ভিত্তিক শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মানবসম্পদ তৈরির চেষ্টা করা হয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের শিক্ষার প্রভাব আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়  আছে বলে বিদ্বানরা মনে করেন না। যদিও মনে করা হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল পরিকাঠামোটি গড়ে ওঠে। ব্রিটিশদের এবং পাকিস্তানি আমলের অনুসৃত নীতি এখনও অনেক ক্ষেত্রেই মেনে চলা হয়।যার ফলশ্রুতিতে,বর্তমানে দেশে কাঙ্খিত মাত্রায় দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে কেবল পুঁথিগত বিদ্যা অজর্নকারী শিক্ষিত বেকারগোষ্ঠী।

 

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও  অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 

ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক শিক্ষার গোড়াপত্তনকারী হিসাবে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, কাশীর সংস্কৃত কলেজ ও কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে বিবেচনা করা হয়। এটা সত্যি যে, ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের শিক্ষার প্রকৃত মানোন্নয়নের পরিবর্তে শিক্ষা কাঠামোয় যে পুঁথিগত বিদ্যার ব্যাপকতা বৃদ্ধি করেছিল, তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কম মাইনেতে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কেরানির দল তৈরি করা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্ত এ দায়িত্ব বেশ সফলভাবেই পালন করে দলে দলে কেরানি তৈরি করে। 

ব্রিটিশ শিক্ষানীতি 

১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান বা বরাদ্দের বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করা হয়  এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতি বছর অন্তত এক লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ফলে  শিক্ষা প্রসারে একটা পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল।

১৮২৩ সালে ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন

অতঃপর এ শিক্ষাসংক্রান্ত অনুদান বিতরণের জন্য ১৮২৩ সালে ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন’ গঠিত হয়েছিল; কিন্তু শিক্ষার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।

শিক্ষার উদ্দেশ্য জানতে ও বুঝতে হলে আমাদেরকে ১৮৩৫ সালের মেকলে মিনিটস এর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় কোম্পানির শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান টমাস ব্যবিংটন মেকলে (http://www.columbia.edu/itc/mealac/pritchett/00generallinks/macaulay/txt_minute_education_1835.html) নীতি নির্ধারণী এক সভায় বলেন, বর্তমানে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এমন একটি শ্রেণী তৈরি করতে, যারা আমাদের এবং আমরা যাদের শাসন করছি তাদের মাঝে ব্যাখ্যাকার (দালাল) হিসেবে কাজ করবে। এটি এমন একটি গোষ্ঠী হবে যারা রক্ত এবং বর্ণে ভারতীয়; কিন্তু রুচিতে, মতামতে, মূল্যবোধে এবং বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে ইংলিশ। এরুপ বক্তব্যর মাঝেই সাম্রাজ্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার আসল চেহারাটা ধরা পড়ে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে দ্বিতীয়ত শাসন যন্ত্র চালু রাখার নিমিত্তে ইংরেজ শাসকগণ এদেশে আসার পর প্রথম দিকে এদেশে শিক্ষাবিস্তারে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও পরবর্তীতে শিক্ষা বিস্তারে আগ্রহ দেখান  ইংরেজি শিক্ষারও প্রসার ঘটান কায়েমি স্বার্থহাসিলের উদ্দেশ্যে। ১৮০০ সালের ১০ জুলাই এবং ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং হুগলিতেশ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ দুটিতে মূলত প্রাচ্যবিদ্যাবিশেষত বাংলা শিক্ষা দেওয়া হতো যাতে করে ইংল্যান্ড থেকেআগত ইংরেজ কর্মচারীদের ভারত শাসন  শোষনে কোন প্রতিবন্ধতা তৈরি না হয়।

 

ইংরেজ শাসকগণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ২০ জানুয়ারী রাজা রামমোহন রায়  ডেভিড হেয়ারের প্রচেষ্টায় হিন্দু কলেজ (পরবর্তী কালে প্রেসিডেন্সি কলেজ বর্তমানে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিতস্থাপিত হয় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা জনুয়ারী লর্ড আমহার্স্টের সময়। সরকারিপৃষ্ঠপোষকতায় প্রাচ্য শিক্ষার প্রসারের জন্য সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়  ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ডাফের প্রচেষ্টায় জেনারেলঅ্যাসেম্বলী ইনষ্টিটিউশন বা স্কটিশ চার্চ কলেজ স্থাপিত হয়। ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষানীতি নিয়ে দুটি গোষ্ঠির উদ্ভব হয়  যাঁরা পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রসারের পক্ষে ছিলেন তাঁদের বলা হত অ্যাংলিসিস্ট। আর যাঁরা প্রাচ্য বিদ্যা প্রবর্তনের পক্ষে ছিলেন তাঁদের বলা হতওরিয়েন্টালিস্ট। লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে এই বিতর্ক চরমে ওঠে। লর্ড বেন্টিঙ্ক ইংরেজী শিক্ষার অনুকূলে মত প্রকাশ করেন। ১৮৩৫খ্রিস্টাব্দে মেকলের এক ঘোষণা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়  সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের কাজে ব্যয়  করাহবে। পরিণামে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত হলে ভারতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পন্দন অনুভূত হয়। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের২৮ শে জানুয়ারী কোলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশের প্রথম চিকিৎসা বিদ্যা পঠন-পাঠনের দ্বার খুলে যায় এভাবেই পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহ জন্মায় এবং ভারতীয়রা সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েচাকুরী করা শুরু করেন। এতে করে পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটলেও দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমাদ্রাসাটোলপাঠশালাগুলিরঅবস্থা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসে  লর্ড বেন্টিঙ্কের পর লর্ড ডালহৌসিও ভারতে শিক্ষা বিস্তারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন।

ঐতিহাসিকভাবেই প্রথম থেকেই জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে ভরা ছিল ইংরেজরা এবং ভারতীয়দের তারা সবক্ষেত্রে প্রচন্ডভাবেঅবজ্ঞা করত। প্রশাসনিকসামরিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও ভারতীয়দের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণাবিদ্বেষ অবজ্ঞা প্রকাশ পেত এমনকি দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বা যাপিত জীবনেও। যেমন রেলস্টিমারহোটেলখেলার মাঠ,ক্লাব এমনকিরাজপথ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইউরোপীয়দের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকত। বিচারব্যবস্থায় শ্বেতাঙ্গকৃষ্ণাঙ্গ বৈষম্য ছিল  নজরে পড়ার মতো 

পাশ্চাত্য শিক্ষার সংর্স্পশে এসে ভারতীয়রা তাদের সমাজসংস্কৃতিরাজনীতি  জাতীয়তাবাদী ধ্যান ধারণার সঙ্গে পরিচিত হয়েউঠেন এবং নিজেরাও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন। একই সাথে তারা মিলরুশোবেন্থামভলটেয়ারস্টুয়ার্টম্যাৎসিনিগ্যারিবল্ডিকার্লমার্কস প্রভৃতি পাশ্চাত্য দার্শনিক  চিন্তাবিদদের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসে তাঁদের উদারনৈতিকভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হন। ফরাসি বিপ্লবআমেরিকার স্বাধীনতা লাভইতালি  জার্মানির ঐক্য আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধীসংগ্রামে আফ্রিকার জাতীয়তাবাদীদের সাফল্য প্রভৃতি সমসাময়িক ঘটনাবলি ভারতীয়দের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছিল এবংনিজের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠে।

 

ব্রিটিশ শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশসমূহ --

১. উডের ডেসপ্যাচ (Wood's Despatch of 1854):-

২. হান্টার কমিশন (Hunter Education Commission):-

৩. বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন [Indian universities Act, 1904]:-

৪. স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission):-

উডের ডেসপ্যাচ (Wood's Despatch of 1854)

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পরিচালক সমিতির সভাপতি স্যার চার্লস উড 'শিক্ষাবিষয়ক প্রস্তাব' [Wood's Education Despatch] নামে একটি শিক্ষা নীতি প্রণয়ণ করে ভারতে পাঠান। ভারতে শিক্ষা বিস্তারে  শিক্ষানীতির প্রধান সুপারিশসমূহ -

শিক্ষার প্রসারের জন্য ভারতের প্রতিটি প্রদেশে একজন শিক্ষা অধিকর্তার অধীনে একটি করে শিক্ষাবিভাগ খোলা হবে 

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে প্রেসিডেন্সি শহরগুলিতে অর্থাৎ কলকাতামাদ্রাজ  বোম্বাই - তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়প্রতিষ্ঠা করা হবে । রুরকীর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটিও লর্ড ডালহৌসির আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।

সরকারি মডেল স্কুলগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে 

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা  নারীশিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে জোর দেওয়া  ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের চেষ্টায় স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের জন্যবিদ্যালয় স্থাপিত করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারেরে জন্য দেশীয় বিদ্যালয়গুলোর উন্নতি সাধন করা এবং

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করা 

বেসরকারি স্কুলগুলিতে সরকারি অনুদান বা গ্র্যান্ট ইন এড প্রথা চালু করা হয় 

সরকারি শিক্ষানীতির প্রভাবে ভারতীয়দের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা লাভের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়  ১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৮২ সালের মধ্যেতিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৮৩৫ জন স্নাতক এবং ৩৮৫ জন ছাত্র স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন  এতে উৎসাহিত হয়ে সরকারলাহোর  এলাহাবাদে আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন 

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian Universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ছিলেন বটে কিন্তু শিক্ষায় উৎসাহী ছিলেন। লর্ড কার্জনস্যার টমাস ্যালি (Sir Thomas Raleigh) সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে '্যালে কমিশনগঠন করেছিলেন। এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' [Indian universities Act, 1904] নামেও পরিচিত  এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার স্তর  মাত্রার পরিবর্তন করা এবং  ভারতীয়বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সংগঠন  শিক্ষার মান উন্নয়নের ব্যাপারে সুপারিশ করা।  কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্য - সৈয়দ হুসেনবিলগ্রামী এবং কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি স্যার গুরুদাস বন্দোপাধ্যায়  কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দেরবিশ্ববিদ্যালয় আইন (Universities Act-1904) বিধিবদ্ধ হয়। মনে করা হয় এই আইন বলে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণবহুগুণে বেড়ে যায়।

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission)

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালযয় আইন পাশ হবার পর দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়  উচ্চশিক্ষাকে আরও ফলপ্রসূ করারলক্ষ্যে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট চেমসফোর্ডের সময় স্যার মাইকেল স্যাডলারের [Michael Sadler - educationist] সভাপতিত্বে'স্যাডলার কমিশনগঠন করা হয়। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই কমিশনের সদস্য ছিলেন। এই কমিশনের সুপারিশগুলি ছিলনিম্নরুপ -

(স্কুল শিক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের আগে দু-বছরের একটি অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম চালু করা অর্থ্যাৎ উচ্চ মাধ্যমিকের পরবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ,যা বর্তমানে চালু আছে।

(তিন বছরের স্নাতক শিক্ষাক্রম চালু করাএটা চালু আছে তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স কোর্স  বছরের করা হয়েছে বেশকয়েক বছর আগে 

(আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ফলিত বিজ্ঞান  উচ্চ কারিগরি শিক্ষার প্রবর্তন 

স্যাডলার কমিশনের সুপারিশমালা ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হলে ওই বছরই মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন দ্বারা শিক্ষা বিভাগকে কেন্দ্রীয়সরকারের অধীন থেকে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয় এবং প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচিত মন্ত্রীকে শিক্ষা বিভাগেরদায়িত্ব প্রদান করা হয়   কমিশনের সুপারিশের আলোকেই ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  কলকাতার শান্তি নিকতনে আবাসিকবিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন  একই ধারাবাহিকতায় পাটনাবারানসীআলিগড়আগ্রাদিল্লিহায়দারাবাদরেঙ্গুন প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ধন্দো কেশব কার্ভে পুনায় প্রথম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন  ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে লিখতে হবে)

হান্টার কমিশন (Hunter Education Commission)

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপণউইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে ‘হান্টার কমিশন’ গঠণ করেন  এই কমিশনের অন্যতম কাজ ছিল দেশে তথাভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজি শিক্ষার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা। মনে করা হয় শিক্ষার প্রসারে হান্টার কমিশনের ভূমিকা এক নতুনঅধ্যায়ের সূচনা করেছিল। হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল নিম্নরূপ---

স্কুল কলেজগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা 

বিদ্যালয়  কলেজগুলিকে সরকারি আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করা 

সরকারি  বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রাকৃতিক  ধর্মীয় পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করা 

কলেজগুলিতে মানবতা  নাগরিকতা সম্বন্ধে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা 

প্রাথমিক  মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসারের জন্যও হান্টার কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করেছিলেন  যথা

প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের দায়িত্ব সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত পৌর  জেলা বোর্ডগুলির হাতে অর্পণ করা 

সরকারি সাহায্যে প্রতিটি স্কুলে গ্রন্থাগার  পাঠাগার নির্মাণ করা 

মেধাবী ছাত্রদের উৎসাহব্যঞ্জক বৃত্তির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি 

ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যটির আলোচনা করা সবচেয়ে বেদনাদায়ক, তবে তবুও এটি অবশ্যই উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অতীতে রাষ্ট্র / সমাজ/দেশ রাজকীয় আমলারা চালাচ্ছিলেন। উপনিবেশগুলিতেও তাদের যেমন স্বদেশের নিকৃষ্ট প্রতিভা ছিল, একইভাবে আমাদেরও রয়েছে। এই অঞ্চলে আগ্রহী আলেমদের একটি নিকৃষ্ট গ্রুপ (কাকাসুমা), যারা নিজের এবং অন্যের জন্য একটি ক্যারিয়ার পথ তৈরি করা তাদের প্রধান কাজ এখানে। ইউরোপ ও আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদ কতজন আছেন,যারা উন্নত অঞ্চলে গিয়ে গবেষণা করতে গিয়েছেন? বেশিরভাগ তৃতীয় বিশ্বের দেশে গেছেন, নির্দিষ্ট ছাত্র হিসাবে কি না? প্রকল্প বা প্রাক্তন ঔপনিবেশিক দাসদের নিজস্ব দেশে কোনও চাকরি ছিল না। তাদেরকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। তারা যদি মালয়েশিয়ায় থাকত, তবে তারা মালে স্টাডিজ বিভাগে গিয়েছিলেন, কিছু মালয় শিখেছিলেন, কিছু সম্পাদনা করেছেন দূরবর্তী এবং অপ্রচলিত পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করেছেন, এবং তারপরে পোজ দেওয়া হয়েছে মালয় বিশেষজ্ঞ হিসাবে। আপনি জ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলিতে এটি দেখতে পাবেন। এটা যে কেবল মালয়শিয়াতে হয়েছে, এমন ভাবার কোন অবকাশ নাই। নিচের চিত্রটা দেখুন--- 

Picture 3

চিত্র-১ :  কলোনি, আরা সামাজিক বিজ্ঞানের যুগপৎ পথ চলা। সূত্র

আমরা নিশ্চিত হইযে, সি এ বেইলি তাঁর “The Pre-history of ‘Communalism’? Religious Conflict in India, 1700-1860” (Modern Asian Studies, 19.2, 1995, pp. 177-203) প্রবন্ধে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্বরুপ দেখাচ্ছেন এভাবে প্রাক-উপনিবেশিক সময়ে ও সমাজে ধর্মীয় সংঘাত থাকলেও তা খুব কম সময়েই সাম্প্রদায়িকতার মতো সাংঘাতিক সংঘাতের চেহারা নিয়েছে। অর্থাৎ, ধর্মীয় দূরত্ব মানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এরকম কোন সহজ সমীকরণ করার যুক্তি প্রয়োগ করার যৌক্তিক কারণ নেই। তাঁর অধিকতর অভিমত হচ্ছে–“If religious revitalization did not necessarily give rise to religious or communal conflict, it is also the case that the widespread Hindu-Muslim symbiosis of the pre-colonial and early colonial periods did not totally exclude the possibility of riot and disturbance along communal lines.” যুদ্ধজীবী (warbands) রাজপুত শ্রেষ্ঠদের হারেমে মুসলমান রমণীদের রাখা হত। এবং এই প্রথা উলমাদের অসীম বিরক্তির কারণ ছিল। বেইলি মন্তব্য করছেন – “Indeed, the emergence of sharper boundaries between Hindu and Muslim religious practice in the period after 1820 must to some extent be attributed to the decline of this mobile and eclectic warrior culture.” তিনি  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজর দেখিয়েছেন; হিন্দুরা যেমন অনেক মসজিদ রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছে বহুক্ষেত্রে, তেমনি মুসলমানেরাও সুলতানেরা বহু মন্দিরের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এমনকি শিখেরা গুরুদ্বারের মধ্যে মসজিদও বানিয়েছেন।

পাশ্চাত্য প্রতিভাগুলির একটি প্রাধান্য রয়েছে, যদিও সব প্রতিভা তাদের নিজের দেশে সর্বাধিক উন্নত হিসাবে বিবেচিত হয় না। যেমন  পশ্চিমা সমাজের একটি প্রাধান্য ছিল ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের প্রতিভা যা সবচেয়ে বেশি বিবেচিত হয় তাদের সময়ে তাদের নিজের দেশে উন্নত। কিন্তু সেই আমলাতন্ত্র যে সবদেশের জন্য লাগসই তেমনটা নয়। আমাদেরও  নিজস্ব আমলাতন্ত্র ছিল,আছে এবং থাকবে। এখানে বহুবিধ সমস্যা রয়েছে, আছে নানাজনের কায়েম ও গোষ্ঠিগত স্বার্থ। তবে আমরা মনে করি আমাদের এ বিষয়ে আর গভীরে যাওয়া উচিৎ নয়। মুক্তমন দিয়ে বন্দিমনের সাথে সহাবস্থান করা গেলে তর্ক করা যায়না। তারচেয়ে বরঙ পাঠক ভাবুক, যেমনটা আমরা ভূমিকায় বলেছিলাম।  

ফ্রেডরিখ ম্যাক্সিমিলিয়ন মুলার ভাগ্যন্বষণে ব্রিটেনে এলেনতাও আবার জার্মানীতে উচ্চ শিক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে। বলা যেতে পারেভারতের বুদ্ধিদাসত্ব যুগের সূচনাটা হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে। লন্ডনে বসেই বেদ অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিলেন। সময় নিলেন সংস্কৃত ভাষাশেখার  সদগুরুর নির্দেশনার জন্য। ফ্রেডরিখ ম্যাক্সিমিলিয়ন মুলারযিনি ভারত থেকে বহুদূরে বেড়ে উঠছেনতার ক্ষেত্রে এই দুটিসূত্রই কঠোরভাবে প্রযোজ্য।

এবার আমরা একটু ভিন্নভাবে মুলারকে উপস্থাপন করতে চাইপাঠকের সদয় জ্ঞাতার্থেকিভাবে তারা আমাদেরকে বিনির্মান করেছেন।মুলারের প্রথম জীবনী লেখক তার স্ত্রী আর পুত্র বলছেন ১৯ বছর বয়সে ১৮৪৩  লিপজিগ বিশ্ববিদ্যলয় থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রীনেন ( এই দাবী কতটুকু বাস্তব সম্মত) যদিও এই দাবি নিয়ে বহু মানুষ দ্বিধান্বিত (লায়েজ উইথ লং লেগপ্রদোষ আইচ এবং এইপ্রবন্ধ) তিনি ভাগ্যান্বেষণে লন্ডনে আসেন ১৮৪৬ সালে। জার্মান প্রেম-পরিণয়ের নভেল লেখেন,বেশ প্রচারও পায়। অথচ তার সংস্কৃতকিভাবে,কার কাছে সংস্কৃত শিখেছেন সেই শিক্ষার কোন তথ্য জীবনীকারেরা প্রকাশ করেননি। কিন্তু কেনমুলার ভারতে আসেননিঅথচ ভারত বিশেষজ্ঞঅথচ সংস্কৃত শিখেছেনকার কাছে উত্তর নাই। মুলার যখন ভারত উৎসুকতখনও ভারতে সংস্কৃত কথ্য ভাষাছিল না। যে ভাষা কথ্য নয়সে ভাষা শিখতে উপযুক্ত শিক্ষক প্রয়োজন।  তথ্য জানতে বা জানাতে বিশাল মাপের সামাজিক বারকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার হয়না। সেই শিক্ষা শুরু হয় শিশুকাল থেকেই। অনুবাদ করতে দুটো ভাষাতেই বিশেষজ্ঞ হতে হয়।ঋগ্বেদের তথাকথিত অনুবাদের পথ ধরে তৈরি হল ভারতবিদ্যার ধারা। মেকলের প্রধান পুরোহিতভাগ্যান্বেষী মুলার ক্রমেই হয়েউঠলেন ভারত বিশ্লেষণের কারিগর। তৈরি হলো আর্যতত্বদুভার্গ্য আমার , আপনারআর ভারতবাসীর তো বটেই।

গুরু-শিষ্য। মেকলেমুলার। কাজ শুরু করলেন। দেখুন কিংবা পড়ুন ১৮৩৫ এর মেকলে মিনিটস।  মিনিট এর পাতায় পাতায়ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা ছড়ানোঅনেকটা রবীন্দ্রনাথের আমার পথে পথেপাথর ছড়ানো” এর মতো। মিনিটের তত্বকে ভারতেবাস্তবে নামিয়ে আনলেন মুলার। মেকলের মুলার-অর্জন ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা বটেই। মুলারের সংস্কৃতিজানা নিয়েমেকলে কখনো সংশয় প্রকাশ করেনিমাথা ব্যথাও ছিলোনা  বিষয়ে। মেকলে চেয়েছিলেন এমন এক মানুষ যিনিভারতকে শ্রদ্ধা জানাবার ছলেভারতকে দাস বানাতে দক্ষচেয়েছিলেন এমন একজনযার রচনায় ভারত সম্বন্ধে অজস্র শ্রদ্ধাআরমনে থাকবে চরম অশ্রদ্ধার বীজমন্ত্র। যে বীজমন্ত্র সফলভাবে ছড়িয়ে দিতে পারবেন মেকলের তৈরি করা শিক্ষা নীতির উদ্বৃত্ত শহুরেভারতীয়দের মনে। মুলার তিনিও ইউরোপীয়। মেকলে জানতেন তাঁর মিনিটসের মতমনগড়া হলেও তার শিষ্যের আর্যতত্বভারতীয়শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরা বিনা প্রশ্নেই মেনে নিবে। মুলারের কাছে অর্থদাতারাপৃষ্ঠপোষকরা চাইছিলেন ভারতীয়রা যেন ৮০০০বছরের সভ্যতার মূল শেকড়ে ফিরতে না পারে। শুরু হল ভারত ব্যাজস্তুতি রচনা  এসবের প্রচার। বাস্তবে বাস্তবায়িত হতে শুরু করলঋগ্বেদ অনুবাদের বকলম মুলারের আর্যতত্ব। প্রখ্যাত হলেন মুলার।ভাগ্যও বটে তারভারতের তথাকথিত উদ্ধারকর্তা মুলার ব্রিটিশসাম্রাজ্যে। ১৭৬৩ থেকে গ্রামে গ্রামে ফকির-সন্ন্যাসীর স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বুনন চলছে।ব্রিটিশদের আঁকড়ে ধরতে হচ্ছে শহরের মধ্যবিত্তদের। ইংরেজদের পথে ভারত শাসনের জন্য তৈরি করতে হচ্ছে তাদেরকে। মেকলেওমুলারের ইমেজ সেই ভাবে সাজিয়েছেন। মুলারের ডক্টরেট করা আর সংস্কৃত জানা নিয়ে বহু মিথ্যের জাল বোনাও হয়েছেআবারগিলানোও হচ্ছে আমাদেরকে দিয়েই আমাদেরকে। সাম্রাজ্যবাদের শক্তি বলে কথা। অস্বীকার করি কীভাবে

 

 

বৌদ্ধিক দাসত্ব, ও অনুকরণ 

পাছে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি না হয়, আমাদেরকে এটি পরিষ্কার করে দেওয়া উচিৎ যে, আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি না বিশ্বের কোনও অংশ থেকে সত্যিকারের জ্ঞানের দিকে আমাদের মন বন্ধ করা উচিৎ? আমাদের সকল উৎস থেকে যথাসম্ভব একত্রীকরণ করা উচিৎ। বিশ্বের সমস্ত অংশ থেকে, সমস্ত দরকারী জ্ঞান। তবে আমাদের দরকার একটি স্বতন্ত্র সমালোচনামূলক চেতনার সাথে, আমাদের পিছন ফিরে তাকানো আমাদের নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য। বিদেশের ন্যায় দাসত্বের ঘটনা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব, প্রকৃত সৃজনশীল সম্মিলনের মতো হতে পারেনা । আমাদেরকে একটি খুব স্পষ্ট উদাহরণ দিতে দিন। ধরুন আমি অসুস্থ এবং আমার ওষুধ দরকার।এই ওষুধটি পশ্চিমে তৈরি হয়েছিল এবং এটি প্রমাণিত হয়েছিল এটি কার্যকর। এখন আমি ঔষধটি ব্যবহার করি। এটি বন্ধন নয়। এটি একটি রূপ,আসল নির্ভরতা। অন্যদিকে, আমি যদি তদন্ত ছাড়াই বিশ্বাস করি যে, চাইনিজ ওষুধ মূল্যবান; তবে আমি আছি বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্বে এবং সেই মুহুর্তটিতেই আপনি সেই দৃষ্টিভঙ্গিটি গ্রহণ করেন বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্যের অধীনে আসা, যা প্রভাবিত করে নিজের সাংস্কৃতিক পটভূমিতে। সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য অগ্রগতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা আমাদের একীভূত করা উচিত। আমাদেরকে ব্যবহারিক এবং স্বাধীন হতে হবে, এবং একই সাথে আলতো চাপুন আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য থেকে সর্বোচ্চ। অন্য কথায়, আমরা স্বতন্ত্রতার অধিকারী এবং স্বাধীনতা একটি ধারনায় একটি ব্যক্তিত্ব অনুকরনীয় হোক আমাদের প্রত্যাশা। আমরা আপনাদেরকে পরাধীনতার চরম কিছু উদাহরণ দেব।

আমরা সরাসরি একটি রেফারেন্স হতে তুলে ধরতে চাই পাঠকের সুবিধার্থে-মুলার ইংল্যান্ডে থাকাকালীন অর্থকষ্টে ছিলেন, যেমন ছিলেন অন্য দুই উইলিয়াম- কেরি আর জোন্স। অর্থকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আর্যতত্বের মশলা মাখানো নানান প্রকল্পের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন নানান ব্যক্তি, সংস্থাকে। মুলারের নজর ছিল কোম্পানির অন্দরে প্রবেশ করা। ১৮৪৬ এ প্রুসিয়ার কুটনীতিক ব্যারন ভন বুনসেন আর আর অক্সফোর্ডের সংস্কৃতির অধ্যাপক হোরেস উইলসন কোম্পানিতে আবেদন করেন ঋগ্বেদের অনুবাদের প্রকল্পে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসকে সাহায্য করতে। তখনও মেকলের সঙ্গে মুলারের দেখা হয় নি। মেকলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মুলার খগ্বেদ অনুবাদ আর আর্যতত্বে ভারতীয় মাথা মুড়ানোর বরাত পেলেন। অনুবাদের পর ওঠা ধন্য ধন্য রবে, মুলারের ধারণা হয়েছিল অক্সফোর্ড বিশ্বদ্যালয়ে সংস্কৃতের অধ্যাপক পদের জন্য তিনিই একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি। আর কোম্পানির বরাভয়হস্ত তার মাথার পেছনে রয়েছে। তখন তিনি অক্সফোর্ডে আধুনিক ইওরোপীয় ভাষার অধ্যাপক। তাঁর শেষ স্বপ্ন, অক্সফোর্ডে সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক পদ অলঙ্করণ।

তো আর্যতত্ব আর কোম্পানির দয়া সম্বল করে মুলার প্রখ্যাত আর ধনী হয়েছেন, সেই খ্যাতি অবলম্বন করে মুলার ঝাঁপ দিলেন অক্সফোর্ডের সংস্কৃত বিষয়ক প্রফেসরশীপের জন্য। এই পদটির সরকারি নাম বোডিন প্রফেসরশিপ অব সংস্কৃত। পদটি তৈরি হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। বোডিন, বম্বে নেটিভ ইনফ্যান্ট্রিতে ছিলেন। ১৮১১ তে মারা যান। উইল অনুযায়ী তাঁর কন্যার মৃত্যুর পর (১৮২৭) সমস্ত সম্পত্তি অক্সফোর্ড পায়। শর্ত ছিল তার অর্থে যে অধ্যাপক পদ তৈরি হবে, তার মূল উদ্দেশ্য হবে ভারতে সংস্কৃত নানান শাস্ত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার ও প্রসার করা। এই পদে ১৮৩২এ এই প্রথম অধ্যাপক হোরেস উইলসন। ১৮৬০ এ তিনি মারা যান।


নতুন অধ্যাপকের বিজ্ঞাপন প্রকাশ হল। ১৮৬০ এ সংস্কৃত অধ্যাপক পদের মাইনে ছিল বছরে ৯০০ থেকে ১০০০ পাউন্ড। সময়ের তুলনায় বেশ বেশি। মুলার তখন অক্সফোর্ডে টেলরিয়ান প্রফেসর অব মডার্ন ইওরোপিয়ন ল্যাঙ্গুয়েজ। মাইনে বছরে ৫০০ ডলার। সংস্কৃত অধ্যাপক পদের অর্ধেক। অধ্যাপক পদের জন্য মনিয়্যার উইলিয়াম আর ফ্রেড্রিরিখ ম্যাক্সিমিলিয়ন মুলার লড়াই শুরু করলেন। মনিয়্যার তুলনায় ভারতে খ্যাতি বেশি মুলারের। ভারতীয়রা তাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছের মানুষ হিসেবে জানে। ইংল্যান্ডে উল্টো। মনিয়্যর কোম্পানির ঘরের মানুষ। মুলারের অর্থ সাহায্য পাওয়ার আগেই কোম্পানির অর্থ সাহায্যে ইংরেজি-সংস্কৃত অভিধান তৈরি করেন মনিয়্যর উইলিয়াম। এই কাজে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন সেক্রেটারি অব স্টেট অব ইন্ডিয়ার দপ্তর। যেসব আমলা কোম্পানি থেকে সরসারি সরকারে ভারত শাসনের কাজে প্রতিস্থাপিত হয়েছেন, তাঁদের সমর্থন পেয়েছেন মনিয়্যর।

মুলার, মনিয়্যার সহ পাঁচজন কৃতি এই পদে আবেদন করেন। অন্য তিনজন ছিলেন গভর্মেন্ট কলেজ অব ক্যালকাটার সংস্কৃতের অধ্যাপক এডওয়ার্ড কাওয়েল (২৮মে, দ্য টাইমস এর খবর)। বেনারসের সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ও প্রাক্তণ বডিন স্কলার রালফ গ্রিফিথ। বেনারসের এক কলেজের অধ্যক্ষ জেমস ব্যালেন্টাইন। শেষ পর্যন্ত এই তিনজনই আবেদন পত্র তুলে নেন। টিকে থাকেন দুজন প্রখ্যাত। মনিয়্যার তাঁর আবেদনে বললেন তিনি এই পদটি পেলে ভারতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে কাজ করবেন। মনিয়্যার তাঁর সমর্থকদের দিয়ে একটি প্রচারপত্রও বিলি করেন। পাল্টা লড়াই শুরু করে দেন মুলার। ২৯ অক্টোবর ১৮৬০ এ মুলার দ্য টাইমসএ মনিয়্যরের বিরুদ্ধে কলম ধরেন। সে সময় মনিয়্যর লন্ডনে প্রখ্যাত ছিলেন সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপকরূপে। মুলার বিখ্যাত, কিন্তু পরিচয় তিনি অনুবাদকমাত্র। অধ্যাপক নন। সংস্কৃততো পড়ানই না। সে সময় লন্ডনের উচ্চকুল এই নির্বাচনে বেশ মশগুল হয়ে ওঠে।(সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Boden_Professor_of_Sanskrit_election,_1860) 

১৭৫৭ সালের সদ্য স্তব্দ করে দেওয়া সিপাহি বিদ্রোহে আপাতত ব্যর্থ সংগ্রামের আঘাত তখনও দগদগে ঘা হয়ে আছে ভারতীয়দেরমনে। ভারতে ভিক্টোরিয়া সরকারপর্দার আড়ালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জাতীয়করণ হয়ে ভারত শাসনের নাটের গুরু। নতুনসরকার। নতুন ক্ষমতা। নতুন সমীকরণ। নতুন মুখ। পুরোনো মদ নতুন বোতলে। নতুন সরকার আসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমতারনতুনতর সমীকরণটি সমাধান করে দিলেন স্বদেশিয় প্রতিদ্বন্দ্বীইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রাক্তণ চাকর মনিয়্যর উইলিয়ামসপরে স্যার।দুজনেরই উদ্দেশ্য দাতার উদ্দেশ্যকে আরোও বেশি তুলে ধরাভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা।  ডিসেম্বর ১৮৬০  অক্সফোর্ডেরশেলডন থিয়েটারে সাড়ে পাঁচ ঘন্টার ভোটে ৬১০ জন মুলারের পক্ষে আর ৮৩৩ জন উইলিয়ামকে সমর্থন করলেন। মনিয়্যর পেলেন২৩০টি বেশি ভোট। জিতলেন। মনিয়্যর ১৮৬০  অক্সফোর্ডে বোডিন প্রফেসরশিপ অব সংস্কৃত অধ্যাপকের পদ দখল করলেনমুলারকে টপকে। অধ্যপক পদ পেয়ে তাঁর প্রথম বক্তৃতা ছিল, "The Study of Sanskrit in Relation to Missionary Work" ১৮৮৭ অবসর নিলেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনিয়্যর অক্সফোর্ডে সংস্কৃত পড়িয়েছেন বডিন প্রফেসররূপে। অক্সফোর্ডে ইন্ডিয়ানইন্সটিটিউটও তৈরি করেছেন। মুলারও অক্সফোর্ডে ছিলেন। ১৯০০ সালে মৃত্যু পর্যন্ত মুলারএকদিনও সংস্কৃত পড়াননি। ১৮৭৫ মনিয়্যরকে (Sir Monier Monier-Williams) সম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদানের প্রতিবাদ হিসাবে ক্ষুব্ধ মুলার পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েদেন এই বলে যেতিনি পড়াশোনায় আরো সময় ব্যয় করতে চান। অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করে তাকে সম্মানিক ডেপুটি প্রফেসরহিসাবে নিয়োগ দেন এবং মুলার আমৃত্যু এই পদে বহাল ছিলেন। বন্দিত্ব মননের এই ক্ষিপ্ত বুদ্ধিজীবি এক সময় আর্য-দাস তত্ত্বকেঅস্বীকার করলেন। মুলারের পিএইচডি ডিগ্রীসংস্কৃত শিখা বিবিধ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা মুশকিলের বিষয়। আপনি অক্সফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের মহাফেজ খানায় গেলে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন(http://www.bodley.ox.ac.uk/dept/scwmss/wmss/online/15001900/muller/maxmuller.html)


আমার ( সৈয়দ হুসেন আলাতাস) এক সহকর্মী ছিলেন, তার চেয়েও বেশি তিরিশ বছর আগে, তিনি কিছু সময়ের জন্য আমাদের অঞ্চলে অধ্যাপক ছিলেন। তিনি তিনি ছিলেন একজন এশিয়ান ঔপন্যাসিক এবং জন্মগত মুসলমান। একদিন আমরা কথা বলছিলাম দর্শন সম্পর্কে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি পার্সিয়া দর্শনটি পড়েছেন কিনা, দর্শনের বিভিন্ন দিকগুলো যেমন জালালউদ্দীন রুমির মতো মুসলিম চিন্তাবিদদের দর্শনের বিভিন্ন দিক। তাঁর উত্তর ছিল সেই দর্শন হেগেলের আগে কোনও মূল্য ছিল না। দর্শন তখনই মূল্যবান ছিল যখন হেগেল এসবের আলোচনা শুরু করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, এই কয়েক হাজার বছরের চিন্তাভাবনা ভারতে, চীন, নিকট প্রাচ্যে, কি কেবল অকেজো ছিল? তিনি তাদের বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না? তিনি বললেন- "না"। তিনি কেবল আগ্রহী ছিলেন -হেগেলের পরের দর্শন। আমি তাকে ছেড়ে যাওয়ার আগে আমরা কথা বলছিলাম উপন্যাস সম্পর্কে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি সেই বিশেষ বইটি পড়েছি কি না। উত্তরে আমি জিজ্ঞাসা করেছি এটি প্যাস্তরনাকের ডাঃ ঝিভাগোয়ের আগে লেখা হয়েছিল কিনা। সে বলেছিল আমাকে এটি প্যাস্তেরনাকের ডাঃ ঝিভাগোয়ের আগে লেখা হয়েছিল, এর কিছু সময় ছিল ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে। তখন আমি তাকে বলেছিলাম- "আমার কাছে এর আগে সাহিত্য নেই প্যাসটার্নাক। একমাত্র বুদ্ধিমান সাহিত্য যা আমি পড়ার পক্ষে সার্থক মনে করি তা হ'ল প্যাস্তরনাকের পরে। "তিনি হতবাক হয়ে গেলেন। আমি তার মতো উত্তর দিলাম যেমনটা আমাকে দর্শন সম্পর্কে দিয়েছেন। এমনটিই ঘটেছিল যে, এটি তাঁর নিজস্ব উপন্যাস এটি মনোযোগের যোগ্য নয় হিসাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। এখানে আপনি খুঁজে পাবেন বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের গভীর প্রভাব। আমাদের দেশের খুব কম শিক্ষক বা ছাত্রই এশীয় চিন্তাবিদদের অতীত সর্ম্পকে জানতে ও শুনতে আগ্রহী। আমাদের ছাত্ররা প্লেটো, অ্যারিস্টটল পড়ত, মাকিয়াভেলি এবং অন্যান্য সমসাময়িক পশ্চিমা চিন্তাবিদদের লেখাগুলো। তবে তারা তা পড়বে না ওয়াং আন শিহ, ইবনে খালদুন, রিজাল , লালন, চৈতন্য কিংবা নেহেরুকে। এদেশীয় বা এশীয় চিন্তাবিদদের কথা উঠলে তারা হয় প্রসঙ্গ পাল্টাবে নয়তো কাজ  আছে বলে আলোচনার টেবিল হতে উঠে যাবে । তারা কেন করে এমনটা? এটা কি আমাদের চিন্তার বিরাট দৈন্যতা নাকি অন্যকিছু? কেবলমাত্র তারা সম্ভবত প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে শুরু করেছিলেন। কারণ সম্ভবত অজ্ঞানভাবে, যে এশিয়ান এবং অন্যান্য অ- পশ্চিমা সমাজ থেকে শেখার কিছুই নেই। এই সমস্ত জিনিস অতীতের - এটি ধূলিকণা ইতিহাসের - যদিও তারা ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না, কেবল একটি ফাঁকা অপ্রতুলতা একটি ধারণা দ্বারা প্রভাবিত রায়।

আরেকটি বৈশিষ্ট্য হ'ল আমরা যাকে নিজের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্নতা বলি। একটি বিরতি আছে, আগ্রহের অভাব আছে, এবং একটি দৃঢ় বিশ্বাস আছে। অতীত থেকে কিছুই সার্থক নয়। আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা আমরা পারি  তা হলো বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব হিসাবে এখানে উল্লেখ করা হ'ল নকল। এই লেখার রীতিতে বৌদ্ধিক অনুকরণের একটি কুখ্যাত প্রবণতা এবং থিম পছন্দ। অনুকরণের একটি উদাহরণ সিঙ্গাপুরের ইতিহাস রচনা। দ্য ব্রিটিশদের সিঙ্গাপুর দখল করার ইতিহাস থেকে লেখা হয়েছে ব্রিটিশদের দৃষ্টিভঙ্গি। উদাহরণস্বরূপ, রাফেলসের ইতিহাস ছিল তার থেকে প্রাপ্ত রাফলসের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ঔপনিবেশিক অফিস প্রশাসনে রেকর্ড। অনেক বিষয় যেমন - সে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েছিল বা না, সে কী ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল, গোলমরিচ নিয়ে তাঁর প্রাক-পেশা কী ছিল এবং প্রায়শই অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা আমাদের পক্ষে কেন্দ্রীয় উদ্বেগের বিষয় নয়। আমরা কীভাবে, র্যাফেলস বেনকুলেনে কী প্রভাব ফেলেছিল তাতে আগ্রহী। তাঁর উপস্থিতি সেই অঞ্চলের লোকদের প্রভাবিত করেছিল, এটি ছিল বেনকুলেনে তাঁর উপস্থিতি ,জনসংখ্যার প্রতি অত্যাচারী, এবং ইত্যাদি এই থিম যে ইতিহাসের প্রতি ঔপনিবেশিক পণ্ডিতদের আগ্রহ ছিল না। পরিবর্তে নির্বাচন করা আমাদের নিজের বিভিন্ন থিম, যা আমাদের জ্ঞান ব্যবহার করে। এই অঞ্চলের সাথে প্রাসঙ্গিক নতুন বিষয় নির্বাচন করার জন্য ইতিহাসবিদ ইউরোপীয় পণ্ডিতদের থিম এবং পদ্ধতি অনুকরণ অবিরত। আমাদের পদ্ধতিটি হ'ল অন্ধকার ঘরে নিজেকে লুকিয়ে রাখা, এর একটি রোল দেখে একের পর এক মাইক্রো ফিল্ম, তারপরে নথির পরে ডকুমেন্ট। এই সবগুলোই করতে হবে। তবে আমরা যদি এগুলিকে আচার হিসাবে বিবেচনা করি, তবে আমরা আমাদের বিষয়গুলি পরিবর্তন করব না যদিও নতুন বিষয়ের কোন পছন্দ নেই, এবং কোনও চেষ্টাও নেই। নথিগুলি ছাড়িয়ে আরও বিস্তৃত পটভূমিতে যাওয়া যেতে। এই ধরণের কাজ করা হয়েছিল এবং গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল অন্যটি মরিচ, সংস্থাগুলি এবং চক্রান্ত সম্পর্কিত কাগজ। এবং কোথায় এটি মুদ্রিত হবে কিন্তু একটি বিদেশী ঐতিহাসিক জার্নালে? কে পড়বে? একই ধরণের ইতিহাসবিদরা। সেখানে আপনি প্রজনন খুঁজে পাবেন। আমাদের ঔপনিবেশিক পণ্ডিত আছে প্রজাতির একটি আউট সদস্য হয়ে। প্রজনন স্থায়ী হয়।তিনি রোমান সাম্রাজ্যের দাসদের মতো অনুগত দাস হয়ে গেছেন।রোমান সাম্রাজ্যের দাস রোমের গৌরবে বিশ্বাসী; সে খুশিতে আছে তার দাসত্বের মধ্যে; তিনি এটিকে একটি প্রাকৃতিক বিষয় বলে মনে করেছিলেন। একইভাবে, আমাদের দাস পণ্ডিতরা বেশ খুশি। ‘ডিসাইপল অব ডিসিপ্লিন’ নামে আমরা এটাকে ব্যাখ্যা করতে পারি। যেমন, ইন্ডিয়ার সংবিধান রচনাকারী ভিমরাও রামজি আম্বেদকর। যিনি পশ্চিমের কাছে আজো মূল্যবান এক নাম। আমাদের কাছেও। বারাক ওবামার বাড়ির শোভা বাড়ায় আম্বেদকরের ছবি। অধ্যাপক জোসেফ অরঙ্কা, আম্বেদকর মেমোরিয়াল লেকচার দেন,বই খুলে। কারণ কী। কারণটা হল দার্শনিক মিল। ইউটিলিটারিয়ান দর্শনের বীজটা আম্বেদকরের হাত দিয়ে ভারতের মাটিতে লাগানো হয়েছিল। আম্বেদকর যখন ভারতীয় আইন মন্ত্রী, তিনি কাশ্মিরের ৩৭০ ধারাকে বাতিলের পক্ষপাতি ছিলেন। এটা স্পষ্ট যে, জন ডিউইর সরাসরি প্রভাব। এটাকে ডিউইর ইন্ডিয়ান এক্সপেরিমেন্ট বলে থাকেন অনেকেই। রাজনীতি ছাড়াও ইন্ডিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাতে আম্বেদকর মানে জন ডিউইর মানে ইউটিলিটারিয়ান দর্শনের চর্চা দেখা যায়। এবং সেটার গোঁড়া অনেক আগেই রোপিত হয় আমাদের বা ভারতীয় মাটিতে।

 

বুদ্ধিজীবী সাম্রাজ্যবাদ এবং বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের ধারাবাহিকতা

আমরা দেখি সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা প্রভাবিত বৌদ্ধিক বিচ্ছিন্নতা একটি তৈরি করেছিল মার্কসবাদী শব্দ ধার করার জন্য বুদ্ধিজীবী সংস্থার দল ।আবার রাজনৈতিক এবং বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে একটি নতুন সমান্তরাল। 

রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদে আপনার সহযোগী রয়েছে এবং আপনারও রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যোদ্ধারা, যারা সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করতে চায়। মাতৃদেশ আপনার এই সংঘাতও রয়েছে, যাঁরা যারা সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে সাম্রাজ্য শাসন বজায় রাখতে চান বা উপনিবেশগুলির জন্য স্বাধীনতা বিলম্বিত করতে চান। আমাদের একই জিনিস আছে বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ। এই বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের জগতে আপনার সহযোগিতা রয়েছে , যারা হলেন স্থানীয় পণ্ডিত, সহযোগী এবং আপনার বিদ্রোহীরা, এবং যারাএই আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই এ সংগ্রামরত। ইউরোপের হোম দেশগুলিতে এবং উত্তর আমেরিকা, উদাহরণস্বরূপ, আপনার আমেরিকান পণ্ডিত রয়েছে, যেমন মির্ডাল, যিনি এই আধিপত্যেবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন।

এছাড়াও, আমাদের এখন খুব কৌতূহলপূর্ণ প্যাটার্ন উদ্ভূত হয়েছে। উপনিবেশে পুঁজিবাদ, অর্থনৈতিক শোষণ প্রায়শই স্থানীয় সংস্থাগুলির কাছে সাব কন্ট্রাক্ট ছিল।বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদে আমাদের একই সমান্তরাল ঘটনা রয়েছে।বিদেশে পণ্ডিতদের গবেষণা অনুদান থাকতে পারে। তারা এশিয়ার নানা জায়গায় যায় , এবং স্থানীয় সহযোগী, পণ্ডিতদের, যাদের কাছে তারা সাবকন্ট্র্যাক্ট পান গবেষণা। এখানে অর্থ; আপনি আমাকে তথ্য পেতে। এই পণ্ডিতরা প্রাপ্ত তাদের জন্য ডেটা। তারা রিপোর্ট লেখেন না। তারা শেষ দেখে না পণ্য। কী আকারে এটি প্রদর্শিত হবে তা তারা জানেন না। তারপর তারা সুপার স্ট্রাকচার একত্রিত করেন এবং সমাপ্ত পণ্য প্রদর্শিত হবে সহযোগী বিদ্বানদের দ্বারা স্বীকৃত ফর্মে। এই সাবকন্ট্র্যাক্টিং একাডেমিক বিশ্বে এবং সমান্তরাল অর্থনীতিতে করা হচ্ছে সাবকন্ট্র্যাক্টিং। এশিয়া সম্পর্কিত গবেষণা ছাড়াও তারা বোমাবাজি করবে এশীয়রা, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকরণ সহ, তাদের উপর ধর্ম, তাদের সংস্কৃতি, তাদের রাজনীতি, তাদের স্বাস্থ্য, তাদের সমস্যা এবং তারা জীবনের দিকে তাকান।

মজার বিষয় হ'ল: আপনি এ জাতীয় সাব-কন্ট্রাক্ট ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুঁজে পাবেন না। আপনি ভারতেও খুঁজে পাবেন না। জাপানি পণ্ডিতরা ইউরোপ বা সংযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রে ডেটা সংগ্রহকে সাবকন্ট্র্যাক্ট করছেন রাষ্ট্রসমূহ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, রাজনীতি এবং সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত গবেষণার জন্য। আপনি জাপানী এবং ভারতীয় পণ্ডিতদের পুরো ইউনাইটেড জুড়ে ঘোরাঘুরির সন্ধান করবেন না।

আমাদের আরেকটি উদাহরণ রয়েছে। একজন বিদেশী পণ্ডিত একটি বই লিখেছেন, আমাদের বলুন, সিঙ্গাপুর। একজন বিদেশী প্রকাশক এটি প্রকাশ করবেন। একজন বিদেশী পর্যালোচক এটি একটি বিদেশী জার্নালে পর্যালোচনা করবে, তবে এটি সিঙ্গাপুরে বিক্রি হবে, এবং সিঙ্গাপুর শিক্ষার্থীদের দ্বারা ব্যবহৃত হবে। এটি একটি আজব পরিস্থিতি আপনি কল্পনা করতে পারেন। আমেরিকান জাতীয় চরিত্র নিয়ে একটি জাপানি লেখক একটি বই লিখেছেন, জাপানে প্রকাশিত, জাপানি পন্ডিত দ্বারা পর্যালোচিত, দ্বারা জনপ্রিয় জাপানি প্রচার যন্ত্রপাতি এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি, যার ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব দেশ দেখেন জাপানি চোখ?ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি ঘটে না।

আমেরিকান ইতিহাস নিয়ে যারা লেখেন তারা হলেন আমেরিকানরা নিজেরাই। অন্যান্য আমেরিকান পণ্ডিতরা তাদের রচনাগুলি পর্যালোচনা করবেন। ফলস্বরূপ, তাদের দেশের বৃত্তি উচ্চ কারণ অনেক মানুষ আছে একে অপরের কাজ সমালোচনা করার জন্য। আমাদের ক্ষেত্রে, আরও বৃত্তি আছে আমাদের অঞ্চল বিদেশে করা, বিদেশ পর্যালোচনা, বিদেশে মূল্যায়ন এবং এখানে খাওয়া। সুতরাং, স্থানীয়ভাবে পণ্ডিতের বিতর্ক কম হয়। উদাহরনে আমরা ইউরোপ বা নর্থ আমেরিকা হতে ডিগ্রি নিলে কিংবা বলা যায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা দেশের কোথা হতে (ধরুন ঢাবি, জাবি, রাবি,কিংবা বুয়েট) পিএইচডি করলে ,থিসিসটা দেশের বাহিরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সটারনার্ল দ্বারা মূল্যায়ন করাতে পারলে ভাবে ডিগ্রিটাও আমেরিকান বা অস্ট্রেলিয়ান। বন্দী মনের সংকীর্ণতা আর কাকে বলে?

বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ তাদের মানসিক মনোভাবকে শর্ত দেয়, যারা এর জালে ধরা পড়েছে। কর্তৃত্বকে উৎসাহিত করা ছাড়াও এটি সৃজনশীলতা দমন করে। বুদ্ধিজীবী দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলস্বরূপ সাম্রাজ্যবাদ পন্ডিত সৃজনশীল হতে পারে না। তারা গ্রহণযোগ্য হতে চেষ্টা করার চেষ্টা করে তাদের সময় ব্যয় করে। যে গোষ্ঠীটি তারা সন্ধান করছে তাদের কাছ থেকে অনুমোদন পান। এটি খুব ভাল এশীয় পণ্ডিতদের মধ্যে জ্ঞাত এবং সাধারণ প্রবণতা। তাদের অনেকেরই মনে হয় তারা পশ্চিমা জার্নালে প্রকাশ না করলে ভাল হয় না। এটি অবশ্যই সত্য নয়। একটি কাজ পশ্চিমে প্রকাশিত হোক বা না হোক, এটি কোন বিষয় নয়। বরং এটির বা প্রত্যেক কাজের নিজস্ব যোগ্যতা রয়েছে। সৌন্দর্য হতে গেলে এমন হওয়া দরকার না। বিদেশী বিচারকরা এমন একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় প্রশংসিত। যদি তোমার থাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস, আপনি আয়নার দিকে তাকান এবং নিজেকে বলেন "আমি সুন্দর "। অন্যদিকে, যদি আপনি নিজের সৌন্দর্য ঘোষণা করতে না পারেন; তবে আপনার পক্ষে এটি করার জন্য বিচারকদের একটি প্যানেল দরকার, তার মানে আপনার আত্মবিশ্বাস নেই। সৃজনশীলতার অভাবের সমস্যাটি খুব মারাত্মক। কারণ এটি আমাদের নির্ভরতা বৃদ্ধি করবে। সৃজনশীলতার অভাব কোনও অনিবার্য অবস্থা নয়। আমরা সুপরিচিত নৃতত্ত্ববিদ ম্যালিনোস্কি থেকে শিখতে পারি। ম্যালিনোস্কি কয়েক বছর প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে কাটিয়েছিলেন। সেখানে তার অবস্থান থেকে তিনি মানুষের আচরণ তত্ত্বের কাঠামোর ব্যাখ্যা দেনে। এটি সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী নৃতত্ত্ব। আমাদের বড় প্রশ্ন হ'ল তিনি কেন সফল হন,এবং আমাদের নিজস্ব লোকেরা এই অঞ্চলে কয়েক দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন এমন আলেমরা কম নয়? তাই নয় কি? সামাজিক এবং তাত্ত্বিককরণের জন্য ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি থাকা প্রয়োজন ঐতিহাসিক বিজ্ঞানে? ক্যাম্পাসের গ্রন্থাগারটি পর্যাপ্ত এবং এমনকি যথেষ্ট এই উদ্দেশ্যে বিদেশে অনেক লাইব্রেরির চেয়ে ভাল। এখানে আমাদের উপকরণ হয় শারীরিক বিজ্ঞানের মত, আমাদের ব্যয়বহুল দরকার নেই। উপকরণগুলির জন্য যন্ত্রগুলি আমাদের চারপাশে, পরীক্ষাগারগুলি প্রায় রয়েছে, এবং ম্যালিনোস্কির মতো একজন মানুষ এটি করতে পারে। কেন আমরা এটা করতে পারি না? কারণ সহজ। ম্যালিনোস্কি স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসাবে ট্রবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন । তাঁর ভিতরে কোনও কমপ্লেক্স ছিল না। সে অনুভব করল না নকল করতে, সে বাধ্য এবং মুখোশও পরল না।। তাঁর লেখালেখি জার্নাল দ্বারা গ্রহণ করা বা প্রকাশিত হবে কিনা তা নিয়ে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। তিনি তার সময় এবং চিন্তাভাবনা নিয়ে কাটিয়েছেন যে তার তত্ত্বটি বিকশিত হচ্ছে কি না।পরবর্তীকালে এটি বা তার তত্ত্বটি অনেকের জন্য খুব আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যার মূলে আছে মানুষ। আমরাও তো তার মতো করার অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু তা আমরা করিনি। কারণ, অনেক এশিয়ান পন্ডিত যারা এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন মূলত বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের কারণে যদিও সংখ্যার বিচারে তা নেহায়েৎ কম নয় ? তারা বিশ্বাস করে যে তারা গ্রুপের আধিপত্যের বাইরে কিছু করতে পারে না। এমনকি অবিচ্ছিন্নভাবে প্রায়োগিক গবেষণার দিকে ধাক্কা দেওয়া হলেও। তারা তাও করবে না। তারা কেবল একটি ভাল কাগজ বা একটি ভাল বই লিখা হলে এর সমালোচনা বিশেষত মন্দ দিক নিয়েই বেশী বলবে বা লিখবে কেননা এটি চ্যালেঞ্জের বিষয় নয়।

আরো একটি উদাহরণ কার্ল উইটফোগেল। তিনি একটি আকর্ষণীয় তাত্ত্বিক বই লিখেছেন চীন সম্পর্কে-ওরিয়েন্টাল ডিসপোটিজম (১৯৫৭)। এমন কিছু নেই, একটি এশিয়ান তুলনামূলক রচনা লিখতে না পারার কারণ। একদা বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, এটি পড়তে এবং সংহত করা হয়েছিল। তবে কেন ছিল এটি, এখানে উৎপাদিত হয় না? এটি কোনও অসম্ভব কাজ নয়। কারণ আমাদের আত্মার অভাব আছে; প্রাথমিক প্ররোচনা সেখানে নেই। উন্নতি করতে হবে এই প্রাথমিক প্রবণতা, একটি বিরতি সঞ্চালন করতে হবে। দেশীয় পরিসরে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জলে যার প্রতিবিম্ব (জেমস জে নোভাক) গ্রণ্থটি রচনায় বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র এ বইয়ে পাই।কেন একজন বিদেশী লেখকের কলমে তা ফুটে উঠল,আসলে আমাদের নজর অন্যদিকে, সাফল্য চাই একটু সোজাভাবে,ভিন্ন পন্থায় তো বটেই। যাই হোক আমাদের করণীয় হতে পারে- প্রথমত আমাদের হতে হবে বিদেশী লেখকসহ সাধারণভাবে লেখকদের সমালোচনা। দ্বিতীয়ত, আমাদের গবেষণার পৃথক বিষয়গুলিতে মনোযোগ পুনর্নির্দেশ করতে হবে, তৃতীয়,আমাদের দৃষ্টি বিদেশী উদ্যানের দিক থেকে নিজেদের মূল্যায়ন করা এড়াতে হবে। চতুর্থত, আমাদের স্বতন্ত্রতা এবং স্বাধীনতার বোধ গড়ে তুলতে হবে, এবং আমাদের কাজ এবং গবেষণায় অন্যকে খুশি করার জন্য অনুকরণ করা বন্ধ করতে হবে। এমুহূর্তে, এটি একটি জটিল সমস্যা যা পূর্বরূপের বাইরে

বৈজ্ঞানিক আলোচনা। এটি কীভাবে একজন চিন্তাবিদ, ভালো গবেষক, পরিকল্পনাবিদ তৈরি করবেন তা একটি নৈতিক প্রশ্ন? চিন্তাবিদ তৈরি করতে জানেন কীভাবে মানুষ তৈরি করতে হয়।

একজন কবি জন্মগ্রহণ করেন এবং একে সৃষ্টি করা যায়না। একইভাবে, আমরা তৈরি করতে পারি না একনায়ককে। আপনি যা করতে পারেন তা হ'ল অনেকের মধ্যে চেতনা জাগ্রত করা যতটা সম্ভব, মানুষ এবং সম্ভবত কয়েকজন তাদের মধ্যে বিবর্তিত হবেন আপনি। একবার তাদের এই স্বতন্ত্রতা হয়ে যাওয়ার এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারণের জন্য তাদের যা প্রয়োজন তা সরবরাহ করুন বা সুযোগ করে দিন। যদি আপনি তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের, প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিজস্ব ক্ষমতার উপর নির্ভর করার সুযোগ দেন, অন্তত আমরা এটুকু বলতে পারি যে পুনরায় অনুকরণে পিছলে যাওয়ার বিপদ এড়াতে সক্ষম হবো। 


বাঙালি রেনেঁসা বুঝার আগেআমরা একটু পিছনে ফিরে তাকাতে চাই। ১৭৬১ সালে লুক স্কার্ফটনব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিরঅর্থে লিখলেন-রিফ্লেকশনস অন দ্য গভর্ণমেন্ট অব ইন্দোস্তান এন্ড  শর্ট স্কেচ অব দ্য হিস্টোরি অব বেঙ্গল।” ইংল্যান্ডে বহুলপ্রচারিত  বিক্রিত বইটিতে স্কার্ফটন ভারতে বন্দী মননের বুদ্ধিজীবি তৈরি করার যে প্রকল্প বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছেসেসকলকার্যক্রম  ভারতীয় উপমহাদেশের আর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিষয়ক কর্মকান্ডের উপর আনীত ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার প্রসার করা হয় ব্রিটেনে। ফলেসরকারি অর্থায়ন বা পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে ব্রিটিশ লুটঅর্থ-পাচারশাসন আর ব্রিটিশ  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্যায় অত্যাচারের বৈধতার শেকড় ছড়ালো ব্রিটেনে। আবার ১৬৩০ এর হেনরি লর্ড এর দেখানো পথ অনুসরণকরে স্কার্ফটন লিখলেন ব্রহ্মাই আইনের রক্ষকধর্ম সংস্থাপক।

 বিদম নামক বইটিতে ভারতের সব ধর্মীয় তত্ব আর নানা সম্প্রদায়ের বর্ণনা আছে সময়ে পাশ্চাত্যে সব ভারতীয় ধর্ম পুস্তকেরউদ্দেশ্যপূর্ণ অনুবাদের কাজ শুরু করা হয়নি। আর অন্যদিকে কোম্পানির অর্থে ম্যাক্স মুলারের তথাকথিত অনুবাদের কার্যক্রম শুরুহতে প্রায় ১০০ বছর বাকি আছে। স্কার্ফটন বলছেন তিনি সেই সময় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বেদের একাধিক সংস্করণ দেখতেপাচ্ছেন।‘  সব অনাচার বলে মত দেন। এসব ব্রাহ্মণদেরই কর্মকান্ড। ইউরোপীয় বাইবেল মডেল অনুসারে ভারতে বেদের এককসংস্করণ হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। মনে করা হয় যে শিল্প-বিপ্লবীয় জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে এরকম মনোবাসনাই কাজ করেছে।যদিও পরে ম্যাক্স মুলার ঔপনেবিশকতার দর্শন সরাসরি প্রচার করেন এবং তাঁর প্রভাব  প্রতিপত্তি ধরে রাখেন ভারতীয় সমাজঅধ্যয়ন কিংবা চর্চায়। পরবর্তীতে জন জেফানিয়ে হলওয়েল কর্তৃক রচিত ইন্টারেস্টিং হিস্টোরিক্যাল ইভেন্টসরিলেটিভ টু দ্য প্রভিন্সেসঅব বেঙ্গলএন্ড দ্য এম্পায়ার অব হিন্দুস্তান (১৭৬৫-৬৭হিন্দুধর্ম বিষয়ে স্কার্ফটনের বিবরণপাঠকের মননে রং লাগিয়ে দেয়। যাহোকঅনেক চড়াইউৎরাই পেরিয়েলেখা-লেখি আর জল প্রবাহের পর প্রচার আর প্রতিষ্ঠা পেল ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মূল চালিকা শক্তিইহলো বেদ। এর মূল বক্তব্য অবিনাশী আত্মা আর ভগবান। তাঁরই হাতে পড়ে আগামীদিনে বেদ হয়ে উঠল অবশ্যপাঠ্য ভারতীয়ধর্মশাস্ত্র। স্কার্ফটনের বক্তব্য বা বিষয়বস্তুকে প্রাচীনকালে ভারতীয়রা বেদেরই একটিই সংস্করণ বলে মনে  মেনে চলতেন।ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের চক্রান্তে বেদের নানান সংস্করণরূপে বিকশিত হল। যার ফল অজ্ঞানতা। এটা আজ সত্য যে বা আমাদের বন্দি মননেরমূলে এই উদ্ভুত অজ্ঞানতাই ভারতীয় উপমহাদেশের নষ্টের গোড়া। তাই নষ্টমূলের উপর দাড়িঁয়ে ভারতীয়রা আজও উন্নতির চরম শিখরেআজো পৌঁছতে পারেনি। অথচ আমাদের বা ভারতীয় সম্পদের উপর ভর করে এই শিখর ব্রিটিশেরা অনেক আগেই ছুঁয়েছে। ইউরোপমূলগত (পিওরধর্মীয় ভাবনার দ্বারা পরিচালিত হতো। কিন্তু ভারতে সেটি ঘটেনিফলে তাই ধর্মে কিংবা অর্থনীতিতে জাঁকিয়ে বসেআছে দুর্নীতির ঘুণপোকা। প্রাসঙ্গিকক্রমে বলা যেতে পারে  ১৮২৮  ১৮৩২ সালে যথাক্রমে এশিয়াটিক রিসার্চে দুটি খন্ড প্রকাশিতহয়েছে। প্রথমটি বৈষ্ণবজ আর দ্বিতীয়টি শৈবজ। বৈষ্ণব গ্রন্থের মুখপাতেই ধর্মীয় সংস্কারগুলোর বিশদ রসালো বিবরণ উপস্থাপন করাহয়েছে পশ্চিমি পাঠকদের সামনে। প্রাচ্যবাদীরা ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় গোড়ামি আর দুনীতির আধার রূপে বর্ণনা করলেন। ইংরেজ আমলেরভারততাত্বিক চার্লস গ্রান্টের কথা দ্বিতীয় বলা মানে পাঠকের বিরক্তের জন্ম নেওয়া , তাই পাঠক একটু মনে করার চেষ্টা করুন।

উইলিয়াম জোন্স দ্বারা এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমে ভারতে দাসত্ব বা বুদ্ধিবৃত্তিক পরিকল্পনার ভিত্তি স্থাপন করা হয়। উচ্চাভিলাষিজোন্সলন্ডনে টিউশনি করলেও বিখ্যাত হবার বাসনাটুকু ছিল প্রবল। আর দৈবক্রমে বন্ধুবর জাইদ এর সুবাদে ইসলামিক আইনইংরেজি করলে তাঁর কপাল খুলে যায়। নিযুক্ত হোন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। গুরু উইলিয়ম জোন্স এর পদপ্রান্তে ভারতীয়মণীষার সাংগঠণিক দাসত্বের যুগের শেকড় রোপণ শুরু হল। সেই শেকড়ের বাড়-বাড়ন্ত হবে মেকলের ভারতীয় দাসত্বের পরিকল্পনারউত্তরসূরী ম্যাক্স মুলারের তত্বে‘ – এটাই প্রত্যাশিতহয়েছেও তাই। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও তাঁরা উজ্জ্বল। প্রচারেরই প্রসার।ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে বুঝিয়ে দেওয়া হল ব্রিটিশরাজ ভারত দখল না করলে  দেশ পড়ে থাকত পশ্চাদপদতার অন্ধকারেআজকের অবকাঠামোগত উন্নয়নযোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলের সংযোজন সহ প্রভূত উন্নয়ন সবই তাদের। মুক্ত মননআর গণতন্ত্রেরউত্তম চর্চাকারী ব্রিটিশ শাসনে পরম আস্থা রাখাই তোমাদের অর্থ্যাৎ আমাদের বুদ্ধিমানের কাজ। হ্যাঁআমরা আস্থা রেখেছি পরিণতহয়েছি একেক জন বন্দী মননের বুদ্ধিজীবিতে। জয়তু ব্রিটিশ শাসন।


বলা হয়ে থাকে যেঅশিক্ষিত গ্রাম্য ভারতীয়রা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই  সংগ্রামে লিপ্ত হলেও শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা ব্রিটিশবুদ্ধির দাসত্বের অনুগামি  অনুসারি হয়ে আরাম আয়েসে দিনানিপাত শুরু করলেন বটেকিন্তু বুদ্ধিমান ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া শাসকবুঝে গেলেন যে ভারত সর্বতোই ধর্মান্ধ এবং ভাগ্য  ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় জাতীয়তাবোধের অনুপস্থিতি রয়েছে প্রবলভাবেনইলে২০০ বছর সরাসরি শাসন করে কীভাবে এবং পরোক্ষভাবে তা আজো প্রবলমান। ভারতীয় সংস্খৃতি বলে যা আছেতা এনেছেআর্যরাই। আমরা অর্থ্যাৎ ভারতীয়রা ভুলেই গিয়েছিলাম আমাদের নিজস্ব প্রাচুর্য আর সম্পদের কথা। উইলিয়ম জোন্স ভারতে নাএলে যে কী হতসমগ্র বাঙালি তথা ভারতীয়রাই রসাতলে যেত বৈকিদাসত্ব প্রকল্পের অন্যতম অধিপ্রকল্প ভারত উদ্ধার প্রকল্পে প্রথমব্রিটিশ পুরোধা হয়ে এলেন উইলিয়াম জোন্স।

আত্মবিস্মৃতি

আজকে যখন আমরা নীরদ সি চৌধুরীর আত্মঘাতী বাঙালী‘ হাতে নেইতখন সেই সময়ের প্রেক্ষাপটের ঔপনিবেশিক শাসনেরকর্ণধার ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর উদ্যোগে বাস্তবায়িত আত্মবিস্মৃত বাঙালী প্রকল্পের ইতিহাস আমাদেরকে অনেক কিছুই মনে করিয়েদেয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনআমাদেরকে উদ্ধার করল নাজুকতা থেকে আর স্থান করে দিল বিশ্ব জগতের মাঝে। বাঙালী মনেকরলএই শাসকের হাত ধরেই আমরাও একদিন জগত সভায় শীর্ষ স্থানটি দখল করবো। ব্রিটিশ তাত্ত্বিক  তাদের অনুসারীরা  প্রচারকরলেন যেবাঙালির জাতীয়তাবোধ নেইইতিহাসঐতিহ্য নেইনেই বর্তমানের সংস্কৃতি। এইমতের ভাবনার অন্যতম ভারতীয় স্থপতিভারতের ওয়াল্টার স্কটবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ইংরেজদের অনুসরণে স্পষ্টভাষায় বাঙালীর চোখে আঙুল দিয়েকাগজে কলম দিয়েবুঝিয়ে দিলেন যে বাঙালীদের ইতিহাসবোধটিকে নিয়ে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। লিখতে হবেনতুন ভাবেনতুন মর্মভেদী দৃষ্টিতেনতুন কৃষ্টিতে। প্রমাণিত হয়ে গেল বাঙালি তথা ভারতীয়দের নিজস্ব কৃষ্টিভাবনাজ্ঞানসংস্কৃতিপ্রযুক্তি সব কিছুই ছিল অনাদিঅতীতে।’ আহাআমাদের কী দৈন্যতাবুদ্ধিজীবিদের আকুলতাএখনকার তাদের উত্তরসূরীদেরই বা দোষ দেই কি করে আমরাভারত মুর্খদের দেশে পরিণত হয়েছে। ইউরোপীয়রা ভারতে মহানপ্রাচুর্যপূর্ণ সভ্যতা নিয়ে এসেছে। বিনির্মাণ ভারত আমাদের জরুরীপ্রয়োজন। আমাদের চলনবলনকালচারআচরণখাওয়া-দাওয়া সবই হতে হবে ইউরোপীয় আদলে। 
 অর্থ্যাৎ আমরা আধুনিক হবো অবশ্যই ইউরোপীয় ঢঙে। কেউ কেউ বলেন একহাতে ব্র্যান্ডি অন্যহাতে বাইবেল নিয়ে বালখিল্যবিপ্লবের মহড়া প্রদর্শন চলল কোলকাতার অলিগলিতেউচ্চারিত হতে লাগলরিফর্মরিফর্মআরও রিফর্ম। এমনকি বাঙলারআনাচে-কানাচে যে সকল খন্ড খন্ড  বিচ্ছিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধেব্রিটিশ অনুগামী ভারতীয়জ্ঞানীরা তাদেরকে সহযোগিতার বদলে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আখ্যা দিলেন পথভ্রষ্ট পথিক হিসাবেযেন অনেকটাই পথিক তুমি পথহারাইয়াছ‘ অবস্থার মতো। ব্রিটিশরা রিফর্ম আন্দোলনকে জোরদার করনের স্বার্থেসাধের ব্রিটেন থেকে আমাদানী করা ভারতনির্মানের তাত্বিক ভিত্তি রূপদানেবাঙলায় দলে দলে বরণ করে আনা হল ভারতকে প্রকাশ্যে তুচ্ছ-তাচ্চিল্য করে বিবৃতি দেওয়া ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি পোষ্য প্রখ্যাত ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবিগণকে। যারপর একটা ধারা  ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো যে ভারতকে বা বাঙলাকেগালাগালি করে যারা ইউরোপের পক্ষে সাফাই গাইবেনতারাই তিনিই রিফর্মিস্ট আন্দোলনের গুরুঠাকুর বা পুরোধা হবেন। বুদ্ধিজীবিহোক না বন্দী তবুও বুদ্ধিজীবি তোএভাবেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমরাই আমাদের সাংস্কৃতিক গণহত্যা প্রকল্পের বাস্তবায়নকরেছি তাদের সহযোগিতায় আর  কথায় কথায় ইংরেজী বলনে চলনেবাঙালী হয়েও হতে চেয়েছি বাঙালী ব্রিটিশ।

বত্রিশ বছর আগে,যখন আমি ( সৈয়দ হুসেইন আলাতাস) আমার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছিলাম (পিএইচডি) আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, আমি আমার মেধা সাম্রাজ্যবাদের ধারাবাহিকতা ইস্যুতে মানুষের ক্রিয়াকলাপের বিভিন্ন ডোমেনে আগ্রহ বাড়াতে চেষ্টা করেছি। যা প্রস্তাবিত হয়েছিল লন্ডন প্রকাশনা থেকে উপনিবেশবাদের অধীনে। শিক্ষার মূলত দিকনির্দেশনা ছিল বুদ্ধিজীবীদের সৃষ্টি, যারা শাসক গোষ্ঠী গঠন করেছিল,অনুসরণ করছেন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই বুদ্ধিজীবীরা হয়ে উঠেছিলেন প্রাক্তন শাসন ব্যবস্থাগুলি প্রতিস্থাপন করার সক্রিয় অংশীদার বা পরামর্শদাতা। ফলে আংশিক কি এই গ্রুপটির সাথে মারাত্মক সমস্যাটি তাদের সাথে শুরু করার বিষয়টি মনোভাব জটিল আকার ধারণ করে। কারণ তাদের চিন্তার পদ্ধতি, তাদের পাশ্চত্য ভাবাদর্শনের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই গোষ্ঠীর একটি সুসংহত চিন্তার ব্যবস্থা নেই, এবং তাদের বিশ্বাসগুলি, যেহেতু তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে সংশ্লেষ নাই এবং পশ্চিমা দর্শন দ্বারা চিন্তায় অর্জন করা। সেই হেতু একটি হীনমন্যতা অনুভূতি তাদের আচরণের মধ্যে অবশ্যই জড়িত থাকে। সাধারণ একটি ঐতিহাসিক সেটিং থাকে, যেহেতু এটি দেশ/ অঞ্চল দীর্ঘসময় ধরে অন্যের আধিপত্যবাদের অধীনে থাকে এবং সেদেশ বা এলাকার জনগোষ্ঠীর একটি অংশ মনে করে যে তাদের তাদের জীবনযাত্রায় দুর্বলতা থাকা সহজাত এবং প্রভাবশালীগোষ্ঠীকে বিবেচনা করুন তাদের শ্রেষ্ঠত্ব এবং শক্তি কারণে। এই অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে অসমতার জন্য তারা অনুকরণের নানবিধ উপায় অবলম্বন করে থাকে। এই গোষ্ঠীটির শ্রেণিবিন্যাস রাজনৈতিক ধারণার ভিত্তিতে নয় বরং তারা প্রগতিশীল বা প্রতিক্রিয়াশীলতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, উচ্চ এবং নিম্ন অর্থনৈতিক শ্রেণী, কর্মকর্তা এবং বেসামরিক নাগরিকরা (আলাতাস, ১৯৫৬)। 

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সরকার পদ্ধতি, আইন, ধারণা গণতন্ত্র, নির্বাচনের পদ্ধতি, কল্যাণের ধারণা এবং আরও অনেক ইস্যু অবৈধভাবে গৃহীত হয়েছিল এবং এর দ্বারা সমর্থন করেছিল প্রথমে অভিজাতদের তাদের বৈধতা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই তাদের শাসন করুন নিজস্ব সমিতি নিম্নলিখিত উপসংহার টানা হয়েছিল:

চিন্তার অবৈধ সংক্রমনের পুরো ঘটনাটি নিম্নরূপ-

উপনিবেশবাদের অসচেতনতা রাজনৈতিক নয় বরং সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। সুতরাং এর মধ্যে উপনিবেশবাদ আরও মৌলিক দিকগুলি একটি মৃতপ্রায় শক্তিতে পরিণত হওয়া থেকে  খানিকটা দূরে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে এ শক্তিগুলো শতাব্দী ধরে লালন –পালন হয়ে আসছে এবং এখনও সক্রিয়ভাবে সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে (আলাতাস,১৯৫৬ )।

এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং সত্যবাদী দলিল দেওয়ার জন্য আমার কাছে সময় এবং স্থান নেই।আমি নিজেকে কয়েকটি পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ করে রাখবো। সাম্রাজ্যবাদের ধারাবাহিকতা ভেঙে দেওয়া সত্ত্বেও এশীয় এবং আফ্রিকান স্বাধীনতার পরে রাজনৈতিক উৎসাহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দেশগুলিতে আগের ন্যায় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য অর্জন আরেকটি প্রচেষ্টা। যদিও সাম্রাজ্যবাদী প্রবণতা এই মুহুর্তে বহুমূখী সেটিংয়ের মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও পাশ্চাত্য শক্তির সাথে তাল মিলিয়ে অন্য আরেকটি শক্তি যা সাম্রাজ্যবাদকে পুনরুত্থান করতে চায় । আমি এখানে পুরো পশ্চিম সভ্যতাকে দোষারোপ করছি না যে, পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিস্থাপনের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই  ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানের বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ পশ্চিমা দেশগুলির সভ্যতার একটি মাত্রা, যা নিজেকে সবচেয়ে উন্নত, প্রভাবশালী, এবং শক্তিশালী হিসাবে সর্বাধিক প্রমানিত করেছে। এই সময়ে মানবজাতির গন্তব্যের জন্য এটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর বাকি অংশও পশ্চিমের কাছ থেকে সহায়তার উপর একটি উচ্চতর নির্ভরতা আছে। এটা সে কারনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বজুড়ে নির্দিষ্ট কিছু নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পূর্ববর্তী রাজনৈতিকের কিছু খারাপ প্রভাব স্থায়ি করতে পারে এমন উপাদানগুলি সাম্রাজ্যবাদের রূপ। এই নেতিবাচক উপাদানগুলির মধ্যে একটি হ'ল বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদ। রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের মতোই প্রথম কৌশলটি পরাধীন মানুষের আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা। তারপরে পরাধীনতা গ্রহণ করার জন্য তাদের জন্য কন্ডিশনার প্রস্তুত করা। বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ একই কাজ করে । যেমন সাম্রাজ্যবাদের গ্রহণযোগ্যতা হতে পারে।

অচেতন কন্ডিশনার, সুতরাং সাম্রাজ্যবাদ হিসাবে আধিপত্যবাদের চেষ্টা অনুভূত নাও হতে পারে। প্রচুর খ্যাতিযুক্ত চিন্তাবিদ এবং পণ্ডিতদের মতামত উদাহরণস্বরূপ যেমন বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ। পশ্চিমে উঁচুতে অবস্থান করা হয়, বাকি অংশগুলি বিশ্বের অবজ্ঞাপূর্ণ হয়। কিছু মতামত সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করা হয় অন্যরা অসতর্কভাবে উপস্থাপিত। বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের মূল বিষয় হ'ল অন্তর্নিহিত বর্ণবাদ বা নৃতাত্ত্বিক। এমনকি মার্কস এবং এঙ্গেলসের মতো বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের মধ্যেও বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণাত্মক ভূত ছিল এবং তারা অস্বীকৃতির জাতিসত্তার ধারণা থেকে মুক্ত নয়। রাশিয়ার বিপ্লবী চিন্তাবিদদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যেতে পারে। যেমন বেলিনস্কি এবং হার্জেন। বেলিনস্কি রাশিয়ার অবক্ষয়ের কারণ হিসাবে যা বলেছিলেন তা এশিয়াটিজমের কাছে এটি তারার দ্বারা খোদাই করার মতো। অন্যদের মধ্যে, প্রভাবশালী এই এশিয়াটাইজমের বৈশিষ্ট্য হ'ল দুর্নীতি, মানসিক অলসতা, অজ্ঞতা এবং স্ব ইউরোপীয়বাদের সাথে তুলনা করে এর সরাসরি বিপরীত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নিকৃষ্ট অ-ইউরোপীয় বিশ্বের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রাধান্য পেয়েছিল। এশিয়াটিজমে বিজ্ঞানের মধ্যে নিম্নমানের ছিল এবং প্রযুক্তির যে জোর ছিল তা কিন্তু সংস্কৃতি, ধর্ম, নৈতিকতা, এবং বুদ্ধি। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান প্রবণতা, যদিও আর প্রকাশিত নেই। অত্যন্ত টিকে থাকা অবিরত প্রভাবশালী চেনাশোনা একটি উদাহরণ ছিল যা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত মানবতাবাদী এবং নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী, আলবার্ট সোয়েইজার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তার অনেক কাজ অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল এবং অ-পাশ্চাত্য বিশ্বের নিকৃষ্ট আধ্যাত্মিকতা আছে বলে তা প্রচার করা হয়েছিল। যদিও তাঁর আশীর্বাদে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত করে বিশ্বব্যাপী সেসব ঔপনিবেশিক অঞ্চলে বিতরণ করা হয়। তিনি মারা যান ১৯৫৫ সালে যদিও নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন ১৯৫২ সালে এবং আরও বেশ কয়েকটি দেশের বিভিন্ন সরকারের শীর্ষস্থানীয় পুরষ্কারও তিনি পান। উপনিবেশবাদের সর্বাধিক পরিশীলিত ডিফেন্ডার ছিলেন শোয়েইজার। তাঁর কাছে উনিশ শতকের ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক প্রসার তাঁর কাছে নৈতিকতার দিক থেকে পছন্দের বিষয় ছিল।ঔপনিবেশিক সরকার গঠন করা হলেও, আদিম বা আধা-আদিম মানুষ জনেরা তাদের স্বাধীনতা হারায়নি। বরং সাদা মানুষের প্রথম নৌকায় যখন  মদ ও অস্ত্র এসে পৌছঁল তখনই তাদের স্বাধীনতা হারিয়েছিল। ফলে অশান্তি ও অন্যায় আর সর্বনাশ ঘটেছিল। সর্দার বা নেতা গোছের মানুষগুলো তখন পণ্যের বিনিময়ে মানুষ বিক্রয় করা শুরু করে দিল। শোয়েইজার তখনই এই সিদ্ধান্তে পৌছাঁন যে-"রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ঔপনিবেশিকরণে একটি সঠিক কাজ। কারণ বিকশিত মন্দকাজগুলো প্রতিহত করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখে। "

যদিও স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, তবে সমাজ সুরক্ষিত করার জন্য এটির স্থিতিশীল প্রয়োজন। শোয়েইজার মনে করেন যে, "একটি বিশৃঙ্খল সমাজে  মানুষ নিজেকে খুবই মঙ্গলজনক হিসাবে দাবি করে এবং তার মৌলিক অধিকার সংক্ষিপ্ত করা উচিৎ বলে মনে করে। " ঔপনিবেশিকরন  সবসময় জনকল্যান বয়ে আনে এরকম প্রচারনা চালানো হয় এবং এর মাধ্যমে সত্যিকারের সভ্যতা অর্জন করা সম্ভব বলে জনগনকে আশ্বস্ত করা হয়। বৈশ্বিক শিল্প পুঁজিবাদী নেটওয়ার্কের বদলে তাদের কৃষিক্ষেত্রের বিকাশ এবং লাভের লোভ ছাড়াই তা পরিচালনা এবং পণ্য উৎপাদন করা উচিৎ।

উপনিবেশিত মানুষজনদের বিরুদ্ধে করা নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারকে শোয়েইজার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন কিন্তু তাদের স্বাধীনতা দেওয়া কোন সমাধান ছিল না কারণ এটি তাদের নিজেদের মধ্যে দাসত্ব নিয়ে আসে। দুই দশক পর,  ১৯৪৮ সালে যখন স্বাধীনতার গুঞ্জণ শুরু হয়, মূলত বস্তুগত সুবিধার জন্য তিনি উপনিবেশবাদের পক্ষে ছিলেন না।  যদিও ঔপনিবেশিক আফ্রিকানদের জনকল্যানের স্বার্থে ঔপনিবেশিক শাসনকে তিনি সমর্থন করেন; দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারনে। প্রথমতঃ ইউরোপীয়দের সভ্যতার দায়ভার নিজের কাঁধে নেওয়া উচিৎ। এটি সত্য আফ্রিকা একটি শিশু। তিনি বলেছিলেন: "নিগ্রো হ'ল এক শিশু, এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগ ব্যতীত কিছুই করা যায় না। সুতরাং আমাদের অবশ্যই তাই দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতিগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদেরকে উপায় খুঁজে বের করতে হয়। আমি (শোয়েইজার) মনে করি সেই উপায় হলো- 'আমি তোমাদের (আফ্রিকানদের) ভাই, এটি সত্য,তবে বড় ভাই'। দ্বিতীয় কারণটি ছিল আফ্রিকানদের সহজাত বা জন্মগত ক্ষমতা হলো তাদের সরলতা এবং যৌক্তিকতা; কিন্তু তাঁর মধ্যে এই মহৎ অনুভূতি ছিল যা এখনও অবধি তারা তা বিশ্বাস করে আসছে। আফ্রিকানদের মুক্তি কেবল যীশুর ধর্মের উচ্চতর নৈতিক ধারণার অনুভূতির মাধ্যমেই সম্পাদন করা যায় যেতে পারে। 

এখন শোয়েইজারের অবশিষ্ট পৃথিবী, অ-পশ্চিমা এবং অ-আফ্রিকান জগৎ সম্পর্কে কী চিন্তাভাবনা তা আমরা অনুসন্ধান করতে পারি। প্রশ্নটি হলো- তিনি বড় ভাই না স্কুল মাস্টার? অবশ্যই তিনি স্কুল মাস্টার ছিলেন এবং তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী, জ্ঞানী ও মানবতার চূড়ায় আসীন একজন ব্যক্তি। আসুন আমরা তাঁর ইসলাম সম্পর্কে মতামত শুনি। তিনি আমাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, খ্রিস্টান ধর্মের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের সাথে ইসলামের মূল্যবোধের তুলনা চলেনা। তিনি যুক্তি হিসাবে উল্লেখ করেন যে, ইসলামে আধ্যাত্মবাদের মৌলিকত্বে অভাব রয়েছে এবং ধর্ম হিসাবে এটির ঈশ্বর ও বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা নয়। একেশ্বরবাদী শক্তি বিবেচনায় কিছুটা হলেও এটি একটি নৈতিক ধর্ম বটে, তবে এটি আদিম ধর্মীয় মন-প্রবৃত্তি সংরক্ষণ করেছে এবং এভাবে নিজেকে এশিয়া এবং আফ্রিকার অর্ধ সভ্য মানুষদের কাছে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে ফলে একেশ্বরবাদের এই রূপটি তাদের কাছে খুব সহজেই গ্রহণযোগ্যতা পায়। 

তিনি খিস্ট্রধর্মের তুলনায় বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মকেও একইভাবে নিম্নতর ধর্ম বলে গণ্য করেছিলেন। ভারতীয় মনের বৌদ্ধিকতা ছিল মেঘের মতো যা বৃষ্টি দেয়নি তবে একটি উত্তাল পরিবেশে গ্রাস করেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও বৌদ্ধধর্মের নীতি কেবল কথায় পৌঁছেছিল তবে তা কাজে নয়। শোয়েইজার মনে করেন যে, প্রকৃতপক্ষে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম ছিল একীভূত, যৌক্তিক, সামঞ্জস্যপূর্ণ, মনোবাদী এবং হতাশবাদী, তবে তাদের নৈতিকতা বিষয়বস্তু খুব কম ছিল এবং তাদের ঈশ্বর মারা গিয়েছিলেন বলে শোয়েইজার মনে করেন। 

শোয়েইজার যে প্রভাব ফেলেছিল তা কেউ এড়াতে পারে না একটি অনুপ্রবেশ বিশ্লেষণের আড়ালে বৌদ্ধধর্মের ক্যারিকেচার। কিভাবে আমরা বলতে পারি যে,ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সত্য এবং ন্যায়বিচারের কারণেই সেই সমস্ত বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সাধারণ মানুষ যারা আগুনে পুড়েছে তারা নিজেরাই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল।অন্যের মঙ্গল কামনা করে কি? তাদের কর্মটি কি অ-কার্যকলাপ ছিল? ভিয়েতসামের তীব্র রাজনৈতিক কোন্দলে জড়িত হয়েছে লক্ষ লক্ষ বৌদ্ধ যা সঠিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনুসরণে তাদের সমাজের কল্যাণের জন্য গুরুতর উদ্বেগকে নির্দেশ করে এবং এটি জীবনের প্রত্যাখ্যান নয়।

যাই হোক,অ-পাশ্চাত্যের সভ্যতা সম্পর্কে শোয়েইজার কী বলেছেন তা সমালোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয় বরং আমরা উদ্বিগ্ন বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের চিন্তার কাঠামো নিয়ে। বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদীদের কাঠামোটি দেওয়া হল। এই কাঠামোটি ভিত্তি হচ্ছে ৬টি উপাদান---

(১) অ-পশ্চিমা বিশ্বের সক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা সীমিত মানের; (২) এই সীমিত ক্ষমতা উন্মোচনের জন্য একটি গাইড/ নির্দেশনা প্রয়োজন যা পশ্চিমাদের হাতে আছে; (৩) একজন যুবক যেমন একজন বয়স্ক ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজী হয় ঠিক তেমনি অ-পশ্চিমা জগৎ, পশ্চিমা জগৎ হতে পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজি হওয়ার মতোই; (৪) অ-পশ্চিমা জগতের অজানা বা নতুন কিছুর পরীক্ষা করার ভার তাদের উপর ছেড়ে না দিয়ে পশ্চিমকে তা দেওয়া উচিৎ নয়; (৫) অতীতে প্রাচ্য যা অর্জন করেছিল তা অসম্পূর্ণ ও গুরুতর ত্রুটিযুক্ত ছিল, এবং (৬) অ-পশ্চিমা বিশ্বের মান প্রয়োগ করে পশ্চিমা বিশ্বকে পরিমাপ করা যায়না। কেবল পশ্চিমেরা নিজেরাই নিজেকে পরিমাপ করতে পারে। এটিই পশ্চিম সভ্যতা যা অন্যের সভ্যতা পরিমাপ করতে পারে।

উপরোক্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিটির কয়েকটি মূল স্তম্ভ রয়েছে। এই ভিত্তিসমূহের অস্তিত্ব ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, বিশেষকরে আঠারো শতক পরে বিভিন্ন প্রজন্মের দখলদারদের আশ্রয় দেওয়া। শোয়েইজার পড়ে আমার মনে পড়ল টমাস স্ট্যামফোর্ড র্যাফেলস (১৭৮১-১৮২৬) এর কথা,যিনি মূলত ঔপনিবেশিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন তবে শোয়েইজারের মতো দার্শনিক নন। যদিও উভয়ের চিন্তায় সাদৃশ্য আশ্চর্যজনকভাবে। ঔপনিবেশিক শক্তির ম্যাটেরিয়াল লাভ ব্যতীত  র্যাফেলসের উপনিবেশবাদের দর্শনের অন্যান্য উপাদানগুলি শোয়েইজারের মতোই ছিল। এই ধারাবাহিকতা উপনিবেশবাদের এমন একটি আদর্শিক স্তরকে প্রকাশ করে যা বিভিন্ন সময়কালে যারা ঔপনেবিশিক শক্তির পক্ষে ছিলেন তাদেরকেও ছাড়িয়ে যান। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের ভূত চলে গেলেও,শাসকদের মাঝে ঔপনেবিশক চিন্তার প্রেতাত্মা এখনো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রনাধীন এবং তা প্রজন্মান্তরে চলমান।

বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদকে অবশ্য বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব থেকে আলাদা করতে হবে,যদিও সেটা পরবর্তীকালে সাধারণত বিষযয়বস্তু হিসাবে বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদে পরিগণিত হয়। এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব সরাসরি বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের আওতায় আনা হয়নি। এটা হলো অ-পশ্চিমা বিশ্বের বন্দী মনের ঘটনা এবং এই ধরনের বন্দীত্ব স্ব-প্ররোচিত বা প্রণোদিত হয়। এই রকম বন্দিদশা, বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের বাস্তবায়নের জন্য খুবই মানানসই । 

সংক্ষেপে একে সঙ্গায়িত করা যেতে পারে যে, একটি বন্দী মন এমন একটি মন ,যা অনুকরণ করে এবং অসৃজনশীল তার চিন্তাভাবনা এবং জ্ঞানের পদ্ধতি পশ্চিমা ভিত্তিক। অর্থ্যাৎ শয়নে, স্বপনে ,বয়ানে পাশ্চাত্য ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেন না তারা।

উদাহরণে বলা যতে পারে -আমরা এক আলোচনায় বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের  এক অধ্যাপককে প্রশ্ন করেছিলাম-পশ্চিমা ছাড়া প্রাচ্য বিনির্মাণ সম্ভব কিনা? তিনি একেবারেই অসম্ভব বলে তৎক্ষণাৎ সায় দেন। এই হলো স্ব-প্ররোচিত বন্দীত্বের অপ্রতিরোধ্য ফলাফল। এটাই বিশ্বের অন্যান্য অংশের ন্যায় পশ্চিমা জগতের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাবের অগ্রগতি।ভারত তথা বাংলার দর্শন, ইতিহাস কতো কিছুই আমলেই নিলেন না।  এটি বন্দী মন তৈরি করেছে, যা উল্লেখযোগ্যভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে অ-পশ্চিমা বিশ্ব জুড়ে, এবং এরাই অর্থ্যাৎ বন্দী মননের বুদ্ধিজীবিগণ প্রাচ্য সমাজের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন দাপুটের সাথে। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তৃত এবং শক্তিশালী।  

বন্দী মন কি?

১. এটি দেশে বা বিদেশের উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি পণ্য, যার পাশ্চাত্য চিন্তাভাবনা অবৈধ পদ্ধতিতে অনুকরণ করে    

এবং এর দ্বারা প্রভাবিত হয়।

      ২. এটি অ-সৃজনশীল এবং আসল সমস্যা চিহ্নিত ও উত্থাপনে অক্ষম।

      ৩. এর চিন্তাভাবনাটি গতানুগতিক ধারার উপর উপর নির্ভরশীল।

৪. এটি নির্দিষ্ট সর্বজনীন জ্ঞান থেকে আলাদা করতে অক্ষম, এবং এর ফলস্বরূপ সর্বজনীন বৈধ কর্পাসটি নির্দিষ্ট স্থানীয় পরিস্থিতিতে জ্ঞানকে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়।

      ৫. এটি দৃষ্টিভঙ্গিতে খণ্ডিত হয়।

      ৬. এটি সমাজের প্রধান সমস্যা থেকে দূরে বা বিচ্ছিন্ন থাকে।

      ৭. এটি নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিক সাধনা থেকে পৃথক থাকে।

.      ৮. এটি নিজের মনের বন্দিত্ব দশা এবং এর কারণ সম্পর্কে অসচেতন থাকে।

.      ৯. এটি পরিমাণগত উপায়ে জানা যায় না বরং অভিজ্ঞতার আলোকে একে বুঝতে হয়।

      ১০. এটি বিশ্বের অন্যান্য অংশের উপর পশ্চিমা আধিপত্যের ফলাফল হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

 

বন্দী মনের নেতিবাচক প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে নতুন কিছু নির্দিষ্ট অনুসন্ধান বুঝা বা ব্যাখ্যা করা কিংবা সমস্যার উত্থাপন করার ক্ষেত্রে ধারণা তৈরি ও বিশ্লেষণ করার জন্য সৃজনশীলতার অনুপস্থিতি। সুতরাং,বিস্তৃত বন্দী মনের  উত্থান এশিয়ায় স্বাধীন সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশের ধারায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও এটি অ-পশ্চিমা সমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। 

সেটা ছিল স্বাধীনতার পর ভারত সম্পর্কে। স্বাধীনতার আগে, বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ রাজনৈতিক শক্তি লাইন ধরে পরিচালিত। 

সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নির্বাচিত বুদ্ধিজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রদর্শন বা ঢালাও মতামত সাম্রাজ্যবাদের শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে ইতিহাসের ব্যাখ্যা,বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাখ্যা এসকল ব্যবহার করে এই ভারতীয় উপমহাদেশ হিন্দুমুসলমানের এই বিভেদ সামাল দেওয়া সক্ষম হয়েছিল। এটি ছিল একটি সমাজতাত্ত্বিক বাস্তবতা যা পরম্পরাক্রমে ইতিহাসবিদদের দ্বারা উপেক্ষা করা হয়, বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে পড়াশোনা করেছিল। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কেউ কেউ কিছু ইতিহাস সচেতন ছিলেন এবং এ বিষয়ে সস্তা প্রচারণা চাচ্ছেন বলে অভিযুক্ত হওয়ার ভয়ে কিছু লিখতেন না। এতদসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ সহজ বিষয় নয় এবং দক্ষতার সাথে ডেটা প্রাপ্ত হওয়াটাও বেশ কঠিন। যেহেতু এসবের বেশিরভাগই গোপন প্রেরণার বিষয় এবং ছদ্মবেশযুক্ত ক্রিয়াকলাপগুলি পরিষ্কারভাবে ঐতিহাসিক উপকরণ হিসাবে গ্রহণ করা কঠিনও বটে।

বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের বাহিরে রাজনৈতিক নীতি প্রয়োগের ফলে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মূলে রাজনীতির ধারনা থাকে। জেমস মিল তাঁর তিন খণ্ডের History of British India গ্রন্থে ভারতীয় ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতা বীজ রোপন করে দ্বি-জাতিতত্বের ব্যাখ্যা করেন। তিনি ভারতীয় ইতিহাসকে প্রথমবারের মতো তিনভাগে ভাগ করেন যথাক্রমে - হিন্দু আমল, মুসলিম আমল এবং ব্রিটিশ সভ্যতার আমল। 

উনিশ শতকের ভারতে বইটির দুর্দান্ত প্রভাব ছিল। মিলস হিন্দু সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেও মুসলিম সভ্যতার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। রোমিলা থাপার মনে করেন প্রাচ্যবিদরা, পরবর্তীতে ভারতীয় ইতিহাসবিদরা হিন্দু সভ্যতার অতীতকে অতিরঞ্জিত করে বর্ণনা করেছেন যে সময় মুসলিম শাসনামল ছিল পতনের দিকে। মূলত এই সময়েই  হিন্দু ও মুসলিম নামে দুটি জাতির শাসনামলের বিবর্তনের বর্ণনা শুরু হয়েছিল বলে রোমেলা থাপার মনে করেন। সুতরাং, ভারত বিভক্ত ছিল যৌক্তিক পরিণতি।

এতক্ষণ আমরা বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি একটি জাতির মনকে একসাথে তার অতীতের দিকে ধাবিত করে। ফলাফল হয় বন্দী মনের উত্থান। ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গের বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদকে যেমনটা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তেমনভাবেই আজকের দুনিয়ায় বিভিন্ন আকারে একটি ক্লাস্টার হিসাবে এটা বিরাজ করছে। জোহান গাল্টং বৈজ্ঞানিক উপনিবেশবাদ হিসাবে একে আলোচনা করেছিলেন এবং "একটি প্রক্রিয়া হিসাবে অভিহিত করেছেন।

"গ্যাল্টাং একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদকেও উল্লেখ করেছিলেন। তিনি অর্থনৈতিক সামাজ্র্যবাদকে সমান্তরাল ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। উপনিবেশগুলি থেকে কাঁচামাল উত্তোলন ও সংগ্রহ করে এবং তা হতে ফিনিশ্ড প্রোডাক্ট/ উৎপাদিত পণ্য হিসাবে আবার ঔপনিবেশিক অঞ্চলে ফেরত পাঠানো হয়। লাতিন আমেরিকায়, আলোচিত বুদ্ধিবৃত্তিক উপনিবেশবাদের উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন সেনা বা গবেষণার জন্য তহবিল সংগ্রহের প্রকৃত প্রচেষ্টা। এ নিয়ে যথেষ্ট সাহিত্য রয়েছে। যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের আগ্রহ-মনের আধিপত্য, চিন্তা কাঠামো, এসব ধারণার গবেষণা এবং দেশের বাইরে থেকে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করা। পশ্চিমা বিশ্বের সাহিত্যের  পাঠ যা মনের বন্দীকে প্ররোচিত করতে পারে অবিচ্ছিন্নতাভাবে যদি  অ-পশ্চিমা পাঠক এ বিষয়ে সতর্ক না হোন।  পশ্চিমা লেখকগণ এগুলো সচেতনভাবে মনকে ঔপনিবেশিক করতে চায় এবং এশিয়া বা  আফ্রিকার পণ্ডিতেরা,  এসবের খপ্পরে পড়ে বিচার করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। সম্ভবত এটি নিজ সমাজ, সংস্কৃতি বা জনগন সম্পর্কে অধ্যয়নে একটি শক্তিশালী কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে , যা কখনো মঙ্গলজনক হিসাবে বিবেচিত হতে পারেনা। 

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নকালে দেখেছি (সৈয়দ হুসেইন আলাতাস) যে, ম্যাক্স ওয়েবারের মতো লেখক, তাঁর সমাজতাত্ত্বিক লেখায়, ওয়েবার এরকম অনেকগুলি ধারণা তৈরি করেছিলেন। একটি উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে, ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্বের ধারণা এবং পরবর্তীতে ক্যারিশম্যাটিক অথরিটিকে একটি নির্দিষ্ট গুণ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হিসাবে যা তাকে অসাধারণ বলে বিবেচনা করে তিনি একে আমলাতান্ত্রিক অথরিটি হতেও আলাদা করেন। তাঁর মতে- আমলাতান্ত্রিক অথরিটি যৌক্তিক হলেও ক্যারিশমাটিক অথরিটি আবেগী। 


 

অধ্যায় তিন

বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তি

সময় এসেছে অঙ্কে কিছু নতুন করে ভাবার। 'মানুষের' ধারণাটি জরুরিভাবে পুনর্নিধারণ করা প্রয়োজন। র্যাডিকাল বায়ো-টেকনোলজিক্যাল বিকাশের সময়ে এবং আমাদের বয়সের রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বিকাশের আলোকে 'মরণোত্তর' শব্দটি একটি বিকল্প সরবরাহ করে। মানুষের সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসাবে যে দার্শনিক আড়াআড়িটি বিকশিত হয়েছে সেগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্দোলন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: মরণোত্তর, ট্রান্স-হিউম্যানিজম, অ্যান্টি-হিউম্যানিজম এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড অন্টোলজি। এই বইটিতে আমরা বাংলাদেশ থেকে একটি প্রসঙ্গমুক্ত, মানব সামাজিক স্কাইসিনের আহ্বান জানাই। এটি, বৃহত্তর পরিমাণে, ফ্রান্সেস্কা ফেরান্দোর "দার্শনিক উত্তরোত্তরবাদ" এর সাথে পৃথক। ফ্র্যান্সেস্কার বইটিতে এই স্রোতের মধ্যে সাদৃশ্য ও পার্থক্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং নৃবিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানুষের ডিকনস্ট্রাকশন সহ "মরণোত্তর" ছাতার অধীনে থাকা বিভিন্ন বিষয়গুলির বিশদ পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে, তবে স্থানীয় লোকজনকে সম্বোধন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্রান্সেসকা ফেরান্দো দার্শনিক উত্তরোত্তরবাদের প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করেছেন, মধ্যস্থতার একটি দর্শন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যা মানবতার অর্থকে বিচ্ছেদে নয়, প্রযুক্তি এবং বাস্তুবিদ্যার সাথে সম্পর্কিত করে। বি এম মাতিলালকে অনুসরণ করে আমরা মনে করি এটি পূর্ব এবং পশ্চিমের সীমানা নির্ধারণের বেইস লাইন। যেখানে উত্তর-পরবর্তী পদক্ষেপে সামাজিক পরিবর্তন, দায়বদ্ধ বিজ্ঞান এবং বহুবিধ সহাবস্থানকে আহ্বান করা হচ্ছে, সেখানে আমরা অন্য সত্ত্বা, বিশ্বাস এবং অবশ্যই একটি সীমাহীন সর্বজনীন পরিচয় বদলের আহ্বান জানাই।[xxxvii]

আমরা এখানে আশাবাদের একটা বিষয় বা আত্মতৃপ্তি জায়গা থেকে বলতে চাই যে, ঐ সময়ে এই পরিচয় বদলানোর কাজটা করতো কে? আর প্রতিবাদের হালটাই বা কে ধরতো? কারণ, তৎকালীন সময়ে অধিকাংশ বাঙালির আর্থ-সামাজিক প্রতিপত্তি নির্ভরশীল ছিলকোম্পানীর উপর তাই ব্রিটিশদের এই তত্ব অবিশ্বাস করলেওব্রিটিশদের তত্ব বা তথ্যের সরাসরি বিরোধিতা করার সাহস ছিলোনাঅর্থনৈতিক কারনে ঘৃণাপূর্ণ মেকলেবাদের দাসত্ব প্রকল্পের বিপক্ষে যাওয়ার ক্ষমতা ছিলনা তাদের বাস্তবিক কারণ বিবেচনায়। যেখানেআজকালকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাই যখন আজকের যুগেই পাশ্চাত্য ছাড়া ভাবতে পারেনাতখন সেই সময়ের ব্রিটিশপদ্ধতিতে শিক্ষিত ভারতীয়রা কথায় কথায় পিথাগোরাসআরকিমিডেসগ্যালিলিও বা নিউটনে আপ্লুতকিন্তু পাণিনীআর্যভট্টখনাভাস্কর বা বরাহমিহিরের কৃতির কথা জানবেন না এটাই স্বাভাবিক। পাশ্চাত্য দর্শনে আত্মমগ্ন হয়ে থাকা জলে ইংরেজি শিক্ষিতভারতীয়রা যুবকরা বৌদ্ধ দর্শণজৈন মিমাংসা বা অন্যান্য ভারতীয় দর্শন সম্বন্ধে জানবনে নাএটাই সমীচীন নয় কি
 আমরা পাই যে –‘দ্বারকানাথ আদর করে মেকলেকে বেলগাছিয়া ভিলায়লখনৌ থেকে নিয়ে আসা নাচবালাদের নৃত্য দেখাচ্ছেনআর তথাকথিত গুমোটনোংরাসাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানীর মফঃস্বল এক শহরে বসিয়ে দামি দামি ইংরেজি মদ্য আর সুরা পানকরাচ্ছেন।একে ইংরেজ দৌর্দন্ড প্রতাপ সিভিল সার্ভেন্টতাও আবার বেন্টিঙ্কের স্নেহধন্যতার ওপর ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিতবাঙালিদের ভাষায় ইম্পেকেবল পারিরারিক রেকর্ডধারী। মেকলে তৎকালীন মধ্যবিত্ত বাঙালির ব্রিটিশ শিক্ষা পদ্ধতিতে ইংরেজিমাধ্যমে পড়ার সাধ মিটিয়ে দিয়েছিলেন কড়ায় গন্ডায়। সেই বোঝা আজও বয়ে চলেছে বাঙালী সমাজে। 
মেরেছ কলসির কাণা তাই বলেকী প্রেম দেবনা! তাঁর ভারত সংস্কৃতির প্রতি শতবিদ্বেষপূর্ণ মিনিট পড়েও সেই সময় বাঙালি রেনেসাঁরপ্রতিভূদের প্রতিবাদ করার সাহস হয়নি।  প্রায় সকলেই  নতমস্তকে গিলেছিলেন সেইসব ঘৃণাপূর্ণ সুমধুর বাণীগুলি। সেইমত ভাবানোহয়েছিল বটে। ইংরেজ আমলের ভারতের মুক্তিদাতারূপে খ্যাত রামমোহনএমনকি তাঁর শিষ্য দ্বারকানাথ তো সরাসরি সে মতোনইভাবতেন। পরে যে তত্ব প্রায় বিশ্বাস করে বসেছেন বাঙলার কয়েক সহস্রাব্দের সাধনায় গড়ে তোলা সার্বজনীন শিক্ষার পথভেঙে,আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন মুষ্টিমেয়দের জন্য ইংরেজি শিক্ষার পথ গড়ে দেওয়া নমস্য বিদ্যাসাগরও। আজও শহুরে বাঙালি সেইতত্বেই বিশ্বাসপাত্রটি স্থাপন করে বসে আছে বৈকি।

বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা উৎপন্ন সমস্যার প্রকৃতি থেকে, এটা স্পষ্ট যে বুদ্ধি মুক্তির আন্দোলন করা উচিৎ। এখানেও আমাদের কলোনিয়াল অতীত ও বর্তমান অবস্থার সমান্তরাল অবস্থান সক্রিয় বিবেচনায় আনা উচিৎ।  আমরা খেয়াল করেছি যে, আমরা নর্থ আমেরিকান বা ইউরোপীয়ান  সহকর্মীর জ্ঞানের বহরের প্রতি  যে নজর তার সিকি ভাগও নিজ দেশ বা বিভাগের সহকর্মীর কাজকে মূল্যায়ন করিনা, যে যতই ভালো কাজ করুকনা কেন? এটাকে কি মনের বা বিবেকের বন্দীত্ব বলে আখ্যায়িত করবোনা? তবে সামাজিক বিজ্ঞানের দিকনির্দেশনায় স্বায়ত্বশাসনের পুনর্গঠন বা স্বতন্ত্র ঐতিহ্য দেখা যেতে পারে। 

পরিশেষে আমরা আশ্বস্ত করতে পারিযে, বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্বের আলোচনার মধ্যে আমরা এশিয়ান ও আফ্রিকান সমাজের প্রাসঙ্গিক আলোচনার উত্থাপন করেছি যা কতক বিষয়ে মনোযোগ আকষর্ণের স্থানচ্যুতি ঘটেছে বলে মনে করি। ঔপনিবেশিক সময়ে নৃতত্ত্ববিদদের দ্বারা জাতিগততার বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। আমি ( সৈয়দ হুসেইন আলাতাস) কমপক্ষে আটটি বিষয় ভাবতে পারি যা তৃতীয় বিশ্বের গুরুত্ব সহ[xxxviii] কারে অধ্যয়ন করা উচিৎ। সেগুলি হ'ল-(১) জাতি  ও কর্পোরেট অপরাধ; (২) জাতি এবং আমলাতান্ত্রিক নেপোটিজম; (৩) জাতি এবং কৌতূহল; (৪) জাতি এবং রাজনৈতিক অপকর্ম; (৫) জাতি ও দুর্নীতি; (৬) জাতিগত অবক্ষয়; (৭) জাতি এবং অপারেশনাল আদর্শবাদ; এবং (৮) জাতিগত এবং ব্যক্তি দমন। উন্নয়নশীল দেশে সাম্রাজ্যবাদ হতে বুদ্ধিবৃত্তির শেকল থেকে মনের মুক্তি ঘটানোর জন্য শর্ত হলো সৃজনশীলতা এবং স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক বিজ্ঞানের ঐতিহ্যের বিকাশ ঘটানো। যারা বুদ্ধিবৃত্তিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকে মেনে নিতে দ্বিধা বোধ করেন, তাদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে স্বাগতম, সাম্রাজ্যবাদী বুদ্ধিজীবিগণ তা করবে না। 



 

 

 

 

 

 

 টীকা ও তথ্য তালিকা

[i] (১৯৭২পেইজ)

[ii] James S. Duesenberry, Income, Saving and the Theory of Consumer behaviour, Cambridge, Mass., Harvard University Press, 1949. পেইজ ২৬-২৭

[iii]Gunnar Myrdal. Econimic  Theory and Underdeveloped Regions. p. 98-104. London, Duckworth. 1959; 

C. Furtado. Development and  underdevelopment. p. v. Berkeley. Calif•• University of California Press, 1967; and Ralph Pieris. "The Implantation of Sociology in Asia', International Social Science Jolll7lll1, Vol. XXI, No.3. 1969.  

[iv]Kapp, K. W. (1965). Economic development in a new perspective: existential minima and substantive rationality. Kyklos18(1), 49-79.

[v] ১৯৭১পেইজ ১১

[vi]Firth, R. (2006). Malay fishermen. Routledge. (১৯৪৬ মুল প্রকাশ

[vii]Kennedy, R. (1946). Malay Fishermen: Their Peasant Economy. Pacific Affairs, University of British Columbia is collaborating with JSTOR to digitize, preserve and extend access to Pacific Affairs, https://www.jstor.org/stable/pdf/2752460.pdf?casa_token=I7dQzHutpJQAAAAA:9_oKkEIPSloJrl0TFhcFJsQIbQCEvQoy53qgVz_GKF25FWho3LXPtcaKmIpu1zDCiCLUigm9E0psxtSiE8kAnsBWmaw1DUjzM3tiPEAIZ5DSiJl-EOZstQ পেইজ ৪২৭)

[viii]Alatas, S. H. (2013). The Myth of the Lazy Native: A Study of the Image of the Malays, Filipinos and Javanese from the 16th to the 20th Century and Its Function in the Ideology of Colonial Capitalism. Routledge.

[ix]Firth, R. (2021). Housekeeping among Malay peasants. Routledge. এটা আসে ১৯৪৭ সালে।

[x]Alatas, S. F. (2000). An introduction to the idea of alternative discourses. Asian Journal of Social Science, 28(1), 1-12; Meghji, A. (2021). Decolonizing Sociology: An Introduction. John Wiley & Sons; Gukurume, S., & Maringira, G. (2020). Decolonising sociology: perspectives from two Zimbabwean universities. Third World Thematics: A TWQ Journal, 5(1-2), 60-78; Tonono, S. (2020). “Let Us Make Men in Our Own Image”: The Mission Station as a Site of Black Emasculation in Nineteenth-century South Africa. Journal of Asia-Pacific Pop Culture, 5(2), 171-190; Alatas, S. M. (2021). 15 A critique of the Indo-Pacific construct. Asia and Europe in the 21st Century: New Anxieties, New Opportunities; Moosavi, L. (2019). Decolonising criminology: Syed Hussein Alatas on crimes of the powerful. Critical  Criminology, 27(2), 229-242.

 

[xi]Schiebinger, L. L. (2009). Plants and empire. Harvard University Press.

[xii]Alatas, S. H. (2000). Intellectual imperialism: Definition, traits, and problems. Asian Journal of Social Science, 28(1), 23-45. আমাদের  দ্বিতীয় অধ্যায়ের আলোচনা এই প্রবন্ধ থেকেই।

[xiii]Alatas, S. F. (2019). Alatas, Fanon, and Coloniality. In Frantz Fanon and Emancipatory Social Theory (pp. 27-46). Brill.

[xiv] …[ Linnaeus] obsession with naturalizing tea in Sweden. He clung to the conviction that tea grows as far north as Beijing and believed he could cultivate it in Sweden; he had some brief success with a plant brought from China in 1763 by the Swedish East India Company captain Carl Gustaf Ekeberg (1716-84) দেখুনCook, A. (2010). Linnaeus and Chinese plants: a test of the linguistic imperialism thesis. Notes and records of the Royal Society64(2), 121-138. পেইজ ১২৪।  

[xv]Fortune, R. (1852). A Journey to the Tea Countries of China: Including Sung-Lo and the Bohea Hills; with a Short Notice of the East India Company's Tea Plantations in the Himalaya Mountains. London: J. Murray.

[xvi]Goodman, J. (2020). Planting the World: Joseph Banks and His Collectors: an Adventurous History of Botany. HarperCollins UK. এছারাই সকলের ইতিহাস নিয়া আলাদা লিখা গ্লের মত দেখা হায়; George, S. (2017). Botany, sexuality and women’s writing 1760–1830: From modest shoot to forward plant. Manchester University Press; Fara, P. (2004). Sex, botany and empire: The story of Carl Linnaeus and Joseph Banks. Icon Books.

[xvii] তিনটি জিনিস রয়েছে যা পুরুষদের যুগে যুগে যুগে যুগে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে ভ্রমণ করতে উত্সাহিত করেছিল এবং এগুলি ' সোনারমশলা এবং ওষুধ। এটি দুটি উত্তরোত্তর মানুষের এই সর্বজনীন প্রয়োজনগুলির মধ্যে আমরা বোটানিক উদ্যানগুলির উত্স এবং ভিত্তি সনাক্তকরতে পারি। Hill, A. W. (1915). The history and functions of botanic gardens. Annals of the Missouri Botanical Garden, 2(1/2), 185-240.

[xviii]Taylor, P. (2008). Oxford companion to the garden. Oxford University Press; Campbell, G. (2019). Garden History: A Very Short Introduction. Oxford University Press.

[xix]Pratt, M. L. (2007). Imperial eyes: Travel writing and transculturation. routledge.

[xx]Singer, M. B. (1972). When a great tradition modernizes: An anthropological approach to Indian civilization. Pall Mall.

[xxi]Ramanujan, A. K. (1989). Is there an Indian way of thinking? An informal essay. Contributions to Indian sociology23(1), 41-58.

[xxii]Worboys, M. (1996). British colonial science policy, 1918-1939; Mills, D. (2005). The Rise and Fall of the Colonial Social Science Research Council, 1944–1962. Empires, nations, and natives: anthropology and state-making, 135. Mills, D. (2006). How not to be a “government house pet”: Audrey Richards and the east African Institute for Social Research. African Anthropologies: History, Critique and Practice. London/Dakar: Zed/CODESRIA, 76-98.

[xxiii] Note 45, Walter et al., p.11

[xxiv]Rashid, S., & Shafie, H. A. (2017). Situating Anthropology in Bangladesh: Transformations and Trajectories in the Anthropology Tradition. European Journal of Sociology and Anthropology2(1), 03. পেইজ ৩।

[xxv]Zysk, K. G. (1992). Religious medicine: The history and evolution of Indian medicine. Transaction Publishers; Zysk, K. G. (1998). Asceticism and healing in ancient India: medicine in the Buddhist monastery (Vol. 2). Motilal Banarsidass. আঘ্রহিরাচাইলে আরো দখতে আপ্রেন; Johnson, M. R. (2018). The unpredictability of gameplay. Bloomsbury Publishing USA.

[xxvi]Kakar, S. (1991). Shamans, mystics and doctors: A psychological inquiry into India and its healing traditions. University of Chicago Press.

[xxvii]Latour, B. (1988). The pasteurization of France. Harvard University Press, দেখুন পাইজ 

[xxviii]https://www.anandabazar.com/editorial/narendra-modi-trying-hard-to-win-bengali-sentiment-1.1259927আজবনাগ্লাদেশ কী লিখবআত্মত্যাগ করে আত্মদান করতেই হবেআমরা পাশের দেেের একটা রাজনীতি বিষয়ক রেফারেন্স দিলাম বলে মনেকরারা কারণ নাই জেএটা কেবল ভারতের চিত্র। মিয়ানমার তো একই টটালিতারিয়ায়ন দেশ। নর্থ কোরিয়া। আরজানিনা বিজ্ঞ পাঠক।আমারা সামাজিক বিজ্ঞানীরাজনিত বিদ  নইরাজনীতি বিশেশজ্ঞ নই।  

[xxix]Matilal, B. K. (2005). Epistemology, logic, and grammar in Indian philosophical analysis Oxford,  পেইজ , 2017 তেআবার রিপ্রিন্ত হয়।

[xxx] সাম্প্রদায়িকতার কাহিনিতে রবীন্দ্রনাথ – দুর্ভাগাগুরুবর!’https://abahaman.com/abahaman/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4/

[xxxi]Chattopadhyay, D. (1986). History of science and technology in ancient India. Firma KLM, Calcutta.

[xxxii]Matilal, B. K., Ganeri, J., & Tiwari, H. (Eds.). (1999). Character of Logic in India, The. SUNY Press. থেকে নিচ্ছিপেইজ১৪।

First, certain epistemological issues are found to be included in the discussion of what we wish to call "Indian logic." The reason is obvious. Indian logic is primarily a study of inference-patterns, and inference is clearly identified as a source of knowledge, a pramäna. So the study includes general questions regarding the nature of the derivation of knowledge from information supplied by evidence, which evidence may itself be another piece of knowledge. Epistemological questions, however, are deliberately excluded from the domain of modern logic. 

 

Second, to a superficial observer, discussion of the logical theories in India would seem to be heavily burdened with psychologistic and intuitionistic terminologya feature which, since Frege, logicians in the West have tried carefully to weed out from modern logical discussions. Yet the role of psychology, how one mental event causes another mental event or events and how one is connected with the other, seems to be dominant in the Indian presentation. 

 

The Indians psychologized logic, but perhaps without totally committing the blunder into which an emphasis on psychology may often lead. Thus one may claim that they psychologized logic, without committing the fallacy of psychologism. Alternatively, the claim could be that this was a different conception of logic, where the study of the connections between mental events and the justification of inferentially-acquired knowledge-episodes is not a fault (for a development of this idea, see Matilal 1986, §4.7)

[xxxiii]Kapila, S. (2007). Race matters: Orientalism and religion, India and beyond c. 1770-1880. Modern Asian Studies, 471-513.  আমরা জানিরাজান্রাম মহ্ন্রায়ের এই চিঠি অনেকের কাছে আনাড়ি লাগবে। শ্রুতি কাপিলার লিখা থেকে শুনুনঃ তিনি রাজা রামমোহনরায়ের মাধ্যমে এই দশটি খুলি সংগ্রহ করেছিলেন যিনি সরাসরি খুলির মাথার খুলিতে গিয়েছিলেন এবং গবেষকদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে'আরওপ্রেরণে আগ্রহী ছিলেন বলে প্রকাশ করেছিলেন (পেইজ৪৮৭) এবং সেখানে শ্রুতি রেফার করেতছেন5 Letter from Ram Mohan Roy to George Murray Paterson, o10 March 1822, cited in Paterson, 'Phrenology', Phrenological Transactions, 

[xxxiv] শ্রুতি কাপিলা থেকে পড়ছি;  The Society's executive body included mixed-race men from the lower end of the imperial hierarchy such as John Matthew Dove and many others who belonged to the commercial world such as the merchant William Carr of the Union Bank and a later partner in the prominent agency house Carr, Tagore [Dwarkanath]…পেইজ ৪৮৯

[xxxv]Gould, S. J. (1994). The Geometer of Race. Discover.

[xxxvi]Richards, R. J. (2000). Kant and Blumenbach on the Bildungstrieb: a historical misunderstanding. Studies in History and Philosophy of Science Part C: Studies in History and Philosophy of Biological and Biomedical Sciences, 31(1), 11-32.

[xxxvii]Ferrando, F. (2019). Philosophical posthumanism. Bloomsbury Publishing.

মূল ঃ  সৈয়দ  হুসেন  আলাতাস 


অনুবাদ ঃ জাহিদ সিরাজ ,  পরিমল রায়  ও  অধ্যাপক মকবুল মোরশেদ