বই এ সংযুক্ত ভূমিকা পাঠে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো সুখের নয়। ওজনদার ব্যক্তির সংযোজিত ভূমিকাও ইদানিংকালে,আমরা কেউ পড়তে চাইনা, নানাবিধ কারণে । তাই, গৎবাঁধা ভূমিকা দিচ্ছিনা, বা কোন চুল পাকনা বুদ্ধিজীবির কাছেও যাইনি। বদলে এমন শিরোনাম আকারে এই বইটি কি, কেন লিখার দরকার ইত্যাদি একটু প্রাথমিক আলাপ। আপনার কাছে বই-এর নামখানি অপ্রত্যাশিত। এমনকি চিন্তার জগতে উস্কানিমূলক। আদতে তা নয় বরং সাবলিলভাবে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কোয়ান্টিটিভ এথনোগ্রাফির সৌন্দর্য। কোয়ান্টিটিভ এথনোগ্রাফি। শব্দদ্বয়ের দ্যোতনা আছে। এক দমে সহজিয়া উচ্চারণ না। একটু খটমটে।নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির সময় থেকেই পরিসংখ্যান, এথনোগ্রাফি রচনার একটি সরঞ্জাম, সুতরাং এটি সম্পূর্ণ নতুন নয়।[i] বরং, নৃবিজ্ঞানের যাত্রার সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়তি। পূর্বেরটির পক্ষে পরেরটির বিশেষণ হওয়া অনেক নৃবিজ্ঞানের মাস্টারদের কাছে হাসিরউপাদান হতেই পারে! তবুও "কোয়ানটিটি/কোয়ালিটি"র দুরতিক্রম্য ব্যবধানকে সংকুচিত করার সাহসী পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি,এবং এই দুই গালফকে একটি মেল-বন্ধনে আটকে রাখতে চাইছি। ধরে নিতে পারেন আমাদের সরল সিধা মতলব কিংবা বক্তব্য এইযে;কেনো সংখ্যার সাথে এথনোগ্রাফিক কাজের একটা সখ্যতা তৈরী করা যাবেনা? জ্ঞানী লোকেরা, আমরা দেখে আসছি, নিজের মতোকিছু করার বদলে একটা ম্যালিনোস্কির মুখোশ বা গিয়ার্টজের গৎবাঁধা ব্যাখ্যায় আগ্রহ। আরো যারা 'গভীরতর' জ্ঞানের মালিক হওয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টায় সংগ্রামরত, তারা ফুঁকো, দেরিদাঁ নিয়ে ব্যস্ত। না—দোষের নাই কিছু তাতে। অন্ততঃ একদিকে তো আছি! কিন্তু যখনদেখি, একটা পুর্ণিমা চাঁদের ছবি দিয়ে 'আদিবাসীদের সাথে একটা নিবিড় সম্পর্কের’ প্রমাণ করার চেষ্টা; তখন আশঙ্কা জাগে এই কারনে যে, বিষয়টির পঠন-পাঠনে ভুল করছি কি কোথাও? কিংবা, এডাম কুপার যখন লিখে দেন ডিকলোনিয়াল নৃবিজ্ঞানীর বইয়েরভূমিকা! অজানা আতংকে সক্রিয় হয়ে উঠে মনে, চিন্তার বুদবুদ তখন মাথায় অনবরত আঘাত করতে থাকে। এবং আমরা বিনয়ীরসুরেই বলতে চাই, ডিকলোনিয়াল গবেষণা প্রতিক, এলিগরিক্যাল কিংবা মেটাফোরও না। যে কেতাবী নীতিগুলি এত প্রিয়ভাবে চর্চায়, ডিসকারসিভে ধরে রেখেছেন, তা হোক আপনাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস কিংবা অনভ্যাস। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনার অস্বচ্ছ জ্ঞানের বহর স্থানিক শ্রেণি কক্ষ বা বৈশ্বিক পাঠকের কাছে কেন পাঠাবেন?আপনার দায় আমি নিতে যাব কেন? জানি, কারও সাথে কথোপকথনে মেতে উঠার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয় কিংবা বিষয়গুলির পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার, সে 'বোবা' শিক্ষার্থী হোন, আর অজানা ‘পাঠক’ হোন। আপনার পঠিত গবেষণা পদ্ধতির সাথে এ গ্রন্থের তুলনা আপনাকে বিব্রত করতে পারে, আমরা জানি সেটা, বরং কথোপকথনেরসুরে গল্প এবং হাস্যরসাত্মক উপায়ে আশা জাগানিয়া এ বইটিতে কৌতূহলী পাঠক পিপাসা মেটাবেন অনকেটাই কিংবা, অগ্রণীস্নাতক থেকে অধ্যাপকগণকে রেফার করবে ঢের বেশী। এটাই একাডেমিয়ার সৌন্দর্য যা আমাদের এ বই লিখতে সাহায্য করেছে এবংএকাডেমিক বক্তৃতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি পরিসংখ্যান এবং পাঠ্য বিচারে সংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়ার আবদারও আছেআমাদের।
যা-ই হোক, সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ প্রসঙ্গগুলি সম্পর্কে এখন আমাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে উপাত্ত বিশ্লেষণ করার একটি পদ্ধতি, তবে এটি এমনভাবে করা যাতে বিশেষত গুণগত গবেষণায়, নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় বছরের পর বছর ধরে বিকশিত কঠোরতা, সংখ্যার প্রতি 'বিমাতা সুলভ আচরণ এবং 'বিদ্যালয়ি শৃঙ্খলার' সম্মান দেখাতে গিয়ে আমরা হয়ে গেছি এক-একজন 'ডিসাইপল অব ডিসিপ্লিন' নিজের অজান্তে, কিন্তু পশ্চিমা ডিসিপ্লিনের, এবং তার নির্মাতাদের সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে, জানিয়া, বুঝিয়া তারা আমাদেরকে 'ডিসাইপল' করে রেখেছেন। আর আমরা একাডেমিকভাবে, লার্নিং অ্যানালিটিকস সম্প্রদায়ের কাছে হয়ে গেলাম 'ক্যাপটিভ,' 'মিমিক,’ 'বঙ্গ বদনে চামড়ায় ম্যালিনোস্কির মুখোশ'—এটির এক, দুই, এবং তিন নম্বর সমস্যা।
তালাল আসাদকে আমরা আরো স্মরণ করতে পারি—
"কোন যোগ্যতা। না-আমি আবার বলছি-আমি কি বলি যে নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির তুলনায় পরিসংখ্যানের কোনও অপরিহার্যশ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। এথনোগ্রাফি সম্পর্কে আমি যে সাধারণ মতামত দিই তা হ'ল নৃবিজ্ঞান সমৃদ্ধ আছে ট্রাডিশনালীটি আর ঐতিহাসিকতা দিয়ে । ট্রাডিশনটাকে যদি ক্ষেত্রের কাজের ক্ষেত্রে কেবল সংজ্ঞায়িত করা হয় ,তবে তা বড় সংকীর্ণ হবে”[ii]
এই আলোচনার দাবিটি হ'ল বিশ্বায়িত বিশ্বের যুগে আমরা কেবল ম্যালিনোস্কিয়ান বর্ণনার উপর ভিত্তি করে নয়, বা গিয়ারজিয়ান'থিক বিবরণ' দ্বারা নয়, বা 'পাওয়ার-নলেজ' মডেল দ্বারা চালিত 'সমালোচনামূলক' এবং হাই-ভোল্টেজের কথা দিয়ে বা এইসবেরসমন্বিত ভিত্তিতে কোনও সত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি, পরিবর্তে, আমাদের ব্যবহারিক জ্ঞানের জন্য ডেটা/তথ্যের গুরুত্ব আলিঙ্গন করাদরকার। যেখানে নৃগোষ্ঠিটি জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্যেই পরিচালিত হবে। আমাদের কাছে জানা, ডেটা তো ডেটাই। ডেটা, প্রিফিক্সগুলিতে গুণমান বা পরিমাণগত কোনও মান থাকে না, যখন প্রতিটি পরিমিতির ডেটা গণনাগতভাবে মাপা যায়। আমরা এমনবিশ্লেষণগুলি চাই যেগুলি উভয়ই কঠোরভাবে ভিত্তি তৈরি করেছে (এথনোগ্রাফির মাধ্যমে আমরা ডিকনটেক্সটচুয়ালাইজশেন নাহওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ উপায় সরবরাহ করে), এবং সাধারনিকরণ যোগ্য (এটির জন্য শৃঙ্খলা সরবরাহকরার পরিসংখ্যান সহ)। একটি মূল সংযোগের ধারণাটি হ'ল সম্পৃক্ততা, যেহেতু ভিত্তি বিশ্লেষণে তাত্বিক সম্পৃক্ততা এবংপরিসংখ্যানগুলিতে নমুনা উভয়ই "ডেটাতে" যা আছে তা এথনোগ্রাফিতে 'কোয়ালিটি-কোয়ান্টিটির বির্নিমানের একটি সেতু বটে।
কারা পড়তে পারেন
বইটি তিনটি আলাদা পাঠকগণের জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। এক, যারা নিজেকে উভয়ই পরিসংখ্যান এবং গুণগত পদ্ধতিরকাছে নবাগত বলে বিবেচনা করেন, কারণ এটি সত্যিকার অর্থে, অন্ততঃ আমাদের দেশীয়-পরিসরে কোনও পূর্ববর্তী জ্ঞান আহরণ করেনা। দুই, যারা ইতিমধ্যে একটি 'ওয়ার্ল্ড ভিউ'তে সাবলীল, লাইফ ওয়ার্ল্ড-এ নয় (দু'টি সম্পূর্ণ আলাদা অর্থ বহন করে, এবং আমরাপ্রথম অধ্যায়ের উপসংহারে আলোচনার রেশ রেখেছি মাত্র, এবং তৃতীয়ত, যারা ইতিমধ্যে গভীরভাবে আন্তঃশৃঙ্খল, এবং আদিবাসীগবেষণা পদ্ধতির সাথে তাদের অনুভূতির রেজোলিউশনগুলিকে তুলনা এবং সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।
তিন ধরনের পাঠককে বিবেচনায় এনে আমাদেরকে পা ফেলতে হয়েছে সাবধানে তথাপি সম্ভবত এটি পরবর্তী দু'টি দল একটু অসন্তুষ্টহয়ে যাবেন এই ভেবে যে, তাদেরকে আমরা আরও উদ্বেগজনক, আরও গভীরতার সাথে যুক্ত করে দিচ্ছি কি না, তবে বইটির ভবিষ্যতেরজায়গাগুলি পরিষ্কার করে দিবে, সন্দেহ নেই; এবং আশাবাদ ব্যক্ত করছি পরবর্তী খণ্ড আমাদের সেই কথোপকথনটিকে আরো দৃঢ়তরকরবে। যা’হোক, নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে যা হয়েছে, 'টেকেন ফর গ্র্যান্টেড' বলে ছেড়ে দেওয়া ;যেমন নিজের সাথে নিজেই ইঁদুরবিড়াল খেলার নামান্তর। দুই, ডিকলোনিয়াল নাম নিয়ে যে কাজ গুলি হচ্ছে গত এক দশকে, মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে-'ডিকলোনিয়ালিটি' একটা হাল ফ্যাশনের 'ট্রেন্ডী' বা মেটাফোর।[iii] ডিকলোনিয়াল গবেষণা বালিক-বালিকাগণের 'যেমন খুশি তেমনসাজা' নয়, নিশ্চয়। কেননা, শরীর-মন-চেতনার গভীরতম জায়গার উৎস থেকে এর জন্ম আর দুর্গম পাহাড়ের গায়ে বসে কাজ করারমাঝে এর প্রকাশ। তাই, অনেকের খোলাচোখে যুক্তিসঙ্গত না হলেও, আমাদের মনে করার যথেষ্ট কারন বিদ্যমান। এবং, এতগুলিবিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৮৬ সালে জাহঙ্গীর নগর বিশ্ববদ্যিালয়ে শুরু , পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববদ্যিালয়, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়) নবাগতদের দরকার এসব জানার। মাস্টারগণ পড়বেন, এবং পড়াবেন নতুন কিছু শিখাবেন মনে করে লিখছি। কিংবা 'রাবিশ' বলেফেলে রাখবেন (সেতাও করতে পারেন); কারণ, ডাইনোসর যুগের নোট/ডায়েরি দেখে পড়াবেন, কষ্ট করে নতুন আরেকখানা টপিক যোগকরার দরকারটা কি! (সবাই নন, অনুগ্রহ করে জেনারালাইজ করবেন না, আমরা আমাদের নিজেদের চোখকে তো আর অস্বীকারকরতে পারি না, ইম্পিরিক্যাল ডেটা থেকেই বলছি)। শেষ করা যায়— আমাদের 'পয়েন্ট অফ ডিপারচার' । কারণ, আরেকটাআলোচনা করলে তবেই একটা পরিস্কার ধারণা আসবে। বিশেষ করে, ”আদিবাসী গবেষণা পদ্ধতি” নিয়ে দেশে তেমন আলোচনাহয়নি। এখনো, আমরা দেরিদাঁ, ফুঁকো নিয়ে কথা বললে তবেই পড়ুয়া;জ্ঞানী; অনেক জানা মানুষ-ইত্যাদি কেতাবী খেতাব পাই। সমস্যাহল, 'অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস' দেখাতে কেউ রাজি নন, আমরা এই সাহস দেখানোর কাজটা করব। এখন তো নম্ব্র কম পাবার জানা ভয়টা নাই। যার ফলে জাগতিক আর বৈষয়িক বিষয়গুলো একেবারেই অস্বীকার করতে পারিনা।
আমরা হয়ে গেছি এক একজন 'ডিসাইপল অব ডিসিপ্লিন'
একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বিবেচনা করা উচিত আমাদের। তদ্ব্যতীত, তার আকর্ষণীয়, অ্যাক্সেসযোগ্য স্টাইলের ভিত্তিতে, উন্নত স্নাতক, মাস্টার্স এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলির পাঠকদের জন্য এমন পরিমাণগত এবং গুণগত বিশ্বদর্শন আলোকিত করার উপায় হিসাবেসুপারিশ করা হয় যা একটি মানুষ, মানবিক আর রেসিপ্রোকাল এথনোগ্রাফি হয়। যদিও হালের আমলে আমরা অন্তত দেশীয় পরিসরে এটি নির্দ্ধিদায় বলতে পারিযে,অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় নৃবিজ্ঞানও তার মূল জায়গা হতে সরে এসে কোর্স বা গবেষণা পরিচালনা করতে গিয়ে বাণিজ্য, ক্ষমতা বা ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিয়েছেন বিশ্বায়ন বা ব্যক্তিজীবনের ভবিষ্যৎ নিশ্বচয়তা প্রদানের নিমিত্তে। এটাকে কি বলবেন?
ডেভিড উইলিয়ামসন শ্যাফার বলেছিলেন, তিনি এথনোগ্রাফি সম্পর্কিত কোনও বই নয় এটি পরিসংখ্যান সম্পর্কিত কোনও বই নয়।আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানগত বিষয়গুলিও দেখব, এবং এথনোগ্রাফির কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলিও আলোচনা করব - এবং মূলত ব্যাখ্যামূলক বা গুণগত গবেষণা। তবে মূলত এটি একটি বিগ ডেটা সম্পর্কিত পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণকে গাইড করারজন্য এথনোগ্রাফিক কৌশলগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে একটি বই এবং একই সাথে এটি বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা এবংক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিসংখ্যান কৌশলগুলি কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এটি একটি অনুসন্ধান এবং গবেষণার অন্যান্য গুণগতপদ্ধতি। ঘটনা স্বীকার করুন।[iv]
“আধুনিকীকরণ বিশ্বে পরিসংখ্যানের রাজনৈতিক সাফল্য যথেষ্ট নৃতাত্ত্বিক তাৎপর্যের সত্যতা। এই উত্তরোত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি আধুনিক সামাজিক জীবনের একটি সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিশ্লেষণ করা এবং ব্যাখ্যা করার মতো কিছু। যদি আমিপ্রস্তাব করি যে এই জাতীয়ানা বিশ্লেষণ পরিচালনা করা হয়, তবে এটি অনুসরণ করে না যে আমি মনে করি যে নৃতাত্ত্বিক ফিল্ডওয়ার্কের কোনও যোগ্যতা নেই "(p.79)
মৌলিকভাবে, এই বইটি ডেটা পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ পরিচালনার জন্য কীভাবে নৃতাত্ত্বিক কৌশলগুলি ব্যবহার করতে পারে সেসম্পর্কে। একই সাথে, এটি নৃতাত্ত্বিকতার ক্ষেত্র এবং ক্ষমতা এবং গবেষণার অন্যান্য গুণগত পদ্ধতির প্রসার করতে কীভাবেপরিসংখ্যান কৌশলগুলি ব্যবহার করবেন তার সন্ধান করে। এটি ডিজিটাল যুগ, গুণগত এবং পরিমাণগত গবেষণা পদ্ধতির মধ্যে, বিজ্ঞান ও মানবতার মধ্যে, এবং সংখ্যা এবং তা বোঝার মধ্যে, যে প্রশ্নগুলি আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি, কিছু ক্ষেত্রে আমাদরকে সীমাবদ্ধ করে তথাপি কোয়ান্টেটিভ এথনোগ্রাফি এমন একটি গবেষণা পদ্ধতির 'পরিপুরক' যা আমাদের ক্রমবর্ধমান ডেটা সমৃদ্ধ বিশ্বেকীভাবে আমাদেরকে স্থান করে নিতে পারে, তা বুঝতে সার্বিক সহায়তা করবে।
হালনাগাদ, ২০২০ সালের কোভিড-১৯,মহামারী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। করোনা-১৯, ভাইরাসজনিত মহামারীসংঘটিত বর্ণবাদ এবং জেনোফোবিয়া বিশ্বব্যাপী অভিবাসী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অসাধারণভাবে প্রভাবিত করেছে বৈষম্যএবং বৈষম্যের বিদ্যমান নিদর্শনগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যার দরুন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার মুখোমুখিহচ্ছেন অনেকেই । সংখ্যা এবং বর্ণনার মিশ্রণ ছাড়াই আমরা কীভাবে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি?[v]
এ মহামারীর উদাহরণ বিবেচনায় নিতে পারি এই ভেবে যে, দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কাল রুপটি আমরা দেখতামই না, যদিমহামারিটি আসতো! সুতরাং, দুনিয়ার আদিবাসীদের নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, আদিবাসীদের নিয়ে আলাদা করেভাবতে হবে। খুবই সময় সংশ্লিষ্ট আহবান। কিন্তু, আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে যেখানে আদিবাসী-ই নাই, সেখানে এমন একটা বৈশ্বিকডাকে সাড়া না দিলেই পারি? এই বইটি গুণগত এবং পরিমাণগত দ্বৈরথের মরীচিকাকে একটু হলেও কাটাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।[vi]
যদি আমরা কোভিড-১৯ দ্বারা চিহ্নিত বর্ণবাদের প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তিটি সন্ধান করি, সন্দেহাতীত ভাবেই, আমাদেরকে, পরিসংখ্যানেরসাহায্য নিতে হবে। আমরা ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে যদি আলোচনা করতে পারতাম, তাহলে বড়ো ভালো হতো। ঐতিহাসিকভাবেই, মহামারী এবং বর্ণবাদী অনুভূতির মধ্যে সম্পর্কের জন্য প্রিসম্যান দরকার। এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জাতিগত ও বর্ণগত বৈষম্যেরবেলায় আরো জরুরী। তারপরেও, প্রায় আমরা বেয়াড়া বক্রির মতো করে বলবো, এথনোগ্রাফিক কাজে পরিসংখ্যান দরকার নাই। ইতিহজাক গোল্লায় যাক। আমাদেরকে প্রকৃত সংখ্যাটি চিহ্নিত করতে হবে এবং এই সংখ্যাসূচক পরিসংখ্যানগুলি কোভিড-১৯ এরঅধীনে বর্ণবাদকে প্রাসঙ্গিক রূপে এথনোগ্রাফিতে নেয়া যেতে পারে। যুক্তি হলো জনপ্রিয়তা, পুনরুত্থিত বর্জনীয় জাতিগোষ্ঠী-জাতীয়তাবাদ এবং পরিবেশবাদের পশ্চাদপসরণ একটি বর্ণবাদ বৈষম্যবাদের মূল অবদান ছিল কভিড-১৯ এর সময়। আমাদেরআলোচনা ২০২০ সালের মহামারীকে কেন্দ্র করে না, তবে, রেফারেন্সের পয়েন্ট হিসাবে আমরা এরপরে বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ এবংপুঁজিবাদের মধ্যে যোগসূত্রগুলি নিয়ে আলোচনা করতে পারি, এবং মৃত্যুর পরিমাণ সম্পর্কে বিবেচনা করতে পারি। এই মহামারীটিরেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ করার দরকার ছিল, অন্যথায় সম্ভবতঃ আমাদের এই বইটি 'পুরোপুরি সময় ঘনিষ্ঠ' বলে যে দাবি, তা যথাযথ হতোনা।
একটি দায় এবং কৈফিয়ত
এখানে, আমরা দুটি বিষয়ের জোর দিতে চাই। ডিকলোনিয়াল পণ্ডিত ফারিদ আলাতাসকে মনে করি। প্রথমত, এটি নির্দিষ্ট সমাজ বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়। যাদের আমরা সাইলেন্সার হিসাবে চিহ্নিত করেছি তারা হলেন বৈশ্বিক জ্ঞান উৎপাদনেরবৃহত্তর সমস্যার নিছক চিত্রণ, অর্থাৎ বৌদ্ধিক সাম্রাজ্যবাদ এবং একাডেমিক নির্ভরতার প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট বক্তৃতার প্রান্তিককরণ। দ্বিতীয়ত, এ কথাটি বলা দরকার যে আমরা যে লেখকদের নিরব বক্তব্যগুলির অংশীদার হিসাবে উল্লেখ করি, তাদের লেখকদের প্রতি যা কিছুদায়ি করা হয়েছে তা নিরব করার জন্য কোনও উদ্দেশ্যমূলক উদ্দেশ্য নেই। আমাদের মূল উদ্বেগ সাইলেন্টের প্রভাব এবং কার্যকারিতানিয়ে যা নির্দিষ্ট বক্তৃতার প্রান্তিককরণ বজায় রাখা।
ঔপনিবেশিক কর্তৃক উপনিবেশের আদর্শ গ্রহণ করা বন্দী মনের সর্বব্যাপীত্বের প্রতিচ্ছবি, "বাহ্যিক উৎস দ্বারা প্রভাবিত ,অবরুদ্ধ ওঅনুকরণীয় মন, যার চিন্তাভাবনা একটি স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্ছিন্ন"।১০ বাহ্যিক উৎস, পশ্চিমা জ্ঞান এবং একাডেমিয়া, যাবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপের সমস্ত স্তরে যেমন সমস্যা-নির্বাচন, ধারণা, বিশ্লেষণ, সাধারণিকরণ, বিবরণ, ব্যাখ্যা এবংব্যাখ্যা করে।১২ মূলবিশ্লেষণাত্মক পদ্ধতি তৈরি করতে অক্ষমতা এবং আদিবাসী সমাজের মূল বিষয়গুলি থেকে বিচ্ছিন্নতা। বন্দী মনটি পুরোপুরি পশ্চিমাবিজ্ঞানগুলিতে প্রশিক্ষিত হয়, পাশ্চাত্য লেখকদের রচনাগুলি পড়ে এবং পশ্চিমা শিক্ষকদের দ্বারা যা মূলত পড়ানো হয়, তা পাশ্চাত্যেইহোক বা তাদের স্থানীয় শিক্ষাগত কেন্দ্রে উপলব্ধ কাজগুলি দ্বারা। সমাধান এবং নীতিমালার পরামর্শে মানসিক বন্দিদশাও পাওয়াযায়। তদ্ব্যতীত, এটি তাত্ত্বিক পাশাপাশি অভিজ্ঞতাগত কাজের স্তরে নিজেকে প্রকাশ করে। আলাতাসও পরামর্শ দিয়েছিলেন যেঔপনিবেশিকদের চিন্তাভাবনার পদ্ধতিটি সমান্তরাল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের। সুতরাং, "একাডেমিক সাম্রাজ্যবাদ" অভিব্যক্তি, সেই প্রসঙ্গে যা বন্দী মন উপস্থিত হয়।
[i] Driver, H. E. (1953). Statistics in anthropology. American Anthropologist, 55(1), 42-59; Clements, F. E. (1928). Quantitative method in ethnography. American Anthropologist, 30(2), 295-310; Wallis, W. D. (1928). Probability and the diffusion of culture traits. American Anthropologist, 30(1), 94-106.
[ii] Asad, 1994, p.79; Trnka, B. (1950). A tentative bibliography (Vol. 1). Spectrum Publishers.
[iii] Tuck and Yang, 2012.
[iv] Asad, 1994, p.79..
[v] Sherman, L. W., & Strang, H. (2004). Experimental ethnography: The marriage of qualitative and quantitative research. The Annals of the American Academy of Political and Social Science, 595(1), 204-222.
[vi] Schnaider, K., Schiavetto, S., Meier, F. M., Wasson, B., Allsopp, B. B., & Spikol, D. (2020). Governmental Response to the COVID-19 Pandemic: A Quantitative Ethnographic Comparison of Public Health Authorities' Communication in Denmark, Norway, and Sweden. In ICQE: International Conference on Quantitative Ethnography 2020;