এই ব্লগটি সন্ধান করুন

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২

যুক্তিবাদি দেকার্তে, কান্ট আর মাঠকর্মী হিউম

 রেনে দেকার্তে এই রেশনালিজম ধারাটারে বিরোধিতা করেন অনেকেই। হিউম সাব অন্যত্র। কিন্তু, এটা কী খালি ইউরোপেই হইছে?  ভারত থেকে, গ্রিক, আরব[i] সবজায়গাতেই এর ছাপ দেখা যায়। ইম্প্রিসিজম মানে, দেখিয়া, হুনিয়া, বুজিয়া তারপরে জ্ঞান দাও। খুব ভালা কথা। এটা ইবনে সিনা, স্টয়িক সহ অনেকেই বলে গেছেন। স্টয়িকদের একটু আগে বা একই সময়ে আমাদের এই অঞ্চলে  ইম্প্রিসিজম ধারাটা চালু আছিলো জোরসোরে। এটা আইজ প্রমাণিত।[ii] রেনে দেকার্তে, ভুয়ান গগ, ভিঞ্চি, লক হক্কলে মিলিয়ারেনেসাঁ করলেন। এইসব র্যাশনালিস্ট বা ইম্পিরিসিস্টরা ইউরোপরে জাগাইয়া দিলেন। বাদ বাকি জনগণ ঘুমাই আছিলো। আহেন, একখান টেবিলে চউখ বুলাইঃ 

র‍্যাশনালিজম                                                                  ইম্পিরিসিজম

আগের যুগ

সময় 

 

 

পিথাগোরাস 

570–495 BCE

ভারতীয় বৈদিক স্কুল

৬০০-২০০ বি, সি,

প্লেটো 

427–347 BCE

স্টয়িক 

৩৩০ বি, সি

এ্যারিস্টটল 

384–322 BCE

 

 

মধ্যযুগ

 

 

জুদা হালেভি (ইহুদী) 

১১৪০

সাদিয়া গাও

৮৮২-০৪২

আল গাযালি মুসলিম 

১০০৫-১১১১

আল ফারাবি 

৮৭২-৯৫০

আলকিন্দি

৮৭০-৯১০

ইবনেসিনা

৯৮০-১০৩৭

মুতাজিলি বা র‍্যাশনালিস্ট  বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আল-জাহিজ

৭৭৬-৮৬৯

ইবন থাইফুল

১১০৫-১১৮৫

 

 

ইবন রুশদ

১১২৬-১১৯৮

 

 

মাইমুন্দাস

1138–1204

 

 

থমাস একুইনো

১২০০ 

পশ্চিমা  সময়

রেনে দেকার্তে

১৫৯৬-১৬৫০

ফ্রান্সিস বেকন

১৫৬১-১৬২৬

ব্রুস স্পিনোজা

১৬৩২-১৬৭৭

জন লক

১৬৩২-১৭০৪

ইমানুয়েল কান্ট

১৭২৪-১৮০৪

থমাস হবস

 

 


 

 

 

 


দুটো স্কুল কে আলাদা করে খালি স্লেট  বা  খালি মন এর ধারণা। এটা অস্বীকার করবার পারবেন না,  আজ না, বরং বহুকাল ধরেই এটাকে ভিত্তি ধরে কাজ করেন।[iii] ইনাদের মাঝে আবার নানান মত আছে, সেটা ইনফারেন্স বা স্পেকুলাশান বা অনুমানের বিষয় নিয়া।[iv]

o   ভারতীয় দর্শন 

o   প্রাচীন গ্রীক দর্শন (On the Soul by Aristotle)

o   ইবন সিনা (১১শ শতক)

o   ইবনে তুফাইল (১২শ  শতাব্দী)

o   চৈতন্য দেব (১৫শ শতক)

o   অ্যাকুইনাস (১৩শ শতাব্দী)

o   লক (১৭শ শতক)

o   ফ্রয়েড (১৯শ শতক)

আহেন, আল-কিন্দিরে নিয়া একটু কই। মধ্যযুগের উনি আছিলেন এক অন্যতম প্রধান পলিম্যাথ। আরব দর্শনের জনকও কহেন অনেকে। হেনরি করবিন আর উইলিয়াম সিত্তিকের[v] কথায়,  আল-কিন্দি প্রাচীন ভারত আর আধুনিক পশ্চিমের এক সেতু। আমরা আর কী বুঝি, তবু আমাদেরও তাই মনে লয়। কারণ, ইনি অ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়ার নিউম্যারিক্যাল দুনিয়াডারে আরবের মাঠিতে পরিচয় করাই দিছিলেন। আর আরব থেকে পশ্চিমের জগত। তাঁর সাথে আছিলেন আল খারেজমি নামের আরেক গণিতবিদ। ভাল কইরা দ্যাহেন,  বিস্ময়ের মত্ন লাগে, একটা লোক কতটা ডিভোটেড হইলেই এতোসব নিয়া কাজ করবার পারে! পরবর্তীকালে তিনি মেটাফিজিক্স, লজিক, যুক্তি এবং মনোবিজ্ঞান থেকে শুরু করে মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং অপটিক্স থেকে অনেক ব্যবহারিক বিষয়ের উপরে মৌলিক বই লিখে গেছেন।  পিটার এাডামসনের Al-Kindi বইটা দেখবার পারেনমনে হইব পুব-আরব-পচ্ছিমের’ একখান লম্বা পুলের রেলিং ধইরা হাঁটচেছেন।

দেখেন, জ্ঞানের তত্ত্ব বা থিওরি অব নলেজ শব্দ হিসাবে জন লক প্রথম ব্যবহার করেছেন, এইডা একটা মিথ। হ তাইনের কাজটা পশ্চিমের লাগি দরকার আছিলো। প্যাসিফিক এলাকার আদিবাসীদের মারিয়া, খেদাইয়া, তাগোর মাঠিতে সাদা মাইনষের বস্তি  গাড়তে লক সাবের থিওরি অব নলেজ বড় ইউজফুল ছিল। তবে এর অর্থ এই না যে, এই ধরনের কাজ লক সাবে একাই করছেন। ইউরোপের হক্কলেই এক দলের কচু। থিওরি অব নলেজ নিয়া ভারত, গ্রীক, ইহুদি, এবং খ্রিস্টান আর ইসলামী দার্শনিকরা ব্যাপক-বিস্তর কাজ করে গেছেন। এতগুলি নাম, কাজ এতোটাই গভীর আর ব্যাপক যে, এ বিষয়ে এই ভূমিকা বা বিষয়ে এক দুটা বই মোটেই যথেষ্ট না। আমরা একটু ইঙ্গিত দিলাম। আফনাদের জানা থাকবার পারে, একটু ঝালাই করা আর কী? 

আমাদের দেশে জ্ঞান মানেই পশ্চিমা জ্ঞানীদের কথার কচকচানি; বুঝলেন, এই মনোভাবটাইতো  কলোনিয়াল। জ্ঞান নদীর পানির লাহান, স্থির হইয়া থাকলে শ্যাওলা পড়ে আর পঁচন ধরে। নাইনথ সেঞ্চুরির আল-কিন্দিরে আমরা টাইন্যা আনলাম আফনেরা যাতে বুঝবার পারইন লক আর হিউমের আগেও জ্ঞান নিয়া বহু কথাবার্তা হইছে। আল-কিন্দির অন্যতম একটা জা’গা আছিলো জ্ঞান চর্চার সেন্টারটিরে বদলানো। অর্থ্যাৎ মসজিদ থেকে বাহির হইয়া বাহিরের দুনিইয়ার মাঝে জ্ঞানের উপাদান খোঁজা। এর লাগি ইনারে curriculum theorizer বলা হয়। উনার ভাষায়, মাজলিস থেকে মিনহাযে নিয়া আসা। মিনহায শব্দটির বাংলা অুনবাদ হইলো মেথোডলজি বা পদ্ধতিবিদ্যা। কানাডিয়ান স্কলার আব্দুল জব্বার বলেন,  আল-কিন্দি ইন্টারকালচারাল আর ইন্টারডিসিপ্লিনারী কারিকুলামের স্বপ্ন দেখতেন। আইজকার যুগে কথাডা  হুনতে সোজা লাগে, মনে হয় কামডা খুব সোজা । কিন্তু হেই যুগে  এইটা বিরাট জটিল ব্যাপার আছিল। তখন মসজিদ আছিল  জ্ঞানের সেন্টার, যেডা কিছুদিন পরে আমরা দেখলাম ইউরোপের বেলায় । চার্চ থেকে বাহির হইয়া গেলো লোকজনেরা আর রেনেসাঁর প্রসব হইলো। যাই হোক, বাস্তবিক পক্ষে আল-কিন্দি তার প্রমাণও রাইখা গেছেন। একটু আগে কইলাম এ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়ারে একদিকে আর গ্রীক দর্শনরে আরেকদিকে অনুবাদ কইরা উনার বিখ্যাত ‘হাউজ অফ উইজডম’ গঠন করেন। এবং ইনার হাত ধরেই  ট্রান্সলেশন মুভমেন্ট শুরু হইছিলো।    তিনি জোর দিছিলেন যে, জ্ঞান আমরা মসজিদের মাধ্যমে অর্জন করি কিন্তু সেটা কমপ্লিট হয়না, মানুষ তার চাইরপাশের বিশ্বের লগে যোগাযোগ করে তা অর্জন করুক। আমরা এটা বলতেছি কারণ আইজকার যুগে  জ্ঞানের ডিক্লোনাইজেশনটা সবার আগে নিয়া আসা দরকার।কারণ আমাদের জ্ঞানের চিন্তাভাবনা কমপ্লিটলি কলোনিয়াল।[vi]

বিজ্ঞানের ডিক্লোনাইজেশন এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে, গ্লোবাল কগনিটিভ জাস্টিস ছাড়া দুনিয়াব্যাপী ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ এস্টাব্লিশ করবার পারবেন না। (শেষ অধ্যায়ে আমরা হিউম, জন মিল আর রাউলসদের সোশ্যাল জাস্টিস নিয়া আলোচনা করছি) [আবার] বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং হেইডার  রিগরিয়াস লজিকরে অন্য জ্ঞানের পরিচয় মাইনে আদিবাসী জ্ঞান/ইন্ডিজিনিয়াস নলেজ, গ্লোবাল সাউদার্ন নলেজ, নলেজ ডেমোক্রেসি দিয়া  পশ্চিমের মুখোমুখী হইতে হইবে।

আল-কিন্দি জ্ঞানের সরঞ্জামগুলার সাথে সাথে জ্ঞানের সোর্সগুলা সম্পর্কে আলোচনা করেনযা তিনি দার্শনিক এবং ধর্মীয় বিজ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করেন।[vii] এবং আল-কিন্দি প্রোফেটিক-জ্ঞান এবং দার্শনিকদের মধ্যে দর্শন ও ধর্মের মধ্যে একটা মিল আবার পার্থক্য করার লাগি এই দুটি উৎসের মধ্যে কমপারেটিভ ব্যাখ্যায় মনোযোগ দিছিলেন। দর্শন আমরারে লজিক্যাল জ্ঞান দেয়, যেখানে ধর্ম আমাদের যুক্তির বাইরে থাকিয়াও জ্ঞান দিবার পারে। যুক্তির বাইরে যা আমরা বিশ্বাস করি তা হইলো প্রোফেটিক-জ্ঞান। আল-কিন্দি মনে করেন যে, জ্ঞানীর জ্ঞান সীমাবদ্ধ, এবং মানুষ জ্ঞানের বিভিন্ন লেভিজের কারনে তাদের জ্ঞান শক্তি এবং দুর্বলতার চেয়ে আলাদা। মানুষ আত্মার শুদ্ধতায় স্বতন্ত্র্য এবং যত তারা খাঁটি, তত বেশি তারা ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় সক্ষম হয় এবং তাদের স্বপ্নের দৃষ্টিভঙ্গি সত্য হয়। আল -কিন্দির এমন ধারণা আমাদের প্রাচ্যর গ্রন্থ - মহাভারত এবং গীতায় পাওয়া যায়- আত্মাকে বিশুদ্ধ  করতে পারলে সবই পাওয়া যায়। যদিও আল-কিন্দি যুক্তির দার্শনিক হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবুও তিনি বিশ্বাস করেন যে, কারণটি নিজে থেকেই একজনের থেকে অন্যের মধ্যে পরিবর্তিত হয় এবং এটি কিছু প্রয়োজনীয় ধর্মীয় বিষয়, যেমন অস্তিত্ব বা বিষয়গুলি ঘটেছিল বা কেন ঘটেনা  বুঝতে পারে না।  সে কারণেই আমরা দেখতে পাই যে, তিনি পবিত্র কুরআন থেকে প্রাপ্ত কিছু বিষয় প্রমাণের উপর ভরসা করতেছেন। তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব প্রমাণ করা এবং তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে কীভাবে তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে ,তা প্রমাণ করার মতো যুক্তিসঙ্গত বিষয়কে তিনি যুক্তি ব্যবহার করেছেন - সেখানে মানুষেরা ধর্ম সম্পর্কে তাদের বোঝার ক্ষেত্রেও আলাদা। পরিশেষে, আল-কিন্দি এই ধারণার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন যে, মানুষ সমস্ত দিক সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের চেয়ে আলাদা এবং এর কারণগুলি নক্ষত্রের মতো কিছু প্রাকৃতিক কারণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তিতে ফিরে আসে।, এবং পৃথিবীতে জলবায়ু যেমন তাপ, শীতলতা এবং পরিমিতিকে প্রভাবিত করে আবহাওয়া। এই জলবায়ু পরিবর্তনগুলি মানুষকে প্রভাবিত করে। তাদের জ্ঞানের ক্ষমতার দিক থেকেও এই কারণেই মধ্যপন্থী অঞ্চলে বাস করা লোকেরা ধ্যান চিন্তা করতে সক্ষম হয় এবং অন্য অঞ্চলে যারা বাস করেন তাদের থেকে আরও ভাল জানেন। ফলস্বরূপ, আল-কিন্দি মানুষকে চারটি দলে শ্রেণিবদ্ধ করে: ১। অবতার আর নবীগণ ২। দার্শনিক যাদের মধ্যে সুফিবাদের প্রবণতা রয়েছে। ৩। ধর্মীয় মানুষ, এবং  ৪। সাধারণ মানুষ।  

আমরা আল-কিন্দিরে যেমন দেখি একটা প্লুরাল মেনটালিটি আর অল-ইনক্লূসিভ পজিশনালিটির জাগা, তেমনি দেখি চৈতন্য দর্শনে। এক হাজার বছর আগে যখন ইউরোপে প্রায় আন্ধার যুগে আছিলো, তখন একজন ট্রাভেলারের যে কথা, আইজকা তাঁর ব্যতিক্রমটা কই। তাই আল-কিন্ডিজম অনুশীলনে এমন এক শিক্ষানবিস হিসাবে কাজ করে যা শিক্ষায় দ্বি-দ্বিপক্ষীয় বিরোধকে ভেঙে দেয় এবং আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন দার্শনিক ট্র্যাজেক্টোরিগুলিকে মিলিয়ে দেয়। আল-কিন্দিদের কাছে জ্ঞান প্রচারের ইন্টারকালচারাল দিকটি কেবল দূরবর্তী স্থানে জ্ঞান সন্ধানের অর্থ না। উদাহরণ হিসেবে কওয়া যাইতে পারে, দশম শতাব্দীর ট্রাভেলার আল-মাসুদি পশ্চিমা ইউরোপীরে এইবলে বরখাস্ত করতেছেন[viii]

 

তাদের মাইনে পশ্চিমের লোকেদের মধ্যে গরম হাস্যরসের অভাব আছে; তাদের দেহগুলি বড্ড বেশী মোটা মোটা, তা, তাদের বিনয় শক্তপোক্ত, আর বোঝাপড়াগুলা নেতিয়ে পড়া এবং জিহ্বাডা ভারী। তাদের  কালার হয় খুবই সাদা। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের দৃঢ়তার অভাব রয়েছে এবং এ্ইডা হইল  শীতের প্রকৃতি এবং গরম অভাবের কারণ। তাদের মধ্যে যারা উত্তরের সর্বাধিক দূরে, তারা বোকামি, স্থূলতা এবং বর্বরতার সবচেয়ে বেশি বিষয়।

 

আমরার ভূমিকা শেষ করি আরেক দিকপালের প্রসঙ্গ দিয়া। চার্লস ডারউইন সাবের অবদান কী কী তা আমরা হক্কলেই জানি। বোটানি, বায়োলোজির বাইরে নৃবিজ্ঞানে, বিশেষ করে, জেমস ফ্রেজারের উপর ইনার আছর মারাত্মক। ভিক্টোরিয়ান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বলা হয় এই মানুষটারে। মজার একটা ফ্যাক্ট শেয়ার করি। সারভাইভাল অফ ফিটেস্ট’ আর মিউটেশান’ নিয়া প্রায় ৯০০ বছর আগে কাজ হইছে। ক্যামনে? লন, আরেকটু ইতিহাস পড়ি।

রেশনালিস্ট বা মুত্তাজিলি বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আল-জাহিজ (৭৭৬-৮৬৯) নামের এই লোক প্রথম বিবর্তন তত্ত্বের বিকাশকারী মুসলিম জীববিজ্ঞানী এবং দার্শনিক। তিনি প্রাণীর উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়া অনুমান করছিলেন যে, একটি প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনার উপর পরিবেশের প্রভাবগুলি বিবেচনাধীন। আল-জাহিজ প্রথমে অস্তিত্বের লড়াই নিয়া  কথা কন, যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে হইয়া থাকে।[ix]  

আল-জাহিজ দেখাইলেন যে, প্রাণী তাঁর অস্তিত্বের লড়াইয়ে জড়িত; সম্পদগুলির জন্য, খাওয়া এবং প্রজনন সব জাগাতে। পরিবেশগত কারণগুলি প্রাণিডারে বেঁচে থাকার লাগি নতুন বৈশিষ্ট্য বিকাশ করতে প্রভাবিত করে, এইভাবে নতুন প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। যে প্রাণীগুলি বংশবৃদ্ধিতে টিকে থাকে তারা তাদের সফল বৈশিষ্ট্যগুলি বংশের দিকে নিয়াই অগ্রসর। আর এটাইতো আমাদের নমস্য পুরুষ ডারউইন সাবের কথা, তাই তো? 

আরেকটা বিষয়ের কথা কই। দেখেন, On Vasudeva and the Wars of the Bharata বইটার মাঝে আবু রাইয়ান আল বিরুনী ভারত প্রসঙ্গে ৪৭ নম্বর চ্যাপ্টারে মহাভারতের সংগ্রামগুলি কেন সংঘটিত হইছিল সেই সম্পর্কে একটি ন্যাচারাল ফিলোসফিক্যাল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি বিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত জৈবিক ধারণাগুলাসহ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহার করিয়া সারভাইভাল অফ ফিটেস্ট’ এর ধারণা দিছিলেন। এইটার লাগি, বেশ কয়েকজন পণ্ডিত তাঁর এই ধারণারে ডারউইনবাদ এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের সাথে তুলনা করতে পরিচালিত করছেন।[x] এর লাগি ইনারে অনেকেই প্রথম ইম্পিরক্যাল নৃবিজ্ঞানীর মর্যাদা দিয়া থাকেন। পাকিস্তানি ডিপ্লোম্যট, এখন আমেরিকান ভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন এর ইবনে খালদুন চেয়ার,’ আকবর আহমদের এই সংক্রান্ত কাজ গুলো দ্যাখন দরকার। বিশেষ করে, আমাদের দেশে যারা তালাল আসাদ নিয়া কথা কন, তাগো লাগি আকবর আহমদ পড়াটা জরুর। উনার বেশ ভালো কিছু কাজ আছে, যদিও সবগুলার লগে একমত হওন যায়না।[xi] দরকারও নাই। 

 

আহেন ভূমিকা শেষ করি। তেরো শতকের দিকে, নাসির উদ্দিন আল-তুসি ব্যাখ্যা করতেছেন, ক্যামনে আর কীভাবে উপাদানগুলা খনিজ, গাছপালা, প্রাণী এবং তারপরে মানুষের মধ্যে বিকশিত হইছিল। আল-তুসি তারপরে ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে জীবজগতের জৈবিক বিবর্তনের জন্য বংশগত পরিবর্তনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। নয়া বৈশিষ্ট্যগুলা দ্রুত অর্জন করতে পারে এমন জীবগুলি আরও পরিবর্তনশীল। ফলে কি হয়, তারা অন্যান্য প্রাণীর চাইতে বেশি সুবিধা অর্জন করে। [সারভাইভাল অফ...] অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ইন্টার্যাকশনের  ফলে শইলের বদল হইতে থাকে। আল-তুসি জীব জানোয়ারের পরিবেশের সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম তা নিয়া আলোচনা করছেন।

প্রাণী এবং পাখির জগতের দিকে তাকান। তাদের প্রতিরক্ষা, সুরক্ষা এবং প্রাত্যহিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই রয়েছে যার মধ্যে শক্তি, সাহস এবং উপযুক্ত সরঞ্জামগুলি [অঙ্গ]; এই অঙ্গগুলির মধ্যে কয়েকটি হ'ল অস্ত্র, [...]। উদাহরণস্বরূপ, শিং, বর্শা, দাঁত, নখর-ছুরি, সুই, পা এবং খুরস। কিছু প্রাণীর কাঁটা এবং সূঁচগুলি তীরের মতো। [...] যে সমস্ত প্রাণী প্রতিরক্ষা করার কোনও উপায় নাই (গজেল এবং শিয়াল হিসাবে) তারা জীবন বাঁচানো এবং রীতিমত ধূর্ততার সাহায্যে নিজেদের রক্ষা করে। [...] তাদের মধ্যে কিছু উদাহরণস্বরূপ, মৌমাছি, পিঁপড়া এবং কিছু পাখি প্রজাতি নিজেদের রক্ষা করতে এবং একে অপরকে সাহায্য করার লাগি কম্যুনিটি হিসাবে বাস করে। 

[এই অবজারভেশান মারাত্মক কিন্তু সুন্দর। আল-তুসির মত করে এমন করে এর আগে কেউ দ্যাখেন নাই।] 

 আল-তুসি মনে হয় সুদান গেছিলেন। সেখান থেকে তিনি আরেকটা বিষয় ব্যাখ্যা করেন। কীভাবে মানুষ উন্নত প্রাণী থেকে বিবর্তিত হইছে। খুব মজার একটা লিখা আছে, দেখেন, Scientists Who Made a Difference: Nasir ad-din Tusi and the Maragha Observatory[xii]  যাই হোক, কালা মানুষ আর তাঁদের আচরণ আর বিবর্তন নিয়া আল-তুসি, অবশ্যই হেগেল, লক আর মিল সাবেদের আগেই এইসব নিয়া কথা কইছেন।  এই জাতীয় মানুষেরা [সম্ভবত নৃতত্ত্বের এইপ টাইপ]  পশ্চিম সুদান এবং বিশ্বের অন্যান্য দূরবর্তী কোণে বাস করে। তারা তাদের অভ্যাস, কাজ এবং আচরণ দ্বারা anthropoid apes বা প্রাণীদের কাছাকাছি। মানুষের এমন বৈশিষ্ট্য  রয়েছে,যা তারে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করে, তবে তার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলানও রয়েছে যা তাকে প্রাণীজগত, উদ্ভিদ রাজ্য বা এমনকি নির্জীব দেহের সাথে এক করে দেয় [আজকে যারা রেশনালটির দোহাই দিয়া আমরারে আর পশ্চিমের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা করতেছেন, এইটা বুঝাইতেছি]। 

আমাদের কাছে এক অপার বিস্ময়, এত নিখুঁত চিন্তা মাথায় আইলো কেমনে আল-তুসির।[xiii]

হামধনের কাছে ফারদাজানের দুর্গে বন্দী থাকনের ইবনে সিনা বিখ্যাত ভাসমান মানুষ’ লিখেলেন। এক্কেবারে, আক্ষরিকভাবে ভাসমান মানুষ হইলোমানুষের আত্ম-সচেতনতা এবং আত্মার সার্বিকতা দেখাইবেন। এটা আসলে বন্দি ইবনে সিনার এক পরীক্ষা। ভাসমান মানুষচিন্তার পরীক্ষায় বিশ্বাস করছিলেন যে, আত্মা একটা বস্তু বা পদার্থ। তিনার দাবি আছিল, মানুষ তাদের নিজস্ব চেতনা নিয়া সন্দেহ করতে পারে না এমনকি এমন পরিস্থিতিতেও যা সেনসিটিভ  সমস্ত তথ্য ইনপুটকে বাধা দেয়। এই চিন্তা-ভাবনায় তিনি কইলেন, বাতাসে বন্ধ কইরা সমস্ত সংবেদনশিলতা বা সেন্সুয়াল থাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে একবারে নিজেকে তৈরি করেছে এমন কল্পনা করতে, যাতে এমনকি তাদের নিজস্ব দেহের সাথে কোনও সংবেদনশীল যোগাযোগও নাই। তিনি যুক্তি দিয়া কইলেন, যে, এমন অবস্থাতেও একজনের আত্ম-চেতনা, বা আত্মার চেতনা থাকে বা  থাকবে। ইবনে সিনার পরীক্ষায়  এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে, আত্মা একটি এবসলিউট (হেগেলের এবসলিউট না), দেহ তাহলে কি আলাদা আর অবাস্তব পদার্থ। এই ভাসমান মানুষ’ এর অনুভূতিটা ইঙ্গিতে কয় যে, আত্মারে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপলব্ধি করা যাইবার পারে। যেইটা দেহ থেকে আত্মার বিচ্ছিন্নতা দেয়। ইবনে সিনার এই রেশনাল পজিশানডা মানব বুদ্ধিমত্তা, বিশেষত সক্রিয় বুদ্ধি, যা তিনি বিশ্বাস করছিলেন সেটাই হাইপোথিসিস হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যার দ্বারা ঈশ্বর সত্য-সত্যই মানুষের মনের লগে যোগাযোগ করেন এবং ন্যচারের সাথে  ডিসিপ্লিন ও সেন্স সরবরাহ করে। নিম্নলিখিত যুক্তি দ্যাখবার যায়- যদিও এইডা ইংরাজীর অনুবাদ-:

যাহোক, ইবনে সিনা ব্রেনকে এমন এক স্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন যেখানে কারণ সেন্স নিয়ে যোগাযোগ করে। সেন্স সর্বাত্মক এজেন্ট বুদ্ধি থেকে যুক্তিযুক্ত ধারণা গ্রহণের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করে। উড়ন্ত ব্যক্তির প্রথম জ্ঞানটি হবে আমি আছি’ তার মর্ম স্বীকার করা। স্পষ্টতই, উড়ন্ত ব্যক্তির কোনও সেন্স না থাকায় এই সারাংশটি শরীর হতে পারে না। সুতরাং, জ্ঞান যে "আমি আছি" একটি মানুষের মূল, আত্মা বিদ্যমান এবং আত্ম-সচেতনতা। ইবনে সিনা এইভাবে উপসংহারে পৌঁছাইলেন যে, আত্মার ধারণাটি কোনও শারীরিক বিষয়ের উপর যৌক্তিকভাবে নির্ভর করতেছেনা। এবং আত্মাকে আপেক্ষিক দিক থেকে দেখা উচিৎ না। তবে, প্রাইমারিলি, একটি বস্তু বা পদার্থ হিসাবে দেখা যায়। শরীর অপ্রয়োজনীয়; এর সাথে সম্পর্কিত হলে আত্মা তার পরিপূর্ণতা নিজেই, আত্মা একটি অবিরত পদার্থ। সহজ একখান আর্টিকেল পড়বার পারেন।[xiv]

জাহিদ সিরাজ  , পি এইচডি গবেষক 

[ii] Ganeri, J. (2012). The self: Naturalism, consciousness, and the first-person stance. Oxford University Press.

[iii] Pinker, S. (2004). The Blank Slate: The modern denial of human nature. New York, NY, Viking. Popper, K.(1974). Unended Quest. Fontana, London.

[iv] Binmore, K. (2021). John Locke Versus Thomas Hobbes. In Imaginary Philosophical Dialogues (pp. 63-67). Springer, Cham.

[v] Chittick, W. (2014). Love in Islamic thought. Religion Compass, 8(7), 229-238.

[vi] “the decolonization of science is based on the idea that there is no global social justice without global cognitive justice [and] the logic of the monoculture of scientific knowledge and rigor must be confronted with the identification of other knowledgesদেখুন, Abdul-Jabbar, W. K. (2020). Al-Kindi on education: Curriculum theorizing and the intercultural Minhaj. Curriculum Inquiry50(3), 262-280. পেইজ ২৬৩

[vii] Adamson, P. (2006). al-Kindi. Oxford University Press, পেইজ

[viii] Abdul-Jabbar, W. K. (2020) এর ২৬৭ পেইজে লুইস(2000পেইজ ৩১Lewis, B. (2007). A Middle East mosaic: fragments of life, letters and history. Modern Library. বারনারড লুইসের আরেকখান ইডিটেড বই খুব ভালাঃ  Holt, P. M., Holt, P. M., Lambton, A. K., & Lewis, B. (Eds.). (1977). The Cambridge History of Islam: Volume 2B, Islamic Society and Civilisation (Vol. 2). Cambridge University Press.

[ix] Bayrakdar, M. (1983). Al-Jahiz and the rise of biological evolution. Ankara Üniversitesi İlahiyat Fakültesi Dergisi, 27(1), 307-315.

[x] Wilczynski, J. Z. (1959). On the presumed Darwinism of Alberuni eight hundred years before Darwin. Isis, 50(4), 459-466.

[xi] রিচারড ত্রাপার দেখেনইনি আকবার সাবের লগে ঐক্যমত হন নাই। Tapper, R. (1995). Islamic Anthropology" and the" Anthropology of Islam. Anthropological Quarterly, 185-193. ইসলামিক নৃবিজ্ঞান আর ইসলামের মাঝে নৃবিজ্ঞানদুই ভাবে দেখছেনযাই হোকসেটা তর্ক করার আরেকটাজাগা। আমরা সেই দিকে নাই বা গেলাম। অকাল প্রয়াত সাবা মাহমুদের (২০১৮ তে মারা যানতিনার বয়েস মায়র ৫৬কাজও অনেক আছে। Mahmood, S., & Landry, J. M. (2020). Anthropology of Islam. Journal of Ethnographic Theory5, 59-88.

[xii] https://www.azer.com/aiweb/categories/magazine/42_folder/42_articles/42_maragha.htmlলিখক শিঙ্গিজ কাজার। (জটিল লাগতেছে বাংলাতেমূলটাই ভালঃ Chingiz Qajar) উনার আরেকখানা বই আছে। Eminent Sons of Azerbaijan" Biographical History Through the 19th Century" 

[xiii] আমরা তেরোশত শতকের ডারউইন হিসাবে আলতুসি সম্পর্কে কিছু বলতে খুব মনোরম আরাম অনুভব করি। এবং হালাকু খাননিষ্ঠুর রক্ত পিপাসু হওয়াস্বত্বেও  আল-তুসিকে শ্রদ্ধা করলেন। শিঙ্গিজ কাজার থেকে পড়ি এটা পড়তে দিন।

১২৫৩ সনে মঙ্গোলীয়রা  পারস্য এবং ককেশাসে আক্রমণ শুরু করেছিল। যতটা বিস্ময়কর শোনা যায়নাসির আল-দ্বীন তুসির পক্ষে এটি সঠিক সময়ে সঠিকজায়গায় থাকার ঘটনা ছিল। যদিও সেই জায়গাটিকে জেলখানা বানানো হয়। যেখানে তাকে বহু বছর ধরে বন্দী করে রাখাও হয়। পরে নাকি একজন ধর্মপ্রাণ সন্ত্রাসীদল মঙ্গোলিয়ান দখলে তাকে মুক্তি দেয়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ করা হয়েছিল যেতুসি যিনি হালাকু খানকে বাগদাদে আক্রমণ চালিয়ে যেতে এবং সেখানে আব্বাসীয়খিলাফতকে ধ্বংস করতে প্ররোচিত করেছিলেন। খান ১২৫৮ সালে সফল হন এবং তারপরে তুসিকে তার ব্যক্তিগত পরামর্শদাতায় পরিণত করেন।

 

হালাকু তখন আজারবাইজানকে তার বিশাল রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন যা মঙ্গোলীয় ইলহানিড রাজবংশ হিসাবে পরিচিত ছিল (আজারবাইজিয়ান ভাষায়"পিপলস খানস") মারাগাএকটি প্রাচীন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রথম রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল। পরে এটি তাবরিজে পরিবর্তিত হয়। উপরে দেয়া আছে শিঙ্গিজকাজার এর লিঙ্ক। হাছা মিছা জানিনা।

[xiv] Yuldasheva, L. S., & Abdukarimova, G. B. (2021). To Know The Truth Is To Hear The Voice Of The Soul. The American Journal of Social Science and Education Innovations3(02), 172-176.

কোন মন্তব্য নেই: