এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

পিতার পত্র- ৬ থেকে -১০

পিতার পত্র—১০

 


প্রিয় পুত্র,

পত্র শত সহস্র শুভেচ্ছা রইল। আশা কর ভাল আছ। তোমার প্রেরিত পত্র পেয়েছি এবং সবকিছু অবগত হলাম। 

শুধু এটুকুই বলতে পারি , তুমি যথেষ্ট ধৈর্য্য ধরে যে ভাবে মানসিক দুঃখে লেখাপড়া করছ এটা যেমন আশ্চর্য্য ,তার চেয়ে আরো আশ্চর্য্য যে এমন পরিবারের ছেলে হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছ। তবে জেনে রাখ এ অবস্থা চিরদিন থাকবেনা। দুঃখের পর সুখ আসবেই এটা প্রকৃতির নিয়ম। আমি কেবল ঢাকার কাজটা সেরে  ফেলি। হয়তো নভেম্বর বা ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ হবে। 

যাদের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা পাচ্ছ তাদের সঙ্গে সৎব্যবহার করে বন্ধুর ঋণ  পরিশোধ করিও। আর বলিও সেদিন বেশী দূরে নয় এমন দিন চিরদিন থাকবে না।  তোমার প্রতি শুধু এটুকুই বলব শুরু যখন করেছ তা যেন ভালভাবেই সম্পন্ন হয়। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ী ফিরে আসতে পারো। তোমার জন্য সমাজ ও দেশের অনেক কাজ বাকী আছে। যা সম্পাদনের জন্য তোমাকে উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে হচ্ছে। 

এ মাসেই টাকা পাঠাব, যত টাকা ধার হোক তা দিতে আমি বদ্ধ পরিকর। তবে একটু সময়ের ব্যাপার মাত্র। অন্যদিকে এলাকায় এবারে আশানুরূপ বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে লোকজন বিশেষভাবে চিন্তিত; তদুপরি নির্বাচনের ক্রিয়া –প্রতিক্রিয়া। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করাই ভাল। যতদূর সম্ভব নিজেকে সমান দূরত্ব বজায় রেখে চলব।

 আনিসুরের ভাই আমজাদকে পত্র দিলাম। তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলিও , দূর বিদেশ সে হবে তোমার আপনজন। 

”নিশি দিন ভরসা রাখিস ওরে মন হবেই হবে।” ”আমার ভক্ত কোনদিন বিনষ্ট হয়না। আমিই তার সমস্ত বোঝা বহন করি। এটা কথা নয় বরং জীবনে প্রমাণিত।” সুতারাং হতাশা বা ভয়ের কারণ নাই। পলায়ন বা ত্যাগের বিষয় নয়। বরং যেভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছ এটা শুধু  তোমার নয় বরং পরিবারের আগামী দিনের দৃষ্টান্ত। এমনি করেই দুঃখে কষ্টের মাধ্যমেই বড় হতে হয়। পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন তারা তো এভাবেই বিশ্বের মানুষকে ঋণে আবদ্ধ করেছনে। এভাবেই অনেক বলা যায়। সবই এখন বুঝতে পারছ। শুধু স্মরণ করে দিলাম। যা হোক সামনে মনসা পূজা , সেদিকে একটু ব্যস্ত আছি। মা কে স্মরণ করে এমন দুর্দিনে যদি কৃপা পাই। তোমার সুখ, স্বাস্থ্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি। 

                                                                        ইতি 

                                                                তোমারই পিতা 

 

 

পিতার পত্র—৯

 


প্রাণাধিক পুত্র,

পত্রে  আমার শত শত শুভেচ্ছা রইল তোমার প্রেরিত পত্র –মারফত সুসংবাদ জেনে শুধু আমি নই সকলেই পরম খুশী তোমার আশাতীত সাফল্য চিরদিন অটুট ও অক্ষুন্ন থাকুক এটাই কামনা করি যার্ ,তোমার জন্য প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করি তুমি যাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় টাকা সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হইতে না হইতে ব্যর্থ হয়ে যায় আবার বিকল্প পথ খুঁজতে থাকি যাক , সমাধানের পথে এসেছি তোমার জন্য আপাতঃত অতুলের মাধ্যমে ------ টাকা দিলাম আর আগামী ১৬ মার্চ বেতন তুলে ------ টাকা কুরিয়ার সার্ভিসরে মাধ্যমে পাঠাব

তুমি আর কোন চিন্তা করবে না আমরা বাড়ীতে সকলেই ভাল আছি তোমার সুখই আমার সুখ অর্জুন যখন দ্বিধাদ্বন্দে ছিল তখন কৃষ্ণ বলেছেন- ” মামনুস্মর যুধ্য চ” অর্থ্যাৎ আমাকেই স্মরণ কর এবং যুদ্ধ কর সমস্ত কর্মের ভার আমিই বহন করি তোমার কুশল কামনায় –

                                                                                ইতি

                                                                    প্রফুল্ল কুমার রায়

 

 

                                                                           পিতার পত্র—৮ 

 


স্নেহের পরিমল,

পত্রে আর্শিবাদ রইল। আশা করি ভাল আছ। তোমার মোবাইল নম্বর পেয়েছি। যা হোক এবারে ---- টাকা দিলাম । ভূট্টা ও ধান এখনো পাকেনি। এক সপ্তাহ পরে হয়তো হতে পারে। 

সামনে পরীক্ষা, তাই মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা দিবে। কারণ কোন পরীক্ষাই তুচ্ছ বা অবহেলার বস্তু নয়। তাছাড়া এ পরীক্ষার ফলাফল তোমার জীবনে অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিতে পারে। তাই একটু পরিশ্রম করে ভালভাবে প্রস্তুতি নিবে। বহুদিনের শ্রম ও সাধনা যেন ব্যর্থ না হয়। মুখ যেন আগের মতো উজ্জ্বল থাকে। 

 তোমার শুভ কামনায় এখানেই শেষ করছি।   


                                                                    ইতি 

                                                            তোমারই পিতা 

 

 

 

পিতার পত্র—৭ 

 


প্রিয় পুত্র

নূতন বছরের শুভেচ্ছা রইল আশা করি ভাল আছ টাকা সংগ্রহ করতে দেরী হওয়ায় টাকা পাঠাতে  দেরি হলএবারের ভর্তি ফিস সহ ------ টাকা পাঠালাম সামনে মাসে প্রথম দিকে আবার টাকা পাঠাতে পারব কালব সমিতির টাকা এ মাসের শেষের দিকে হবে

 তুমি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করতে থাক সাফল্য এখন নাগালের মধ্যেই প্রবল শৈত্য প্রবাহে জন জীবন বিপন্ন আগামী রবি ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা 

 আমরা সকলে একরুপ ভাল  আছি তোমার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি

                                                                                                   ইতি 

                                                                                            তোমারই পিতা 





পিতার পত্র—৬ 


প্রিয়পুত্র,

পত্রে শুভেচ্ছা রইল। আশা করি ভাল আছ। তোমার পড়াশোনা ভালভাবে চলছে এবং সামনে পরীক্ষার জন্য হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছ। তোমার আশা পূর্ণ হোক । ভালভাবে পরীক্ষা দাও। তবে এ কথাও বলে রাখি পরীক্ষা মানেই পরীক্ষা । সদা সতর্ক থাকতে হবে। আত্মতুষ্টির কোন অবকাশ নাই। সামান্য একটু ভুল পরে সংশোধন নাও হতে পারে। 

যাই হোক এতদিন হয়তো কষ্টে আছ তা অনুভব করছি । কিন্তু চষ্টোর কোন ত্রুটি করি নাই। সীমিত সম্পদের মাঝে তোমাকে টাকা দিবার চেষ্টা চালাচ্ছি। এবারে --- টাকা দিলাম। এ মাসের শেষে হয়তো আরো দিতে পারব। 

এদিকে সকল দেনা পাওনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগবে। ঋণের টাকা এখনও হয় নাই । তবে কথা দিচ্ছে।  আমরা বাড়ীতে মোটামুটি ভাল আছি। বাড়ী এলে  চা ও চায়ের চারা নিয়ে এসো। তোমার শুভ কামনায় শেষ করছি।


                                                                                ইতি 

                                                                        তোমারই পিতা 

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

পিতার পত্র - ১ থেকে ৫


 

প্রিয় পুত্র,

শত সহস্র নন্দন বিকশিত  পারিজাত তোমার মস্তকে বর্ষিত হোক। আশা করি ঈশ্বর তোমাকে ভাল রেখেছে। দীর্ঘ ব্যবধানে পত্র পাঠাচ্ছি। বহু চেষ্টা ও সাধনা করে তোমার নিকট পত্র ও টাকা পাঠাচ্ছি। 

টাকা পাঠাতে বড্ড দেরী হল। হয়তো রাগ করেছ কিংবা ভুল বুঝে আছ। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই এটা ঘটে গেল। তুমি কখনো সাহস হারাবে না। হতাশার  কোন কারণ নাই। শুরু যখন করেছ তাহলে যেভাবেই হোক তা শেষ করতে হবে। তুমি পূর্ণ উদ্যমে পরীক্ষা দাও। ফল ঈশ্বরে সমর্পণ কর। এবার ----- টাকা দিলাম এবং এ মাসের শেষে আরো কমপক্ষে ---- টাকা দিব।  তুমি পত্র পেয়ে উত্তর দিবে। পরীক্ষা শেষে বাড়ী না এলে তা জানাবে। 

গোটা আষাঢ় মাস বৃষ্টি খুব কম। চাষাবাদ খুব কষ্টে হচ্ছে।কি যে হবে বলা যায় না। 

 সাবধানে থাকিও। তুমিই শুধু আমার নও সকলের ভরসা। এ আশা যেন ভগবান পূর্ণ করেন। তোমার সুখী ও সুন্দর  কামনা করছি।


     ইতি 

তোমারই পিতা 

 

পিতার পত্র—৪ 


প্রিয়পুত্র,

পত্রে শত সহস্র আর্শিবাদ রইল। তোমার প্রেরিত পত্র  পেয়েছি। পরীক্ষার ফলাফল জানতে পারলাম না। হতাশা বা ক্ষোভ নয়, সামনে আরো অনেক কিছু আছে। তুমি শুধু এগিয়ে যাও। ভয় করো না বা হতাশ হয়ো না। অদৃষ্টে যা আছে তাতো মেনে নিতে হবে। 

যাই হোক , তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, হয়তো বাড়ী আসবে। যখন এলেনা। তাই ---- টাকা দিলাম। আর সামনে মাসে ২০ তারিখের পূর্বেই টাকা পেয়ে যাবে। ভালভাবে লেখাপড়া করো। নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ না করাই উচিত। আগে ”সাধন সিদ্ধি পরে সম্পদ বৃদ্ধি”। 

আমরা বাড়ীতে ভাল আছি। তুমি ভাল থাক , সুখে থাক, পত্র পেয়ে পত্র দিবে। 

  ইতি 
তোমারই পিতা




পিতার পত্র—৩


প্রিয় পুত্র,

পত্রে শুভেচ্ছা রইল। আশা করি ভাল আছ। আর তোমার পত্র পেয়েছি। এবার পত্রে একটু উত্তাপ ছিল যা আগেকার পত্রে ছিল না। হয়তো জানো দুঃখকে বরণ করা এবং সত্যের আদর্শে অটল থাকাই হল সনাতন ধর্মের বৈশিষ্ঠ্য। 

তোমার পরীক্ষা নিশ্চয় ভাল হচ্ছে। আর্শিবাদ করি ঈশ্বরের কৃপায় পরীক্ষা ভাল হোক। রাগ বা ক্রোধ করে তো থাকা চলবেনা। বরং বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই তো আসল কাজ। 

আজকেই বেতন তুলে এবার ---- টাকা পাঠানো হল। তুমি তুলে নিও। এগিয়ে যাও, সমস্ত বাধা অবসানের পথে। এ মুহুর্তে ভিন্ন চিন্তা  বা (---)  হওয়া মোটেই সমীচীন হবে না। জুনের বেতন এ মাসের শেষে হতে পারে। কাজেই হতাশা বা দুর্ভাবনার কোন কারণ নাই। 

বৃষ্টি ভাল হচ্ছে, বন্যা হয় নাই। জমিতে চারা লাগানো কিছু বাকী আছে। বাড়ীতে সকলেই ভাল আছি। 

তোমার শুভ কামনায় এখানেই শেষ করছি। 

                                                        ইতি 

                                                তোমারই পিতা 


বিঃদ্রঃ বাড়ীতে যখন আসবে তখন চা গাছের চারা নিয়ে আসবে। যা তোমার স্মৃতি আগামীতে বহন করবে। 

  

 

পিতার পত্র—২

 প্রিয় পুত্র, 

পত্রে শত শুভেচ্ছা ও আর্শিবাদ  রইল। আশা করি ভাল আছ। তোমার প্রেরিত পত্র পেয়েছি। পড়ে সবকিছু অবগত হলাম। তুমি ফলাফল সম্পর্কে হতাশ কখনো হবে না। তুমি তোমার দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাও। আর ঈশ্বর অবশ্যই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। 

ক্যাম্পাসে লেখাপড়া ঐভাবেই চলে। তুমি নিজেকে ম্যানেজ করে দ্বায়িত্ব , কর্তব্যে অবিচল থাকবে। সামনের পরীক্ষা ভালভাবে দাও, তবে অতি উচ্চাশা অনেক সময় ক্ষতির দিকে টেনে আনে। 

যাই হোক, বেতন না পাওয়ার জন্য তোমার কাছে টাকা কিংবা পত্র পাঠাইনি। জুনের বেতন কেবল ২৭ তারিখে পেলাম। বিয়ের ব্যাপারে বাহিরের ধার দেনাগুলো পরিশোধ করতে হচ্ছে , যার জন্য  নিজেকে অনেক সময় ভেঙ্গে পড়ছিলাম। যাই হোক বেতন আবার আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর পাব। আগামী ৭/৮ তারিখে আবার টাকা পাঠাব। তুমি এই কয়েকটা দিন কোন রকমে চালিয়ে নাও। 

এদিকে লোনের কাজ এখনো সমাধান হয়নি।  ---- এ জন্য কয়েক দিনের জন্য মাত্র --- টাকা দিলাম। যা কখনো দেওয়া হয় নাই এবং ভবিষ্যতে হয়তো হবে না। 

তোমার কাকাসহ সকলেই ৩রা আগস্ট রায়গঞ্জ থেকে নিঃশর্তে বাড়ী এসেছে। 

নূপুর ও জামাই বাড়ী এসেছিল। তারা বর্তমানে ভাল আছে।  

তোমার কুশল কামনা করে এখানেই শেষ করছি। 

                                                                             ইতি 

                                                                    তোমারই পিতা 

পুনশ্চঃ দুঃখটাকে পুষি জীবনের স্বপ্ন দিয়েইচ্ছের ব্যর্থতা দিয়েবোধের গ্লানিটুকু দিয়েউপদেশ আর আশ্বাস দিয়েঅনাগত দিনের রঙ দিয়ে...
দুঃখ জীবনের প্রধান শিক্ষকতার কাছে প্রাপ্তির সমান ঋণঅপ্রাপ্তির চেয়ে বেশি আবেদনঅনুভূতির ফলাফল আর আরেকটু আশ্বাস। সবথেকে দীর্ঘ  প্রতিবেশী আর উপস্থিতির নাম দুঃখ ..........

                                                                                    ইতি                                                                       

                                                                                     তোমারই পিতা  


পিতার পত্র—১ 


স্নেহের পুত্র,

পত্রে আর্শিবাদ রইল। আশা করি ভাল আছ। তুমি হয়তো টাকাগুলো পেয়েছো। বেতন তুলতে দেরী হল এবং অফিস বন্ধ থাকার কারনে তোমার কাছে টাকা পাঠানো হলো না। সফিউলের সাথে আলাপ হয়েছে । সে আগামী ৪/৪/১৯৯৯ ই তারিখে ঢাকা যাবে। তাই তার হাতে হাতে ---- টাকা পাঠাবো। ---- 

আমাদের এলাকায় দারুণ খরা, এখনো কোন বৃষ্টি নাই। ইরি  আবাদ প্রায় বন্ধ। আমরা বাড়ীতে সকলেই ভাল আছি। তুমি হয়তো দারুণ কষ্টের মধ্যেই আছ। কিন্তু কি করবে? সবকিছুই মেনে চলতে হয়। বাড়ী আসো । পরবর্তীতে যেন এ অবস্থা না হয় সে চেষ্টা করা যাবে। শুধু প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন তোমার মনোবাঞ্চা পূর্ণ করে। 

তোমার অসাধারণ সাফল্যে আমরা খুশী।তোমার এ সফলতা যেন চিরদিন বজায় থাকে। মনেরেখো ভক্ত বাঞ্চা পূর্ণ করে নন্দের নন্দন।” শুধু ধর্ম মেনে চলবে নীতিতে অটল থাকবে। তবেই উন্নতি। ”

 

তোমার কুশল কামনায় শেষ করছি। 

                                                                                                     ইতি

                                                                                তোমারই পিতা।  

শব্দের নগ্নতা

ব্দের  নগ্নতা

মূলঃ সাদাত হাসান মান্টো (Naked voice)

ভোলু আর গামা দুই ভাই । দু’জনেই ছিলেন খুব পরিশ্রমী। ভোলু সারাদিন গ্রামের এ পাড়া -ও পাড়া ঘুরে হাড়ি পাতিল কেনা-বেচা করার পাশাপাশি মেরামতেরও কাজ করে বেড়ায়। রোজ সকালে মাথায় ছোট্ট একটা টুকরি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । সে গ্রাম কিংবা শহরের রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়াতো এবং লোকজনকে তাদের পুরাতন থালা-বাসনগুলো মেরামত বা বিক্রির করার সাথে নতুন থালা বাসন কেনার জন্য লম্বা করে হাঁক ছাড়ত । প্রতি সন্ধ্যায় যখন সে বাসায় ফিরে আসত তখন তার পকেটে বেশ ভালোই টাকা থাকত ।
গামাও একজন ফেরিওয়ালা। সেও মাথায় ঝুড়ি নিয়ে সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। সেও প্রতিদিন ভালোই রোজগার করে , কিন্তু মদ্যপানের অভ্যাস ছিল তার। প্রতি সন্ধ্যায় তার সন্ধ্যার খাবার কেনার পর তাকে দেশীয় মদ কিনে গিলতে হতো। মদ তাকে মাতাল করে ফেলে, এতে সে যাছেতাই ব্যবহার করে । সবাই জানত যে গামা মদ পান করার জন্যই বেঁচে আছেন ।
ভোলু তার দুই বছরের বড় ভাই -গামাকে বোঝানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতো এই বলে যে - মদ্যপান একটি ভাল অভ্যাস নয়; তুমি একজন বিবাহিত পুরুষ; তোমার বউ আছে ? তুমি কেন টাকা নষ্ট কর? তুমি প্রতিদিন মদ খাওয়ার জন্য যে টাকা নষ্ট কর, তা জমা করলে তোমরা আরও ভাল জীবনযাপন করতে পারো ;তুমি কি চোখে দেখতে পাওনা যে – তোমার বউ সেই ছেঁড়া -ন্যাকড়া পরে অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু মজার বিষয় হল — ভোলুর কথা গামার এক কানে ঢুকে, অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত ভোলু ত্যাক্ত- বিরক্ত হয়ে এ বিষয়ে তার সাথে কিছু বলা বন্ধ করে দিল।
যা হোক – দু’জনেই শরণার্থী ছিলেন। তারা একটি পরিত্যাক্ত বড় দালান খুঁজে পেয়েছিল যেখানে তারা ভবনের একটি ফ্লোরে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন করতো ; কেননা গনরুমে কোন রকম কাপড়ের পর্দা তুলে রুম বানিয়ে এরা সবাই বসবাস করতো।
স্বাভাবিক গতিতেই শীতকাল খুব সহজে চলে গেল কিন্তু গ্রীষ্ম এলেই দরিদ্র গামার জীবন কঠিন হয়ে গেল। ভোলু ছাদে খাট বিছিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর ব্যাবস্থা করে ফেললো; কিন্তু বেচারা গামা? তার স্ত্রী ছিল এবং উপরের তলায় কোন প্রকার পর্দার ব্যবস্থা ছিল না। এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি গামার সাথে অন্য বাসিন্দাদেরও করতে হতো । এই ভবনের বসবাসকারী সকল বিবাহিত পুরুষের একই ধরনের সমস্যা হতে লাগলো।
একদিন প্রতিবেশী কালান একটি অভিনব ধারণা নিয়ে এলেন। সে তার খাটের চারপাশে চটের পর্দা দিয়ে এক ধরনের বেড়া তৈরি করল । যাতে করে স্বামী-স্ত্রী গোপনীয়তা কিছুটা হলেও রাখ ঢাক থাকে।এটি ছাদের উপরে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে উঠল বিশেষ করে দম্পতিদের ক্ষেত্রে। এভাবে, অন্যরা তাদের স্ত্রীদের সাথে ভাগ করে নেওয়া বিছানার চারপাশে একই ধরনের পর্দা স্থাপন করেছিল। ভোলুও তার ভাইকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেল এবং কয়েক দিনের মধ্যে দু’ জনে বাঁশ খুঁড়ে পাটের বস্তা এবং পুরানো কম্বলের পর্দা তৈরি করল। যদিও এটি সত্য ছিল যে পর্দাটি বাতাসকে অবরুদ্ধ করেছে বটে কিন্তু শব্দের নিয়ন্ত্রণ এই পর্দা নিতে পারেনি তবুও এটি ভবনের নীচের গরম -যন্ত্রণা থেকে ঢেঁড় ভালো ছিল।
ছাদে ঘুমানোর ফলে ভোলুর চরিত্রে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। এখন পর্যন্ত, সে বিয়েতে খুব বেশি বিশ্বাসী ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে সে কখনই বৈবাহিক ফাঁদে পড়বে না। গামা যখনই তার বিয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করত, সে সর্বদা বলত, 'না ভাই, আমি অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা করতে চাই না।' কিন্তু গ্রীষ্মের আগমন এবং দশ বা পনেরো দিন ছাদে ঘুমানোর সাথে সাথে সে তার মন পরিবর্তন করল. একদিন সন্ধ্যায় সে তার ভাইকে বলল, 'আমাকে বিয়ে করে দাও না হলে আমি পাগল হয়ে যাব।'
গামা জিজ্ঞেস করল 'এটা কোনো ধরনের রসিকতা?'
কিন্তু ভোলু আরও গম্ভীর হয়ে বলল, 'তুমি জানো না... আমি পনেরো রাত জেগে আছি।' শব্দের জ্বালায় একটুও ঘুমাতে পারিনা।
গামা জিজ্ঞেস করল, 'কেন? কি হয়েছে?'
‘কিছুই না, শুধু বাম, ডান... সব দিকেই কিছু না কিছু ঘটছে... সব দিক থেকে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কি ঘুমাতে পারে?'
গামা তার মোটা গোঁফের আড়াল থেকে মনে মনে হেসে উঠল ।
ভোলু হঠাৎ লাজুক হয়ে গেল। তারপর বলে উঠল , ‘ওই কলান , ব্যাটা নির্লজ্জ ! সে সারারাত এমন বাজে কথা বলে... আর তার সেই বউ... সে তার মতোই বেহায়া ! তাদের বাচ্চারা খাটের আশেপাশে শুয়ে আছে, কিন্তু তাদের কি সেদিকে খেয়াল আছে !'
বরাবরের মতো গামা বসে মদ গিলছিলেন । ভোলু চলে যাওয়ার পর সে তার বন্ধুদের জড়ো করে খুব আনন্দের সাথে বলেছিল যে তার ভাই আজকাল ঘুমাতে পারে না। আর যখন সে বেচারা ভোলু ঘুমাতে না পারার কারণ নিয়ে এসে তার অনবদ্য স্টাইলে কিছুক্ষণ ব্যাখ্যা করতে লাগল, তখন তার শ্রোতারা—আনন্দে গড়াগড়ি দিতে লাগল। পরের বার গামার সাথে মদ্যপানকারীরা ভোলুর সাথে দেখা হলে তারা তাকে বেসুরো নানা বিধ কথা বলে জ্বালাতন করে। একজন তো বলেই বসল, 'আমাদের বল, কালান তার স্ত্রীকে কী বলে?' আরেকজন - 'তাহলে,তুমি বিনামূল্যে মজা নাও ... তুমি সারারাত ধরে সিনেমা দেখ! ... তাও আবার এক টিকেটে দুই ছবি !' দুষ্টু -মিষ্ট কোথায় ভোলু তাদের বাজে ঠাট্টায় বিরক্ত হলেও কিছুই করার ছিলনা।
পরের দিন সে গামাকে এ জন্য গালাগালি করে বলে উঠল , 'তুমি আমাকে রসিকতায় পরিণত করেছ।আমি তোমাকে সত্যিটাই বলেছি, তা আমার কল্পনার কথা নয়। আমি তোমাকে বলছি, আমি ঘুমাতে পারি না! কুড়ি দিন হয়ে গেল জেগে আছি। তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও, নইলে আমি পাগল হয়ে যাবো। তোমার বউয়ের কাছে যে টাকা আমি জমা রেখেছি... তা দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা ব্যবস্থা কর ।
গামা ভেবেচিন্তে গোঁফ পাকিয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে, সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ রাতে তোমার বউদির সাথে সাথে কথা বলব এবং তাকে তার বন্ধুদের মধ্যে থেকে একটি ভালো মেয়ে খুঁজে বের করতে বলব।
দেড় মাসের মধ্যে পাত্রী পাওয়া গেল এবং বিয়ের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্নও হল। গামার স্ত্রী হিসাবে ফেরিওয়ালা সামাদের মেয়ে আয়েশাকে সবাই পছন্দ করে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিল। সে খুব সুন্দর মেয়ে, ঘরের কাজ জানত এবং সামাদও ভদ্র প্রকৃতির । আশপাশের লোকজন তাকে শ্রদ্ধা করত। ভোলু একটি ভাল ছেলে – সে কঠোর পরিশ্রমী এবং সুস্থ সবল যুবক। সামাদ প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি গ্রীষ্মে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে চান না, কিন্তু গামা যখন নাছোড়বান্দা , তখন তাকে হার মানতে - হল মেয়ের বাপ বলে ।
বিয়ের চারদিন আগে ভোলু খাটের চারপাশে পাটের বস্তা দিয়ে তার কনের জন্য ব্যবস্থা করে রাখল । সে শক্ত বাঁশের খুঁটি কিনে আনে এবং নিশ্চিত হয় যে খুঁটি ও বস্তার পর্দা নিরাপদে বাঁধা আছে। ভোলু খুব যত্ন এবং বিয়ের উদ্যমে এই সব করতে লাগলো ।
প্রথম রাতে সে বস্তার পর্দার আড়ালে ঘুমাতে, সে কিছুটা অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করে । সে তাজা শীতল বাতাসে অভ্যস্ত ছিল কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলো যে সে এটিতে অভ্যস্ত হবে। বিয়ের চারদিন আগে থেকেই পর্দার আড়ালে ঘুমাতে শুরু করল সে । প্রথম রাতে সে সেখানে শুয়ে তার স্ত্রীর কথা ভেবে ঘামে ভিজে গেল। ভেসে আসা শব্দও গুলো তার কানে প্রতিধ্বনি হতে লাগল – অস্ফুট কণ্ঠস্বরগুলো তাকে ঘুমোতে দেয় না এবং তার মাথার মধ্যে অদ্ভুততম চিন্তার আবেশ তাকে আরও চিন্তিত করে ফেলে।
“আমরাও কি একই ধরনের নগ্ন শব্দ উৎপন্ন করব?... আমাদের চারপাশের লোকেরা কি আমাদের শব্দ শুনবে? ... তারাও কি সারারাত জেগে থাকবে; কারণ আমাদের শব্দ বা অস্ফুট স্বরও কি তাদের ঘুমাতে দেবে না? ----“
বেচারা ভোলু আরও উত্তেজিত হয়ে উঠল। শুধু একটাই দুশ্চিন্তা তাকে দূরে সরিয়ে দিল: বস্তার কাপড় কি আদৌ কোন ধরনের পর্দা? চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষ; রাতের স্থিরতায় শোনা যায় সবচেয়ে ছোট পিন পতনের শব্দ। মানুষ কিভাবে এমন নগ্ন জীবন যাপন করে? একটি মাত্র ছাদ আছে মাথার উপর ; স্ত্রী - স্বামী শুয়ে থাকে এক খাটে । অগণিত চোখ-কান সব দিকেই খোলা। অন্ধকারে দেখতে না পেলেও সব শুনতে পায়। ক্ষুদ্রতম শব্দ একটি সম্পূর্ণ ছবিকে জীবন্ত করে তুলতে পারে ... বস্তার পর্দা কী করতে পারে? সূর্য উঠার মুহুর্তে, সমস্ত কিছু খালি হয়ে যায় ... সেখানে কালান তার স্ত্রীর স্তন মর্দন করছেন ... সেই কোণে তার ভাই গামা রয়েছে।সব কিছুই পূর্বাবস্থায় এক কোণায় পড়ে আছে। দেখতে পাওয়া যাছে মিষ্টি দোকানদারের অবিবাহিত কন্যাটির -এর উন্মুক্ত পেট, উন্নত স্তন -- হাওয়ায় দুলছে বস্তার পর্দা ------ ফাঁক দিয়ে ------- দিচ্ছে।
বিয়ের দিন ভোর হয়ে গেল আর ভোলু মনে মনে ভাবল পালিয়ে যাবে ; সে আর বিয়ে করবে না , কিন্তু সে যাবে কোথায়? নিজের তৈরি ফাঁদে আটকা পরেছে সে ! পালিয়ে গেলে নিশ্চয়ই আত্মহত্যা করতে হবে ! কিন্তু বেচারা হতভাগ্য মেয়েটির জন্য সমাজে এটা কী অপমান বয়ে আনবে না ! আর সবাই হৈচৈ করবে। কলঙ্কিত করবে মেয়েটিকে। অপবাদ রটাবে।
“ ঠিক আছে, বিয়ে তা আগে হোক। সবাই এটা করে। আমিও এতে অভ্যস্ত হয়ে যাব।“ ভোলু যথাসম্ভব নিজেকে সাহস জোগাতে চেষ্টা করে এবং বিয়ের দিন কনেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেল সবার মঝে। লোকেরা গামা এবং ভোলু উভয়কে অভিনন্দন আর আশীর্বাদ জানাতে লাগলো। ভোলুর কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাকে উত্যক্ত করার পাশাপাশি, বিয়ের রাতে তাকে দু-একটা কৌশলও বলে দিল যে বিড়াল বিয়ের রাতেই মারতে হবে। ভোলু নীরবে তাদের কথা শুনল।
গামার স্ত্রী বস্তার পর্দা বিশিষ্ট ঘরে নববধূর জন্য বিছানা বিছিয়ে দিলেন। গামা বালিশের পাশে সুগন্ধি জুঁই ফুলের চারটি বড় মালা রাখলেন। এক বন্ধু দুধে ডুবিয়ে কিছু জিলাপিও রাখল----- ।
তারা ছাদের সেই বস্তা ঘেরা ঘরে পৌঁছে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতা দেখতে পেল। নববধূ বিছানার দিকে নির্দ্বিধায় হেঁটে যাওয়ার সাথে সাথে তার রূপার পায়ের গোড়ালি প্রতিটি লাজুক পদক্ষেপের সাথে কথা বলতে শুরু করল। ভোলুর মনে হল, যে ঘুমটা তাদের সমস্ত কিছুকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, তা যেন জীবনের জন্য ধাক্কা খেয়েছে। লোকেরা তাদের খাটের শব্দ করতে শুরু করে দিল , কেউ কাশি এবং গলা পরিষ্কার করতে শুরু করে দিল । ফিসফিস আর গোঙানি ভেসে উঠতে থাকে উত্তাল বাতাসে। হতভম্ব হয়ে ভোলু তার বউয়ের হাত ধরে দ্রুত বস্তার পর্দার দিকে টেনে নিয়ে গেল। মৃদু হাসির আওয়াজ কানে পৌছালো। তার দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। সে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করতেই কিন্তু চারপাশে ফিসফিসানি বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ দূরের কোণে যেখানে কালানের বিছানা, তার খাটটি হতে জোরে জোরে শব্দ আসতে শুরু করে দিল : চুর-ছু, চুর-ছু--- উঃ আঃ --- । এক সময় কালান এর খাট নিশ্তব্দ হয়ে গেলে; গামার লোহার খাট কথা বলতে শুরু করে দিল একই শব্দ , একই গোঙ্গানি ---- হিস ! হিস! --- উঃ আঃ --- ।
মিষ্টি বিক্রেতার অবিবাহিত মেয়েটি কয়েকবার জল খেতে উঠেছিল। যতবারই তার গ্লাসটি পাত্রের সাথে ঠেকেছে, ততবারই ভোলুর কানে বিস্ফোরণের মতো শব্দ হচ্ছে – যেন পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ।কসাইয়ের ছেলের খাট থেকে বারবার ভেসে আসছে ম্যাচ জ্বালানোর শব্দ। ভোলু তার নববধূর সাথে আলাপ করার সমস্ত চেষ্টা ত্যাগ করে বসে আছে। সে ভয় পেয়ে গেলো যে তার চারপাশের কানগুলি তার কথা গিলে ফেলবে এবং সমস্ত খাট চুর-ছু, চুর-ছুর! উঃ আঃ --- এর কোরাস শুরু করবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ; নিঃশব্দে শুয়ে রইল। মাঝে মাঝে, সে তার স্ত্রীর দিকে চুরি বা লাজুক ও ভীতু দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো, যে তার কাছে খাটে শুয়ে আছে । বউ কিছুক্ষণ জেগে থাকার পর ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোলু ঘুমাতে চাইলো কিন্তু পারলো না। প্রতি কয়েক মিনিটে কোনো না কোনো শব্দ তার কানে পৌছে যেত... আওয়াজের ফলে পুরো জীবন-সদৃশ ছবিগুলো প্রাণবন্ত হয়ে তার সামনে দাঁড়ায় ।
বিবাহের আশায় তার হৃদয় এমন আশা এবং এত উত্তেজনায় ভরে গিয়েছিল; যেদিন সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেদিন থেকেই তার মাথায় সেই সব উত্তেজনাপূর্ণ আনন্দের কথা গুনগুন করছিল যা অজানা ছিল। বিয়ের চিন্তা তার শরীরে এক অদ্ভুত রকমের তাপ প্রবাহিত করত, একটি সুন্দর, আনন্দদায়ক উষ্ণতা। কিন্তু এখন তার ‘প্রথম রাত’ ভাবতেই সে ঠাণ্ডা হয়ে গেল! সেই উষ্ণতা-প্ররোচিত অনুভূতিগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সেই শব্দ - সেই ছবি আঁকা কণ্ঠ - সবকিছু ভেঙ্গে চুড়ে দিল । সে নগ্ন, একেবারে নগ্ন বোধ করতে শুরু করল , এবং মনে হতে লাগলো চারপাশের সকলেই তার দিকে বড় চোখে তাকিয়ে হাসছে ।
ভোর ৪টার দিকে সে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ঠান্ডা জল পান করেন। সে একটু ভাবল। সে বউকেআঁকড়ে ধরে জমে থাকা উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করেছিলেন। একটা ঠান্ডা হাওয়া বইছিল। ভোলু কালানের দিকে ঘুরে গেল। তার বস্তার পর্দার ঝাপসা প্রান্তগুলো হাওয়ায় নড়ছে। কালান তার স্ত্রীর পাশে একেবারে নগ্ন হয়ে শুয়ে ছিল। এটা তাকে রাগান্বিত করেছিল: কেন এখন ছাদে বাতাস বইতে হবে? এবং, যদি এটা ফুঁ দিতেই হবে, তাহলে কেন এই ধরনের বস্তার পর্দাগুলোকে জ্বালাতন করতে হবে? তার মনে হল সব বস্তার পর্দা টেনে নিজের জামা কাপড় ছিঁড়ে ছাদে উলঙ্গ হয়ে নাচছে। ভোলুর বমি হতে লাগলো । ছিঃ ।
তার বন্ধুরা জেনেশুনে তার দিকে তাকিয়ে তার প্রথম রাতের কথা জিজ্ঞেস করে।, “ তাহলে, কেমন লাগলো? আশা করি, তুমি আমাদের নাম মুছে দাও নি ' ইত্যাদি ইত্যাদি । 
একটুপরে একজন ফেরিওয়ালার সাথে দেখা হলে সে রহস্যময় উপায়ে জিজ্ঞাসা করল , ‘এখানে দেখ; আমার কাছে এই দুর্দান্ত রেসিপিটি রয়েছে যা বিস্ময়করভাবে কাজ করে।'
আরেকজন তাকে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বললো, 'তাহলে, আমার প্রিয় কুস্তিগীর, খেলা কেমন হলো?'
ভোলু চুপ করে রইল।
কয়েদিন পর রীতি অনুযায়ী ভোলুর বউ তার বাবা-মায়ের বাড়িতে যায়।
সে পাঁচ-ছয় দিন পর ফিরে আসে এবং আবারও ভোলু নিজেকে একই দ্বিধায় পড়ে যায়। ছাদে শুয়ে থাকা সবাই যেন তার স্ত্রীর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। গত কয়েকটা রাত শান্ত ছিল কিন্তু যে রাতে সে তার স্ত্রীর সাথে সেখানে ঘুমাতে এসেছিল, সেই রাতেই আবার একই কথা শুরু হয়: ফিসফিস আর বকবক, চুর-চু, চুর-ছু, কাশি এবং গলা পরিষ্কার করা, ঠকঠক করা। পাত্রের বিপরীতে গ্লাস, টসিং এবং ক্রি! কিং বিছানার উপর দুম দাম শব্দ! দম বন্ধ করা হাসি। ভোলু সারারাত জেগে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত। মাঝে মাঝে, সে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলত এবং তার স্ত্রীর দিকে আকুলভাবে তাকাত , এবং বউও বিরক্ত হত। ভোলু বলতে লাগত, 'আমার কী হয়েছে? ... আমার কি কি হয়েছে? ... ওহ, আমার কি হয়েছে?'
এভাবে চলতে থাকে সাত রাত অবধি। শেষ পর্যন্ত, ভোলু তার বধূকে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বিশ দিন কেটে গেল। গামা একদিন ভোলুকে বলল, ‘তুমি অদ্ভুত লোক! তুমি কীভাবে তোমার নববধূকে তার পিতামাতার কাছে পাঠাতে পারো ? সে তো এত দিন চলে গেছে, তুমি একা ঘুমাও কী করে?
ভোলু সংক্ষেপে উত্তর দিল, 'সব ঠিক আছে।'
গামা জিজ্ঞেস করল, ‘কি ঠিক আছে? আমাকে বলো না কেন? ব্যাপারটা কি? তুমি কি আয়েশাকে পছন্দ করো না?
'এটা তা নয়।'
‘ তাহলে কোনটা ? ‘
ভোলু উত্তর দিল না। কয়েকদিন পর গামা আবার প্রসঙ্গ তুলল ভাইয়ের কাছে । ভোলু উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। তাদের বাড়ির বাইরে একটি খাট রাখা হয়েছিল। সে বাইরে গিয়ে তার উপর বসল । সে তার এক আত্মীয়র গলা শুনতে পেল। সে গামার সাথে ভিতরে কথা বলছিল এবং বলছে, ‘তুমি জানো না , তুমি ভুল বলেছ ; যখন তুমি বলো যে ভোলু আয়েশাকে পছন্দ করে না।
ভোলু গামাকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছে, ‘তাহলে কী হলো? সে আয়েশার প্রতি মোটেও আগ্রহী বলে মনে হয় না।‘
'কেন না?'
ভোলু শুনতে পেল না, আত্মীয়াটি তাকে কি বললো, তবুও তার মনে হলো কেউ যেন তার অস্তিত্ব, তার পরিচয়কে ব্লেন্ডার এর মধ্যে ফেলে দিয়েছে এবং তা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তারপর গামাকে জোরে বলতে শুনলেন, ‘না, না! তোমাকে সেটা কে বললো?'
গামার আত্মীয়াটি উত্তর দিল, ‘আয়শা তার এক বন্ধুকে বলেছিল... এটা আমার কাছে এক কান দুই কান হয়ে পৌঁছেছে।‘
গামা হতভম্ব ভঙ্গিতে বললেন, 'এটা ভয়ানক!'
বাইরে বসে ভোলু অনুভব করল একটা ছুরি তার হৃদয়ে ঢুকে গেছে। তার ভিতরে কিছু একটা ছিটকে পড়ল। সে ছাদে উঠে গেল। খুঁটিতে ঝোলানো সমস্ত বস্তার পর্দা সে টেনে ছিঁড়তে শুরু করল। হট্টগোল শুনে লোকজন ছুটে আসতে লাগল । তারা তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে, সে তাদের সাথে মারামারি শুরু করে দিল। বিষয়টি নোংরামিতে গড়াল ।কালান একটি খুঁটি তুলে তার মাথায় জোড়ে আঘাত করে। ভোলু অজ্ঞান হয়ে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যখন তিনি এসেছিলেন, তিনি তার মন হারিয়েছিলেন। জ্ঞান ফিরলে দেখা যায় – ভোলু পাগল হয়ে গেছে ?
ভোলু এখন নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর যখনই সে একটি বস্তার পর্দা দেখতে পায়, সে তাতে ধাক্কা দেয় এবং ছিঁড়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করে ......।