এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বয়ান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
বয়ান লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হুজুরের বয়ানগুলো বদলে গেলো কেনো -৩

আমার বেড়ে উঠা আর চিন্তার বসবাসের সাথে আপোষ করে চলতে হয়। চাঁদলোকে মানুষের প্রতিচ্ছবি কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যখন ছোঁকড়া গুলো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, তখন মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের কানে পৌছানো বয়ানগুলো কি আসলেই আমলে নেয়ার মতো নাকি তত্ত্বের আলোকে অপাঙতেয় তথ্য? কোনটা

প্রচলিত কোন ব্যাখ্যা নয় বরং সহজিয়া দর্শনের আলোকে এ সকল বয়ানের রূপ ও প্রকৃতির বিবর্তন কেমন হয়েছে তা বুঝতে ও বুঝাতে চেয়েছি। বাউল ফকিরের দর্শন 

                     কী করতে চায়,

                    কেন করতে চায়, এবং 

                     কিভাবে করতে চায় 

প্রশ্ন তিনটি অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। কেননা, আমরা ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে সমাজকে দেখতে ও ব্যাখ্যা করতে চাই। বিপত্তিটা এখানেই গোল বাধে। কিন্তু না; সমাজের আলোকে ধর্মীয়গ্রন্থকে দেখতে হবে। এই যে দেখা এবং দেখানোর ফারাক এতো বেশী যাকে বলে আমরা প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। যেটি সমাজ ও ধর্ম কোনটার জন্যই শুভকর নয় বা হিতকর কিছু বয়েও  আনে না। 

ভারতীয় দর্শনের মোদ্দা কথা হলো নিজেকে খোঁজা “Philosophy of Sought।“ যেটিকে সক্রেটিস অনেকপরে বলেছেন-“Know thyself”. সক্রেটিস ভারতীয় দর্শন থেকে ধার করে বলেছেন কিনা সেটি গবেষণার বিষয়। কেবল নিজেকেই নিরন্তর খুঁজে ফিরলেই আমরা সত্যের সন্ধান পাবো।

আমরা ভাবি কেন তাদের যুক্তিগত দর্শন আর ইতিহাসে গভীর দখল নাই, যা প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাতেও কৌশলগত অবস্থানও নেই। পন্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন বলেছিলেন-“ধর্ম ও জ্ঞানে” এদেশে বিরোধ ঘটেনি। এ উক্তি বোধ হয় একালে আর খাটেনা। বয়ানের মধ্যে দিয়ে আর আস্ফালনের মাধ্যমে তা প্রমানিত হয়েছে। অথচ দেখুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই ধর্মমতের সমর্থক ও প্রচারক; কিন্তু বলে গেছেন মানুষে মানুষে ঝগড়া বাঁধায় না ধর্ম বরং মিলন ঘটায়। 

আমরা ভারতীয় দর্শন পড়বোনা, লালন পড়বোনা, ইতিহাস পড়বোনা, প্রাচীন ধর্মগুলোর মুল ধর্মগ্রন্থগুলো পড়বোনা, কেবল চিল্লাচিল্লি করবো শান্তি স্থাপনে, সংঘর্ষের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবো- এও  কি সম্ভব? “গভীর নির্জন পথে” পড়তে পড়তে আমরা সমাজের গভীর সংকটের দিকে মনোযোগ আকর্ষন করছি। 

বাউলদেরকে শাস্ত্র বা ধর্মবিরোধী বলে মনে করা হয় ঊনিশ শতকে। এ সময়ে বা এ শতকে নদীয়া, যশোহর  উত্তরবঙের শরিয়তী মুসলমানদের সঙ্গে “ইসলাম ধর্মের একদল ব্যাখ্যাকারী জানালেন যে ইসলামে গান গাওয়া জায়েজ নয়।” বাউলদের গানের আসরে তার দাঙ্গা বাধালেন। আলেম সম্প্রদায়ের নির্দেশে বাউলদের উপর নানারকম নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু হলো এবং তারা বাধ্য হয়ে আত্মগোপন করলো। এই সময়ে মূলত: বাউলরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে লাগলো। অথচ এমনটা হওয়ার কথা না। ফলাফল এখানে একটা বড় রকমের বিবাদ দেখা দিলো। কারণ ধর্ম আচরনে  যখন সীমাবদ্ধ থাকে, তখনই সমস্যা হয়; অথচ ধর্মকে বুঝতে হয় উপলব্ধি দিয়ে। নইলে বিবাদ দেখা দেয়। আর আজকের সময়েও এই বিবাদের কারণে বেঁচে থাকাই যেন দায়।

ফকির বা বাউল আন্দোলনের মাঝে ক্ষমতা দখল বা চর্চা করার অভিলাশ বা অভিপ্রায় আমরা খুঁজে পাইনা। তারা কেবল তাদের গান বাজনা আর আধ্যাতিকতার চর্চা নিযে ব্যস্ত আর নির্বিঘ্নে সময় কাটাতেই ভালোবাসে। অথচ হালনাগাদ বয়ানগুলো দেখুন। ক্ষমতা চর্চা বা দখল কিংবা ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করাই যেন বয়ানের মূল কাজ। কিন্তু এমন টা হবে? কবি নীরব এখানে। রাষ্ট্র এক পরাক্রমশালী এনটিটি তা কি বয়নকারীরা ভুলে গেছে? রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হবে রাজনীতি দিয়ে; বয়ান দিয়ে নয়।

২৪/০৪/২০২১ খ্রিস্টাব্দের ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশ যে, “যাত্রবাড়ি হতে কাঁচপুর ০৮ কি.মি. রাস্তায় ৬৮টি কওমী মাদ্রাসা। অথচ এখানে মাত্র ৪৭টি বিদ্যালয়। অধ্যাপক আবুল বারাকাত দেখান যে ১৯৫০-২০১৮ পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসা ৪৪৩০ থেকে ৫৪১৩০ এ বৃদ্ধি পেয়েছে। কওমি ১৩ গুণ আর আলিয়া ১১ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে এই ৬০ বছরে। 

মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধের পক্ষে আমি নই; তবে কেন সেখানে যুগোপযুগী বা বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে নাএখানেই আমার আপত্তি। কেন মুক্ত বুদ্ধির চর্চা বাড়ানো হবেনাএটা আমার সাধারণ জিজ্ঞাসা? মাদ্রাসাগুলোয় ধর্মীয় বিষয় পড়াশোনা করানো হলেও বিজ্ঞান আর যুক্তিবিদ্যা/দর্শনের মতো মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে কেন দেয়া হয়না। কেন নিজেকে খুঁজতে নিরন্তর প্রেরণা দেওয়া হয় না? কেন? ধর্মীয় তত্ত্ব বা তুলনামূলক ধর্ম বিজ্ঞান পড়ানো হয় না? কেন ক্রিটিক শেখানো হয়না? এসকল প্রশ্ন কেন অপাঙতেয় এখানে? সমাজের আলোকে যৌক্তিক প্রশ্ন করাতে শিখানো হয় না কেন? কেন বলা হয় না-পৃথিবীতে কেবল যোগ্যতমরাই  টিকে থাক। যোগ্য হও, সামনে এগিয়ে যাও কিন্তু তোমার পিছনের ইতিহাস ধর্মকে ভুলে নয়। এতো যখন সীমাবদ্ধতা। তখন ফলাফল কি হবে তা সহসাই অনুমেয় করা যায়। বয়ানকারীরা অবৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক করে, বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে আজগুবী তত্ত্ব, তথ্য। 

উদাহরণে শতশত বয়ানের কথা বলা যায়। ইউটিউব শুনলে কিংবা শুক্রবারের কানখোলা রেখে ব্যালকনিতে দাঁড়ালে যা শোনা যায় তা এক কথায় প্রকশের ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। ধরণ C-19 বিষয়টাকে বয়ানকারীরা তাদের বয়ানের মাধ্যমে ফাজলামিতে পরিণত করেছে বিনোদনের খোরাক হিসেবে। স্থুল অনুবাদ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গী বলে তুলনা করে-নিজের দেশ, পাত্র কালহীন এক নির্বোধ জ্ঞানী বলে পরিচিতি লাভ করেছে সেই বয়ানকারী। স্বাভাবিকভাবেই এগুলো আমরা শুনি কেন প্রশ্ন আসে। ইউটিউব বা পাবলিক আসরে? এখানে অনেক ডিসকার্সিভ আছে। তবে আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় যে-সমাজে সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমগুলো আমরা দুই দশকে যেভাবে ধ্বংস করেছি; মানুষ এখন এগুলোকে বিনোদনের খোরাক হিসেবে নিয়েছে। সেদিন এক পিএইচডি গবেষক সহাস্যে বলে উঠলেন- “যখন বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত, চিন্তার বা লেখার সীমারেখা টানতে পারছিনা তখন ইউটিউব উদ্ভট, বয়ান শুনি ফ্রেশ হয়ে যাই। আবার হয় লেখা নয় পড়া শুরু করি।” সুতরাং সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমগুলো সংকুচিত করে বিনোদনের আজগুবি তথ্য ও তত্ত্বের সম্প্রসারণের কুফল তো ভোগ করতেই হবে। যা অগবারন ২০০ বছর আগেই বলে গেছেন। 

কোন ব্যক্তি বা সংস্থা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়না। যদিনা সিংহভাগ জনগণ পক্ষে থাকে। অর্থ্যাৎ ৭০-৮০% জনগণ কোন ব্যক্তি বা সংস্থার অনুকূলে থাকলেই রাষ্ট্রশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার কথা ভাবতে পারে। কথায় কথায় রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে গেলে রাষ্ট্র তার ব্যাটাগিরি তো দেখাবেই। আর দেখিয়েছেও বহুবার। ১% বা তার চাইতে কম সংখ্যার জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। অথচ আমাদের বয়ানে এসকলের ফিরিস্তি যেন মনে হয় খিস্তি খেউর।