সকাল বেলা ব্যাংক ভবনের তিনতলার চায়ের দোকানে বসে ডান হাতে প্রাগতৈহাসিক যুগের কাপে এক কাপ চা এ বাম হাতে একটা বেনসন বলতে সাদা বেনসন,যাকে পুজিঁবাদী দুনিয়ার বেনিয়া গোষ্ঠী নামকরন করেছে 'ব্লু গোল্ড' হিসেবে।অথচ এ পণ্যটির পোষাকি নাম হচ্ছে বেনসন লাইট,যা ধরানো নিয়মিত অভ্যাস এ দাঁড়িয়েছে।আজকেও এর ব্যত্যয় হয়নি। মাঘের মিষ্টি রৌদ্রে মুখোমুখি ডক্টরেট ডিগ্রিধারি সহকর্মীটির সাথে যখন সমকালিন রাজনীতির কথা বলছিলাম, করছিলাম উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ;পাশে আরএক আগন্তুকের তখন হৃদয়ের শবচ্ছেদে মুখাগ্নি হচ্ছিল বুঝতেই পারিনি।এ ভবনে ব্যাংক, ক্লিনিক আর পোস্ট অফিস হেতুপ্রশিক্ষণার্থী, কর্মকর্তার পাশাপাশি আমজনতাও আসে সবকিছুতেই ভাগাভাগি করতে।তাই, আগন্তুকের দাদা সম্বোধনে খানিকটাঅবাক হলাম। আমরা এখানে স্যার সম্বোধনের কালচারের ক্যারিকেচারে অভ্যস্ত।বামে-ডানে,উপরে -নিচে স্যার হয় বলো না হয় শুনো। জ্বী , স্যার,হুম স্যার,করছি স্যার, দিচ্ছি স্যার হয় বাঁশ নয় আকাশ (এতো তেল যা মধ্যপ্রাচেও হয়না)।এমন পরিবেশ আরপরিস্থিতিতে বিস্মিত হওয়ারই কথা। ডক্টরেটটি সিরাজুম মুস্তাকিন নামক ধর্মানুসারি হওয়ায় তার দৃষ্টি আমার দিকে, আর আমার দৃ্ষ্টিআগন্তুকের দিকে। বলতেই হলো অভ্যাস বশঃত –জ্বী দাদা বলেন।
-দাদা আপনাকে আমি চিনি। আপনি কি আমার জীবনের গল্পটা শুনবেন, সে বলে উঠল।
-দাদা,না শোনার কোন কারণ নেই। কারন এখানে ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হয়।নানা রকম মানবিক, অমানবিক,ধান্দাবাজীসহ প্রমূখ মহামান্যরা তদবির নিয়ে আসে আত্মীয়, অনাত্মীয় সকলেই। পাশে থাকা সহকর্মীটি এ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত বলে খুবিই বিরক্ত।আমার হুঁ এ সে ভ্রু কুঁচকালো।
অতঃপর, সেই দাদার বলার গল্পটি ( বিস্তারিত পরবর্তীতে), তাঁর ভাষায় শুনুন---
হ্যাঁলো- ম্যাসেন্জারে নক করেছিলাম আমি।
হুম-তার এমন উত্তরের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কথোপকথন , কালক্রমে একটি সম্পর্কের দিকে এগোতে শুরু করল এবং কারণ কিংবা অকারণে আমাদের কথা হওয়ার পাশাপাশি দেখা করতাম আমরা। শুরুটা তিন বছর আগের কথা বলে গণিতের স্বাভাবিক নিয়মে২০১৭ সালেই হবে। মাস ঠিক মনে নেই। তবে এটা মনে আছে – দাপ্তরিক কাজে এ দেশের কোন বঙ্গের জলে –জঙ্গলে গিয়েছিলাম আরভাসমান নৌকায় আমাদের সূচনা হওয়া সম্পর্কটি কালক্রমে দৃঢ় হতে শুরু করেছিল, যার সূচনা ঘটেছিল হাই- হ্যাঁলোর মাধ্যমে ।
এরপর, সময়ের আবর্তনে দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বন্ধুর পথ অতিক্রম করা। হাত ধরার চাইতে ছাড়তে হয়েছে বেশী , আর এবার ছাড়তেহলো একেবারেই। না ছাড়লে হয়তো এ গল্পের সৃষ্টিই হতো না।
নরম – গরম বাক্যালাপে একটু একটু করে গভীর হওয়া সম্পর্কটি উষ্ণতা পেয়েছিল। না ; বিছানা গরম করা হয়নি। কারণ, সে চায়নি ।আর আরো পরে উদঘাটিত হলো যে সে গরম করছিল আর একজনের শিতল বিছানা। আমিও জোর করিনি- ধর্ষণের সঙ্গায় পড়বেবলে। আমি চেয়েছিলাম পারস্পরিক সমঝোতায় উত্তপ্ত হবে বিছানা। যার ফলে , বদ্ধ ঘরে হোটেল ভাড়ার সাথে যোগ হয়েছে টিস্যুখরচের হিসাব। সরল অংকের হিসাবে অর্থের আর সময়ের বিনিয়োগে সুদ আর পাওয়া যায়নি। তবু বিনিয়োগ করে যাচ্ছিলাম-জনকল্যাণের স্বার্থে। সুদের কথা যে মনে আসেনি তা নয়। বরং তিন বছর পর -২০২০ এ যে ভিশনের কথা তুমি বলে ছিলে, শুরুতেইআমার মনে পাকাপোক্ত হলো এটা যে- তুমি কেবলই, তোমার প্রয়োজনেই আমি। কখনো অর্থে, কখনো স্বার্থে আর প্রতিনিয়তই দরকারে- এটা কিংবা ওটা। অথচ তুমি বহু আগ হতে অন্য কারোর শিতল বিছানা গরম করছো । মনে পড়ে যাচ্ছে – কেনা কাটা , সিনেমা দেখা, টুকি টাকি সবই বিল আমার হাতে । ঠিক যেন সমানুপাতিক হারে আমার পকেট যত ঠান্ডা হতো অন্যের বিছানা ততোগরম হতো । আমার অর্থের দিকে তোমার যতো নজর ছিল , ততটাই অবহেলা করতে আমার ইচ্ছা আর ভালো লাগার বিষয়গুলোর প্রতি। আমার প্রতি তোমার অবহেলা আর গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে আজ এ লেখার জন্ম বলে , আমিও এখন তোমার প্রতিও কৃতজ্ঞঅনেকখানি।
এ মার্কেট হতে ও মার্কেট, তোমার পছন্দের জিনিশ কেনা আর আমার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট ক্রমশঃ কমে আসা আমাকে তবুওভাবিত করেনি। শুধুই কি তাই অফিস এ বাহিরে কিংবা বিদেশ গেলে - তোমার ফরমায়েশ মতো কেনা-কাটা করা। পছন্দ – অপছন্দেরধান্দায় আমার বিপর্যস্ত অবস্থা ! এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল – ধ্যাত্তেরি কি ভাবছি? ভুলেই গিয়েছিলাম যে প্রয়োজন নেইবলে ফেসবুক সহ সকল সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমাকে ব্লক করলেও ফোন বুকে তোমার নম্বরটি ব্লক করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর তা হয়তো হবে। ফোনটি কেটে দিয়ে আবার ভাবনার জগতে ডুবতে গিয়ে মনে পড়ে গেলো–”তোমার বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের কথা-তারা আমার সামনে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করতো-তুমি বরবরই তোমার স্বার্থের পক্ষে; গোপনে গোপনে লিয়াজোঁ রক্ষা করো সবার সাথে। ” তারা জানতো না যে তুমি অতি দক্ষতার সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করো আমারও স্বাথে। তারা এও বলে যে, যা শুনে আমি চমকালাম, যদিও তুমি তা অস্বীকার করেছো বরাবরই আমার সাথে। আমাদের অভিসারে এমন হয়েছে তার ফোন তুমি পেয়েছো আর আমাকে মিথ্যে বলেছো যে- এটা বরাবরই তার পক্ষ হতে এক তরফা।তোমার গুছিয়ে বলা মিথ্যায় আমি বরাবরই বিশ্বস্ত শ্রোতা। যাহোক,তারা বলেছিল যে কলেজ জীবনে হতেই তোমার জীবনে তার অনুপ্রবেশ এবং শেষ পর্যন্ত তুমি তাকেই বিয়ে করে প্রমাণ দিয়েছো-তুমি ভালো ও দক্ষ খেলোয়াড়। জীবনযুদ্ধে আমি বরাবরই কাঁচা জীবনের অংক মিলাতে।নইলে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে যার গণিতে,পরিসংখ্যানে এমনকি কম্পিউটার এ টপ স্কোরার । সেই আমার এটি বুঝতে এতো সময় লাগে যে নববর্ষ, ভালোবাসা দিবসে, হ্যাপি নিউ ইয়্যার তুমি বরাবরই গিফট নাও যা তোমার অত্যন্ত প্রিয়।কিন্তু তুমি এক টাকা খরচ করে আমাকে এমএসএস করে উইশ করার সৌজন্যটুকুও দেখাওনি। বাদ দিলাম এ সব। আমার জন্মদিনে,তিন বছরে উইশটুকু কি করেছো? মনে পড়ে ? না এমনটি হয়নি।কারণ নে’য়া তোমার যত প্রিয় দে’য়া তোমার ততটাই অপ্রিয়।
এখন আমি আর তার ফোন ধরিনা অথবা সে আমারে পায়না।কারণে কিংবা অকারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নক করিনা বা করতে হয়না।এভাবেই আমি একটি অসম্পূর্ণ সম্পর্ককে সম্পূর্ণতা দিলাম!
(রচনাকাল ২৭.০১.২০১৯ খ্রি:।
(কৈফিয়তঃ এটি কাল্পনিক রচনা তবে কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা কাকতালীয় মাত্র)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন