এই ব্লগটি সন্ধান করুন

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২

ঘসেটি বেগমের একটি গর্ভপাত

না!এটার পতন ঘটাতেই হবে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় তারা দুজনেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিশ্বাস আর রাখা যাচ্ছে না।তবে উত্তেজনায় বিস্ফোরণ ঘটেনি তো?  হয়তো?  আবেগের গতি বিজ্ঞানের বেগ সামলাতে পারেনি বলে ছিন্ন-ভিন্ন হতে যাচ্ছে আজ আমাদের মান মর্যাদা। দাদা চুপচাপ; কি করবে বলে নয় বরং ভাবছে অন্য কথা।কিন্তু ঘসেটি বেগম অভ্যাসবশতঃ কথা বলেই চলেছে।  আপনি কম দামের জিনিশ কিনেন ;কোন দোকান থেকে কেনা হয়েছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল কিনা? না, দাদা বিরক্ত  এতে হচ্ছেনা আবার উত্তর দেয়ারও চেষ্টা করছে না। দেশ, পাত্র , কাল ভেদে ঘসেটি বেগমের জ্ঞানের উচ্চতা গণ বিনোদনের উপায়ও বটে।তাই দাদা বিনোদিত হচ্ছে কিংবা হবার চেষ্টা করছে বটে! 

সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উর্দ্ধমূখী আর সম্প্রসারিত পেটের কথাটির কথাটি মনে হলে দাদা, হো হো করে হেসে উঠে। পাশে বসে থাকা ডক্টরেট করা সহকর্মীটি আগুনটি যে জ্বলেছে সেটা বুঝে নিল। পাবলিক বাসে প্রাইভেট কথা বলায় ইঙ্গিতে ডক্টরেট জানতে চাইল – ”ধোঁয়ার চেয়ে আধার ভালো।”  তাই ছেড়ে দেন। ওটা আপনার, আপনি নিশ্চিত হলেন কি করে?  এ রুম;  ও রুম, তারপর স্বামী তো আছেই। দাদার পছন্দ হলো কথাটি। স্বামীর বলে চালাতেই সমস্যা কোথায়?  কিছুদিন আগে অফিসে এরকম ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্বামী পরিত্যক্তা ছিল আর ছেলেটি বর্জনীয় দোষে দুষ্টু।  কিন্তু আমাদের দুজনেরই তো সামাজিক রক্ষাকবচ আছে – এটা মনে করে একধরনের সুখানুভূতিতে ভাসতে লাগল দাদা। সম্বিৎ ফিরে পেল ঘসেটি বেগমের ফোনে।মৃদু চাপ অনুভব করল হাতে , ডক্টরটির হাতের, তা আর বুঝতে বাকী রইল না এবং কি বুঝাতে চায় তাও দুবোর্ধ্য নয়। হ্যালো বলতেই ওপার হতে বলে উঠল- আর চাপ নিতে হবে না।  সবকিছু ম্যানেজ করা হয়েছে।কেবল পাশে চাই তোমাকে ওই দিন, যেদিন --------- পতন ঘটাতে হবে। না, দাদা  অবাক হয়নি। আবেগ কিংবা আবেশে থাকলে নাতনি আমার, তুমি বলে সম্বোধন করে উঠে। বিষয়টিকে একেবারে উপভোগ্যহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বরং শিরায় একধরনের শিহরণ কাজ করে বটে। 

আজ শনিবার। অফিস বন্ধ। ইতিমধ্যে মোবাইলে ফোন এসেছে কয়েকবার। ক্লিনিকে যেতে হবে। ঘসেটি বেগম অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে আর বাসায় বলেছে ভিন্ন কথা যা স্বভাবের দোষে হয়ে গেছে  সে টেরই পায়নি। মীন যেমন সলিলের উপস্থিতি টের পায় না। তাই তিন দিনের অফিস ট্যুরের কথা বলে বাসা হতে বেরিয়েছে সে। ফলে এতো তাড়া। সহকর্মী ডক্টরেটটিও ফোন করেছে বার কয়েক।  তাই বাসা হতে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটতে হলো ক্লিনিকে। পতন ঘটানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে ; এ টেবিল হতে ওই টেবিল। অবশেষে অপারেশন টেবিলে। না । উদ্বেগ নয় বরং উচুঁ দাত দুটো কেলিয়ে হাসছে। আমি কি শোনাবো সান্ত্বনার বাণী তার বদলে সে আমাকেই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় করছে উদ্বেলিত।  

ঘষেটি বেগম এখন অপারেশন টেবিলে। শীতের সকালে পায়াচারী করছে। নার্সটি পাশের কক্ষে বসার তাড়া দিয়ে গেলো কয়েকে বার। কিন্তু ভাবনার জগতে কতকিছুই তো আসছে মনে। আমরা পুরুষরা বিশুদ্ধতার কথা বলি কেবল নারীদের জন্যই । এক নারীর জন্য কত রকম উপায় আবিষ্কার  করছে পুনরুৎপাদন বন্ধ করার করার জন্য। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে কয়টা ? ফসলটি কি আমারই নাকি  অন্যকারো----- এমন সময় নার্সের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। নার্সটি বলছে – আপনার মতো স্বামী পাওয়া বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার । অর্ধাঙ্গীনির জন্য এতো ব্যাকুলতা। অর্ধাঙ্গীনি না, সেতো কুলাঙ্গীনি  আর – আমার এমন অস্ফুটস্বরে নার্সটি – ”ভাই কিছু বললেন ?”  না, তেমন নয় – আমি বলে উঠলাম। আর কতোক্ষণ লাগবে?  সে দৃঢ় চিত্তে বলে উঠল- আরো ঘন্টা দুয়েক লাগবে। ও!  আমি  ওটি রুমের সামনে হতে চলে আসলাম। আমি শান্ত আর ধীর । নিচে নেমে সিগারেট ধরালাম। কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়ার ন্যায় আমার চিন্তাগুলোর আলু–থালু অবস্থা। ঠিক যেন রাবনের মৃত্যুর পর মন্দোদরীর দশা। হায়রে মন্দোদরী,স্বামী অন্তঃপ্রান। এমন সময় আমার অর্ধাঙ্গীনির ফোনে মনটা আরো ছন্দময় হয়ে উঠল। কি সব জঙ্গলের পিছনে ঘুরছি, মিথ্যাময় ছলনায় সময় কাটাচ্ছি। আর না ।ওপার হতে জানতে চাইলে, বললাম দুই  থেকে তিন দিন বাসায় ফিরবো না । বউ জানে অফিসেই থাকবো, দাপ্তরিক ব্যস্ততায় যা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলেই কি তাই? যা আমার মন জানে আর জানেন অন্তর্যামি।  

(কৈফিয়ৎ: কাল্পনিক গল্প ,চারিত্রিক সাদৃশ্যতা অনভিপ্রেত)

কোন মন্তব্য নেই: